somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুগসন্ধি

০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



- বিক্রমাদিত্য আছে?
- আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না ।
- আমি পরী...
- পরী?
- আমার পুরো নাম পরিনীতা । উনাকে বললেই হবে, উনি আমাকে দেখলেই চিনবেন ।
- আসুন, ভিতরে এসে বসুন ।

পরী ড্রয়িং রুমের সোফাতে এসে বসে । এদিক ওদিক ভালো করে দেখে, ছিমছাম গোছানো একটা ফ্ল্যাট । রুমে অদ্ভুত একটা স্মেল, লো টোনের লাইটিং, বাদামী দেয়ালে বাধাই করা স্কেচগুলো, বুকশেল্ফ ভর্তি বই, সবকিছু দেখে একটা ভালো লাগা কাজ করছিলো ওর । প্রেসক্রিপশন এর কাগজ টা হাতে নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসলাম । এসে রীতিমত 'থ' ।

- আপনি আমার বাসা চিনলেন কিভাবে?
- (সোফা ছেড়ে উঠে) শুনলাম আপনি নাকি পরিনীতাকে নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছেন?

মুচকী হাসলাম । প্রেসক্রিপশন এর কাগজটা পকেটে রেখে দিয়ে পাশের সোফাটাতে গিয়ে বসলাম । ওকে খুব ভালো ভাবে খেয়াল করলাম । কপালে ছোট্ট করে একটা হলুদ টিপ, সাদা রঙ এর ব্লাউজের সাথে ম্যাচিং করে হলুদ একটা শাড়ি, আর খোলা চুল । ভালো লাগছিলো বেশ । বললাম,

- উপলক্ষ্য কিসের?
- উপলক্ষ্য মানে?
- শাড়ি পড়ার ।
- ওহ । তেমন কিছু না । শাহবাগের দিকে গিয়েছিলাম হাটতে হাটতে । পরে ভাবলাম আপনার সাথে একটু দেখা করে যাই ।
- বাসা চিনলেন কিভাবে?
- আরে আজব তো! আপনি তো দেখছি সবই ভুলে গেছেন!
- মানে?
- একদিন হাটতে হাটতে আপনার বাসার নিচ পর্যন্ত আগিয়ে দিয়ে গিয়েছিলাম, মনে নেই?
- (হেসে দিলাম) ওহ আচ্ছা, হ্যা, মনে পড়েছে । অদ্ভুত আপনি, সব মনে রাখেন ।

টুকু (আমার কাজিন) এসে কফি দিয়ে গেলো দুজনকে । পরী খুশি হলো বেশ, বললো,

- খুব কফি খেতে ইচ্ছে করছিলো । (টুকু কে) থ্যাঙ্ক ইউ ।
- (কফি হাতে নিয়ে) শুনলাম আপনার বই বেড়িয়েছিলো, এই বই মেলায় ।
- (চুমুক দিয়ে) সেটা দিতেই তো এলাম ।
- ও তাই নাকি?
- জ্বি জনাব ।

পাশে রাখা বইটা হাতে নিয়ে রীতিমত ধমকের সুরে বললো,
- ধরুন ।

হাতে নিলাম বইটা । ভীষন অবাক হলাম টাইটেল দেখে ।

- সিরিয়াসলী?
- কি?
- 'বিক্রমাদিত্য ভীষন গম্ভীর প্রকৃতির ছিলো'!? এটা টাইটেল?
- হ্যা, তো কি হয়েছে?
- আমাকে নিয়ে লিখেছেন?
- আমাদের নিয়ে লিখেছি ।
- দারুন তো । (বই খুলে দেখা শুরু করলাম) নিশ্চয়ই পুরো বই টা ভীষন রকমের ভারী ভারী শব্দভান্ডারে পরিপুর্ন করে রেখেছেন?
- (ফিক করে হেসে) হাহাহাহাহা! ভালো বলেছেন ।
- বিক্রি কেমন হয়েছে? সত্যি করে বলবেন!
- মোটামুটি । মজার ব্যাপার কি জানেন?
- বলেন নি এখনো, কি করে জানবো!
- এক পাঠক এসে একদিন খুব আগ্রহের সাথে বইটা নেড়েচেড়ে দেখলো, কিনলো । পড়ে শেষ করে পরেরদিন এসে জিজ্ঞেস করলো, 'বিক্রমাদিত্যের সাথে আপনার সত্যিই কখনো প্রেম হয়নি?'

হেসে দিলাম দুজন । বললাম,

- কি বললেন জবাবে?
- কি আর বলবো, সত্যিটাই বললাম । 'জ্বি না, হয়নি' ।
- সে সম্ভবত এটাকে করন জোহরের লেখা কোনো গল্প ভেবেছিলো !
- (মুচকী হেসে) হয়তো, কি জানি ।
- যাক, ভালো লাগলো বেশ ।
- (খানিকক্ষন চুপ থেকে) একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
- হুম, সিউর ।
- আমাকে মিস করেন নি এতদিন?
- এতদিন কই হলো, আটমাস কি সাতমাসের মত হবে আপনার সাথে দেখা হয় না । আর, মিস করেছি, হ্যা অবশ্যই । তবে, করন জোহরের স্টাইলে না!

মুচকী হাসলো পরী । ওর মুচকী হাসিটা দেখতে ভীষন ভালো লাগে কেনো যেন । হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বললো,

- আচ্ছা, এই শহর থেকে দুরে কোথাও কখনো চলে গেলে কোন জিনিস টাকে সবচেয়ে বেশী মিস করবেন?
- হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
- বলুন না ।
- (কিছুক্ষন চুপ করে থেকে) আপনাকে ।
- রিয়েলী?
- সেদিন মোবারক ভাইয়ের দোকানে চা খাচ্ছিলাম, আপনার কথা বেশ মনে পড়ছিলো ।
- আপনাকে না আসলে, গাছের গুড়ির সাথে বেঁধে পেটানো উচিত!
- হাহাহাহাহা!
- এভাবে হুট করে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন? সত্যি করে বলুন, প্রেমে টেমে পড়েননি তো?
- [না-সূচক মাথা নেড়ে]
- আপনার চোখ বলে দিচ্ছে, আপনি নিশ্চিত কারো প্রেমে পড়েছেন, বলে ফেলুন ঝটপট, তথ্য গোপন রাখা হবে!
- কেনো, প্রেমে না পড়লে বুঝি হারিয়ে যাওয়া যায় না?
- (কিছুক্ষন চুপ থেকে) প্রেমে না পড়লে, হারিয়ে যাওয়ার কি মানে?
- [চুপ]
- [চুপ]
- আমার না ভীষন হাটতে ইচ্ছে করে ইদানিং, রাতে, নিয়ন বাতির রাস্তায়, একা, একদম একা । কেউ থাকবে না পাশে, রাস্তার আলোয় রং খেলতে খেলতে রঙ্গিন হতে ইচ্ছে করে ভীষন । (হঠাৎ চুপ হয়ে গেলাম)
- এই বিক্রমাদিত্যকেই আমি খুজি সবসময় ।
- (নিরবতা ভেঙ্গে) খুজে পেলেন?
- নাহ, তবে পেলে জানাবো!

পরী সোফা ছেড়ে উঠে পড়তে পড়তে বললো,

- আজ তাহলে উঠি ।
- হ্যা সিউর ।
- নেক্সট দিন, আপনার বই বের করার প্ল্যান শুনবো ।
- জ্বি । আমি কিন্তু আমার বইয়ের টাইটেল পেয়ে গেছি ।
- কি?
- 'পরিনীতার সাথে বিক্রমাদিত্যের আদৌ কোনোদিন দেখা হয়নি'

দুজন হেসে উঠলাম । হাসতে হাসতে পরী বিদায় জানিয়ে বের হতে যাবে, হঠাৎ খেয়াল করলাম, বাইরে বৃষ্টি পড়ছে । ওকে একটু দাড়াতে বলে, আমার ছাতা টা নিয়ে আসলাম,

- নিন, ধরুন ।
- সে কি, লাগবে না, নিচে গিয়ে রিক্সা নিয়ে নিলেই হবে, হুডি উঠিয়ে ঠিক চলে যেতে পারবো । আর, আজকে এমনিতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে মন চাচ্ছে ভীষন ।
- আহহা । ছাতা দিতে চাচ্ছি, কারন এই ছাতা টার অযুহাতেও অন্তত একদিন দেখা করা যাবে ।
- দেখা হবে তো ।
- হবে তো?
- জ্বি আজ্ঞে, শুধু বিক্রমাদিত্য আগের
মত হারিয়ে না গেলেই হবে ।
- আচ্ছা, ঠিক আছে । তবে তাই হোক, দিলাম না আপনাকে ছাতা, ভিজে বাড়ি যান ।
- (হেসে দিয়ে) ওকে, টাটা ।

পরী চলে গেলো । আমি বইটা হাতে নিয়ে সোফাতে বসে পড়ি । টুকু কে বললাম কফি আরো এককাপ দিয়ে যেতে । বইটা নিয়ে বেশ এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে । যে মেয়েটাকে নিয়ে আমি রাতের পর রাত জেগে ব্লগে লিখি, সে মেয়েটাই কিনা আমাকে নিয়ে লিখে ফেললো, লিখেছে বলতে একদম বই-ই বের করে ফেলেছে, ভাবতেই পারছি না । নাহ, আজই শেষ করে ফেলতে হবে বইটা, এক্ষুনি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ রাত ১১:০২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×