somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১টা সাদা অন্ধ দুঃস্বপ্ন!!!

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিনও বরাবরের মত সকাল 4pm (!) এ ঘুম থেকে উঠে ফেইসবুকে বসলাম... নোটিফিকেশন আর সবার স্ট্যাটাস দেখতে দেখতে হঠাত ব্যাপারটা চোখে পড়ল... প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তানে নাকি অদ্ভুত ১মহামারি শুরু হয়েছে... রোগের নাম "শ্বেত অন্ধত্ব" !!! আমি তো আর ডাক্তার না... রোগ ব্যাধি সংক্রান্ত জ্ঞান খুব সীমিত... হতেই পারে ভেবে অন্য কাজে মনে দিলাম! সেদিন রাতেই দেখলাম মহামারী ভার্চুয়াল জগতকেও বেশ আক্রান্ত করেছে! ফেইসবুক আর ব্লগে অনেক আলোচনা-সমালোচনা পেলাম... এর বেশ কয়েকটা পড়েও ফেললাম। বুঝলাম পাকিস্তানের অবস্থা এই মুহুরতে বেশ খারাপ!!! তাদের দেশে অর্ধেক মানুষ অন্ধ হয়ে গিয়েছে... সিনড্রোমটা বেশ অদ্ভুত... এই রোগে আক্রান্ত লোকজন চোখে অন্ধকার দেখে না... তার সব কিছু সাদা দেখে... দুধের মত সাদা!! ওখানে কি হইছে না হইছে আমার কি!!!! দিলাম ঘুম!!

পরদিন খবর পেলাম, শ্বেত মহামারিতে ভারত আক্রান্ত!!! তাদের দেশেও গনহারে লোকজন অন্ধ হয়ে যাচ্ছে... চারিদিকে সাদা দেখে!! ভারতের দাবি এটা নাকি পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র!! অবশ্য পাকিস্তান আগেই দাবি তুলেছিল এটা ভারতের ষড়যন্ত্র... তারা সিস্টেম করে পবিত্র পাক ভুমির উপর জীবানু অস্ত্র প্রয়োগ করেছে!! এটা মুসলিম উম্মাহের বিরুদ্ধে মুশরিকদের ষড়যন্ত্র! যার সাথে কিনা ইহুদী- নাসারা শক্তির চিরন্তন যোগ আছে বলে তাদের দেশের অন্ধ মোল্লারা অনেক রিসার্চ করে মত প্রকাশ করেছেন!! এর ১মাত্র প্রতিকার হচ্ছে শান্তিযুদ্ধ জিহাদ!!! কিন্তু পাক আর্মির জেনারেল যে জানাচ্ছেন তার বেশির ভাগ সেপাই অন্ধ!!! তো কি হইছে!!! মোল্লারা ব্রেইল পদ্ধতিতে কোরান হাদিস পড়েছেন... যারা আল্লার রাস্তায় অন্ধ হয়েছেন... তাদের চোখ জান্নাতে যাবে!! অনেক ধার্মিক ব্যক্তি অন্ধ অবস্থায় জিহাদ করেছেন, অনেকে ডাইরেক্ট জান্নাতবাসিও হয়েছেন!! নবি-রাসুল, শহীদ-গাজিদের পথ ধরে মুসলিন জাতির উপর কাফের- মুশ্রিক নিধন ফরজ হয়ে গিয়েছে!! এদিকে ভারতের অন্ধ পুরোহিতরা কিন্তু বসে নেই... তারাও ব্রেইল পদ্ধতিতে গীতা, রামায়ন, বেদ পড়েই যাচ্ছেন!!! তারা অনেক গবেষনার পর জানলেন কলি যুগে এইরকম ধর্ম যুদ্ধ হবে!! এটা বেদে বলা আছে!! কিন্তু যোদ্ধারা যে সব অন্ধ!! আরও ভালো... দেখা দেখির টাইম নাই!! না দেখেই সব যবন কতল করে ফেলা উচিত!!! সবাই কুচকাওয়াজ করে পুন্যের পথে যুদ্ধ করতে যাও!! দৃষ্টি গিয়েছে তো কি হয়েছে!! ধর্ম তো আর যায় নাই!!

এদিকে ভারত-পাকিস্তান সম্ভাব্য যুদ্ধ নিয়ে পুরা বিশ্ব গরম!! আর দক্ষিন এশিয়ায় দ্রুত সংক্রামক অন্ধত্ব নিয়েও মিডিয়া সরগরম!! মার্কিন আর চীন দেশে নীতি নিরধারকরা চিন্তিত!! এদিকে আবার বদমায়েশ উইকিলিকস রটিয়ে দিয়েছে বুশ, ওবামা সবাই নাকি অন্ধ!!! হইলে হইসে!! মহারাজ বারাক ওবামা তো গিলানী, মনমোহনের মত অন্ধ না!! ওরা সাদা দেখে, ওবামা হয়ত দেখে নীল, চীনারা দেখে লাল!! যাই দেখুক এসব তৃতীয় বিশ্বের বর্বর জাতিদের থেকে তো তারা অনেক এগিয়ে আছে!! ভেবে শান্তি পায় নীতি নির্ধারকরা!!! আমাদের দেশেও তোলপাড় কম হচ্ছে না... চায়ের দোকানগুলা অনেক বেশি উত্তপ্ত! এই মহামারীর ফল কি হবে এটা নিয়ে সবাই অনেক উদ্বিগ্ন!!! ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হলে কে কাকে সমর্থন করবে এটা নিয়েও অনেক গোলমাল হচ্ছে! ইতিমধ্যে ২দেশেরই ফ্যান ক্লাব গড়ে উঠেছে!! ২ফ্যান ক্লাবের কাঁদা ছুড়োছুড়ি, একে অপরের বিরুদ্ধে লেখা লেখি, ভদ্র-অভদ্র ভাষায় গালাগাল জোরেসোরেই চলছে!! ফ্যান ক্লাবরা গবেষনা করে বের করেছে ভারত ও পাকিস্তানের অন্ধত্বের সাদা আসলে এক না!! সবাই নিজেদের অন্ধত্বের সাদাকে পবিত্র ও অন্যের সাদাকে অপবিত্র বলে দাবি করছে!! "আমাদের দেশে মহামারি শুরু হলে আমাদের করণীয় কি?? " এই শীর্ষক সেমিনার, সভা অনুষ্ঠিত হল!! কিন্তু প্রতিকার নিয়ে কারও মাথা থেকে কোন আইডিয়া বের হল না!!

একদিন বাংলাদেশে চলে আসল মহামারী! আমাদের দেশের আবহাওয়া সংক্রামক ব্যাধির বিস্তারের জন্য খুব উপোযোগী!!! কয়েক ঘন্টার মধ্যে অন্ধ হয়ে গেল পুরা দেশ! ২ফ্যান ক্লাব উত্তেজিত... ব্যাধি ভারত থেকে সংক্রামিত হয়েছে না পাকিস্তান থেকে এটা নিয়ে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করল!! দৃষ্টি গ্যাছে তো কি হইছে...হাত-পা তো আর যায় নাই!! দাঙ্গা-হাঙ্গামা, খুন- ধর্ষণে কিছুক্ষণের মধ্যে দেশের অবস্থা দুর্গন্ধময় হয়ে উঠল!!

ভারত-পাকিস্তান অবশেষে তাদের শান্তিযুদ্ধ (!) শুরু করল! এগিয়ে চলল অন্ধ যোদ্ধা- সেপাইরা, ছুটে চলল শত শত পৃথ্বী, ঘুরি আরও কত অন্ধ ক্ষেপণাস্ত্র!!! যোদ্ধারা-সিপাইরা আর মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পুন্য হাসিল করতে পারল না! অনেক দূর থেকেই তেজস্ক্রিয়তায় গলে গেল লক্ষ- কোটি যোদ্ধা- সেপাই!! মার্কিনীরা আর চীনারা আর কতক্ষণ ধৈর্য ধরে বসে থাকবে... তারাও সুইচ টিপে দিল!! প্রশান্ত মহাসাগর অশান্ত করে ছুটে চলল আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র!!!

যুদ্ধ শেষে যখন পাখির চোখে পৃথিবীকে দেখা হয় তখন মনে হয় পৃথিবীটা ১টা সাদা খাতা!! বিরান ভুমি... যেন বিশাল ১ইরেজার দিয়ে কেউ মুছে দিয়েছে সভ্যতার ইতিহাস! পুরো পৃথিবী আজ বরণ করে নিয়েছে শ্বেত অন্ধত্ব!!!

(inspired by BLINDNESS by Jose Saramago)
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×