somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তচিন্তার বিকাশ বনাম অরগানাইজড নাস্তিকতা

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরিবর্তনের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে যুগে যুগে অনেকেই প্রথা ভাংতে সামনে এগিয়ে এসেছেন, প্রচলিত কুপ্রথাগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, প্রথা ভেঙ্গে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। এভাবে প্রথা ভেঙ্গে তৈরি হয় নতুন প্রথা। নতুন প্রথা ভালো হতে পারে কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেটা পুরানো হয়ে পড়ে তখন আবার প্রথা ভাঙ্গার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়। পুরানো প্রথার প্রতি ১টা সময় মানুষ আবেগী হয়ে পড়ে... প্রথা প্রগতির, মুক্তচিন্তার গলা চেপে ধরে। আর তখনই সেটা ত্যাগ করতে হয়। আর এই প্রগতির মুল হাতিয়ার হল মুক্তচিন্তা! যে সমাজ যত যুক্তিশীল, যত মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারে, তাদের উন্নতি তত তরান্বিত হয়!

বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের ১টা দেশ। এই মুহূর্তে আমাদের দেশের দিকে তাকালে হেন কোন সমস্যা নাই যা আমরা দেখতে পাই না। ক্রমবর্ধমান শিক্ষার হার (নাকি পাশ করা বেকারের সংখ্যাবৃদ্ধির হার!!!) আমাদের দেশে তৈরি করেছে শিক্ষিত সচেতন ১টা প্রজন্ম। তারা দেশ নিয়ে চিন্তা করে। দেশের ক্রমবর্ধমান সমস্যাগুলো দেখে তারা উদ্বিগ্ন হয়, বিক্ষুদ্ধ হয়। ফুঁসে উঠে বিপ্লবী চেতনা। ১টা বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা তারা অনুভব করে। কিন্তু চেতনা যে আগুনের মত! তাকে যদি যুক্তি-বুদ্ধি-বিবেক দিয়ে সঠিক পথে চালিত করা যায় তবে চেতনা ব্যক্তিকে করে তোলে মহান আর যদি তা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় তাহলে কিন্তু তা ব্যক্তি ও তার আশেপাশের সবাইকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, অনেক বিপ্লবই শুরু হয় কল্যানের জন্য কিন্তু ১টা সময় বিপ্লব বিপথগামী হয়ে যায়। বিপ্লবীরা মুক্তচিন্তা করে কাজ শুরু করেন, ১টা সময়ে তারা আবেগী হয়ে পড়েন, যুক্তির শানিত ছুরি দিয়েও আবেগের মায়াজাল কেটে বের হয়ে আসতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় জনগনের চেতনার আগুন নিয়ে খেলা করে প্রতিক্রিয়াশীলরা। তারা চেতনাকে ভুল পথে চালিত করে নিজ স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে।

আমাদের দেশে চিন্তাশীলতা ও যুক্তির পক্ষে ও গোঁড়ামি, প্রচলিত কুপ্রথার বিরুদ্ধে ১টা জাগরন তৈরি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তরুন প্রজন্ম যুক্তির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত করছে অপ- বিশ্বাসের অন্ধত্বকে। আজকে হয়ত আমরা অনেক কিছু নিয়ে যুক্তি-তর্ক-প্রশ্ন করতে পারি যা নিয়ে ১০বছর আগে কথা বললে ঘাড়ের উপর কল্লাসমেত বাসায় ফেরত আসা যেত না। আজকালও আক্রমন হয় না যে তা নয় তবে আগের চেয়ে মানুষের ভিতরে যুক্তিশীলতা ও অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ব্যপারটা অনেক বেশি তৈরি হয়েছে। ফেইসবুক ও ব্লগে আমাদের যুক্তিপূর্ণ মতামতগুলো ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। অনেক আশা যে, মুক্তচিন্তার এই প্রসার থেকে আমাদের সমাজে বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি হবে, আমরা জাতি হিসেবে আরও অনেক এগিয়ে যাব। আজকাল একটু বেশি হতাশা চলে আসে। আমাদের সামগ্রিক মুক্তচিন্তাটা কেন যেন ধর্ম ও বিশ্বাসের গ্যাড়াকলে আটকা পড়ে গিয়েছে। মুক্তচিন্তা আর ধর্ম ও বিশ্বাসকে আক্রমন দুইটা সমার্থক শব্দ হয়ে গিয়েছে! ধর্মকে বা বিশ্বাসকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না এটা আমি কখনো বলি না। যেকোন আজেবাজে অনুশাসনের বিরুদ্ধে যুক্তিপূর্ণ প্রশ্ন তোলাটা, খারাপ কিছুর প্রতিবাদ করাটা অবশ্যই উচিত। তাই বলে ধর্ম নিয়ে লেবু কচলাতে কচলাতে আমরা কি আমাদের বাকি বিষয়গুলো ভুলে যাব? আস্তিক- নাস্তিক ২পক্ষের লোকজনই যে পরিমান সময় প্রাচীন কিতাব/পুঁথিগুলো নিয়ে কাটান সেই সময়টা যদি বিজ্ঞানকে/ দেশকে দিতেন তাহলে কি আমাদের উন্নতি আরও তরান্বিত হত না? তার্কিকদের অনেকেই দারুন প্রতিভাবান এটা পোস্ট পড়লেই বুঝা যায়।

আমার কাছে মনে হয় কোন ১টা বিষয় নিয়ে বেশি মত্ত হয়ে থাকাটা (যেটাকে বায়াসড হয়া বলে) সৃজনশীলতার জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আমরা আসলে এই টপিকসটাতে এতই মত্ত হয়ে যাই যে অন্যান্য বিষয় আমাদের মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। যেমনঃ আমাদের ঢাকা শহরের সামগ্রিক অবস্থা, নাগরিক সুবিধাদি এসব নিয়ে অনেক দিন কারও কোন চিন্তা দেখি না। ঢাকার ব্যপারটা আমি উদাহরন হিসেবে দিলাম। আমাদের সমস্যা তো অঢেল। অন্যান্য বিষয় কি আমাদের একটু চিন্তা ভাবনার অবকাশ রাখে না? আমাদের বিজ্ঞানমনস্কতাও ধর্ম কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। বিবর্তন আর মহাবিশ্বের উৎপত্তির পাশাপাশি বিজ্ঞানের অন্যান্য অনেক বিষয়বস্তু নিয়ে তো মুক্তচিন্তা ও প্রকাশ প্রসারের দরকার আছে। রাজনীতি নিয়ে আমরা অনেক চিন্তা করি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় আলোচনা আমাদের চায়ের দোকানের আলোচনার মত প্রচলিত রাজনীতিকে গালাগালি, রাজনীতিবিদদের গোষ্ঠি উদ্ধার আর একে অন্যেকে আক্রমনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এগিয়ে যাওয়ার উপায় বা সমাধান নিয়ে আমরা কথা বলি খুব কম!

কেন জানি আশে পাশে তাকালে মনে হয় নাস্তিকতা জিনিসটা আসলে ১টা "অরগানাইজড ধর্মের" রুপ নিচ্ছে। জিনিসটা মানুষের কাছে আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রসার পাচ্ছে। ব্লগ ও ফেইসবুকে ধর্মের খারাপ দিক গুলো নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ নাস্তিকতার দিকে ঝুঁকছে। প্রায়ই ১টা জিনিস দেখা যায় মান আসলে পরিমানের ব্যস্তানুপাতিক। আগে মানুষ নাস্তিক হত নিজেদের যুক্তিমনস্কতা থেকে আর আজকাল অনেকে নাস্তিক হয় ব্লগে/ফেইসবুকে কিছু পোস্ট থেকে জ্ঞান লাভ করে! বাঙ্গালির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী দেখা যায় তারা ব্যপারগুলা যুক্তির মানদন্ডে ফেলে দেখে না। যার ফলে বিশ্বাস ত্যগ করলেও তাদের ভিতরে যুক্তিমনস্কতা উন্নত হয় না। গোঁড়ামি থেকে তারা বের হতে পারে না। তারা জিনিসটাকে সস্তা প্রচার করতে চায়। এই ক্ষেত্রে প্রচারের প্রধান হাতিয়ার হয় আক্রমন! তাদের আক্রমন থেকে আরও কিছু লোক নাস্তিক হয়। এভাবে চেইন রিএকশনে দেখা যাবে এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে! নির্দিষ্ট ১টা গোষ্ঠি যখন মনে করে তারা অন্যন্যদের চেয়ে ভিন্ন দর্শনে (বিশেষতঃ ধর্মীয় দর্শনে) বিশ্বাসী, তখন তারা অন্যদের চেয়ে নিজেদের আলাদা করতে নিজস্ব কিছু রিচুয়াল, নিয়ম কানুন তৈরি করে ফেলে। নাস্তিকদের লাশ মেডিকেলে দান করার ব্যপারটাতে অনেকেই ভবিষ্যত রিচুয়ালের গন্ধ পান। এখনই দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে তাদের ভক্ত সমর্থকরা পীরের আসনে বসিয়ে দিয়েছেন। তারা কোন কথা বললে তা শিরোধার্য, যুক্তি দিয়ে বিচার করার প্রয়োজনীয়তা কেউ বোধ করেন না। পীরের বক্তব্যের কেউ যৌক্তিক প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে মুরীদদের আক্রমন নতুন কিছু না! এটা কি প্রচলিত ধর্ম গুলোর মত মতামত অসহিষনুতা না? সাম্যবাদ জিনিসটা অনেক আগেই ধর্মের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। কার্ল মার্ক্সকে নবি মানে, দাস কাপিটাল, মেনিফেস্টোকে কুরান মানে এমন অনেক লোক আছে। আমাদের ফেইসবুকের মুমিন বান্দারা যেমন কুরান কোনদিন বুঝে পড়ে না, তেমনি তাদের আচরন দেখলেও মনে হয় মেনিফেস্টোকে তারা ধর্ম গ্রন্থ হিসেবে যথার্থ সম্মান দিচ্ছে! কিন্তু আপনি সমালোচনা করতে যান। তাদের চেতনায় আঘাত লাগবে। আপনাকে কাফির, মুশরিক সম্মোধন না করলেও শ্রেনী শত্রু সম্মোধন করে দা-বটি নিয়ে কোপাতে দৌড়ায় আসবে। তেমনি ডকিন্স/ডারউইন সাহেবকে নিয়ে কিছু বললে কিছু লোকের তোপের মুখে পড়তে পারেন। আসলে মুক্তচিন্তার বিকাশ ছাড়া নাস্তিকতা কেন যে মতবাদই প্রচার করেন না কেন তার ফলাফল ১টাই... গোঁড়ামি, হানাহানি, অসহিস্নুতা ইত্যাদি ইত্যাদি। উদাহরন দিতে পারি, কম্বোডিয়ায় পল পটের আমলে খেমার রুজের গনহত্যা। তারা তো নাস্তিকতা আর সাম্যবাদই প্রচার করেছে। আপনি হয়ত ধর্ম পছন্দ করেন না, তাই বলে নিশ্চয়ই ২০লাখ মানুষ মারা, ধর্মীয় সম্প্রদায় নিশ্চিহ্ন করা, বুদ্ধিজীবি হত্যা ইত্যাদি সমর্থন করবেন না? যুক্তিহীন মুক্তচিন্তাহীন যেকোন দর্শন প্রচার কেবলই জন্ম দিতে পারে আরেকটি নতুন সহিংস ধর্মের। আমাদের আসলে বিবেচনা করা উচিত, বিপ্লবটা কিসের জন্য হওয়া উচিত? মুক্তচিন্তার বিকাশের লক্ষ্যে না অরগানাইজড নাস্তিকতা প্রচারের লক্ষ্যে??
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×