বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হল বিবর্তনবাদ... অন্য যেকোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের চেয়ে এটা নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা অনেক বেশি! যদিও তত্ত্ব হিসেবে গুরুত্বের দিক দিয়ে এটা নিউটনের মহাকর্ষ সুত্রের চেয়ে কোন অংশে কম না! তাও দেখা যায় বিবর্তনকে ভুল প্রমানের জন্য যে পরিমান চেষ্টা মহাকর্ষ সুত্র ভুল প্রমানের জন্য এর সিকিভাগের একভাগ চেষ্টাও নেই! যদিও এই চেষ্টাটা আমাদের এদিকে একটু বেশি বলা চলে... বিশ্বের খ্যাতনামা অধিকাংশ বিজ্ঞানী ব্যাপারটাকে সত্য হিসেবে মেনে নিয়েছেন... জীববিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে এটা বিজ্ঞানের অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য একটা সত্য! তাও আমাদের এটা মেনে নিতে এতো কষ্ট কেন? সত্যটা মেনে নিলে সৃষ্টিতত্ত্বের আদম-হাওয়া টাইপ বিষয়গুলার উপর আঘাত আসে? এজন্য? নাকি আমাদের পূর্বপুরুষ স্বর্গে ছিল এটা বিশ্বাস করাটা অনেক স্বস্তিকর? বানর আর মানুষের পূর্বপুরুষ একই এই কথাটা শুনলেও অনেকের ইগোতে লাগে! যাই হোক, সত্য/বিজ্ঞান তো কারও বিশ্বাস, স্বস্তি, ইগো এসবের জন্য বসে থাকে না... সে তার নিজস্ব গতিতে চলতেই থাকে! কে কি বিশ্বাস করে না করে সেটা নিয়ে লেখতে বসি নি... শিক্ষা ব্যবস্থায় বিবর্তনকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাতে চাই!
বিবর্তনকে আপনি অস্বীকার করেন/না করেন, এর ফলিত বিষয়গুলো যেমনঃ ইভ্যুলুসনারি বায়োলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেক এসব তো আর অস্বীকার করা সম্ভব না!! (অনেকে অবশ্য অস্বীকার করে ফেলতেও পারেন... গতকাল ধর্মীয় বিষয় নিয়ে তর্ক করতে করতে আমার ১ বন্ধু জ্যোতির্বিজ্ঞান ও চিকিৎসা শাস্ত্রকে অস্বীকার করেছেন!!! সবার উপরে আল্লা ও কুরান সত্য... বাকি সব কিছু নাকি ভুয়া!!) এই বিষয়গুলা বর্তমান সময়ের অনেক কিছুর নিয়ামক এবং আমাদের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি... চিকিৎসা, কৃষি, অণুজীববিদ্যা ইত্যাদি ইত্যাদি কয়েক হাজার সেক্টর আছে যার ভিত্তি হল বিবর্তনবাদ! মোট কথা বলতে গেলে আধুনিক জীববিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে বিবর্তনের উপরে! বিবর্তন সম্পর্কে সঠিকভাবে না জেনে এই জিনিসগুলা নিয়ে আপনি সামনে এগুবেন কিভাবে? আমাদের পাঠ্যপুস্তকে আগে বিবর্তন বিষয়টা ছিল... কিন্তু পরবর্তীতে এটা বাদ দিয়ে "জৈব প্রযুক্তি" অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে... এখানে অবশ্য আমার কয়েকটা প্রশ্ন আছে... বিবর্তন ছাড়া জৈব প্রযুক্তি পড়ায় লাভটা কি? আর জৈব প্রযুক্তির নামে কাঠাল গাছে কলম করা শিখায় লাভটাই বা কি?
বিবর্তন নাকি ধর্মের সাথে কলিশন করে! আমাদের দেশে বেশ কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক্স, বায়োটেক পড়ানো হয়... সেখানেও ধরমানুভুতির উসিলা দিয়ে নাকি ব্যপারটা বিস্তারিত পড়ানো হয় না! ধর্মের সাথে আসলে বিজ্ঞানকে গুলায় লাভটা কি? ধর্ম ধর্মের জায়গায় থাকুক... বিজ্ঞান আর শিক্ষা তাদের জায়গায়... রুপকথার কাহিনীতে বিশ্বাস দিয়ে তো আর বর্তমান বিশ্ব চলে না... যাদের বিশ্বাস করার দরকার করুক আর গুহায় গিয়ে ধ্যান করুক...কিন্তু দেশের তরুন প্রজন্ম যদি গুহায় গিয়ে বসে থাকে তাহলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে কে? গোঁড়ামির কারনে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি... আর পিছিয়ে গেলে বিশ্বের সাথে তাল মিলানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে! বর্তমান অবস্থা দেখে আমার মনে পড়ে যায় ব্রিটিশ আমলে মুসলিমদের ইংরেজি শিক্ষা সংক্রান্ত ধর্মীয় জটিলতার কারনে উপমহাদেশের বিশাল ১টা জনগোষ্ঠি কয়েকশ বছর পিছিয়ে পড়ল! যাই হোক, আমরা বাঙালি অনেক ক্ষেত্রেই আবাল জাতি... আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নি না! এখন আমরা ধর্ম ধর্ম করে বিবর্তন শিক্ষা নিব না... বিশ্ব এটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি, শিল্প, চিকিৎসা, জীব- অনুজীববিদ্যা ইত্যাদি ইত্যাদি কয়েক হাজার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে আর আমরা আমাদের পৌরাণিক আদম-হাওয়া আর কল্পিত সেমেটিক ঈশ্বরের প্রতি পিরিতি ও সম্মান বজায় রাখতে গিয়ে দিন দিন প্রস্তর যুগের দিকে পিছিয়ে চলছি!!! আমেরিকানরাও অনেকদিন বিবর্তন নিয়ে চার্চের বাধার মুখে ছিল... কিন্তু তারা এখন ক্রিয়েশনিজমের মত বুলশিট অপ-মতবাদকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে! স্কুলে কলেজে এখন বিবর্তন পড়ানো হয়... ওরা এগিয়ে গিয়েছে প্রগতির দিকে! একটা সময় আমরাও হয়ত আমাদের ভুল বুঝতে পারব, সেইদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া হয়ত করার কিছু থাকবে না!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




