somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেধাপাচার- দায় কার?? মেধাবীর নাকি আমাদের????

২৫ শে আগস্ট, ২০১২ ভোর ৪:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছরখানেক আগের ঘটনা... আমাদের বাসায় বেশ উৎসব উৎসব পরিবেশ চলছে। আমার আমেরিকা প্রবাসী মামা দীর্ঘ দশ বছর পর সপরিবারে দেশে এসেছেন এবং মামী ও বাচ্চা কাচ্চাসমেত আমাদের বাসায় উঠেছেন। সেই সময় আমার প্রজেক্টের জমা উপলক্ষ্যে আমি বেশ ব্যস্ত, তাদেরকে ঠিকমত সময় দেয়ার সময় হচ্ছে না। তো একদিন একটু সময় করে তাদের সাথে আলোচনায় বসলাম। তারা আমার সাবজেক্ট স্থাপত্য সম্পর্কে অনেক উৎসাহ ব্যক্ত করলেন এবং খোঁজ খবর নিলেন। তাদের পুরা বক্তব্যতে একজন মানুষের নামই বারবার ঘুরে ফিরে আসছিল, তিনি হলেন প্রয়াত ফজলুর রহমান খান। তাদের কথা বার্তা শুনে বুঝতে পারলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার সাহেব দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত এবং তাঁর জাতীয়তা বাঙালী হওয়াতে আমার মামা মামীর গর্বের শেষ নেই! অবশ্য স্থাপত্য ও সিভিল/স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাথে জড়িতদের কাছে তিনি আক্ষরিক অর্থেই দেবতা। স্কাইস্ক্রেপারের পিতা তিনি, মানব জাতিকে উপহার দিয়েছেন টিউব ফ্রেমের মত প্রযুক্তি, যে প্রযুক্তি আমাদের হাইরাইজ ডিজাইনের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নকে ৪০ তলার সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করেছে... আমেরিকা তথা বিশ্ব পেয়েছে ১০৮ তলা সিয়ারস টাওয়ার (বর্তমানে উইলিস টাওয়ার)! টিউবের উপর ভিত্তি করে সারা বিশ্বে বেশুমার বিল্ডিং দাড়ালো... ডায়াগ্রিডে নিজের হাইরাইজ প্রজেক্ট করার সময় বারবার এই মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা অবনত হয়েছে... আর সাথে কাজ করেছে তাঁর প্রতি একটা চাপা অভিমান... যে দেশে জন্ম নিল আধুনিক স্কাইস্ক্রেপারের পিতা সেই দেশে একটা স্কাইস্ক্রেপারও নাই! এটা কেমন কথা!!! ফজলুর খান কি পারতেন না দেশে থেকে সিয়ারস টাওয়ারের মত একটা সুউচ্চ বিল্ডিং দাঁড়া করিয়ে দিতে ... এই কথা যখনই মাথায় আসে ক্ষমা করে দেই মহান প্রকৌশলীকে... বুয়েট থেকে পাশ করার পর উনি দেশে উচ্চশিক্ষা নিতেন কোথায়, উনি যে প্রযুক্তি আবিস্কার করেছেন তাঁর জন্য যে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম ও গবেষণা করেছেন সেটার সুযোগ সুবিধা পেতেন কোথায়... বাংলাদেশে এত বড় মেগা স্ট্রাকচার বানানোর উদ্যোগ কে নিত ইত্যাদি ইত্যাদি... থাক!! মহান প্রকৌশলী... আপনি বিদেশ গিয়ে ভালোই করেছেন... এই দেশে থাকলে হয়ত নিজের প্রতিভা বিকাশ হত না... এর চেয়ে বিশ্বকে কয়েক শতাব্দী এগিয়ে দিয়ে গিয়েছেন... একজন বিশ্ববাসী হিসেবে এটাই আমার অর্জন! আজকে একজন বাঙালি হিসেবে যেভাবে বুক ফুলিয়ে আপনার নামটা উচ্চারন করতে পারছি, আপনি দেশে থেকে গেলে হয়ত সেটাও পারতাম না!

স্থাপত্য/মেগা স্ট্রাকচার বিষয়ক আলোচনা করাটা এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য না, কথা বলতে চাচ্ছিলাম মেধা পাচার নিয়ে। প্রায়শই দেখা যায় মেধা পাচার বিষয়ে কোন কথা হলে আমরা মেধাবীদের দোষ দিয়ে থাকি... অনেকেরই কথা হচ্ছে আমাদের দেশের লোকজন বিদেশে যাচ্ছে কেন? এটা সত্য যে আমরা তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশ। আমাদের শিক্ষার অবকাঠামো পশ্চিমা বিশ্বের মত উন্নত হবে না এটাই স্বাভাবিক। শিক্ষার এসব দুরাবস্থার কথা তোলা হলে পাল্টা যুক্তি আসে মেধাবীরা বাইরে গিয়ে পড়ালেখা করুক সেটা সমস্যা না... কিন্তু তারা দেশে ফিরে আসে না কেন! অনেকেই এর ভিতরে সাম্রাজ্যবাদী অথবা পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পান... কিন্তু একবারও কি আমরা ভেবে দেখেছি এই লোকগুলো দেশে এসে করবে কি? দেশে তাদের গবেষণা/ তাদের প্রতিভার উপযোগী কর্মসংস্থানের কথা আমরা কয়বার চিন্তা করি/ এসব ব্যপারে আমাদের/ আমাদের কর্তৃপক্ষের সচেতনতা কতটুকু? সামাজিক অবস্থানের একটা ব্যাপারও কাজ করে। অর্থনৈতিক ব্যাপার আছে! ধরেন আপনি বাইরে থেকে অনেক উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করলেন এবং সেখানে আপনি সামাজিকভাবে অনেক সম্মানের পাত্র। এরপর দেশের টানে দেশে ফিরে আসলেন। এখানে এসে আপনার উপযোগী কোন কাজ আপনাকে দেয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি মূর্খ রাজনীতিবিদ/ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মর্যাদা আপনার চেয়ে বেশি/ তাদের হাতে আপনাকে জিম্মি হয়ে থাকতে হচ্ছে! তার উপর সেই দেশে যত কামাতেন এখানে তার চেয়ে অনেক কম ইনকাম করতে পারছেন। এরপর কি আপনি দেশের কথা চিন্তা করবেন না পশ্চিমা বিশ্বে এফ আর খানের মত দেবতা হয়ে থাকতে চাইবেন? বিবেচনা আপনার! এই ব্যাপারে ভারতের উদাহরণ দেয়া যায়। ভারতের শিক্ষার অবকাঠামো কিন্তু একটা সময় আমাদের চেয়ে খুব একটা উন্নত ছিল না। তাদের দেশ থেকেও অনেক লোকজন বিদেশে পড়ালেখা করতে যেত এবং এখনও যাচ্ছে। কিন্তু তাদের দেশে মেধাবীরা ফিরে আসে কারন তারা তাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করেছে, তাদের দিয়েছে সম্মান! আজকে দেখা যায় বিশ্বের শীর্ষ মেধাবী ও প্রভাবশালীদের তালিকা করলে সেখানে বেশ কয়েকজন ভারতীয় খুঁজে পাওয়া যাবে। আর আমাদের দেশের বর্তমান সামাজিক অবস্থায় একটা ছেলে বিশ্ব বরেণ্য প্রতিভাবান হওয়ার চেয়ে নোংরা রাজনীতিবিদ হওয়াকেই বেশি প্রাধান্য দিবে কারন একটাই-সামাজিক প্রতিপত্তি! আপনার-আমার কাছে এই মুহূর্তে একজন আদর্শ শিক্ষক/ গুনীজনের চেয়ে একজন মূর্খ মন্ত্রী/এমপির গুরুত্ব বেশি! তারপরও অনেকে গুণীজন সকল বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে দেশে পড়ে থাকেন। আমরা তাদের সুযোগ সুবিধা কি দিব, অধিকাংশ মানুষ তাদের সম্পর্কে জানেই না! জামাল নজরুল ইসলাম স্যারের মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন গণিতজ্ঞ ও কসমোলজিস্ট আমাদের দেশেই বসে আছেন অথবা মাজহারুল ইসলাম স্যারের মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি আমাদের দেশেই এতোদিন ছিলেন, আমরা অনেকেই হয়ত তাদের নাম শুনি নি! কিন্তু আবুল মন্ত্রীদের আমরা বসিয়ে রেখেছি রাজকীয় সম্মানের আসনে! হয়ত আমাদের সমাজের এই অবস্থাটা বুঝেই ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ মন্তব্য করেছিলেন, "যে দেশে গুণীর কদর নেই সেই দেশে গুণী জন্মগ্রহন করেন না!"

যাই হোক আমাদের দেশে লিপু নামে একজন প্রতিভাবান ভদ্রলোক আছেন, যার কথা আমরা সবাই হয়ত জানি। তিনি সস্তায় দেশীয় প্রযুক্তিতে ফেরারী, মার্সিডিজ আরও কি কি গাড়ি তৈরি করে তাঁর অসামান্য প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। শুনলাম তিনি নাকি সরকারের ৬লাখ টাকা দিয়ে টাটা ন্যানো গাড়ি আমদানির কথা শুনে একটা গাড়ি তৈরির প্রকল্প নিয়েছেন যেটাতে খরচ পড়বে ২লাখের মত এবং তা তেল-গ্যাস-বিদ্যুত তিন ধরনের জ্বালানীতে চলতে সক্ষম! তিনি নাকি তাঁর গাড়ি প্রকল্প বাবদ সরকারের প্রিষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন... সরকার তাঁকে পৃষ্ঠপোষকতা তো করেই নি, উল্টা তাঁর গাড়ির উপর ট্যাক্স দাবি করে বসেছে!! যাই হোক হয়ত একদিন দেখতে পাবো ফজলুর খানের মত লিপু সাহেব পশ্চিমা বিশ্বের কোন এক দেশে দেবতার আসনে!! ভবিষ্যতে যন্ত্রপ্রকৌশলের কোন এক ছাত্র হয়ত আমার মত তাঁর কথা চিন্তা করে শ্রদ্ধাবনত হবে, তিনি বাঙ্গালি, তাঁর জন্ম বাংলাদেশে এটা ভেবে হয়ত গর্ব ও অভিমান মিশ্রিত জটিল এক আবেগে ভারাক্রান্ত হবে! সেদিনও হয়ত বিশ্ব মানবের জন্য একজন বাঙালির অবদান খুঁজেই আমাদের শান্তি পেতে হবে... আমাদের দেশে একটা গাড়ির কারখানা/ বিশ্ব মানের গাড়ির কোন ব্র্যান্ড হয়ত স্কাইক্রেপারের মতই অধরা স্বপ্ন রয়ে যাবে!

প্রাসঙ্গিক লিঙ্ক- http://en.wikipedia.org/wiki/Willis_Tower
http://en.wikipedia.org/wiki/Jamal_Nazrul_Islam
http://en.wikipedia.org/wiki/Muzharul_Islam
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×