সাম্প্রতিক সময়ে জামাত শিবির নিধন এবং নিষিদ্ধ করার দাবীতে মিডিয়া এবং আওয়ামী রাজনৈতিক বলয়ের পক্ষ থেকে আক্রমনান্তক এবং হিংসাত্মক বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতিকে একটি অস্তিতিশীল এবং আগ্রাসী জায়গায় উপনীত করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জামাত শিবির নিধনের এই গুরু দায়িত্ব দেশের সোনার ছেলে ছাত্রলীগের হাতে অর্পন করেছেন। আর তারই ধারবাহিকতায় সারা দেশব্যাপী চলছে নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৪০ বছর পর বাংলাদেশের গণমাধ্যম পাকিস্তান-বাংলাদেশ কাল্পনিক একটা যুদ্ধের অবতারনা করেছেন। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি হিশাবে একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে দাঁড় করিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন। আমরা এই বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই।
আজকের বিডি নিউজের একটি সংবাদ হচ্ছে-
উত্তরায় পুলিশের ওপর জামায়াতের হামলা
ছবিটির দিকে তাকালে দেখা যায় যে, পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করছে। কিন্তু সংবাদের হেডিং হচ্ছে, তার বিপরীত! শুধু বিডি নিউজ নয়। অধিকাংশ মিডিয়া ঘটনার বিপরীত নিউজ করছে। কিন্তু কেন? বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা একটু পেছনে যেতে চাই। ইরাক-আমেরিকা যুদ্ধে পশ্চিমা গণমাধ্যমের ভূমিকার দিকে তাকালেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। ইরাকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে ইরাকের উপর হামলা করা হয়। আর এই হামলাতে গণমাধ্যম এবং মিলিটারি সমন্বিত হয়ে অংশ গ্রহন করে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যুদ্ধের কৌশল হিশাবে "এমবেডেড জার্নালিস্ট" অর্থ্যাৎ যুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অন্তর্গত শক্তি হিশাবে সাংবাদিকও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
এই নীতিতে বাংলাদেশের বৃহৎ গণমাধ্যম জামাত শিবিরের বিরুদ্ধে এক অঘোষিত যুদ্ধে নেমে পড়ে পড়েছে। এখন জামাত-শিবির নিধন করার জন্য আইন, আদালত, সংবিধান সব কিছুই গুরুত্বহীন? জামাতকে অন্যায়ভাবে পেটালেই আইন এবং সংবিধান লংঘন হয় না! কিন্তু জামাত শিবির পাল্টা প্রতিরোধ করলে সেটা হয় জঙ্গি আক্রমন, চোরাগোপ্তা হামলা!
আমাদের সবারই জানা আছে, মিডিয়ার মালিক কারা? আওয়ামী রাজনীতির ধারক বাহক ব্যক্তিগনই বর্তমানে মিডিয়ার মালিক। এবং কিভাবে রাতারাতি বিপুল অর্থের মালিক হয়ে আওয়ামী রাজনীতির কর্মীরা মিডিয়া তৈরী করেছে তা জনগণের অজানা নয়।
কিন্তু জামাত শিবিরের বিরুদ্ধে পাকিস্তান-পাকিস্তান যুদ্ধ খেলতে গিয়ে যে নৈরাজ্যৈর দিকে দেশকে ঠেলা দেয়া হচ্ছে, তার দায় সাংবাদিক-বুদ্ধিজীরিা এড়াতে পারবেন না। কারণ অন্যায়ের বিপরীতেই চরমপন্থার উদ্ভব ঘটে।
মিডিয়ার সাংবাদিকরা হচ্ছেন জাতির বিবেক। তাই দলীয় মতাদর্শ যা-ই হোক সত্য প্রকাশে যদি লুকোচুরি করা হয় তাহলে বিবেকের কাঠগড়ায় তাঁদের দাঁড়াতে হবে। সেই সাথে আজকে সরকার শুধুমাত্র একটা রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক কর্মকান্ডকে দমন করার জন্য পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং মিলিটারীকে রাস্তায় নামিয়ে জনগনের বিক্ষোভ দমন করতে চান, তাদের মনে রাখতে হবে স্বৈরাচারী এক নায়কদের করুণ পরিনতির কথা।
সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, গুম-হত্যা, হামলা-মামলা, জুলুম-নির্যাতন এবং নাগরিক জীবনের মৌলিক চাহিদা পুরনে ব্যার্থ সরকারের বিরুদ্ধে জনমত আজ সোচ্চার। তাই বুটের তলায় মানবতা পিষ্ট করে জনতার আন্দোলনকে দমানো যাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:১৮