আমি ইন্টারনেটে হলিডের একজন সাংবাদিকের লেখা পড়লাম, তাতে বলা হয়েছে বিতর্কিত সম্পাদক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী এমন একটি ছবির সিরিয়াল তৈরি করছেন যা বাংলাদেশ ও ইসলামের মর্যাদা নষ্ট করবে। ব্ল্যাক (black) নামের ছবিটিতে ৭টি পর্ব থাকবে এবং এর প্রসঙ্গ হবে শরিয়াহ আইন, হিজাব, জিহাদ, ইসলামের বিবাহ আইনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা। এটি বাংলা ভাষায় নির্মিত হওয়ার পর তা বিভিন্ন ভাষায় সাবটাইটেল বা ডাবিং করে বিশ্বে ছড়ানো হবে। এ ছবির কাহিনী নিম্নরূপ—
“শান্তিগ্রাম বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম। বহু বছর ধরে এখানে বিভিন্ন ধর্মের লোক শান্তিতে বসবাস করত। কিন্তু কয়েক দশক ধরে গ্রামে ইসলামপন্থীদের ইসলামী কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোল্লারা শরিয়াহ আইন চালু করে জনগণের জীবনযাত্রা বিভীষিকাময় করে তুলেছে। তারা (মোল্লারা) গ্রামের পুরুষদের একাধিক বিবাহে উত্সাহিত করছে। যাদের একাধিক স্ত্রী আছে, তারা স্ত্রীদের সঙ্গে দাসির ন্যায় ব্যবহার করছে, কৃষিকাজে স্ত্রীদের মুজুরের মতো খাটানো হচ্ছে। উপরন্তু গ্রামের কোনো মহিলা অসুস্থ হলে মোল্লারা হাসপাতাল বা ডাক্তারের কাছে যেতে দেন না, তারা বলেন—হাসপাতালগুলো হলো শয়তানের আড্ডাখানা, সেখানে নারী-পুরুষরা পর্দা ছাড়াই অবাধে মেলামেশা করে। গ্রামের মোল্লা ও মাতব্বরদের সমন্বয়ে শরিয়াহ কমিটি করে দোররা মারাসহ বিভিন্ন শারীরিক শাস্তির ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে। ‘শান্তিগ্রাম’-এ কিছু বাউল সম্প্রদায়ের লোক বাস করত। এরা হলো হিন্দু ও সুফি মুসলিম গোত্রের মানুষ। বাউলরা ধর্মীয় সম্প্রীতির গান শোনাতো। কিন্তু গ্রামের উগ্র ইসলামপন্থীদের প্রভাবে তাদের জীবন বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে। মোল্লারা বাউলদের আল্টিমেটাম দেয়, ‘হয় মুসলিম হও, নয়ত গ্রাম ছাড়ো’।
এদিকে ইসলামী এনজিওদের প্রভাব দিন দিন বাড়তে থাকে, তারা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণের জন্য আর্থিকভাবে প্রলোভিত করে, ঋণ দেয়। যদি এতেও কাজ না হয় তবে বলপ্রয়োগের অংশ হিসেবে ওইসব অমুসলিম পরিবারের যুবক-যুবতীদের অপহরণ করে জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা হয়। এভাবে গ্রামটি একদিন অমুসলিম শূন্য হয়ে পড়ে।” অর্থাত্ ইষধপশ (ব্ল্যাক) ছবির মূল প্রতিপাদ্য হলো—ইসলামপন্থীদের চাপিয়ে দেয়া শরিয়াহ আইন কীভাবে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে এবং সেই সঙ্গে অমুসলিমদের নির্মূলে কতটা নিষ্ঠুর পথ গ্রহণ করে, তা বিশ্ববাসীর অবগতির জন্য তুলে ধরা।
দেশের বাস্তব চিত্র কি তা-ই?
বাংলাদেশে অসংখ্য গ্রামে বিভিন্ন ইসলামী দল এবং এনজিও কাজ করছে। কিন্তু কোথাও কাহিনীতে উল্লিখিত অবস্থা দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যতিক্রম থেকে থাকে তবে তা অপতত্পরতা এবং অপশক্তি পরিচালিত। বাংলাদেশের ইসলামী দল এবং এনজিও অমুসলিমদের পূর্ণ অধিকারে বিশ্বাসী। ইসলামী এনজিওগুলো মুসলিম-অমুসলিম সবাইকে সমভাবে সাহায্য করে থাকে। কারণ ইসলাম মানবতায় বিশ্বাসী ধর্ম। এখানে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে, ঘূর্ণিঝড় আইলা’র পর আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা আইডিবি’র সহায়তায় যেসব ইসলামী এনজিও দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায় কাজ করছে, তাতে কোনো ধরনের মুসলিম-অমুসলিম পার্থক্য করা হয়নি।
ছবিতে উল্লেখ করা হচ্ছে, ইসলামপন্থী মোল্লারা অসুস্থ নারীদের হাসপাতালে চিকিত্সা করতে দেন না, বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহকে উত্সাহিত করেন। এসব অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত, নয়তো পরিকল্পিতভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের ভাব মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা মাত্র। বাংলাদেশে বিভিন্ন গ্রামে কিছুসংখ্যক বাউল আছে, কিন্তু তাদের গ্রাম থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এরকম তথ্য এদেশের মানুষের জানা নেই। এ কথা সত্য, ইসলামপন্থীরা চায় মুসলমান কোরআন-হাদিস মেনে চলুন। যেমনিভাবে হিন্দুরা বিভিন্ন বেদ গ্রন্থ, বৌদ্ধরা গৌতম বুদ্ধকে, খ্রিস্টানরা যিশুকে অনুসরণ করতে চায়।
ছবিতে দেখানো হচ্ছে, ইসলামপন্থীরা প্রলুব্ধ করে, বলপ্রয়োগ করে, এমনকি অপহরণ করে অমুসলিমদের মুসলমান বানানোর জন্য কাজ করছে, এটা সর্বৈবভাবে মিথ্যা কথা। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের কোথাও মুসলমানরা ধর্ম প্রসারে এমন কথা অনুসরণ করেছে বলে জানা নেই।
সরকারের ব্যবস্থা নেয়া উচিত
প্রস্তাবিত black (ব্ল্যাক) ছবির পরিচালক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী একজন বিতর্কিত ব্যক্তি এবং ইসরাইলি লবির লোক বলে বিবেচিত। তিনি যদি ছবিটি তৈরি করেন এবং বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং করে বিদেশে ছড়িয়ে দেন, তবে তা সারাবিশ্বে বাংলাদেশ ও ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছে দেবে। আরব বিশ্বেও বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে, যা মুসলিম ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। খুব সম্ভবত, সম্প্রদায়গত ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় আরব দেশগুলো এ ধরনের ছবি তাদের দেশে প্রদর্শনের অনুমতি দেবে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার সংশ্লিষ্টদের কাছে বিনীত নিবেদন এই যে, জাতির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর এ ধরনের হীন অপচেষ্টা প্রতিরোধে সময়োচিত পদক্ষেপ নিন।
সম্মানিত সম্পাদক এবং লেখকদের প্রতি বিনীত আহ্বান, আপনারা বিষয়টির যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন করে ইসলাম বিদ্বেষী ছবি black (ব্ল্যাক) নির্মাণের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে আপনাদের সত্যনিষ্ঠ কলম শক্তিকে ব্যবহার করবেন।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


