somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রামে দাঙ্গা লাগানোর অপচেষ্টার নেপথ্যে কারা?

১৩ ই অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নগরীর পাথরঘাটার জলিলগঞ্জ এলাকায় একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০টা অবধি সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্টের ব্যাপক অপচেষ্টার নেপথ্যে ওরা কারা। দু'দল কিশোরের কলহের জের ধরে কারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের এ অপচেষ্টা করেছিল_ এমন অনেক প্রশ্ন এখন শান্তিপ্রিয় হিন্দু-মুসলিম উভয় সমপ্রদায়ের মাঝে। তবে মঙ্গলবার রাতের এ সংঘর্ষের ঘটনার পর বুধবার ওই এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সংহতি ও শান্তি সমাবেশ। এতে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারম্নল আমীন, মেয়র এম মনজুর আলম, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ বিভিন্ন দল ও মতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। একবাক্যে সকলেই বললেন, যা ঘটেছে তা অনাকাঙ্ৰিত এবং একইসঙ্গে লজ্জার। এর নেপথ্যে যদি কারও ইন্ধন থাকে তা তদন্তর মাধ্যমে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।

মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা শুরম্ন হওয়ার পর শহরজুড়ে এমনকি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় সামপ্রদায়িক নানা ঘটনার মিথ্যা তথ্য। মসজিদ মন্দিরে সশস্ত্র আক্রমণ থেকে শুরু করে নারী ধর্ষণ, লুটপাট, এমনকি খুনখারাবির কথাও চাউর করা হয়েছে। ফলে সন্ধ্যার পর থেকে ওই এলাকায় সামপ্রদায়িক সমপ্রীতিতে ব্যাপকভাবে ফাটলের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তা মাইকিং পর্যন্ত করার ঘটনা ঘটে। ফলে তা দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার অবস্থা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে, প্রচুরসংখ্যক র্যাব ও দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় রাত ১২টার দিকে। কারও কারও অভিযোগ, এলাকার বিএনপি সমর্থিত এক ওয়ার্ড কমিশনার এতে ইন্ধন যুগিয়েছেন। আবার কারও কারও মতে, সরকারবিরোধী কয়েকটি গ্রম্নপ পৃথক পৃথকভাবে বিভক্ত হয়ে ঘটনার পর এলাকাজুড়ে তা-ব সৃষ্টি করে। মারপিট ও অগি্নসংযোগে অংশ নেয়। আবার অনেকের মতে, গত সোমবার বিরোধীদলীয় নেতা রোডমার্চের বিভিন্ন পয়েন্টে সামপ্রদায়িক যেসব কথাবার্তা বলেছেন তার জের হিসেবে স্বার্থান্বেষী একটি চক্র এ এলাকায় সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি ভঙ্গের মাধ্যমে কায়েমী স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালিয়েছে। শেষ পর্যনত্ম তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে এলাকার শানত্মিপ্রিয় মানুষের কারণে।

গরীর কোতোয়ালি থানাধীন হিন্দু অধু্যষিত পাথরঘাটার জলিলগঞ্জ গঙ্গাবাড়ি এলাকায় দুদল কিশোরের মধ্যে সৃষ্ট কলহ একপর্যায়ে সংক্রমিত হয় বড়দের মাঝে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তা জেলেপাড়ার বাসিন্দা এবং পাশর্্ববতর্ী পাড়ার অধিবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় চলে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং লাঠালাঠিও। আচমকা একটি ঢিল এসে পড়ে স্থানীয় মসজিদের জানালায়। যদিও কোন ধমর্ীয় স্থাপনার দিকে ইচ্ছাকৃত কোন ঢিল নিক্ষেপের ঘটনা নয়, তারপরও উগ্র একটি গ্রম্নপ এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। অভিযোগ রয়েছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মসজিদের মাইক থেকে প্রচার করা হয়েছে মসজিদ আক্রানত্ম হবার খবর। আর বিষয়টি যাচাই না করেই আশপাশ থেকে লাঠিসোটা নিয়ে ছুটে আসে শত শত মানুষ। তারা গঙ্গাবাড়ি কালী মন্দিরের ওপর হামলে পড়ে। অগি্নসংযোগ করে মন্দির এবং জেলেপাড়ার ৫টি বাড়িতে। সংঘর্ষে আহত হন প্রায় ৪০ জন। ঘটনাটি অত্যনত্ম স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রথমে পুলিশও যেন হতভম্ব হয়ে পড়ে। তাই শুরম্নতেই কোন এ্যাকশন দেখা যায়নি। একপর্যায়ে পুলিশ ও র্যাব এবং স্থানীয় অসামপ্রদায়িক জনসাধারণ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ বিষয়ে সিএমপির দুই উর্ধতন কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ থাকলেও পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম সাংবাদিকদের কাছে বুধবার বলেন, পুলিশ যথাসময়ে প্রয়োজনীয় সবকিছু করেছে।


স্থানীয় প্রত্যক্ষদশর্ীদের অনেকেই জানান, ঘটনার পর পর কিছু বহিরাগত এসে ব্যাপকভাবে হামলায় অংশ নিয়েছে। এলাকার লোকজনের চেয়ে ওই বহিরাগতদেরই বেশি তৎপর দেখা গেছে এ সময়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পরিস্থিতি আয়ত্তে এলেও বুধবারও সেখানে বজায় রয়েছে থমথমে পরিস্থিতি। আরও অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও র্যাবের বিপুলসংখ্যক সদস্য।
এলাকার শিশু-কিশোরদের ঝগড়ার জের ধরে ঘটনা এমন পর্যায়ে গড়াচ্ছিল তা ভেবে অাঁতকে ওঠে এলাকাবাসী। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে গুরম্নতর আহত হন দুই সাংবাদিকসহ অনেক নিরীহ লোকজনও। প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর তাৎক্ষণিক ভূমিকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও ঘটনার ইন্ধনদাতা কারা তা এখন অনুদ্ঘাটিত। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। গ্রেফতার না করার বিষয়টি সমালোচিত হলেও পুলিশের এ অবস্থানকে অবশ্য অনেকেই দেখছেন হিসেবী পদক্ষেপ হিসেবে। কেননা, গ্রেফতার হলে পরবতর্ীতে মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের আশঙ্কাও থেকে যায়।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা বিষয়টিকে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্টের একটি অপচেষ্টা মনে করি। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া সিলেট অভিমুখী রোডমার্চ কর্মসূচীর বক্তব্যে কিছু কথা বলেছেন। তন্মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্যের বিষয়ে আমাদের কোন মনত্মব্য নেই। কিন্তু তিনি কিছু সামপ্রদায়িক উস্কানিমূলক কথাও বলেছেন। এরপরই চট্টগ্রামে ঘটেছে এ ঘটনা। পাথরঘাটায় যে ঘটনাটি ঘটেছে তা সামাজিক নয়, বরং এর পেছনে রাজনীতি থাকতে পারে। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর দেশব্যাপী যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তারই পুনরাবৃত্তি ঘটানোর একটি অপপ্রয়াস চলছে বলে মনত্মব্য করে তিনি বলেন, এদেশের অসামপ্রদায়িক জনগণের এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কারণ এ ধরনের ঘটনা বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।

মঙ্গলবার রাতের এ অনাকাঙ্ৰিত ঘটনার পর বুধবার দুপুরে গঙ্গাবাড়ি মোড়ে অনুষ্ঠিত হয় শানত্মি সমাবেশ। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। সভায় গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারম্নল আমীন বলেন, খেলা আর রাজনীতি এক নয়। কিশোরদের খেলায় হারজিতের জের ধরে যা ঘটেছে এর পেছনে কোন রাজনীতি আছে কি না তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা খতিয়ে দেখবে। মেয়র মনজুর আলম বলেন, এক ঘরে থাকলে নিজেদের মধ্যেও ঝগড়া হয়। এ বিষয়টি জিইয়ে রাখা যাবে না। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যা হয়েছে তাতে আমরা লজ্জিত। সিএমপি কমিশনার আবুল কাশেম তাঁর বক্তব্যে গুজবে কান না দেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন তাঁর বক্তব্যে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বজায় রেখে সব সমপ্রদায়ের মানুষের সহাবস্থানের আহ্বান জানান। সভাপতির বক্তব্যে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের অবশ্যই বিচার হবে। তিনি সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রসত্মদের ক্ষতি পূরণ প্রদানের আশ্বাস দেন।


চট্টগ্রামের পাথরঘাটার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। চেম্বার সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম এক বিবৃতিতে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী কোন মহল চট্টগ্রাম তথা দেশের সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির ঐতিহ্য নষ্ট করতে পারে। এজন্য ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এ মুহূর্তে অত্যনত্ম সচেতন থাকতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে পারস্পরিক সমপ্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার জন্য সর্বসত্মরের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তিনি দ্রম্নত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।





৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×