somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে চলছে

০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোনো দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য সম্পর্কে বোঝার জন্য কাঠামোগত যেসব সূচক রয়েছে তার প্রায় প্রতিটির অবস্থা বাংলাদেশে এ মুহূর্তে নাজুক। যেমন আমাদের অর্থনীতি আমদানি নির্ভর হওয়ায় অর্থনীতির পণ্ডিতরা শুরুতেই জানতে চান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থা।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ডলারের হিসাবে তা এখন দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারের মতো। এ পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী অর্থনৈতিক সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বাংলাদেশে তা নেই এ সময়ে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে বন্ড ছেড়ে মুদ্রা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। এভাবে ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার সংগ্রহ করা হবে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, এ উদ্যোগ হিতে বিপরীত হতে পারে যদি সংগৃহীত মুদ্রা অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হয়।
অতীতে বাংলাদেশে অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি হতো বিশেষ কোনো দুর্যোগ হলে বা কোনো প্রধান মৌসুমি ফসল মার খেলে। কিন্তু এবার সে রকম কোনো দুর্যোগ ছাড়াই স্রেফ সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় দেশের অর্থনীতি সীমাহীন চাপে পড়ে গেছে। এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্বেগ তৈরি করেছে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে সরকারের ধারের বিষয়টি। এ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সরকার ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ২১ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৩৮ শতাংশ বেশি। এমনকি এই অর্থবছর পুরো ১২ মাসে ঋণের যে লক্ষ্য ছিল, প্রথম পাঁচ মাসেই এর চেয়ে ১২০০-১৩০০ কোটি টাকা বেশি নিয়ে নিয়েছে সরকার। অন্যদিকে সরকারের উন্নয়ন বাজেটের যে টার্গেট এতো ধার-কর্জের পরও অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সে টার্গেটের মাত্র ১৫ শতাংশ পূরণ হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকার এমন ব্যাপক হারে ঋণ করছে কেন এবং কোথায় সে অর্থ খরচ হচ্ছে? এক্ষেত্রে যে উত্তর মিলছে তাও উদ্বেগজনক। ধার করা অর্থ দিয়ে সরকার জ্বালানি খাতে ভতুর্কি দিচ্ছে। সাধারণত সরকারের অর্থ সংগ্রহের যেসব উপায় থাকে যেমন সঞ্চয়ী প্রকল্প, বৈদেশিক সাহায্য ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি হতাশাজনক। সঞ্চয়ী প্রকল্পগুলো থেকে সরকারের অর্থ প্রাপ্তির পরিমাণ বছরের প্রথম চার মাসে ৭২ শতাংশ কমে গেছে। মাত্র পাঁচশ’ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছে সরকার এই খাত থেকে। তা আগের বছরের একই সময়ে ছিল এক হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। যেহেতু সরকারের সঞ্চয়পত্রগুলোতে মুনাফার হার কম সেহেতু মানুষ সেখানে বিনিয়োগে খুব বেশি আগ্রহী নয়। আবার বৈদেশিক সহায়তাতেও সরকার প্রত্যাশা মতো সাড়া পাচ্ছে না। সরকারের আশা রয়েছে, এ বছর তারা ১৩ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক সহায়তা পাবে। অথচ প্রথম চার মাসে ৩৩ কোটি ডলার এসেছে। তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে অন্তত ২৬ শতাংশ কম। অথচ একই সময়ে সরকারকে অতীত বৈদেশিক ঋণের সুদ-আসল মিলে ৩২ কোটি ডলার বেশি শোধ করতে হয়েছে। ফলে আসন্ন দিনগুলোতে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে সরকারের ধারের পরিমাণ অবিশ্বাস্য এক অংক ছুঁতে পারে।
সে রকম ক্ষেত্রে শিল্প-উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকিং সেক্টর থেকে প্রয়োজনীয় পুঁজি সহায়তা পাবেন বলে মনে হয় না। বিনিয়োগ কম হওয়ার মানেই হলো কর্মসংস্থানে স্থবিরতা চলে আসবে। তা আবার পরোক্ষে রাজনৈতিক অস্থিরতার জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে। তৃতীয় বিশ্বে অর্থনীতি ঘিরে সুশাসনের সংকট এবং তা থেকে রাজনৈতিক ঝড়ের ঘটনা নতুন নয়। দেখার বিষয় হলো বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এ রকম বিষয়ে অতীত থেকে কী ধরনের শিক্ষা নিয়েছে!
দেশের সংশ্লিষ্ট অনেকেই উদ্বিগ্ন। যেমন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) গত ১৬ নভেম্বর এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশের অর্থনীতি গভীর এক চাপে পড়তে যাচ্ছে সামনের দিনগুলোতে। বিশেষ করে জ্বালানি তেল দিয়ে ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালাতে গিয়ে এ খাতে ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার যেভাবে ধারাবাহিক ক্ষয় হচ্ছে তাতে এমসিসিআই উদ্বিগ্ন। এর পাশাপাশি সরকারের তিন বছর অতিক্রমের পরও অবকাঠামো খাতে বৃহৎ কোনো প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় অসন্তুষ্ট ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের এই জাতীয় সংগঠন।। তাদের মতে, দুর্বল অবকাঠামো নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে না। আবার দেশীয় উদ্যোক্তারাও ব্যাংকিং খাতের অসামর্থ্যে পুঁজির সন্ধান পাচ্ছেন না। একই সঙ্গে শেয়ার বাজারে দীর্ঘস্থায়ী মন্দা পুঁজি সংগ্রহের সব দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। নেতিবাচক এই সংস্থাগুলো জরুরিভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে অর্থনীতিতে ৬-৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি দুরূহ হবে বলেও মনে করছেন তারা। উপরোক্ত নেতিবাচক অবস্থার বাইরে রয়েছে দেশের রফতানি খাত। গার্মেন্টসহ প্রধান প্রধান খাতগুলোতে রফতানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ইউরোপের মন্দা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ উদীয়মান রাজনৈতিক সংঘাত এক্ষেত্রেও শংকার ছায়া ফেলছে। বিরোধী দল যদি হরতালের সংস্কৃতিতে ফিরে যায় তাহলে রফতানি খাতেও প্রবৃদ্ধি শ্লত হয়ে যেতে পারে।



১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×