২০০৮ থেকে ২০১১ তিন বছরের শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শত শত প্রতিশ্রুতি আর অবাস্তব স্বপ্নে আমি হতাশ এবং আমার মত আম জনতাও হতাশ। কারণ এসব প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি।
এ সময়ে অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়েছে গোটা দেশ।
ব্যাংকে চলছে টাকার হাহাকার, মূল্যস্ফীতি লাগামহীন, দেখা দিয়েছে বৈদেশিক সহায়তা ও ঋণের আকাল।
ধস নেমেছে শিল্প উৎপাদনে, নতুন কর্মসংস্থানও পুরোপুরি বন্ধ।
কমেছে রেমিটেন্স ও রিজার্ভ।
লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আর ডলারের মূল্য।
বিচারবহির্ভূত হত্যা চলছেই। আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গুপ্তহত্যা।
দিনবদলের স্বপ্ন দেখিয়ে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে রসালো ভাষায় তিনি একটির পর একটি ঘোষণা দিয়ে গেছেন।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি তো ছিলই। তার এসব প্রতিশ্রুতি ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
গত বছর জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অগগ্রতি পর্যালোচনা করতে গিয়ে খোদ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি হতাশা ব্যক্ত করে। ওই সময়ের মধ্যে দেয়া শত শত প্রতিশ্রুতির মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ৮টি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লাহ ওয়াহেদুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে প্রতিশ্রুত প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ করা হয়েছে। এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশে আরও অন্তত শতাধিক প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন।
নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার দু’দিন পর ৩১ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধী দলকে দেয়া হবে। তার এ প্রতিশ্রুতি আজও বাস-বায়ন হয়নি।
একই বছর ১ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, তার সরকার ডিগ্রি পর্যন্ত বিনা বেতনে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করবে। ওই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকার এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও তিন বছরে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
ঘরে ঘরে চাকরির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তিন বছরেও কোন অগ্রগতি নেই।
প্রধানমন্ত্রীর আরও একটি প্রতিশ্রুতি ছিল জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন ১শ’তে উন্নীত এবং এসব আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এ প্রতিশ্রুতিও তিনি রক্ষা করেননি। আসন ৪৫ থেকে ৫০-এ উন্নীত হয়েছে।
ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরে সরকারপ্রধানের আরও একটি প্রতিশ্রুতি ছিল ছাত্র রাজনীতির নামে কোনভাবেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি বরদাশত করা হবে না। ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। অথচ গত তিন বছরে তার দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে একাধিক ছাত্রের প্রাণ গেছে। নতুন বছরেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত হয়েছে এক মেধাবী ছাত্র।
প্রথম বছরে প্রধানমন্ত্রীর আরও একটি বড় প্রতিশ্রুতি ছিল ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু ও বিমানের যাত্রী হয়রানি বন্ধ। যা এখনও প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ২০১২ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষের বিদ্যুতের ব্যবস্থা করবেন।
একই মাসে আরেক অনুষ্ঠানে গাজীপুর থেকে ঢাকা হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত দ্বিতল সড়ক নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দেন, যা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
ওই বছর সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার চিন্তা-ভাবনা তার সরকারের নেই। কিন্তু তার সরকার আদালতের রায় অজুহাত হিসেবে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে।
২০১০ সালের ৪ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, পর্যায়ক্রমে সব খাত থেকে শিশুশ্রম বিলোপ করা হবে, যা আজও হয়নি।
ওই বছর ১৭ আগস্ট তিনি ঘোষণা দেন, দেশের বড় বড় জেলা শহরে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে। এ ঘোষণাও প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে।
একই বছর ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, বাংলাদেশে একটি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্র একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হবে। তার ঘোষণায় রবীন্দ্রপ্রেমীরা আশাবাদী হলেও ওই প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখেনি।
২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুরে এক জনসভায় তিনি পাইপলাইনের মাধ্যমে রংপুরে গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেন।
এরপর ফেব্রুয়ারিতে শেয়ার ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করতে ঘোষণা দেন, শেয়ারবাজারে কোন ধরনের মেনুপুলেশন সহ্য করা হবে না। কিন্তু শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, মেনুপুলেশ্যনের সঙ্গে সরকারের ঘনিষ্ঠরাই জড়িত। আর এ কারণেই শেয়ারবাজার বেহালকারীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
সড়ক ও রেলপথ বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ৪৫টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন অবসস্থায় রয়েছে। ৭টি প্রকল্পের কোন অগ্রগতি নেই। যে ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে সেগুলোর অগ্রগতি একেবারেই মন্থর।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত প্রকল্প রয়েছে ৯টি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে তিন বছরেও কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগকে বেশ কয়েকবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারপরও এলজিআরডি এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৬টির আংশিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বাকি ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন উদ্যোগ নেই।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৯টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ১টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এবং ১৪টি প্রক্রিয়াধীন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কয়েকটি প্রকল্পের ডিপিপিই চূড়ান্ত করা হয়নি।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৬টি বাস্তবায়নাধীন। ৪টি প্রকল্প অনুমোদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অবশ্য এসব প্রকল্পের ডিপিপি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া ৫টি প্রকল্পের কোন হদিসই নেই।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ১২টি প্রকল্পের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলার বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় একটি বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রকল্প এক বছরেও চূড়ান্ত হয়নি। সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবনের কাছে উন্মুক্ত স্থানে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের ডিপিপি আজ অবধি চূড়ান্ত হয়নি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৮টি প্রকল্পের মধ্যে ৪টি বাস্তবায়নাধীন অবস্থায় রয়েছে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও কংস নদীসহ ভরাট হওয়া অন্যান্য নদী ড্রেজিং সংক্রান্ত প্রকল্পের ব্যাপারে আজ অবধি কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বিভিন্ন বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্প রয়েছে ২৫টি। বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩টি প্রকল্প। ২২টি প্রকল্পের মধ্যে ৪টির কাজ চলছে। ১৮টি প্রকল্পের কোন অগ্রগতি নেই।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের ৭টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র একটি বাস্তবায়িত হয়েছে। ৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে।
এছাড়া আধুনিক ফিল্ম সিটি স্থাপন ও চলচ্ছিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন আধুনিকায়ন প্রকল্প দুটির ডিপিপি আজ অবধি চূড়ান্ত হয়নি। চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ টিভি কেন্দ্র চালু করা সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ এখনও নেয়া হয়নি।
নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধী দলকে দেয়া হবে।
৩ জানুয়ারি সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম কাজ হবে দ্রব্যমূল্য কমানো। অথচ দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।
৯ জানুয়ারি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতির গুণগত মানে পরিবর্তন আনা হবে।
ক্ষমতার প্রথম বছর ১ ফেব্রুয়ারি বইমেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ডিগ্রি পর্যন্ত বিনা বেতনে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু, ২০১২ সালের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং ২০১৪ সালের মধ্যে শতভাগ সাক্ষরতা নিশ্চিত করার ঘোষণা দেন। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বাংলাদেশের যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও ডিগ্রি পর্যন- বিনা বেতনে অধ্যয়নের বিষয়টি এখনও ঝুলে আছে।
১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতির নামে কোনভাবেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি বরদাশত করা হবে না। অবশ্য ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রীর এ প্রতিশ্রুতির তোয়াক্কা করছে না। সর্বশেষ তাদের হিংস তার শিকার হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেধাবী ছাত্র।
ওই বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংরক্ষিত মহিলা আসন ১০০-তে উন্নীত করা হবে। এসব আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই। এসব প্রতিশ্রুতির একটিও পূরণ হয়নি।
দেশের প্রতিটি হাসপাতাল কলেজ ও জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে আলাদা হৃদরোগ বিভাগ খোলার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৯ সালের ১১ আগস্ট কার্ডিয়াক সোসাইটির নেতারা দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন, যা আজও হয়নি।
নদী দখলমুক্ত ও পানি দূষণ রোধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৯ সালের ১২ আগস্ট বিআইডব্লিউটিএ’র সুবর্ণজয়ন্তীতে তিনি এ ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে নদী খননের পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী এসব প্রতিশ্রুতি দিলেও ঢাকার বুড়িগঙ্গার পানি রয়েছে আগের অবস্থায়ই।
ওই বছর ১ সেপ্টেম্বর জেনেভা প্রবাসীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু ও বিমানের যাত্রী হয়রানি বন্ধ করা হবে।
২৭ ডিসেম্বর ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের জাতীয় সম্মেলনে খাল-বিল, নদী-নালা দখলদারদের হাত থেকে রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেন, যা ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অব্যাহত রয়েছে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দখলদারিত্ব।
২৯ ডিসেম্বর বুড়িগঙ্গায় শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পাশে বড় একটি কবরস্থান নির্মাণ করা হবে। এ অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সেতুর পাশে একটি হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দেন তিনি, যা এখনও ঘোষণার মধ্যেই রয়েছে।
২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্মেলনের উদ্বোধনকালে রাজধানী ঢাকার চারপাশে চারটি উপশহর করার পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
৫ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ ২০১০-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকৃত অপরাধী দ্রুত শনাক্তকরণ ও তদন্ত প্রক্রিয়ায় গতিশীলতা আনতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করা হবে। এ ঘোষণার এক বছরেও ডিএনও ল্যাব চালু হয়নি। এটি চালুর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
১৪ জানুয়ারি ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করে তরুণ প্রজন্মকে বিশ্বমানের চলচ্চিত্র কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং তরুণ চলচ্চিত্র কর্মীদের প্রয়োজনীয় সব পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রতিশ্রুতিও ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জে ১২০ মেগাওয়াট প্লান্টের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, ২০১২ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষের বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে। অথচ রাজধানীর অসংখ্য ভবন রয়েছে যেখানে বিদ্যুতের সংযোগ নেই।
২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে ঢাকা বাইপাস সড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী গাজীপুর থেকে ঢাকা হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত দ্বিতল সড়ক নির্মাণ করার ঘোষণা দেন। এ দ্বিতল সড়ক নির্মাণ হয়নি।
২ মে কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১২ সালের মধ্যে এ ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হবে। বাস্তবে ফ্লাইওভারের কাজ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে জানা গেছে।
২০১০ সালের ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, আগামী শীতের আগে আইলা ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার, মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করা হবে। পাইকগাছা ও কয়রায় একটি করে স্টেডিয়াম, দুটি কলেজ সরকারিকরণ ও কৃষি কলেজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। যা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
৫ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের ঝুঁকি ভাতাসহ সব দাবি বাস-বায়ন করা হবে। পুলিশের এসব দাবিও উপেক্ষিত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি।
৫ মার্চ খুলনার খালিশপুর জুট মিল উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন- দৌলতপুর জুট মিল, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র শিগগির চালু করা হবে। এর মধ্যে দৌলতপুর জুট মিল চালুর প্রক্রিয়া চলছে।
১৬ জুলাই নার্স সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, সারাদেশে ৫ শতাধিক চিকিৎসক ও ১৪ হাজার স্বাস'্য সহকারী নিয়োগ দেয়া হবে। এর মধ্যে ৬ হাজার স্বাস'্য সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নার্সদের ৩য় থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিলে তা বাস্তবায়িত হয়। ২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের পৃথক বেতন স্কেলের বিষয় সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ প্রতিশ্রুতিও আলোর মুখ দেখেনি।
৯ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, থ্রিজি লাইসেন্স দেয়া হবে উন্মুক্ত নিলামে। কিন্তু পরে এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। ১৬ সেপ্টেম্বর আরেক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন, কোন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে তাকে মন্ত্রী থেকে বাদ দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী তার দেয়া এ প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করেননি। বিশ্বব্যাংক যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুললে তার দফতর পরিবর্তন করা হয়।
গত বছর ২১ নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাসের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, জাতীয় খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভিআইপি মর্যাদা এবং সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ প্রতিশ্রুতির দেড় মাস অতিবাহিত হয়েছে। জাতীয় খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা আদৌ ভিআইপির মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন কি-না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




