somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণপরিবহনে নৈরাজ্য প্রতিরোধে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করতে হবে

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে এক অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু এর জন্য শুধু অদক্ষ বাস- ট্রাক চালক কিংবা সারাদেশের বেহাল সড়কই দায়ী নয়। মূলতঃ এর জন্য দায়ী আমাদের সামগ্রিক পরিবহন ব্যবস্থার দৈন্যদশা। অতীতের সরকারগুলো দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে রেল ও নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি চরম উদাসীনতা দেখিয়েছে। বিশেষ করে আশির দশক থেকে দেশব্যাপি যোগাযোগের ক্ষেত্রে সড়কের ওপর একক নির্ভরতার কারণেই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। ফলে আজ বাংলাদেশের সড়কপথ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। বাস-ট্রাক-প্রাইভেট কার ও এসবের খুচরা যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানিগুলো, তাদের এদেশীয় এজেন্ট এবং অতিরিক্ত মুনাফালোভী বাস-ট্রাক মালিক ও এক শ্রেণীর পরিবহন শ্রমিক নেতাও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দরকার সড়ক নির্ভরতা কমিয়ে রেল ও নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন।

বিশ্বব্যাপি ভারী পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। আর বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই সিংহভাগ মানুষের চলাচলের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ট্রেন বা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। যার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। কিন্তু ব্যতিক্রম আমাদের দেশ।

সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সবকিছুরই দ্রুত উন্নতি ঘটছে। যোগাযোগ খাতও এর থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। এই খাতের উন্নয়নে নতুন নতুন সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় করা হচ্ছে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা। ধ্বংস করা হচ্ছে আবাদি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আমদানি করা হচ্ছে বিলাসবহুল বাসসহ হরেক রকম সড়ক যান। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এই ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণ যে আরামদায়ক রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল সেই পরিবেশবান্ধব, ব্যয়-সাশ্রয়ী ও অপেক্ষাকৃত কম-দুর্ঘটনাপ্রবণ সেই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন উন্নয়ন হয়নি। রাজধানী ঢাকা ও এর আশেপাশের নিত্যদিনের দুঃসহ যানজটেরও একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি অতীতের সরকারগুলোর চরম উদাসীনতা ও বিমাতাসুলভ আচরণ।

সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও গণপরিবহনে নৈরাজ্য প্রতিরোধে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কোন বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি। তবে রাতারাতি সবকিছুর পরিবর্তন সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সুদুরপ্রসারী সুষ্ঠু পরিকল্পনা, তা বাস্তবায়নে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ ও দূরদর্শীতা।

# রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য আসন্ন জাতীয় বাজেট অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ করতে হবে।
# রাজধানী ঢাকার ওপর জনসংখ্যার ক্রমাগত চাপ কমাতে ও রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে ঢাকা থেকে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে প্রতি ঘন্টায় ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা এবং ঢাকা ও মানিকগঞ্জের মধ্যে রেল যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।
# ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-ময়মনসিংহ-জামালপুর, ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-দিনাজপুরসহ দূরপাল্লার ট্রেনের বগি ও ট্রিপ সংখ্যা বাড়াতে হবে।
# দেশের সকল রুটের সকল ট্রেন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযয়ী ছেড়ে যাওয়া ও গন্তব্যে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।
# রেলওয়ে বিভাগের জনবল সংকট নিরসনে দ্রুত শূন্য পদসমূহ পূরণ এবং মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
# জনসংখ্যা ও ভৌগলিক অবস্থানের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে যেসব এলাকা এখনো রেল যোগাযোগের আওতায় আসেনি সেসব এলাকাকে পরিকল্পনামাফিক পর্যায়ক্রমে এর আওতায় আনতে হবে।
# গত ৪০ বছরে নানা কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলপথগুলোকে সচল করে যতদ্রুতসম্ভব সেসব রুটে রেল চলাচলের উদ্যোগ নিতে হবে।
# যাত্রী সেবার মনোন্নয়নে ট্রেনগুলোতে নতুন ইঞ্জিন ও বগি সংযোজন, বর্তমানে জীর্ণ বগিগুলো মেরামত, বসার অনুপযোগী আসনগুলো সরিয়ে নতুন আসন সংযোজন, বাথরুমগুলো পরিচ্ছন্ন রাখা, পর্যাপ্ত বাতি, পানি ও ফ্যানের ব্যবস্থা এবং রেলওয়ে ওয়ার্কশপগুলোকে আধুনিকমানের করে গড়ে তুলতে হবে।
# গত ৪০ বছরে সারা দেশে বেহাত হয়ে যাওয়া রেলওয়ের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
# যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে সারা দেশে রেল পুলিশের কার্যক্রম জোরদার এবং ট্রেনের মধ্যে ও রেলস্টেশনগুলোতে পর্যাপ্ত পুলিশ টহলের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
# পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাসহ বড়ে ধর্মীয় উৎসবসহ সারা বছরই যাতে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় টিকিট সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য টিকিট বিক্রি পদ্ধতি কেন্দ্রীয়ভাবে কম্পিউটারাইজড ও অনলাইনে টিকিট সংগ্রহের ব্যবস্থা চালু এবং কঠোর হস্তে টিকিট কালোবাজারী প্রতিরোধ করতে হবে।
# ভারতে ভ্রমনেচ্ছু যাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকা-কোলকাতা ট্রেন চলাচল আরো সহজীকরণ, ঢাকা সেনানিবাস রেলস্টেশনের পরিবর্তে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে কোলকাতাগামী ট্রেন ছাড়ার ব্যবস্তা ও গন্তব্যে পৌঁছানোর সময়সীমা কমিয়ে আনা এবং ঢাকা-কোলকাতার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা থেকে কোলকাতাগামী ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ গ্রহণ।
রফিকুল ইসলাম পথিক
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×