somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাচ্চা ভয়ংকর কাচ্চা ভয়ংকর-৫

১০ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ একটা বেবি ডলের গল্প শুনাই। ক্লাসের সবচেয়ে ছোট্ট পুতুল এটি। গাল দুটি ফোলা ফোলা, চোখ দুটি বড় বড় কি এক মায়ায় ভরা চেহারা। ঠিক যেন শো কেস এ সাজিয়ে রাখা কোনও পুতুল। না উপমাটা ঠিক হলনা। ওকেই দেখে যেন পুতুলের কারিগররা পুতুল বানায়। কিন্তু আমার এই বেবি ডলের সমস্যা হল ও যেন সত্যিই ডল হয়েই থাকতে চায়। ধনুক ভাঙ্গা পণ তার কোনও কথাই সে বলবে না। এমন কি মামনি কিংবা বাবার সাথেও না। সব কথাই সে ইশারায় বলবে। কোনও কিছুতেই সে তার মহামূল্য বাক্য খরচ করতে রাজী নয়। আর তাই তো তার কথা ফুটানোর জন্য তার বাবা মা অন্য কোনও উপায় না পেয়ে স্কুলেই ভর্তি করে দিয়েছে।

প্রথম দিনই তার মা আমাকে ওর সমস্যাটার কথা জানিয়ে দিলেন। আমি লক্ষ্য করলাম ওর কথা বলায় কেন যেন চরম অনিহা। হয়ত বাসায় ওর সাথে বকবক করার লোকের অভাব ছিল আর তাই কথা বলার অভ্যেসটা গড়ে উঠেনি সেভাবে। যদিও সে সব কথাই বুঝতে পারে। অতঃপর শুরু হল ওকে কথা বলানোর মিশন।

না সে কিছুতেই কথা বলবেনা। পিপাসা পেয়েছে? গুটগুট করে আমার কাছে এসে আমার হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যাবে ওয়াটারপটগুলো যেখানে ঝুলানো থাকে সেখানে। তারপর ওর পটটার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি পটের মুখটা খুলে দিলে পানি খেয়ে আমার হাতে আবার পটটি ধরিয়ে দিয়ে গুটগুট করে চলে গেল সে নিজের টেবিলে। কিন্তু এই তাবৎ প্রক্রিয়ার মধ্যে তার কোনও শব্দ কেউ শুনতে পারবেনা। শুধুমাত্র যদি কোনও বাচ্চা কাঁদে তখন ও কেমন যেন অস্থির হয়ে যায়। আমার কাছে এসে চোখ বড়বড় করে সেই বাচ্চার দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে আধো আধো বুলিতে অনেক কস্ট করে বলবে.."বাবুতা কাছ্ছেএএএএএ???" যদি বলি "হ্যাঁ বাবুটা ওর মামনির জন্য কাঁদছে" সে তখন খুব বুঝেছে এমন একটা ভঙ্গি করে চলে যাবে ওর টেবিলে। তারপর দুই মিনিট যেতে না যেতেই আবার চলে এসেছে আমার কাছে। এবং ঠিক একই ভাবে আবার প্রশ্ন, "বাবুতা কাছ্ছেএএএএএ??? অতঃপর এই চলমান প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে।

যাই হোক ওকে কথা বলাতেই হবে কারণ দুস্টুটা তো বলতে পারে সবই কিন্তু সমস্যা হল বলতে চায়না। ওর কথা বলার এই অনিহাটা কাটানো দরকার। ওর সাথে প্রচুর বকবক করতে লাগলাম। ও মুখ ফুটে না বলা পর্যন্ত ওর কোন কথাই শোনা হত না। এভাবে ধীরে ধীরে আমার বকবক করার কারণেই হোক কিংবা অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মিশেই হোক খুলে গেল ওর কথার ডালা। তার পরের ইতিহাস? বড়ই করুণ (আমার জন্য)। মা গো মা এত কথাই জমা ছিল ওই এক ফুট মানুষটার পেটে! কথা আর কিসের শুধুই অভিযোগ। মিছ্‌ ও চেয়াল থেকে উথেছে, মিছ্‌ ও দুততামি কলে, মিছ্‌ ও পেনছিল দেয়না, মিছ্‌ ও চিৎকাল কলে, মিছ্‌ ও আমাকে মালে, মিছ্‌ ও দৌলায়, মিছ্‌ ও বাইলে গেল ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। ওর কথা না শুনেও কি রেহায় আছে? দুই হাত দিয়ে আমার মুখটা ধরে ঘুরিয়ে নিবে ওর দিকে। তারপর ও খুলে বসবে ওর অভিযোগের ডালা। এবং অভিযুক্তদের প্রতি এ্যাকসন না নেয়া পর্যন্ত আমার আর রক্ষে নেই। এদিকে ও নিজে যে হাতে পেন্সিল পাওয়া মাত্রই দাগ এঁকে দিচ্ছে ওর বন্ধুদের শার্ট এ সেটার কোনও খবর নেই। কি দুঃখে যে এই ডল কে কথা শেখালাম। ইশারাই তো ভাল ছিল। এমনই অবস্হা আমার।

স্কুলে কালচারাল প্রোগ্রাম হবে। ক্ষুদে বিচ্ছুদেরও ইভেন্ট আছে। রাইমস এর সাথে সাথে হাত পা নেড়ে নেড়ে অভিনয়। প্রথম দিন রিহার্সাল করাতে গেলাম। সি ডি তে রাইমস ছাড়া মাত্রই সে এক দেখার মত দৃশ্য। ওরা তো আমার দেখানো অঙ্গভঙ্গির ধারে কাছেও না গিয়ে ইচ্ছেমত হাত পা ছুড়তে লাগল।আমি যদি বলি এক লাইনে দাঁড়াতে ওরা দেখি একে অপরের ঘাড়ে উঠে বসে আছে। হাত সামনে বাড়াতে বলছি তো হাত বাড়িয়ে সামনের জনের মাথার চুল টেনে ধরছে। নয়ত হাত বাড়িয়ে পাশের জনকে চিমটি কাটছে।ওদের এহেন কর্মকান্ড দেখে তো আমার নিজেরই চুল ছেড়ার দশা।যাই হোক অনেক কস্টে কোনও রকমে সবগুলোকে সাইজে আনলাম। হঠাৎ দেখি ওদের মধ্যে একটা নাচুনে পুতুল যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আমার সেই বেবি ডল। হাত উপরে তুলে কোমর দুলিয়ে ঘুরে ঘুরে তার সে কি নাচ। আমি হা হয়ে শুধু তার নাচই দেখছি। নাচতে নাচতে একসময় দেখি সে তার পাশের জনকে দিল জোরসে এক ধাক্কা। সে তো রেগে কটমট করে ওর দিকে এগুতে যাবে এর মধ্যে সে আরেকজনকে ধাক্কা মেরে দিয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে ক্লাসরুমটি একটা ছোটখাট রণক্ষেত্রে পরিণত হল। সবাই তো মহা ক্ষ্যাপা এই পিচকির উপর। পারলে ধরে ওর পিঠে দুমাদুম লাগিয়ে দেয় আর কি। আমি অনেক কস্টে এই বিক্ষুব্দ জনতাকে আটকে রেখেছি। কিন্তু যার কারণে এই রণাঙ্গনের সৃষ্টি তার বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই এদিকে। সে কিন্তু রাইমস এর তালে তালে আগের মতই নেচে চলেছে। একসময় আমার চোখে চোখ পরতেই সে বলে উঠে "মিছ্‌ দেখো দেখো আমি নাতি" ।

অতঃপর.................আমি গালে হাত দিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলাম ওর দিকে আর ও ওদিকে নেচেই চলেছে ' হিক্‌রি ডিক্‌রি ডক দ্যা মাউস রান আপ দ্য ক্লক'।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ৮:২৬
১৪১টি মন্তব্য ৯৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×