somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক মুঠো আলোর খোজে

২১ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার চারপাশে নিকষ অন্ধকার। হঠাৎ চোখ খোলায় প্রগাড় অন্ধকারে ধাক্কার মত লাগে, মনে হয় গহীন কোন অরন্যের মাঝে আমি একা, চারিদিকে বন্য জানোয়ার গুলো পায়চারি করছে। পিঠের নিচে মেঝের হালকা ঠান্ডা অনুভুত হওয়ায় বুঝতে পারি এটা কোন জঙ্গল না, একটা রুম এবং সেই সাথে মনে পড়ে যায় আমার বন্ধিত্তের কথা ।

অন্ধকারটাকে সহনীয় করতে চোখ বন্ধ করে ফেলি। কিছু সময় পর যখন চোখ খুলি তখন অন্ধকার পাশ কাটিয়ে ঘরের বিভিষিকা আমার কাছে আরো অসহ্য মনে হয়। মৃদু ভয়ের ঠান্ডা স্রোত আমার শরীরকে শীতল করে ফেলে। আমি আবারও আমার চোখ বন্ধ করি, ভয়টাকে পাশ কাটানোর জন্য।

বিভিষিকাটা আবার দেখার অদম্য কৌতুহল অথবা পুনরায় ভয়পাওয়ার একটা তীব্র ইচ্ছা আমাকে পেয়ে বসে। আমি দ্বিধান্নিত হয়ে পড়ি। আমার মনে হয় চোখ না খোলা উচিৎ পরক্ষনে মনে হয়- না খুলেই ফেলি। আমার দু স্বত্ত্বা আমাকে দুই রকম নির্দেশ দেয়। আমার ইচ্ছাটা, আমার কৌতুহলটা জয়ী হয়। আমি চোখ খুলি, বিভিষিকার দিকে আবার চোখ আটকে যায়।

সাথে থাকা ঝোলার দিকে হাত বাড়ায়। হিসাব মত ছোট্ট দুই ব্যাটারির পেন্সিল লাইট টা পেয়ে যাই। পেন্সিল টর্চের আলো ক্ষত- বিক্ষত, বিভৎস লাশটার উপরে ফেলি, একটা ভয়, রাগ, ক্ষোভ এবং ঘৃনা মিশ্রিত অনুভূতি তৈরি হয়। কোন এক কালে জীব বিঞ্ঝানের বইএ পড়া, প্রায় ভুলতে যাওয়া জু'লজির সামান্য বিদ্যা নিয়ে, বিবেকের তাড়নায় লাশটার দিকে এগোয়।

দুরে দাড়িয়ে লাশের উপর আলো ফেলি। বড় বড় দুটো ক্ষত চিন্হ আমার নজরে পড়ে যা বিদ্যামন অন্যান্য ক্ষত থেকে অনেক বড়। আমার সামান্য বিদ্যায় বুঝতে পারি আঘাত দুটো কাটিয়ে মানুষটার অনেক কষ্ট সহ্য করা লেগেছিল- বেচে থাকার জন্য। এই সংগ্রামি আর ত্যাগি মানুষটার প্রতি একটা মায়া, বা অনুভুতির জন্ম হয় আমার ভিতর।

আরো ভালো ভাবে দেখার অথবা মৃত্যুর কারন জানার একটা ইচ্ছা বা তাগিদ অনুভব করি। আমার কম পাওয়ারের চশমাটা চোখে দিয়ে পিছ মোড়া করে হাত বাধা লাশটার কাছে বসি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করি। লাশটার শরীরে ছোট ছোট অসংখ্য প্রচন্ড হিংস্র পিপড়া, কালো, ছাইরঙ্গা, সাদা, সবুজ, খয়েরি রঙের অসংখ্য পিপড়া দেখতে পাই।
আর দেখতে পাই লাশটার মাথায় পিপড়াদের একটা বাসা যা দখলে রাখার জন্য কালো ও ছাইরঙা পিপড়া গুলো আক্রমণ ও প্রতি আক্রমনে ব্যস্ত।
আমি ডাক্তার না হয়েও বুঝতে পারি লাশের শরীরের দগদগে ঘা গুলো পিপড়াদের সৃষ্টি আর মৃত্যুর কারনও ঐ দগদগে ঘা গুলোই।

আমি আরো ভালো ভাবে, উল্টায়ে দেখার জন্য লাশের শরীরে হাত রাখি। শরীরটা হালকা গরম মনে হয় এবং উল্টানোর সময় হালকা গোঙ্গানির শব্দ কানে ঢোকে। মানুষটা এখনও লাশ হয়নি, জীবিত। আমি দ্রুত ডাক্তারের খোজে বেরোনোর জন্য দরজার দিকে পা বাড়ায়। আমাকে নিরাশ হতে হয়, বাইরে থেকে দরজা বন্ধ থাকায়। অগ্যাতা চিৎকার দিয়ে লোক জড়ো করার জন্য জানালা খুলি।
বাইরের হালকা তারার আলো ঘরে ঢোকে। বুঝতে পারি এই নিকষ অন্ধকারে কেউ আসবেনা সাহায্যের জন্য। আমি অপেক্ষায় থাকি কোন এক জ্যোতির্ময় স্বপ্ন পুরুষের অথবা এক মুঠো আলো যা দুর করবে সমস্ত ভয়কে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:১৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×