স্কুল লাইফ থেকেই একটা কারণে বন্ধুদের হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছি অনেক বার। তারা আমাকে ঠাট্টা করে ডাকতো সিএনএন। ঠাট্টাই বটে! কেনো? সেটা পড়লেই পরিষ্কার হবে।
কেনো জানি বেশিরভাগ খবর, সাধারণ থেকে শুরু করে ব্রেকিং নিউজ, সবই আমার গোচরে আসতো সব শেষে।
স্কুল জীবনের একদিন। সব পিরিয়ডের বই-খাতা ব্যাগ ভর্তি করে নিয়ে, ক্লাসে গিয়ে শুনলাম টিফিন পিরিয়ডের পরই ছুটি, খুশিতে লাফাতে লাফাতে বন্ধুদের বলাতেই, এক বান্ধবী জানালো, কেন ?কাল ক্লাসে নোটিস দিলো, শুনিস নি? আমরা তো সেইমতো বই এনেছি। বোঝো!
যাই হোক,স্কুল কলেজ পেরিয়ে ঢাকায় আগমন। সেই তকমা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও ছাড়া গেলো না।
ক্লাসের সবচে গুডি বয় শিমুল(ছদ্মনাম)। সব সময় সেমিনার লাইব্রেরিতে পড়ে আর বছর বছর ফার্স্ট হয়। সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেই ইতিউতি প্রেমের চেষ্টায় ছিলো। কেউ সফল কেউ বিফল, কেউ এক বা একাধিক প্রেমও ঘটিয়ে ফেললো। কিন্তু শিমুলের তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। সবাই ওর ব্যাপারে আশা ছেড়ে দিল ।
চতুর্থ বর্ষের ঘটনা। হলের এক বান্ধবী নিপুণ, যার ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন ছিলো, তার রুমে থাকতো আমাদের ডিপার্টমেন্টেরই এক ছাত্রী সায়মা(ছদ্মনাম)। নিপুণ জানালো, জানো? আমাদের রুমের সায়মার তো তোমাদের ডিপার্টমেন্টের শিমুল নামের এক ছেলের সাথে প্রেম। শুনে বিশ্বাস হয়না প্রথমে! পরে নানারকম জেরা ও প্রশ্নে মোটামুটি নিশ্চিত হলাম। এইবার , এইবার আমার বান্ধবীদের গিয়ে শিমুলের এই গোপন খবর জানাতেই হবে। আমাকে নিয়ে আর হাসবে? হুঁহ!
পরদিন উত্তেজনায় ফুটতে ফুটতে ডিপার্টমেন্ট। এই জানিস, শোন কী হয়েছে! শিমুল না সায়মার সাথে...... কীইহ তোরা জানিস?!! কেমনে? ওদের হেসে কুটিপাটি উত্তর, কেন? সায়মা ওদের প্রেমের এক বছর উপলক্ষে সবাইকে চকলেট দিয়ে গেলো, জানিস না? ও! সেদিন আসিস নি!
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের কথা। নতুন নতুন ঢাকা এসে,একা থাকি খাই। হলের খাবারে বীতশ্রদ্ধ হয়ে রান্না করার ব্যর্থ চেষ্টা করি। বাসার আদুরে মেয়ে হবার ফল হাতে হাতে পাচ্ছি। শুধু পানি সেদ্ধ রান্না আর চা বানানো বিদ্যাই সম্বল।
আমাদের ছিলো ব্লক সিস্টেম। এক ব্লকে দশটি করে রুম। এক প্রান্তে রান্না ঘর। প্রথম রান্নার করার উদ্যেগ নিলাম এক বড় আপুর তত্ত্বাবধানে। ঠিক করলাম খিচুরীই ভালো, শুরু হিসেবে।
কীসের পর কী দিতে হবে সব আপু বলে দিলেন।ভালো মতো শুনে শুরু করলাম। মশলাপাতি সব গুছিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলাম।বেশ খুশি খুশি লাগছিলো। রান্না করছি! সব জিজ্ঞেস করলেও একটা জিনিস আমার মনে ছিলো না আপুরও খেয়াল হয়নি। তা হলো পানির পরিমাণ। যখন প্রায় হয়ে এলো, তখন রান্না ঘরে আরেক আপু ছিলো উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপু , খিচুরীর মাড় ফেলতে হয় কেমন করে?! উনি যে উত্তর দিলেন এখনো মনে আছে, বললেন, দাঁড়াও তুমি খিচুরীর মাড় ফেলবে? আমার স্যুপের বাটিটা নিয়ে আসি!! পরে আমাকে নিয়ে সেকী হাসি।
সিএনএন এর আরেকটি গল্প বলেই এই বেলা যাই।
এটার বছর ঠিক মনে নেই।টিভিতে একটি নতুন ধারাবাহিক নাটক শুরু হবার কথা পেপারে পড়লাম। নাম, ‘আজিজ সুপার মার্কেট’। সাথে একটু বর্ণনা।
এই মার্কেটে নাকি সব কবি- সাহিত্যিকদের আড্ডা। লম্বা চুলের ছেলেরা আর রবীন্দ্রনাথের সিল্যুয়েটের টি-শার্ট পরা আধুনিক কবিরাও বাদ যান না। রুম-মেট কে বললাম, এ আবার কেমন ধারা সুপারমার্কেট?মনে মনে একটু কৌতুহল হলো, তাকে বললাম, এই চলো না এটার ঠিকানা কই বের করি। ঢাকায় এসে কোনো টিভি-সিনেমা স্টার তো চোখে পড়ল না আজ অবধি, কবি সাহিত্যিকই না হয় চর্ম চোখে দেখে আসি।
ওর উত্তর, সেকি আপু, তোমাকে নিয়ে যে সেদিন দেশাল থেকে কয়টা জামা কিনে আনলাম, ওই মার্কেটটাই তো!!
সাধে কি আর সিএনএন বলেছে!! (চাপা স্বরে স্বগতোক্তি করি)।