somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৩৬

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৩৬


ঊদ্ভিদ, বন ও বন্য প্রানী

উদ্ভিদঃ
উর্বর পলিমাটির জমি এবং উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর কারণে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্যে খুবই সমৃদ্ধ। বিশেষ করে উদ্ভিদের ক্ষেত্রে প্রাচীনকাল থেকে মধ্যযুগের মধ্যে এই সমৃদ্ধি পূর্ণতার দিকে নিয়ে এসেছে। দেশে নবাগত জনপ্রবাহের মত নানাভাবে দেশের বাইরে থেকে যুগে যুগে নতুন নতুন লতা, গুল্ম ও বৃক্ষরাজি এসেছে এবং দেশের স্থায়ী বাসিন্দায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দেশে উদ্ভিদের প্রজাতিসংখ্যা ৬ হাজারের বেশি, তন্মধ্যে ৩০০ বিদেশী ও ৮ একান্ত দেশীয় (endemic)। প্রজাতি হিসেবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং কোনো কোনোটি বিপনড়ব হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত ৯৫ প্রজাতির দারুবৃক্ষের ৯১টি আবৃতবীজ, ৩টি নগড়ববীজ। লতা, গুল্ম ও বৃক্ষ ছাড়াও দেশে রয়েছে প্রচুর সংখ্যক শৈবাল শ্রেণী। কেবল স্বাদুপানিতেই আছে ৩০০ প্রজাতির শৈবাল ও তাদের জাত। স্বল্পলোনা পানিতে ও সমুদ্রে রয়েছে অজস্র। ছত্রাক সম্পর্কে এখনও পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগৃহীত হয়নি। ব্রায়োফাইট প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ২৫০; বাংলাদেশে জন্মে এমন ২৫০ প্রজাতির টেরিডোফাইট-এর মধ্যে ২৩০ হলো ফান। সপুষ্পক (আবৃতবীজ) উদ্ভিদ আছে ৫,০০০ প্রজাতির; এদেশে জন্মে মাত্র ৪ প্রজাতির নগড়ববীজ উদ্ভিদ; তন্মধ্যে ৩টিই সাইকাস, ২ নিটাম বিপন্ন। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির ধান রয়েছে এবং প্রকারভেদ প্রায় ১০ হাজার। এই সমস্ত বিপুল সংখ্যক উদ্ভিদের মধ্যে স্বজাতিতে সমস্ত উদ্ভিদই টিকে আছে, এমন নয়। প্রাকৃতিগতভাবে এবং কিছুটা মানুষের হস্তক্ষেপে ও সহায়তায় উদ্ভিদের মধ্যে আলাদা জাতের সংমিশ্রণে নতুন এবং আলাদা পরিচিতি নিয়ে উদ্ভিদের জন্ম হয়েছে। তার সংখ্যাও কম নয়; বাংলাদেশের সমস্ত অঞ্চলেই উদ্ভিদ জন্মালেও তাদের গুণগত মান ও পরিচিতি এক নয়। অঞ্চল ভিত্তিক এদের পরিচিতিও বিভিন্ন। বাংলাদেশের প্রধান বনগুলির মধ্যে উলেখযোগ্য ১. গ্রীষ্মমণ্ডলীয় চিরসবুজ ও আধা-চিরসবুজ; ২. গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আদ্র-পত্রমোচী (দেশের অভ্যন্তরীণ বন); ৩. জোয়ারধৌত বন; এবং ৪. স্বাদুপানি বিধৌত বন। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় চিরসবুজ ও আধা-চিরসবুজ বনের সিংহভাগই রয়েছে দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের সমতল থেকে ৬০০ মিটার পর্যন্ত উঁচু পাহাড়ি এলাকায়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র-পত্রমোচী বন জোয়ারধৌত বন বা ম্যানগ্রোভ বন একটি চিরসবুজ বন। এটি ৬ মিটার বা ততোধিক উঁচু এবং গাছগুলি বিশেষভাবে জোয়ারধৌত কাদায় অভিযোজিত আর সেখানকার মাটি মাঝারি ঘনত্বের লবণপানিতে সর্বদাই আর্দ্র থাকে এবং জোয়ারের সময় নিয়মিত পাবিত হয়। এই ধরনের বন গাঙ্গেয় বদ্বীপের দক্ষিণে (সুন্দরবন) এবং দক্ষিণ-পূর্বে চট্টগ্রামের দক্ষিণে মাতামুহুরী নদীর বদ্বীপে চকোরিয়া সুন্দরবনে (বর্তমানে ধ্বংসপ্রায়) সীমাবদ্ধ।

শৈবালঃ
প্রকৃত মূল, কাণ্ড, পত্র ও পুষ্পবিহীন এই জাতীয় উদ্ভিদ অত্যন্ত আদিম পর্বের অন্তর্ভুক্ত। প্রিক্যামব্রিয়ান যুগে, প্রায় ৫ কোটি ৭০ লক্ষ বছর পূর্বে, উদ্ভিদের আদি পর্ব এই শৈবালের জন্ম। বাংলাদেশের জন্ম যেহেতু অনেক পরবর্তীকালের ঘটনা এদেশে শৈবালের জন্মও তুলনামূলক অনেক পরবর্তীকালের; বাংলাদেশে অর্ধবায়ব (গাছের কাণ্ড, ঘরের দেয়াল, পাথর, ধাতব খুঁটি ইত্যাদিতে জন্মে), ভূমিজ (আর্দ্র মাটিতে) ও জলজ শৈবাল আছে। জলজ শৈবাল জন্মে স্বাদুপানিতে (ডোবা, পুকুর, হাওর, বাঁওড়, ধানক্ষেত, নদী), স্বল্পলোনা পানিতে (মোহনা এলাকায়) ও সমুদ্রের লোনাপানিতে। জলাশয়ের তলবাসী ও উদ্ভিদ-প্যাঙ্কটনসহ বাংলাদেশের শৈবাল প্রজাতি বর্গভুক্ত। বাংলাদেশে শৈবালের শনাক্তকৃত প্রজাতি ও ভ্যারাইটির সংখ্যা শতাধিক বলে উদ্ভিদবিদদের ধারণা। এ বিষয়ে সঠিক তথ্য পর্যাপ্ত নয়।

ছত্রাকঃ
ছত্রাক ক্লোরোফিলবিহীন এক জাতের উদ্ভিদ এবং সালোকসংশেষণে অক্ষম, তাই পরজীবী বা মৃতজীবী। শৈবালের মতো এদেরও যথার্থ মূল, কাণ্ড, পাতা ও ফুল নেই। এগুলি দুটি দলে বিভক্ত স্লাইম মোল্ড ও প্রকৃত ছত্রাক। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ বিধায় এখানকার প্রধান ফসল ধান, আখ, পাট, চা, আলু, টমেটো, বেগুন, গম, ভুট্টা ইত্যাদির ছত্রাক পরজীবীদের ইতিমধ্যেই শনাক্ত করা হয়েছে।

লাইকেনঃ
নীল-সবুজ ও সবুজ শৈবালের সঙ্গে ছত্রাকের মিথোজীবিতামূলক সহাবস্থানে গঠিত সরল গড়নের এক ধরনের উদ্ভিদ; এগুলিকে সাধারণত পাথর, গাছের কাণ্ড, খুঁটি ও তদ্রুপ অন্যান্য কাঠামোয় সেঁটে থাকতে দেখা যায় এবং বাড়ে খুব ধীরে।

আবৃতবীজ উদ্ভিদঃ
পুষ্পধর উদ্ভিদ ডিম্বক বা কচি বীজ ডিম্বাশয় বা বীজকোষের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। পক্ষান্তরে, নগড়ববীজ উদ্ভিদে বীজগুলি বীজকোষবন্দি থাকে না। আবৃতবীজের বিভাগে রয়েছে সকল কৃষিফসল (দানাশস্য ও অন্যান্য তৃণসহ), বাগানের সব ফুল ও ফলের গাছপালা, সব প্রশস্তপত্রী বৃক্ষ ও গুল্ম এবং মাঠ, বাগান ও পথপাশের আগাছা। এসব গাছপালার অর্থনৈতিক
গুরুত্ব যথেষ্ট। বাংলাদেশে দেশী ও বিদেশী মিলিয়ে আবৃতবীজের প্রজাতিসংখ্যা প্রায় ৫,০০০ (২০০ গোত্র), তন্মধ্যে ৯২ প্রজাতি বিপন্ন; বাংলাদেশে ৫,০০০ প্রজাতির মধ্যে ৮টি একান্তভাবে দেশীয়।

নগ্নবীজঃ
বীজ উন্মুক্ত, অর্থাৎ বীজ কোষে আবদ্ধ নয় এমন উদ্ভিদ। এই জাতীয় উদ্ভিদের ফুলে গর্ভকেশর এবং দারুতন্ত্রে ভেসেল থাকে না। এদের টিকে থাকা বৃহত্তম দল হল পাইনবর্গ যাদের বৈশিষ্ট্য সরু, সূচাকার পাতা ও কোণাকৃতি মঞ্জরি। পৃথিবীব্যাপী এদের প্রজাতিসংখ্যা প্রায় ৭২৫ (গণ ৭০); নগ্নবীজেরা বিবর্তনের ধারায় অপুষ্পক (টেরিডোফাইটা/ফার্ন) থেকে আবৃতবীজের উৎপত্তির ধারায় একটি অন্তর্বর্তী পর্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কেননা এদের মধ্যে দুই দলে উদ্ভিদেরই কিছু কিছু চরিত্র বিদ্যমান। প্রায় ৩৫ কোটি বছরের পুরানো নগড়ববীজের ফসিল পাওয়া গেছে। এগুলি মুখ্যত নাতিশীতোষ্ণ, উপ-পার্বত্য ও উপ-হিমালয় অঞ্চলের উদ্ভিদ। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ে এদের ৪টি প্রজাতি আছে।

কৃষি জীববৈচিত্র্যঃ
কৃষি কর্মসূচিতে ব্যবহৃত জীবসম্পদ। দেশের কৃষি উৎপাদনের জন্য মানুষ শত শত বছর ধরে ব্যবহারের জন্য ১,৩৬৪ প্রজাতির বেশি দেশী-বিদেশী উদ্ভিদ চাষ ও সংরক্ষণ করে আসছে। বাংলাদেশে ১৭৫ প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে। ছয় থেকে সাত হাজার বছরের পুরানো কৃষি সভ্যতার ধারাবাহিকতার ফসল হলো এখানকার চাষীদের হাতে উৎপন্ন ধান, পাট, আখ, তুলা, তিসি, সরিষা, শসা, শিম, কুমড়া, কলা ও আম ইত্যাদির অজস্র প্রকারভেদ। বসতবাড়ির আঙিনায়ও অনেক জাতের গাছগাছড়ার চাষ হয়ে থাকে; বাংলাদেশে ধানের ৩টি প্রজাতি রয়েছে। এদের ভ্যারাইটির সংখ্যা প্রায় ১০,০০০; পার্বত্য চট্টগ্রামে ধানের বুনো প্রজাতি আছে। গম এখন দেশের দ্বিতীয় প্রধান দানাশস্য; একটি দেশী জাত ছাড়া, অন্য সবগুলি উদ্ভিদ বংশানুসৃত বিদেশ থেকে আনা। অন্যান্য গৌণ দানাশস্যের সবগুলিই দেশী। অল্পকয়েক জাতের কাউন আর চীনাও আছে। পাটের ক্ষেত্রে তিতাপাট/সাদাপাটের ৯৫৮টি সংযোজন রয়েছে। দশটি মৌসুমি তৈলপ্রদায়ী প্রজাতির আছে ১২ শতাধিক PGR ; পার্বত্য চট্টগ্রামে বুনোজাতের দেশী সয়াবিনের PGR পাওয়া যেতে পারে। ডাল ও দানাশস্যের ৭০৯৯ PGR-এর মধ্যে ৩৪৬৩ দেশী (স্থানীয় ৮ প্রজাতির), অবশিষ্টগুলি আমদানিকৃত। বাংলাদেশ আখের উৎসস্থল বলে মনে করা হয়। আখের আছে অনেকগুলি PGR: 459 Saccharum officinarum, 26 S. spontaneum এদেশে আছে উচ্চতর PGR বিশিষ্ট ৩৩টি সাধারণ ফলের প্রজাতি। আম, বাতাবিলেবু, পেয়ারা ও কাঁঠালের মোট ৪৬৩ প্রকারভেদ বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও বাগানে শনাক্ত করা হয়েছে। গৌণ ফলের যোগানদার ৫৪ প্রজাতি এবং সেগুলির প্রায় ২৯৮ প্রকারভেদের মধ্যে ২০৭টি স্থানীয়। দেশে রয়েছে ৫২ প্রজাতির সবজির বুনো ফল। তিন ধরনের সবজির PGR থেকে পাওয়া যায় মূল ও স্ফীতকন্দ (১১ প্রজাতি), পাতা (৮ প্রজাতি) ও ফল (২০ প্রজাতি) এই ৩৯ প্রজাতির সবজির PGR সংখ্যা ১ হাজারের বেশি। চায়ের স্থানীয় ক্লোন সংখ্যা প্রায় ২৪৬ এবং প্রবর্তিত প্রকারভেদ প্রায় ২৮; কফির আছে ৩টি প্রজাতি, কিন্তু এদেশে কফির বাণিজ্যিক চাষ এখনও সফল হয়নি।

বন
পাঁচ হাজার বৎসর পূর্বে বাংলাদেশে বনাঞ্চল, বৃক্ষ ও লতাগুল্মের সমাবেশ কেমন ছিল তা পুরোপুরিভাবে বলা না গেলেও অবশ্য অনেকখানি ধারণা করা যাবে। প্রকৃতির নিয়মেই বিভিনড়ব গাছ-পালার সমাবেশে গড়ে উঠে একটি বন। প্রকৃতি বদলায়, এর সাথে সাথে বদলে যায় গাছপালার প্রকার ও আকৃতি-প্রকৃতি। সৃষ্টির প্রাথমিক স্তরে যে ধরনের উদ্ভিদ থাকে একটি বনে, ক্রমান্বয়ে অন্য ধরনের উদ্ভিদ এসে এদের সাথে বনের নতুন বাসিন্দা হয়। অনেক ক্ষেত্রে পুরানো বাসিন্দা মরে যায় বা বদলে যায়, নতুন নতুন অতিথি বৃক্ষ ও লতাগুল্ম এগুলির স্থান দখল করে। এর ফলে বনের প্রাথমিক বাসিন্দা, যাদের পাইওনিয়ার রেসিডেন্ট (Pioneer resident) বলা হয়, তারা কালক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যায়। নানা জাতের গাছপালার একে একে বদল হওয়ার অবস্থাকে “উদ্ভিদ পর্যায়ক্রম (Succession)” বলা হয়ে থাকে।এভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে। তবে কোনো এক পর্যায়ে এসে বদল হওয়ার পালা শেষ হয়। এই অবস্থাকে চূড়ান্ত দশা বা শেষ পর্যায় বলা হয়। স্থায়ী হয় একটি স্থায়ী বনভূমি বা বনাঞ্চলের।

কোয়াটারনারি যুগের শেষে প্লায়োস্টোসিন বা হলোসিন পর্যায়ে, ১.৬ থেকে ১ মিলিয়ন বৎসর পূর্বে, বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল তখনো জলমগ্ন ছিল। জলের গভীরতা যেখানে ২০ ফুটের কাছাকাছি আসে তখন সেখানে কিছু প্রজাতির শিকড়যুক্ত উদ্ভিদ জন্মেছিল।২ এসব উদ্ভিদের মধ্যে হয়তো ছিল পাতা-শ্যাওলা, পোটামোগেটন (Potamogeton), কারা (Chara), নিটেলা (Nitella), র্যা নানকুলাস (Rananculus), ইলোডিয়া (Elodea), ইউট্রিকুলারিয়া (Utricularia) ইত্যাদি। এগুলি ছিল নিমজ্জিত ভাসমান পর্যায়ের উদ্ভিদ। ক্রমাগত পলি পড়ে জলের গভীরতা যখন ৬ থেকে ৮ ফুটে দাড়ায়, তখন নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ যথা অ্যাজোলা (Azolla), স্পাইরোডেলা (Spirodella), লেমনা (Lemna), উলফিয়া (Wollfia), সালভিনিয়া (Salvinia) প্রভৃতি বহু জাতের ভেসে থাকা উদ্ভিদ জন্মেছিল। জলের গভীরতা যখন ১ থেকে ৪ ফুটে দাঁড়ায় তখন জন্মেছিল কলমি শাক, কচু, চিড়চিড়ি, বনপাল, মুাঘাস, মনোক্যারিয়া (Monocaria), লুডমিজিয়া (Ludmizia) ইত্যাদি ধরনের গাছ। জলের গভীরতা যখন ১ থেকে কয়েক ইঞ্চিতে নেমে আসে তখন পুদিনা, হেলেঞ্চা, পলিগোনাম (Polygonum), ক্যাপনেনুলা (Kepnenula) প্রভৃতি উদ্ভিদ বিভিন্ন প্রকার লতানু গাছের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে জন্মেছিল। অবশ্য এই পর্যায়ে কিছু বড় বড় গাছও এই জলাবদ্ধ ভূমিতে জন্মাতে থাকে যারা এই পরিবেশ সহ্য করতে পারে। এসব উদ্ভিদের মধ্যে স্যালিক্স (Salix), উলমাস (Ulmas), একাশিয়া (Acacia), ইরাইথ্রিনা (Erythrina) ইত্যাদি গাছ উল্লেখযোগ্য।

জল যখন পুরোপুরি শুকিয়ে যায়, তখন লতাগুল্ম, গাছপালা প্রভৃতির ধ্বংসাবশেষের উপর বৃহৎ কাণ্ড ও গভীর শিকড়যুক্ত বড় বড় গাছপালা জন্ম নেয়। আরো জন্ম নেয় ছায়াচ্ছনড়ব গাছ-পালার নিচে নানা লতাগুল্মের ঝোপ-ঝাড়। দীর্ঘকাল ধরে এই বনভূমিই স্থায়িত্ব লাভ করে। অবশ্য মাটির উচ্চতা পুষ্টিগুণের প্রকারভেদ অনুসারে গাছপালার শ্রেণীভেদ আছে; মাটিতে আবদ্ধ জল ক্রমশ শুকাতে থাকলে এবং বনভূমির গাছপালার ধ্বংসাবশেষ দিয়ে যে হিউমাস (humus) তৈরি হয়, তাতে এই এলাকার বনভূমি ক্রমান্বয়ে মিশ্র বনের উপযোগী হয়ে ওঠে। অধিক সংখ্যক বড় আকারের গাছ জন্মানোর ফলে বনভূমি ক্রমশই ঘন হয়ে ওঠে। বনভূমি যতই গভীর ও ঘন হতে থাকে, বনে ততোই ছায়ার বিস্তার বাড়তে থাকে। এই ছায়ার ক্রমবিস্তার ক্রমে ক্রমে বনভূমিতে ছায়াসহিষ্ণু ঝোপঝাড়েরও বিস্তার ঘটায়। বিভিন্নব গাছের সংমিশ্রণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মোটামুটিভাবে স্থায়ী বনভূমির সৃষ্টি হয়ে যায়। এই অবস্থায় মূলত মাটির প্রকৃতি প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। আর এর ফলেই বনের গাছপালার রকমভেদে একপ্রকার স্থায়িত্ব এসে যায়। সৃষ্টি হয় বনের।

আগামী পর্বেঃ বাংলাদেশের বন ও বনাঞ্চল।

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৩৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×