আমার বউকে আমি বিয়ে করেছিলাম ১০-ই সেপ্টেম্বর ২০১১ তে, দেখতে দেখতে ১ বৎসর হয়ে গেলো। হুম আমার বউকে-ই আমি বিয়ে করেছি। বিয়ের আগে আমার বউয়ের পরিবারের লোকজনের ধারনা ছিল সে কোন ধন কুবেরের বউ সউদি'র রাজপুত্র টাইপ, সমস্যা টা হইছে ২০০৭ সালে যখন ফেসবুকে আমার এক ফ্রেন্ড এর অ্যালবামে গ্রুপ ফটোতে তাকে দেখে ফেলি। দেখে আমার চিনতে এতটুকুও অসুবিধা হয়নি। প্রথম দেখাতে ই চিনে ফেলসি এইটা আমার বউ। ধুরও আমি তো আবার গল্পও পেতে বসছি। আচ্ছা গল্পের উদ্দেশ্য টা আগে বলে নেই। আপনাদের কাছে বুদ্ধি নিতে আসছি, বিয়ে আগে আমার অনেক বুদ্ধি ছিল, সব বুদ্ধি এখন বউ নিয়ে নিছে, আপনাদের কারো কাছে কিছু অবশিষ্ট থাকলে আগামী ১০ তারিখ (১০-ই সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত আমাকে একটু ধার দিবেন আপনার প্রয়োজনের সময় আবার ফেরত দিবো, প্রমিজ।
যা বলছিলাম , বউকে তো চিনছি এখন ঘরে তো আনতে হবে, যথারীতি বান্ধবীকে ফুন দিয়ে বুঝাইয়া কইলাম,শুইনা তো গাছ থেকে পরছে, ......।। না না না এ হতে পারে না, তুমি আমার অন্য যেকোনো বান্ধবীর কথা বল আমি হেল্প করব কিন্তু নিপা'র কথা বোলো না, যাই হোক জানলাম আমার বউয়ের নাম নিপা। আমি কইলাম এইডা তুমি কি কইতাছ ? ও তো আমার বউ আর বউ তো কোরবানির গরু না যে সবুজ টা নিব না হলুদ টা দেন, হলুদটা বেশি ছোট নীল টা দেন। কোন ভাবে এ আমার বান্ধবীরে বুঝাইতে পারতাছিলাম না এইডা ই আমার বউ, আমার বউ এঁর লগে আমার কথা বলাইয়া দাও। ওর এক কথা তোমার সাথে ওর হবে না, আয়নাই নিজের চেহেরা দেখো, আমিতো পরলাম মহা মস্কিলে বউরে কনভেন্স করতে কতদিন লাগব তার নাই ঠিক, আমি দেখি বউয়ের বান্ধবীরে এ কনভেন্স করতে পারতাছিনা আমার কি হইব !!! আমার বউ আমারে চিনে না !!! কিছু একটা বেবস্থা তো করতে হইব বান্ধবীরে কইলাম তোমার কিছু করতে হইব না তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লিঙ্কটা খালি আমারে দাও , বান্ধবি কয় লাভ নাই ওর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ভিজিবিলিটি অফ করা ফ্রেন্ড ছাড়া অন্য কেউ তার প্রোফাইল খুঁজে -ই পাবে না । একি মুস্কিল নিজেরে বাংলা ছবির নায়ক মনে হইতাছিল। বাংলা ছিনামাতে দেখতাম হারাইয়া যাওয়া বউ/প্রেমিকা কে এ ঝলক দেকছে ডাক দিতে দিতে হারাইয়া গেছে এইবার আবার পাগল হইয়া গুরতাছে রাস্তায় রাস্তায় গান গায় আর প্রেমিকা কে খুঁজে। আমিতো গান জানি না আমার কি হবে?
আতপর দীর্ঘ ৫ মাস কাল অতিবাহিত করে বুফে খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার বউয়ের ই-মেইল এড্রেস খানা পাইলাম। আমার বান্ধবী বুফে খাইয়া পরিতৃপ্ত পেট আর অতৃপ্ত চোখ নিয়া আমাকে ইমেইল এড্রেস টা দিতে দিতে এমন একটা ভাব করল আমার উপর তিনি এত অনুগ্রহ করলেন যাহা বিধাতা ও কোন বান্ধা কে করেন না। ইমেইল এড্রেস খানা হাতে নিয়া কখন আমি পিসি তে বসবো ঐ চিন্তায় উদগ্রিব আর আমার বান্ধবী নিতি কথার ঝড় তুলছে। নিপা অনেক ভালো মেয়ে আমি যেন কোন ফাইজলামি না করি। যা কিছু করি যেন ভেবে চিন্তে করি, ওর ফ্যমিলি অনেক কনজারভেটিভ। কোনভাবে ই যেন ফ্যমিলিতে তাকে কোন ঝামেলায় পরতে না হয়, কোন ঝামেলা হলে ওর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি সব কথা আমার এক কান দিয়ে বের হওয়ার আগে ই হারাইয়া যাচ্ছে, একটা কন্টাক্ট তো পেলাম অন্তত সেই আনন্দে। শুধু একটা কথায় আমার কান সচেতন হল ওর কিন্তু বাবা নেই, ওর বাবা মারা গেছে ৭ বছর আগে, হিসাব করে দেখলাম ও তখন ক্লাস এইটে পড়ে। এইটা শুনে আমার বউ এঁর প্রতি আমার মায়া টা আরেকটু মনে হয় বেড়ে গেলো। যাইহোক ।
কথা সত্য ইমেইল এড্রেস দিয়ে ফেসবুকে সার্চ দিয়ে কিছু পাওয়া গেল না। ইমেইল এড্রেস পাওয়ার গল্প শুনতে –ই ক্লান্ত ? ভয় পাবেন না বউকে কিভাবে আমার ঘরে আনলাম সেই গল্প অনেক লম্বা কিন্তু বর্ণনা সংক্ষিপ্ত,
প্রথম ই-মেইলের রিপ্লাই পেয়েছি ৮ নাম্বার ইমেইলের পর প্রথম ই-মেইল থেকে ১২ দিন পর, কি যে আনন্দ এইটা কাউকে বুঝানোর দরকার নাই, আমার আনন্দ আমার কাছে ই থাকুক। মেইল পড়ে বুঝতে পারলাম আমার বান্ধবী আমার বউকে আমার বিষয়ে জানাইসে মনে মনে কৃতজ্ঞ হইলাম। খুব বিনয়ী ভাষায় সে আমাকেঅনুরুধ করল আমি যেন তাকে আর মেইল না করি কেননা তাতে আমি আমার মূল্যবান সময় মূল্যবান কাজে খরচ করতে পারব, সে খুকু’র কাছে জানছে আমি খুকু’র ভালো ফ্রেন্ড, আমি অনেক ভালো তাই সে চায় আমি যেন যথেষ্ট বিচক্ষণ হই এবং নিজের সময়ের প্রতি দায়িত্বশীল হই। তার পর আমি সময়ের প্রতি অত্তান্ত যত্নশীল হয়ে প্রতিদিন একটা করে মেইল করি কোন রিপ্লাই নাই তবু-ও মেইল করে এ যাচ্ছি, অনেক দিন পর একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট ফেসবুকে, নামটা পড়ে বুঝা যাচ্ছিল এইটা একটা মেয়ে নাম কিন্তু আমার অপরিচিত, প্রোফাইল পিক ও নাই তাই যা হবার তাই। ডিক্লাইন। একটা মেইল পেলাম “রিসেন্ডিং দি রেকুয়েস্ট উড ইউ প্লীজ কাইন্ড ইনাফ টু একছেপ্ট মাই রিকুয়েস্ট? অ্যান্ড প্লীজ স্টপ রাইটিং মি ইন ই-মেল, হুয়াট ইভার ইউ ওয়ান্ট টু সে প্লীজ টেক্সট মি ইন ফেসবুক। আমি টো আনন্দে আত্মহারা কিন্তু পরে জানতে পেরেসিলাম এইটা তার প্রতারণা। ফেসবুকে সে কালে ভাদ্রে ডুকে তাই ফেসবুকের ম্যাসেজ তাকে বদার করতে পারবে না। আমি তোঁ দমার পাত্র নই। প্রতিদিন সকালে গুড মর্নিং আর রাতে গুড নাইট ম্যাসেজ দিয়ে যাচ্ছি। মাসে একবার একটা রিপ্লাই পাই “হুয়াট কাইন্ড অফ স্টুপিডিটি ইজ ইট ?” হুম পাথরের মন একসময় গললো ফেসবুক থেকে ফুন, ফুন থেকে দেখা করা ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে। তার পর অনেক পথ ২০১০ সালের ১৬-ই ডিসেম্বর আমার বউ এর জন্মদিনে আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, দুই পরিবারকে একসাথে বসানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ আমার ঢাকায় বাড়ি গাড়ি না থাকার অপরাধে। আমার মত হত দরিদ্রের কাছে আমার সুমুন্দি আমার বউকে বিবাহ দিবেন না। এইদিকে আমার পরিবার ক্লান্ত আমাকে বিয়ে করানোর জন্য চেষ্টা করে। গত ৬ বছর ধরে ইমোশনাল ব্লাকমেইল থেকে হেন হন প্রচেষ্টা তারা বাকি রাখে নাই। এখন তাদের অবস্থা এইরকম যে আমি যাকে খুশি যেভাবে খুশি বিয়ে করি। আমি বিয়ে করব এইতা-ই হল শেষ এবং একমাত্র কথা আর কোন কথা নাই। আমার বউকে আমি বললাম কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করবো। এইটা শুনেতোঁ আমার বউ এর মাথায় ১ লক্ষ ভোল্টেজের ইলেক্ট্রিক শট। কোন ভাবে-ই সে এইটা মেনে নিতে পারবে না। আবার পুরু উদেম্মে তার মা, বড় বোন, ভাইদের বুঝানোর চেষ্টা করতে থাকল। কিন্তু তাদের এক কথা সউদির রাজপুত্র ছাড়া কারো কাছে তারা বিয়ে দিবে না। উল্লেখ্য সউদির রাজপুত্র না পাওয়া যাওয়ার কারণে আমার বউয়ের বড় দুই বোনের অদ্যবদি বিবাহ হয়নাই। অবশেষে সেই মহেন্দ্রখন আমার বউ তার পরিবারের আচরণে বিদগ্ধ । বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে আমি কিঞ্চিত অপমানিত । এই প্রেক্ষিতে আমার বউকে আমি জানালাম আমি তাকে ভালবাসি আমি আমার সর্বসক্তি দিয়ে চেষ্টা করবো আমার সামর্থের সবটুকু সুখ বয়ে নিয়ে আসতে। নিরবিছিন্ন সুখ হয়ত আমি তাকে দিতে পারব না কিন্তু সুখে দুখে মিলে মিশে একটা সুন্দর জীবন গড়ব দুইজন মিলে। সে রাজি হল আমি দুলাভাইকে জানালাম আমি আমার বউকে নিয়ে আসতাছি তারা যেন কাজী ডেকে রেডি থাকে। খুকু, তপু ভাই (খুকু’র জামাই) আর কয়েক জন বন্ধু মিলে মিরপুর থেকে একটা শাড়ি আর এলিফেন্ট রোড থেকে একটা পাঞ্জাবি কিনে বোনের বাসায়। আমরা পোঁছানোর ২ ঘণ্টা আগেই কাজী এসে অপেক্ষা করছে। অবশেষে ২০১১ সালের ১০-ই সেপ্টেম্বর বিকাল ৫ টায় আমি আমার বউকে ঘরে তোলার আইনগত ও সামাজিক অধিকার অর্জন করলাম। আমার বউ এখন আমার ঘরে। আমারা সুখি, আমার বাবা মা তাদের লক্ষ্মী পুত্রবধূর ভালোবাসায়, আদরে, মমতায় মুগ্ধ। সবকিছুর মধ্যে ও একটা লুকিয়ে থাকা হাহাকার দেখি আমার বউয়ের চোখে। আমার মত দরিদ্রকে বিয়ে করার অপরাধে সে তার মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন গত একবছর ধরে। মায়ের জন্য তার কান্না আমি শুনতে পাই। আমার ভালবাসার দাম দিতে গিয়ে সে হারালো তার মা, ভাই বোনদের। তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি অপরাধী হয়ে যাই। এতো না পাওয়া এতো অভাবের মধ্যে মিষ্টি হেসে যখন সে বলে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বউ। আমার অনুভূতি ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। আমি তাকে পৃথিবীর সব সুখ এনে দিতে চাই। ১০-ই সেপ্টেম্বর আসতে আর দেরি নাই। এইদিনটা যেন আমার বউয়ের জন্য অনেক সুন্দর একটা দিন হয় তার জন্য সব কিছু করতে চাই আমি। ভেবে কোন কুল কিনারা পাচ্ছি না কি করবো। কেমন করে তাকে তাক লাগিয়ে দিবো, যদি পারতাম তার মাকে বসায় নিয়ে আসতে। ১০-ই সেপ্টেম্বর সকালে যদি ঘুম ভাংতোঁ কলিংবেলের শব্দে , বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে যদি আমার বউ দেখত তার মা দাঁড়িয়ে আছে, বুকে জরাইয়া যদি বলত কেমন আছিসরে পাগলি? উফ আমি স্বপ্ন দেখা শুরু করছি। স্বপ্ন তো সত্যি হওয়া সম্ভব না কেমন করে কি উপহার দিবো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। কেউ কি কিছু বুদ্ধি ধার দিবেন?
সবার জন্য শুভ কামনা।