মাতাল
এক মাতাল হঠাৎ দেখতে পেল তার আত্মা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । আত্মা তাকে ভয় দেখাচ্ছে, সে তাকে ত্যাগ করে চলে যাবে বলে । তখন মাতাল অনুনয় করে বললো, আমি আর কখনো মদ খাবো না, এই তোমার মাথা ছুঁয়ে বলছি জীবনে আমি আর কখনো মদ পান করবো না । তার বৌ শাড়ীর আঁচল কোমরে গুঁজে বলছে, এসব কথা তুই প্রতিদিন বলিস হারামীরবাচ্চা, তোকে আর বিশ্বাস নেই, তুই তোর মদ নিয়ে পড়ে থাক, আমি আজই চলে যাচ্ছি। পরের রাতে মাতাল তার ঘরের দরজায় পড়ে রইল, সে চোখে পানি নিয়ে আত্মাকে বলছে, বউও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, তুইও চলে যাচ্ছিস? তারপর মাতালের বুক থেকে সকল উত্তাপ বের হয়ে গেল ।
গুপ্ত ঘাতক
লিটু মিতুর সাথে প্রতারণা করেছে । আজ অনেকদিন হলো মিতু কিছুতেই এই ব্যাপারটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না । সে এখনো ভাবছে লিটু কোনভাবেই এমনটা করতে পারে না, সে এতো জগণ্য হতে পারে না। মিতুর মনে যতটা না দুঃখ ব্রেকাপ হওয়ার কারণে তার চেয়ে সে বেশি ভুগছে তাদের অন্তরঙ্গের ভিডিও ক্লিপগুলোর কারণে । কখন লিটু এগুলো অনলাইনে ছেড়ে দেয় এ ভেবে সে বারবার কেঁদে উঠছে । তাকে ভিডিও ক্লিপগুলো দুঃস্বপ্নের মত তাড়া করছে । তার শরীর ভেঙ্গে পড়েছে, চোখের নিচে কালি পড়েছে । সে বাইরে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে কখন পথের মধ্যে লিটুর সাথে দেখা হয়ে যায় আর সে ব্ল্যাকমেইল করে বসে তাকে এই ভয়ে । এভাবে অসহ্য জীবনযাপণ করছে মিতু । পরিবারের কারো সাথে সে তেমন কথা বলে না, বান্ধবীদের সাথেও কোন যোগাযোগ নেই । সে ফোন বন্ধ করে দিয়েছে লিটু যদি তাকে ফোন করে ব্ল্যাকমেইল করে এই ভয়ে । এভাবে ভুগতে ভুগতে একরাতে মিতু আত্মহত্যা করে । আর পরদিন একটা ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়ে গেল, ভিডিওটির নাম 'মিতু'স ইরোটিক স্ক্যান্ডাল'।
দংশিলে সমাজ
এলাকার মান্যগণ্য সকলের আলোচনার ভিত্তিতে সিমিনের নতুন নাম দেয়া হলো ধর্ষিতা। তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে এই নতুন নাম দেয়া হলো। নামটা যদিও নতুন নয়, এর আগেও অনেককে এমন নাম দেয়া হয়েছিলো। তাদের সবাই ছিলো নারী । ব্যাকরণ এবং মানব সমাজের ভাষায় এ নাম শুধুমাত্র স্ত্রীলিঙ্গের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে হঠাৎ এলাকায় বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা বেড়ে গেলো । ধর্ষণের কারণ এবং ধর্ষণের পেছনে ধর্ষিতার কী কী উপসর্গ এবং অনুসর্গ ছিলো তা নিয়ে চলছে অলিতে গলিতে চুলচেরা আলোচনা । যাবতীয় জ্ঞানগর্ব উক্তি এবং উদাহরণ দিয়ে একে অপরকে বুঝাচ্ছে সিমিনের শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, পোষাক পরিচ্ছদ এবং চারিত্রিকগতভাবে কতটুকু ইন্ধন জুগিয়েছিল এই ধর্ষণের পেছনে । এ সুবাদে সুরজের চায়ের ব্যবসা হয়ে গেল চাঙ্গা, সে চা বানাতে বানাতে বারবার একটা দ্বন্ধের মধ্যে পড়ে যায় সিমিন মেয়েটার দোষ কোথায় তা ভেবে । সে যতটুকু সিমিনকে দেখেছে বা জানে তাতে সিমিন ভদ্র পরিবারের একজন নম্র ভদ্র এবং শালীন পোশাক পরেই চলাফেরা করা একটা মেয়ে। সিমিনকে দেখে সিরাজও মাঝে মাঝে ভাবতো তার ছোট্ট মেয়েটাকে সিমিনের মত বানাবে।
এলাকার এই উত্তাপের মধ্যে হঠাৎ পানি ঢেলে দিলো কুদ্দুস পাগলা, সে বলে বেড়াচ্ছে এই ধর্ষণের পেঁছনে সিমিনের কোন দোষ নাই, তোরা যারা সিমিনের দোষ দিচ্ছিস সবাই নরকে পুড়বি । এ কথা শুনে সবাই একটু ঘাবড়ে গেলো। কারণ কুদ্দুস পাগলাও একসময়ের ধর্ষক ছিল । এরপর থেকেই সে পাগল । সেই রাতে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো । যারা যারা সিমিনের দোষ দিয়েছিলো তারা স্বপ্ন দেখলো, ফুলসজ্জার নরম বিছানায় তাদেরকে ধর্ষণ করছে একদল পুলিঙ্গধারী নারী। রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে বিছানা। আর সিমিন তা দেখে হো হো করে হাসছে। পরদিন সকালে পাগলের বেশে একদল পুরুষ ধর্ষিতা কুদ্দুস পাগলের পেঁছন পেঁছন এলাকা থেকে বের হয়ে গেল, সিরাজ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৪২