somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দারফুরে একখন্ড বাংলাদেশ

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি দারফুরে আছি আজ প্রায় আট মাস। আফ্রিকা মহাদেশের সব চাইতে বড় মুসলিম দেশ হচ্ছে সুদান, আর সুদানের বিবদমান প্রায় ২৪ টিরও বেশী রেবেল গ্রুপের আক্রমন থেকে সাধারন সুদানবাসীদের রক্ষার জন্য ২০০৮ সালে আফ্রিকান ইউনিয়ন আর জাতিসংঘ একযোগে শুরু করে এযাবৎ কালের সবচেয়ে বড় মানবতার মিশন- ইউনামিড (UNAMID- UN AFRICAN UNION MISSION IN DARFUR) । এই মিশনের ফোর্স সদর দফতরে আমার প্রেষনে নিযুক্তির কারনে দারফুরের মোটামুটি পুরোটাই আমার দেখা হয়ে গিয়েছে। আমি কর্মরত রয়েছি 'জক" (JOC) বা জয়েন্ট অপারেশনস সেন্টারে।
আগেই বলে রাখছি দারফুরে জীবনধারন করাই যেন সবার জন্য একটা বিশাল চ্যালেন্জ। সাহারা মরুর একটা বড় অংশ এই দারফুরের মধ্যেই পড়ায় স্থানীয় লোকজনের মতোই জাতিসংঘে নিয়োজিত সদস্যরাও জীবনধারনের মূল উপকরন সংগ্রহে কঠিন যুদ্ধে রয়েছে, বিশেষ করে খাবার পানি।বাইরে থেকে আমরা জাতিসংঘ মিশন সম্পর্কে যা শুনে থাকি তা হচ্ছে এখানে কাজ করলেই অনেক টাকা। কথা সত্যি। এখানে কর্মরত আমার মত কর্মকর্তারা টাকার অংকে ভালোই পেয়ে থাকেন। কিন্তু সেটি যদি শেষ কথা হতো আমি কিছুটা খুশীই হতাম। নিজের পরিবার পরিজন আর একান্ত আপনজন ছেড়ে দিনের পর দিন এখানে আমরা কিভাবে রয়েছি সে কাহিনী না হয় অন্য একদিনের জন্য তোলা থাকুক।
এখানে মন ভালো করার মত যে কয়টি জিনিষ রয়েছে ( আসলে নেই তেমন কিছুই) তার মধ্যে আমি বিশেষ করে উল্লেখ করতে চাই এখানে থাকা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কথা। বিগত সময়ে বাংলাদেশে অপারেশন ক্লীন হার্ট, ১-১১ আর বিভিন্ন সময়ে জরুরী অবস্থায় নিযুক্ত থেকে তারা যতটাই সমালোচিত আর জনরোষে পড়ুক না কেন আমি মনে করি এই সশস্ত্র বাহিনী আমাদের এক পরম গর্বের বস্তু। শুধু এক জাতিসংঘে কর্মরত সদস্যদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশ সরকার এর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এখন বেশী সমৃদ্ধ করছে। এতে ব্যক্তিগত লাভ রয়েছে আমি স্বীকার করছি, কিন্তু যে ঝুঁকির মধ্যে তারা এখানে কাজ করছে সেই খবর আমাদের খবরের কাগজ পড়া জনতা কোনদিনও পায়না, পাবেও না।
দারফুরের সেক্টর সাউথ বা দক্ষিন ভাগের নাম নিয়ালা ( Nyala) । অস্ত্র পরিদর্শক হিসেবে কদিন আগে আরো কয়েকজন সদস্যের সাথে নিয়ালায় গিয়েছিলাম। সেখানে বেশ কয়েকটি দেশের পদাতিক, প্রকৌশল আর সরবরাহ ব্যাটেলিয়ন এ রুটিন চেক করতে করতে হঠাৎ একদিন পৌছে যাই এক খন্ড বাংলাদেশ এ ! অবাক হবার মতই বিষয়টা। পতপত করে উড়ছে আমার চিরচেনা লাল সবুজ । গর্বে আর আনন্দে বুকটা ভরে উঠলো। আমার টীম লীডার কে বলতেই উনি সাদরে রাজি । কিছুক্ষনের জন্য ছুটি নিয়ে চলে গেলাম ব্যনস্রিক-২ (BANSRIC- BANgladesh Sector Reserve Infantry Company)এর সীমানায়। কর্তব্যরত বাংলাদেশী সেনা সদস্যদের পরিচয় দেবার পর সাদরে তারা কাঁটাতার এর গেট খুলে আমাদের গাড়ি ঢুকতে দিলো। পুরো কম্পাউন্ড জুড়ে যেন এক খন্ড বাংলাদেশ। বড়বড় কন্টেনার এর মধ্যে বাংলায় লিখা রয়েছে স্বাগতম কথাটি। ঠিক দেশের আদলেই গড়ে তোলা মসজিদ। একদিকে রয়েছে প্যরেড গ্রাউন্ড, বিশাল ফ্লাগপোলে আফ্রিকান ইউনিয়ন আর জাতিসংঘ পতাকার সাথে উড়ছে লাল সবুজ। ঘুরে ঘুরে দেখলাম সব। সবচে মজার ব্যাপার হলো এই যে এখানে ব্যবহার করা প্রত্যেকটি ইট কাঠ আর পেরেক এর জন্য বাংলাদেশ সরকার উচ্চ হার এ মার্কিন ডলার পাবে। একটু বুঝিয়েই বলি। ধরুন এখানে এই বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট টি সাথে করে দেশ থেকে যেসব পুরোনো ব্যবহার করা গাড়ি নিয়ে এসেছে, মিশন শেষে এই গাড়ির জন্য জাতিসংঘ পুরো নতুন গাড়ির দাম পরিশোধ করবে বাংলাদেশ সরকার কে। তাই বলে গাড়িটি কিন্তু তাদেরকে দিয়ে আসতে হবেনা। ব্যবহার্য প্রতিটি জিনিষের জন্য এভাবে রি-এম্বার্সমেন্ট হিসেবে দেয়া হবে কাড়ি কাড়ি ডলার। বাংলাদেশী সেনা সদস্যরা শুধুমাত্র এই কটা বিদেশী মুদ্রা দেশের হবে বলে প্রখর রোদের মধ্যেও ইউ এন এর সরবরাহ করা এয়ার কন্ডিশন্ড "করিমেক" ট্রেলার এ না থেকে দেশ থেকে আনা তাবুতে থাকতেন। পরে অবশ্য তাদের জন্য নতুন ব্যবস্থা করা হয়। এ কয়টা কথা না বল্লেও চলতো। বলাটা শুধু তাদের জন্যই, যারা এতো কিছুর পরও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে শুধু খারাপটাই দেখেন। এত গেল শুধু গাড়ির হিসাব। দুপুরে আর্মি অফিসাররা তাদের সাথে খেতে আমন্ত্রন জানালেন। অনেকদিন পর দেশী মাল মশলায় তৈরি দেশী লোকের হাতে তৈরী দেশী খাবার খেয়ে চোখে যেন পানি চলে আসার অবস্থা !! অনেক মজা করলাম দেশী মানুষজনের সাথে, গালগল্প, সমসাময়িক প্রসংগে আলাপ আর বাংলাদেশি স্টাইলে আড্ডা !

প্রায় ৪৫ মিনিট পর আমার টিম লীডার এর ফোনএ সংবিৎ ফিরে পেলাম। যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। ফিরে গেলাম আবার গৎবাঁধা কাজের মাঝে। পেছনে ফেলে নিজের একটা অংশ।

এরপরে লিখবো দারফুরে কিভাবে আমরা আছি তা নিয়ে। আজ এ পর্যন্তই । সবাই ভালো থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৫:২৭
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×