somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নৈতিকতা কি ধর্মের উপর নির্ভরশীল (প্রমান ভিত্তিক আলোচনা)

১১ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কেউ কেউ মনে করেন ধর্ম সত্য বা মিথ্যা যাই-ই হোক, ধর্ম না থাকলে পৃথিবী নৈরাজ্য ভরে যেত । ধর্মের কারনে ও খোদার ভয়ে মানুষ ভাল আছে । সুতরাং ধর্মের প্রচার ও প্রসার হওয়া উচিত । আমিও একসময় এ দর্শনের সমর্থক ছিলাম । কিন্তু বাস্তবতা চরম ভিন্ন ।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু মানুষ এমন প্রবৃত্তি নিয়ে জন্মায় যে তারা শাসন (রাষ্ট্রীয় হোক বা যাইই হোক, মুগুরে সোজা) ছাড়া কথা ভাল থাকে না আর এক শ্রেনীর মানুষ আছে আপনি যদি তাদেরকে অপরাধ করতে জোরও করেন তথাপিও তারা তা কখনও করবে না, তাদের বিবেকবোধ বাধা দেয় । প্রথম শ্রেনীর লোক ধর্মীয় প্রশিক্ষন , শিক্ষা- দিক্ষা ও শত অনুশাসনের মধ্যে থাকলেও উচ্ছৃঙ্খল থেকে যায় । পৃথিবীতে ধর্ম না থাকলেও এরুপ দু’শ্রেণীর লোক থাকবে । এক শ্রেনীর লোক ভাল আর একশ্রেণীর লোক খারাপ । আর সমাজ কতটা ভাল বা খারাপ তা নির্ভর করে রাষ্ট্রের উপর (রাষ্ট্রপতি কতটুকু দক্ষ এবং রাষ্ট্রনীতি কতটুকু সুন্দর ইত্যাদির উপর)। এবার কিছু প্রমান দেয়া যাক ।
পৃথিবীর কোন দেশে ধর্ষন সবচেয়ে বেশি হয়? এর উত্তরে হয়ত অনেকে আমেরিকা, কানাডার নাম নিবে । বাস্তব সত্য কিন্তু ভিন্ন । আমেরিকায় সকল ধর্ষনের রিপোর্ট পুলিশের কাছে পৌছে, এমনকি অনেক নারী সত্যিকার ধর্ষিতা না হলেও, কাউকে হয়রানীর উদ্দেশ্যও পুলিশে সে ধর্ষিতা হয়েছে বলে রিপোর্ট করে থাকে । আবার স্বামী জোর পূর্বক যৌণ মিলন করলেও তা ধর্ষন হিসাবে মামলা হয় । আর আমাদের দেশে এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র । আমাদের দেশে যারা ধর্ষিতা হয় তার মধ্যে মামলা হয় শতকরা ১০% আর বাকি ৯০% লোক চক্ষুর অন্তরালেই রয়ে যায় । আর স্বামী কর্তৃক জোর পূর্বক যৌন মিলন তো ধর্ষন হিসাবে আমাদের দেশে মোটেই স্বীকৃত নয় । প্রকৃত হিসাবে আমাদের দেশেই ধর্ষনের হার সবচেয়ে বেশি । আবার ওয়াজ-নসিহত, ধর্মীয় আলোচনা ইত্যাদিতেও আমরা পৃথিবীতে শীর্ষে ।
বহু লোক পাবেন যারা নামায কালাম মোটেও পড়ে না, তবে তাদের নৈতিকতা অনেক ভাল । পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত নামে মাত্র তাদের একটি ধর্ম আছে। প্রকৃতিপক্ষে বাস্তব জীবনে তারা ধর্মের কোন বিধান মানে না । তারা কোন প্রতারনা, ঠকবাজি করে না । তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠি । তাদের আচার-ব্যবহার অতি সুমিষ্ট । অপরদিকে বহু নামাযি ও ধার্মিক লোক দেখবেন যারা মসজীদে বহু সময় কাটায় কিন্তু তাদের মুখের ভাষা ও আচারন আপনার হৃদয়ের এত গভীর এত বিষাক্তরুপে বিদ্ধ করবে যা কখনও দূরিভূত হওয়ার নয় । তারা বাস্তব জীবনে বহু মানুষকে ঠকায় এবং বিভিন্ন ধরনের মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত । তাদের নৈতিকতাও অনেক নিম্ন মানের ।
পবিত্র রমযান মাসেও দেখবেন এ শ্রেনীর ধার্মিকদের মধ্যে যারা ব্যবসায়ী তারা তাদের ব্যবসার হীন স্বার্থে দ্রব্যমুল্যর কৃত্রিম দাম বাড়িয়ে রোযাদার গরীব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যায় তাদের পণ্যের মুল্য । তারা তাদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলে যে কোন মানুষের দূর্বলতাকে পুজি হিসাবে ব্যবহার করতে দ্বিধা করে না । তাদের আচারণ নিষ্ঠুরতার চরম অবস্থাও প্রদর্শন করে থাকে । সংযমের মাসে অসংযমতা চুড়ান্ত রুপ লাভ করে ।
যারা ইসলামী আন্দোলন করে তারা ধর্মের নামে ইসলামের অনেক প্রশিক্ষন নিয়ে থাকে এবং নিবিড় তত্ত্বাবধানে থাকে । তাদের মধ্যেও বৃহৎ একশ্রেনীর লোক পাবেন যাদের নৈতিকতা অনেক নিম্নে । তারা ইসলামী আন্দোলন করে বিধায় তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডগুলোর ব্যপারে সাধ্যমত গোপণীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করে । এটা আমার কানে শোনা কথা নয় । নিজ চোখে দেখা অভিজ্ঞতা । ইসলামী আন্দোলনের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের কথা বলছি, সাধারন কর্মীর কথা নয় । একজন, দু’জনকে দেখে এ মন্তব্য নয়,বরং হাজার জনকে দেখা । তাদের লেন-দেন ও বাস্তব আচার ব্যবহারও নিম্নমানের । তবে সাংগঠনিক কাজের জন্য কিছু আনুষ্ঠানিক আচারনের ব্যপারে তারা প্রশিক্ষিত । তাদের আনুষ্ঠানিক আচার-ব্যবহারগুলোতে উক্ত আচার-আচারণ অনুশীলন করা হয় বলে লোকে মনে করে তারা কত সুন্দর ব্যবহার করে । সাংগঠনিক আচারনের বাইরে আপনি যদি ব্যক্তিগত কোন লেন-দেন বা উঠা-বসা হয় তাহলে তাদের আসল চেহারা দেখবেন । শুনেছি ইসলামী ব্যংকে সবচেয়ে বড় যে ক’টি আর্থিক কেলাংকারি হয়েছে তার প্রায় সবক’টি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধার্মিক ও সৎ চরিত্রবান বলে পরিচিত তাদের দ্বারাই সংগঠিত হয়েছে ।
আমি আগেই বলে নিয়েছি আমার এ পর্যালোচনা ঢালাওভাবে সবার জন্য নয় । আমি শুরুতেই বলে নিয়েছি মানব সমাজে দু’শ্রেনীর মানুষ দেখা যায়-হোক তারা ধর্মীয় প্রশিক্ষনে বা ধর্ম ছাড়া । উপরোক্ত উদাহরনে আমি দেখিয়েছি যে ধর্মীয় প্রশিক্ষন সত্ত্বেও যারা দ্বিতীয় শ্রেণীল চরিত্রে তারা সে চরিত্রেই থেকে যায় আর যারা প্রথম শ্রেণীর তারা তাদের নিজ চরিত্রেই থেকে যায় ।
আলোচনা লম্বা হওয়ায় আপাতত এখানে শেষ করছি । দ্বিতীয় পর্বে আরো কিছু প্রমান দেখাব এবং আলোচনা করবো ধর্ম মানুষের জন্য কি কি ক্ষতি বহন করে আনছে । গঠনমুলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাচ্ছি । ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:১০
১১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×