somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী-পুরুষ বৈষম্যর মূল কারন ও প্রতিকার

১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কোন সমস্যার সমাধানের পূর্ব শর্ত হল উক্ত সমস্যার মূল কারন চিহ্নিত করতে সক্ষম হওয়া এবং তদানুযায়ী তার সঠিক সমাধান বের করা। এ পর্যন্ত নারী নির্যাতন ও বৈষম্যর যত লেখা পড়লাম সেখানে নারী নির্যাতনের যে কারনগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তার কোনটিতেই আমি পেলাম না যে নারী নির্যাতনের আসল কারন চিহ্নিত করা হয়েছে। উল্লেখিত সবগুলো হল আনুসাঙ্গিক কারন, মুল কারন নয়। আমার এ লেখায় মুল কারন চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তদানুযায়ী একটি সমাধান দেখানো হয়েছে। এর চেয়ে ভাল কোন আইডিয়া কারো কাছে থাকলে শেয়ার করতে পারেন।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ নারী তার গৃহে বৈষম্যের শিকার।নারী তার স্বামী কর্তক বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হয়ে থাকে।গত এক/দুই দশক আগে নারী বৈষম্যে ও নিগৃহীত হওয়ার হার ছিল এখনের চেয়ে প্রায় ২/৩ গুন বেশি।নিজ পরিবারও নারীদের লেখা-পড়া করার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করত।
আমাদের দেশে পারিবারিক আইনটি কুরআন থেকে নেয়া। ইসলামিক পারিবারিক আইনের মূল কথা হল- পরিবারের সার্বিক দায়িত্ব পুরুষের। পরিবারের সকল খরচ বহন করা সহ পরিবারের ভাল-মন্দ দেখা,তত্ত্বাবধান করা ইত্যাদি দায়িত্ব পুরুষের উপর।পুরুষের তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সংসারের ঘানি টানবে আর নারী শুধু বসে বসে খাবে-এটা ন্যয়বিচারের দৃষ্টিতে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।যৌক্তিভাবেই নারীর কর্তব্য হয়ে দাড়ায় যে সে উক্ত পুরুষের ঘর সংসার গুছিয়ে রাখা, এবং পরিশ্রান্ত-ক্লান্ত পুরুষের সেবা-শুশ্রুষা করা এবং ঘর সংক্রান্ত যাবতীয় ঝঞ্জাল সামলিয়ে পুরুষের ঘরের জীবনটা শান্তিময় করা।দু’জন দু’জগত সামলাবে একজন বাইরের জগত এবং অপরজন ঘরের ভিতরের অংশ।
শুনতে কথাটি বাহ্যত অনেক মধুর ও যৌক্তিক মনে হয়।এ নীতিটিই আমাদের দেশে শত শত বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠিত।এ নীতির কূফল এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ নীতিটির কুফল আমাদের দেশের লোকেরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে আর পাচ্ছে।নারীর যেহেতু অর্থণৈতিক দায়িত্ব নেই তাই তার কর্মে দক্ষ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হয় না এবং শিক্ষার প্রতি নিরুৎসাহীত হয়। আর সংসার জীবনে পুরুষের কর্তৃত্বের অধীনে থাকতে হয়, যে পুরুষ খারাপ হয় তার সংসারে নারী হয় গোলামের ন্যয়।এ কথা বললে কিছু ধর্মান্ধ (যারা অন্ধভাবে ধর্মে বিশ্বাস করে) তারা বলবে নারীর বিচার চাওয়ার সুযোগ আছে এবং আরো----। পুরুষের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নারীকে বিচারকে দয়ার উপর ছেড়ে দেয়া। বিচার চাইতে যায় চরম পর্যায় গেলে, তার আগে বহু নিগৃহের শিকার হয় যার বিচার চাওয়া সম্ভব না আর সবাই বিচার চাইতেও সামর্থ নয়। বাস্তব উদাহরন দু’দশক আগে আমাদের দেশের নারীদের অবস্থা এবং বর্তমানেও তার বহুলাংশ বজায় রয়েছে। বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এই লিঙ্কে:view this link
তবে পুরুষের মাথায় সংসারের সব দায়িত্ব রেখে দিয়ে নারীকে সংসারের দায়িত্বমুক্ত করে নারীকে অর্থ উপার্জনে নামিয়ে দেয়া ন্যয়বিচার ও যুক্তির দৃষ্টিতে আরেকটি অন্যয় ও অবিচার। এ যেন কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগের চিকিৎসা করে ডাইরিয়া রোগের জন্ম দেয়া।
নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বর্তমানে নারীদের কর্মক্ষেত্রে আনার প্রতিযোগিতা চলছে এবং নারী ক্ষমতায়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যা অবশ্যই প্রশংসনিয় ও কল্যাণকর হত যদি তা ডাইরিয়ার জন্ম না দিত।নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সব পদক্ষেপ নারীদের বৈষম্য থেকে মুক্ত করে পুরুষ বৈষম্যর জন্ম দিচ্ছে। যার কুফলও আমাদের সমাজে দেখা দিতে শুরু করছে।
আইনগতভাবে যেহেতু সংসারের দায়িত্ব পুরুষের উপর, সেহেতু সংসারের সকল খরচ বহন করতে পুরুষ বাধ্য থাকে, নারী যতটুকু দেয় এটা তার দয়া।মনে চাইলে নারী তার উপার্জিত অর্থের কিছু অংশ স্বামীর সংসারে ব্যয় করে থাকে। বাকি অর্থ বা সম্পূর্ণটাই নিজ খেয়াল খুশিমত ব্যবহার করে থাকে। কখনও কখনও স্বামীর উপর দেমাগ দেখায়, অনেক কিছু দাবী করে যেটা স্বামী বেচারাকে পূরণ করতে বাধ্য হতে হয়। এ ধরনের পরিবারে বেচারা পুরুষ স্ত্রী কর্তৃক মানসিকভাবে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়ে থাকে।দুঃখের কথা বললেও নাকি মনে কিছুটা হলেও শান্তি পাওয়া যায়।বেচারা পুরুষ কিন্তু তার এ দুঃখের কথা কাউকে বলতেও পারে না। নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করলে দেখা যায় এখানে পুরুষের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে।
আমরা চাই নারী-পুরষ কেউ যাতে বৈষম্যর শিকার না হয়।
সমাধান:
সমাধান হল আইন পরিবর্তন করা। সংসারের দায়িত্ব নারী ও পুরুষ উভয়ের উপর সমভাবে বর্তাবে। আইনগতভাবে দু’জন দু’জনের সাথে বন্ধুর মত সংসার চালাবে।আধুনিক বিশ্বের দেশগুলোর পারিবারিক আইন অনেকটা এরুপ।এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই, বিশ্বের পারিবারিক আইনগুলোর মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি ভাল সেটি গ্রহণ করা যেতে পারে।
পুরুষের উপর থেকে অর্থনৈতিক দায়িত্বও সরাবেন না, আবার নারীকে সংসারের দায়িত্বমুক্ত করবেন এবং চাকরি করতে দেবেন এ দু’ণীতি একসাথে চলতে পারে না, এটা অরেক বৈষম্য সৃষ্টি করে। আপনি নারী নির্যাতন বন্ধ করে পুরুষ নির্যাতনের পথ উম্মুক্ত করলেন, এটা কখনও সুন্দর সমাধান হতে পারে না।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×