somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপমৃত্যু।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিষন্ন বিকেল- দুপুর থেকে প্রেসক্লাব এ তিল ধারনের ঠাই নেই।সাংবাদিকরা জঠলা পাকাচ্ছেন আর ফিসফাস করছেন বিশ্বসেরা ক্রিকেটার হাসান ৭ মাস পর জনসম্মুখে এসে কি বলবে তা নিয়ে।তবে বেশীরভাগেরই ধারনা সে আবার খেলায় ফিরে আসার ঘোষনা দিতে যাচ্ছে। এ নিয়ে সবাই বেশ খুশীও বটে।

৫টার দিকে ক্লান্ত,বিষন্ন হাসান রুমে ঢুকল। সবাই অবাক হয়ে তাকাল তার দিকে।চেনার কোনও উপায় নেই হাসান কে।খোচা খোচা দাড়ি,চোখের নীচে রাতজাগা কালো দাগ, ভগ্ন স্বাস্থ্য! এই কি হাসান?
সে বসতে না বসতেই প্রায় সবাই কিছু বলার জন্য দাড়িয়ে পরল। হাসানের ম্যানেজার বলল, স্যার আপনাদের কোনও প্রশ্নের জবাব দিবেন না। উনি কিছু বলে চলে যাবেন। প্লিজ আপনারা বসুন। কম্পিত কন্ঠে হাসান বলল, আমি আজ থেকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। আর কোনোদিন মাঠে আপনারা আমাকে পাবেন না।
এতদিন আপনারা আমার প্রতি যে ভালবাসা,স্নেহ ও সম্মান দেখিয়েছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
কথা শেষ করেই উঠে পরল হাসান।

এদিকে শুরু হল তুমুল হইচই। সবার এককথা, কেন এ আজব সিদ্ধান্ত? সমস্যা কি আপনার? কোনও উত্তর না দিয়ে বের হয়ে গেল হাসান।সাংবাদিকদের গুন্জন এবার চেচামেচিতে রুপান্তরিত হল। সবার ধারনা মেয়ে সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে।এবারের আলোচনা মোড় নিল কে সেই মেয়ে তা নিয়ে।

আলোতে আসার গল্প-

দুই বছর আগের কথা।মোহামেডান এর ডিরেক্টর সামাদ সাহেব অবাক হয়ে থাকিয়ে রইল হাসান এর দিকে। তুমি বলছ তুমি এই গ্রহের সেরা ক্রিকেটার?
-জ্বী স্যার।
-আচ্ছা!গুড।ভেরী গুড! ভাল কথা তোমাকে আমার রুমে ঢুকতে দিল কে? চেচিয়ে তিনি দাড়োয়ানকে ডেকে হাসানকে রুম থেকে বের করে দিতে বললেন।

সূর্যতরুন এর কোচ কোনও কথা না শুনেই প্রথম দিন বের করে দিলেন হাসানকে।পরপর ৫ দিন তার কাছে দাড়িয়ে থাকতে দেখে শেষ পর্যন্ত এই পাগলের হাত থেকে বাচার জন্য বললেন, ঠিক আছে গুনে গুনে তুমি ৩টা বল করবে এবং চিরদিনের জন্য আমার সামনে থেকে চলে যাবে।ওকে?
-স্যার আমি ব্যাট করব না?
-অবশ্যই না।বল করেই তুমি এখান থেকে চলে যাবে।
জাতীয় দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান পুলক প্রথম বলটা ঠিক দেখেতেই পারল না। বলের গতি কত? ২০০ কিমি?স্টাম্প তিনটাই নাই!
সূর্যতরুনের কোচ মানিক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। চোখে কি ভুল দেখল নাকি! ২য় বলের গতি মনে হয় এর চেয়েও বেশী হবে।এবারও স্টাম্প নাই। ৩য় বলটা ইয়র্কার।
মানিক সাহেব অবাক! এই ছেলের ঘটনা কি!
ব্যাট করতে নেমে হাসান পরপর ৬ বল উড়িয়ে পাঠাল সীমানার বাইরে।

খবর ছড়াতে সময় লাগল না বেশী। মোহামেডান এর ডিরেক্টর নিজে এসে হাত ধরে মাপ চেয়ে বলল ওদের ক্লাবে খেলার জন্য।হাসান এর হাত ধরে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা আসল বাংলাদেশে।আইপিএলে তাকে পেতে সবাই সর্ব্বোচ্চ দর ডাকায় শেষপর্যন্ত তাকে লটারিতে তোলা হল।সবকিছুই ঠিকঠাকমত চলতে লাগলেও বছরখানেক পর থেকেই সবসময় তাকে মনমরা দেখাত।সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল কোনো বিচিত্র কারনে সে সবসময় মেয়েদের এড়িয়ে চলত। কারনটা যে কি তা কেউ কখনই জানতে পারেনি। অনেকের ধারনা অতীতে কোনও প্রেমে ব্যার্থতা হয়ত এজন্য দায়ি। দিনদিন আরও বিষন্ন হয়ে যেতে লাগল সে।তারপর হঠাৎই একদিন সে জানাল ও আপাতত খেলবে না।

অন্ধকারের গান- রাত গভীর হতেই মাথাব্যাথা শুরু হল হাসান এর।আঙ্গুল দিয়ে কপাল চেপে ধরল সে। অন্ধকার রুমে হিশহিশ শব্দ শুরু হল।হাসান জানে ওটা আসছে।নগ্ন শরীরে পিচ্ছিল ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেল সে।সারাটা শরীর হাতড়াচ্ছে ওটা।হাসানের মাথার উপর এসে থামল ওটা।
চেচিয়ে উঠল হাসান। আমাকে ছেড়ে দাও। আর কত?আমি তো খেলা ছেড়েই দিয়েছি। তোমাকে আর আমার প্রয়োজন নাই। প্লিজ মুক্তি দাও আমায়।
দোলতে লাগল সাপটা।বিরক্তিকর ও ভয়াবহ হিশহিশ শব্দ তুলে বলল, তুমি ছাড়লেই আমি ছাড়তে যাব কেন তোমায়?আমাকে তোমার দরকার না থাকতে পারে কিন্তু তোমাকে আমার চাই।
আমাকে মুক্তি দাও। প্লিজ! নমনীয় হয়ে এল হাসান এর গলা।
তোমার সাথে আমার এমন শর্ত ছিল না।তোমার দরকার ছিল ক্ষমতা আর আমার তোমাকে। তাই না? বলে হাসানের ঠোটের কাছে জিহ্বা নিয়ে এল সাপটা।
ভয়ে চুপসে গেল হাসান।জানি কিন্তু আমি আর তা পারছি না। তুমি আমার সব ক্ষমতা নিয়ে নাও।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও এবার। একঠানা হিশহিশ শব্দে রুম ভরে গেল।জ্ঞান হারানোর আগে হাসান ঠের পেল তার সারা শরীরে শীতল দেহের স্পর্শ।হাতড়াচ্ছে ওটা তার শরীর জুড়ে।মেহনে ব্যাস্ত সে।

নক্ষত্রের পতন- সকল টিভি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে। ক্রিকেটার হাসানের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।আজ দুপুরে রুম থেকে বের না হওয়ায় তার সহকারী রুম ভেঙ্গে হাসানকে মৃত্য অবস্থায় বিছনায় পায়।তার সারা শরীরে লম্বাটে লাল চিকন কিসের যেন দাগ পাওয়া গেছে। রহস্যজনক এই ছাপ কিসের তা কেউ বুঝে উঠতে পারছে না।ধারনা করা হচ্ছে দড়ি জাতীয় কোন কিছু দ্বারা শক্ত করে তাকে পেচানোর ফলে এই দাগের সৃষ্টি হতে পারে।
এটা কি হত্যা নাকি আত্নহত্যা তাই এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। মৃত্যুর কারন নিয়ে তগন্ত চললেও সাংবাদিকরা ইতিমধ্যেই বলা শুরু করেছে প্রেম সংক্রান্ত হতাশা থেকেই সে আত্মহত্যা করতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৫৬
৭৬টি মন্তব্য ৭৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×