somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যিই কি ছিল ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান?

১৭ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্যাবিলনের শূণ্য উদ্যান-
ছোটবেলায় সামাজিক বিজ্ঞান বই এ পড়া প্রাচীন পৃথিবীর সপ্ত আশ্চর্য এর একটি ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বা ঝুলন্ত বাগান এর কথা মনে আছে আপনার?আদতে এই উদ্যানটি কেমন ছিল? তার দিয়ে ঝুলিয়ে তৈরি করা হয়েছিল বাগানটি নাকি এটি ছাদ বাগানের প্রাচীন রূপ? নাকি ঝুলন্ত বাগান বলে কিছুই ছিল না?

কে কখন তৈরি করেছিলেন?
ইরাকের প্রাচীন নগরী ব্যাবলনিয়ানের রাজা নেবুচাদনেজার আনুমানিক খ্রি:পূ: ৬০০ সালে ব্যাবিলন নগরে এই বাগান তৈরি করেন। জায়গাটি বর্তমান ব্যাবিল প্রদেশের রাজধানী আল হিলাহর কাছে অবস্থিত ছিল। দৃষ্টিনন্দন এই বাগান নেবুচাদনেজার তৈরি করেছিলেন তার স্ত্রী অ্যামিতিস এর জন্য।অ্যামিতিস ছিল প্রাচীন মিডিয়ান সম্রাট সাইঅ্যাকারিস এর কন্যা।(কারো মতে তার নাতি)অ্যামিতিস যেখানে বড় হয়েছিলেন সেখানকার পরিবেশ ছিল সবুজ-সুফলা। গাছ-গাছলায় ছিল ভর্তি। ছিল পাহাড়। যার ফলে ব্যাবিলনের রুক্ষ মরুময় পরিবেশ তার ভাল লাগেনি। মানিয়ে নিতে না পারায় রাণী হয়ে পড়েন গৃহকাতর। রাজা নেবুচাদনেজার এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তৈরি করেন এক আশ্চর্যময় বাগান। যা প্রাসাদ থেকে দেখলে পাহাড়ের উপর নানা গাছ গাছড়ায় ভর্তি বাগান বলে মনে হত।

কিভাবে তৈরি করা হয়েছিল?
ব্যাবিলন শহর এবং শূন্য উদ্যানটি নিয়ে নানা কথা চালু আছে। একেক ইতিহাসবিদ একেকভাবে নগর ও তার বাগানটির গঠন সম্পর্কে ধারনা দিয়েছেন।গ্রীক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস খ্রি:পূ:৪৫০ সালে তার বর্ণনায় বলেছিলেন ব্যাবিলন তৎকালীন অন্যান্য শহর থেকে ঐশ্বর্যর দিক থেকে অনেক এগিয়ে ছিল। নগরটিকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছিল ৫৬ মাইল লম্বা দেয়াল যা ছিল ৮০ ফুট পুরু আর ৩২০ ফুট উঁচু।তার মতে দেয়ালের উপর দিয়ে ৪ ঘোড়া বিশিষ্ট যান অনায়াসে একটি আরেকটিকে ক্রস করতে পারত।বেশীরভাগ ইতিহাসবিদ তার এই বর্ণনার সাথে সহমত প্রকাশ করলেও বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণায় জানা যায় ব্যাবিলন শহরের দেয়ালটি সর্ব্বোচ্চ ১০ মাইল হওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং উচ্চতাও অনেক কম হবে।
ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বা ঝুলন্ত বাগান টির নাম শুনে মনে হতে পারে এটি তার বা রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটি এমন নয়। মূলত এটি বিশাল আকার নিয়ে তৈরি ছাদ বাগানই ছিল। ঝুলন্ত বাগান নামটি আসলে এসেছে গ্রীক ইতিহাসবিদদের ব্যবহার করা শব্দ “ক্রিমাসটোস” থেকে যা শুধু ঝুলন্ত নয় বরং উদগত বা বের হয়ে আসাও বুঝায়।
চতুর্ভুজাকৃতি বাগানটি দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে ছিল ৪০০ ফুট। আর এর উচ্চতা ছিল শহরের দেয়ালের সমান। যেহেতু শহরের দেয়াল এর উচ্চতা নিয়ে বিতর্ক আছে তাই এই বাগান ভূমি থেকে ঠিক কতটা উঁচুতে অবস্থিত ছিল তা নিয়েও বিতর্ক আছে।তবে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ধারনা হল বাগানটির সবচেয়ে উঁচু অংশটি ভূমি থেকে সর্ব্বোচ্চ ৮০ ফুট উঁচুতে ছিল।
চতুর্ভুজাকৃতির এই বাগানটির ছাদেই গাছ রোপণ করা হয়েছিল। তবে বাগানের ছাদ সমতল ছিল না। ধনুকাকৃতিতে করা একটির চেয়ে আরেকটি ক্রমান্বয়ে উঁচু হওয়া ছাদ তৈরি করা হয়েছিল প্রথম।ছাদগুলো কিউব আকৃতির ছককাটা স্তম্ভর উপর দাড় করানো ছিল। ভিত্তিগুলো পর্যাপ্ত ভার যাতে সামলাতে পারে তাই মাটির বেশ গভীর পর্যন্ত ঢালাই করা হয়েছিল। এই আকৃতিতে ছাদ তৈরির ফলে সামনে থেকে বাগানটিকে পাহাড়ের মত মনে হত। ছাদের উপরে উঠার জন্য পেঁচানো সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছিল। কিছু ইতিহাসবিদের বর্ণনায় সিঁড়ির পাশ দিয়ে মোটা নল রাখার স্থান ছিল যাতে করে ছাদের একদম উপর পর্যন্ত পানি উঠানো যায়। এই বিষয়টি বেশ বিতর্কিত কারণ যদি কমপক্ষে ৮০ ফুট উঁচুও বাগানটি হয় তবু এত উপরে নল দিয়ে পানি তুলতে হলে মোটর-পাম্প ব্যবহার করতেই হবে।ছাদ,স্তম্ভ এবং সিঁড়ি সবকিছুই তৈরি করা হয়েছিল ইট এবং বিটুমিন দ্বারা। অবশ্য কারো মতে স্তম্ভ ও ছাদ তৈরিতে পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল।
ছাদে প্রথম বসানো হয়েছিল নলখাগড়া বিটুমিন এর দ্বারা।তারপর দুইস্তরে ইট বসানো হয়েছিল জিপসাম এর উপর।মাটির আর্দ্রতা যাতে বজায় থাকে এবং পানি যেন অধিকসময় থাকতে পারে তাই সীসার একটি আবরণ বসানো হয়েছিল এর উপর। সর্বশেষ ঢালা হয়েছিল পর্যাপ্ত পরিমাণ মাটি।

পানি সরবরাহ-
কোনও সন্দেহ নেয় বাগানে নিয়মিত পানি সরবরাহটি ছিল সবচেয়ে জটিল কাজ। ইরাকে সাধারণত সারাবছরে বৃষ্টিপাত তেমন একটা হয় না তাই পুরো বছরই কৃত্রিমভাবে পানি সরবরাহ করতে হত বাগানটিতে। বাগানের সর্ব্বোচ্চ অংশ যা কমপক্ষে ৮০ ফুট ছিল তাতে পানি উঠানোটা বেশ শ্রমসাধ্য ও ব্যয়বহুল বটে। তাই কেউ কেউ ধারনা দিয়েছেন বাগানটিতে পানি উঠাতে নিশ্চয় পাম্প ব্যবহার করা হত। তবে কিছু ইতিহাসবিদের বর্ণনায় পাওয়া যায় বাগানটিতে ১০৫০ জনের মত মালী কাজ করত। বাগানটি ছিল ইউফ্রেটিস নদীর তীরে অবস্থিত তাই ম্যানুয়ালি পানি উঠানো শ্রমসাধ্য হলেও অসম্ভব ছিল না।
তবে বেশীরভাগ ইতিহাসবিদদের মতেই বাগানটিতে পানি তুলতে যন্ত্রের ব্যবহার করা হত। কারো কারো মতে ইউফ্রেটিস নদী থেকে পানি তুলতে স্ক্রু পাম্প ব্যবহার করা হত তবে ধারনাটি তেমন একটা বিশ্বাসযোগ্য নয় কারণ স্ক্রু পাম্প আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস(খ্রি:পূ:২৮৭-২১২) সাল এর মধ্যে। যা ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান ভূমিকম্পে ধ্বংস হওয়ার সময়কালীন। তবে এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য সমাধান ধরা যায় চেইন পাম্পকে। যদি বাগানে পানি তুলতে যন্ত্রই ব্যবহার করা হত তাহলে চেইন পাম্পই সবচেয়ে কার্যকরী উপায় ছিল রাজা নেবুচাদনেজার এর জন্য।

যত বিতর্ক ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান নিয়ে-
আধুনিক বেশীরভাগ গবেষকদের ধারনা ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বলতে কিছুই আসলে ছিল না। এটি সাহিত্যিকদের সৃষ্টি।
বাগানের কোনও অস্তিত্ব বর্তমানে নেই এটিই শুধু এই সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী নয় এর পিছনে আরও কিছু কারণ আছে।
বাগানটি সম্পর্কে প্রথম লেখেন ব্যাবলনিয়ান পুরোহিত বেরোসাস খ্রি:পূর্ব ৪০০ সালের দিকে।মূলত তার লেখার উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে গ্রীক ইতিহাসবিদ গন এই বাগানের সম্পর্কে লেখেন যাদের কেউই আদৌ বাগানটি নিজ চোখে দেখেন নি।
যখন বাগানটি তৈরি করা হয় তখনকার কোনও লেখকের বর্ণনায় এই বাগানের কথা পাওয়া যায়নি। ব্যাপারটি বেশ রহস্যময়। এত বড় একটি সৃষ্টি সে সময়ের লেখক বা ইতিহাসবিদদের লেখায় ফুটে উঠল না কেন?
আবার ইদানীং কিছু গবেষক ও ইতিহাসবিদ মনে করেন ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান আসলে ব্যাবিলন এ ছিল না। এটি ছিল ইরাকেরই প্রাচীন সাম্রাজ্য এসিরিয়ার নগর নিনেবেহ তে। এবং নির্মাণ করেছিলেন এসিরিয়ার রাজা সিনেক্রেব টাইগ্রিস নদীর তীরে খ্রি:পূ:৬৮১ সালের দিকে। তবে এই দাবীর স্বপক্ষে শক্ত প্রমাণ তোলা যায় না গ্রীক ইতিহাসবিদদের জন্য।
এতসব বিতর্কের পর ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান সম্পর্কে কিছুটা আশা দেখান জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক রবার্ট কোল্ডওয়ে।১৮৯৯ সালে তিনি ব্যাবিল শহরে খনন কাজ শুরু করেন। রাজা নেবুচাদনেজার এর প্রাসাদ,দুর্গ,টাওয়ার অব ব্যাবিল এবং নগর রক্ষাকারী দেওয়াল সবই পাওয়া যায় তার খনন কাজে। শেষদিকে তিনি ১৪টি রুমবিশিষ্ট একটি স্থান খুঁজে পান যার ছাদ ছিল পাথরের তৈরি। ব্যাবিলনের প্রাচীন ইতিহাস অনুযায়ী উত্তর দিকের দুর্গ এবং ঝুলন্ত বাগান ছাড়া আর কোথাও ছাদ তৈরিতে পাথর ব্যবহারের কথা উল্লেখ ছিল না। এবং ঐ দুর্গ তিনি আগেই খুঁজে পাওয়ায় এই স্থানটিই ঝুলন্ত বাগান ছিল তা দাবী করেন তিনি। এমনকি তিনি চেইন পাম্প ব্যবহার করা হত এমন একটি কক্ষও খুঁজে পান। যা বাগানটির অস্তিত্ব স্বপক্ষে জোরালো প্রমাণ দেয়।
তবে আধুনিক গবেষকদের মতে কোল্ডম্যান এর এই দাবী ভুল। কারণ যে অংশটি তিনি ঝুলন্ত বাগান বলে চালিয়ে দিয়েছেন তা নদী থেকে অনেক দূর যা ইতিহাসবিদদের বাগানের অবস্থান সম্পর্কে বর্ণনা এবং পানি সরবরাহের সমস্যা উভয় দিক থেকেই বেশ অসুবিধাজনক।তাছাড়া আধুনিক অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে এই অংশটি কোনও উদ্যান হিসাবে নয় বরং প্রাসশনিক কাজকর্ম এবং স্টোররুম হিসাবে ব্যবহৃত হত।
তবে সর্বশেষ কথা হল বাগানটির গঠন ও অবস্থানগত দিক নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও প্রাচীন ইরাকে একটি আধুনিক ছাদবাগান ছিল একথা অবশ্য কেউই অস্বীকার করেনি।
৫২টি মন্তব্য ৫১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×