৫. ইসলামী রাজনীতিতে হাতেখড়ি
ইসলামের প্রতি খুব ছোটবেলা থেকেই আকৃষ্ট হয়েছিলাম। পারিবারিকভাবে ইসলামের প্রতি একটি দুর্বলতা ছিল। ছোটবেলায় আমাদের বাড়ীতে তৎকালীন জামাতে ইসলামীর অনেক নেতা কর্মী আসতো। তারা যখন ইসলামের কথা বলতো আমি প্রাণ ভরে শুনতাম। তখনই বুঝতাম এদেশে শান্তি -শৃংখলা আনার জন্য ইসলামের কোন বিকল্প নেই। গন্ডগোলের পর যখন আমাদের পেয়ারের পাকিস্তান ভেঙ্গে গেল তখন আব্বা কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। আমি ও আমার ভাই বোনেরা স্কুলে আর পাক সার জমিন সাদ বাদ গাইতে পারবো না বলে অনেক আক্ষেপ করতাম। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালের দিকে বাবা আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়। আমরা ধীরে ধীরে আমাদের হারানো গৌরব ফিরে পেতে থাকি।
আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন ইসলামী রাজনীতিতে আমার পূর্ণাঙ্গ হাতেখড়ি হয়। এর আগে পর্যন্ত আমি কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলাম। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় আমি সাথী মর্যাদা পাই। আমাকে কিছু নির্ধারিত দায়িত্বও দেয়া হয়। আমাদের ইসলামী ছাত্র শিবিরের স্তর বিন্যাস ছিল যথাক্রমে সমর্থক, কমী, সাথী, সদস্য এরুপে। কর্মী থেকে বড় ভাইদের কাছে রীতিমত পরীক্ষা দিয়ে আমাকে সাথী হতে হয়েছে। যেদিন আমি সাথী মর্যাদা পাই সেদিন আনন্দে আমার বুক ভরে গিয়েছিল। সাথী হবার পর আমাকে আর পেছনে থাকাতে হয়নি। মাস শেষে বাইতুল মালের টাকা থেকে একটা নির্দিষ্ট অংকের মাসোহারা পেতাম। এছাড়া আমাদের আরো অনেক আয় ছিল।
মতবাদ হিসাবে ইসলামী আন্দোলনকে যতটা ভালো বেসেছি তার চেয়ে বেশী ভালো লাগতো ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের। আহা কি অমায়িক তাদের ব্যবহার, আর কি একতা ছিল আমাদের মধ্যে। মনে পড়ে ভারতে যে দিন বাবরী মসজিদ ভাঙ্গলো সেদিন আমরা ছাত্র শিবিরের নেতা কর্মীরা কি শৃংখলার সাথে আমাদের গ্রামের হিন্দু পাড়ার মন্দিরগুলো জ্বালিয়েছিলাম। হিন্দু পাড়ার মেয়ে সবিতা, কাবেরী, সীতাকে নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন হুড়াহুড়ি বা বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়নি। সেদিন আমাদের ইসলামী আন্দোলনটি সব কত সুন্দর ভাবে সমাপ্ত হয়েছিল ভাবলে এখনো গর্বে আমার বুকটা ভরে যায়। আমি হলফ করে বলতে পারি বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্র শিবিরের মতো এত শৃংখলা আর কোন ছাত্র সংগঠনে নেই।
৬. মৌলানা আব্দুছ ছালাম হুজুর
তাঁর নাম মৌলানা আব্দুছ ছালাম । আমার প্রিয় শিক্ষক। মৌলানা আব্দুছ ছালাম হুজুর ছিলেন আমাদের ধর্মীয় শিক্ষক। তিনি শুধু আমার প্রিয় শিক্ষকই নন, আমার দেখা সবথেকে নীতিবান মানুষদের একজন। তাঁর ছেলে রেজাউল ছিল আমাদের সহপাঠী। পড়াশোনায় অতো ভালো ছিল না। সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। রেজাউলের সিট পড়েছিল আমার পাশে। হুজুর নিজে নকল এনে রেজাউলকে দিত। আমি রেজাউলের কাছ থেকে পরবর্তীতে চেয়ে নিতাম। আমার ভাল ফলাফলের পিছনে এই হুজুরের অনেক অবদান। রেজাউল এখন জামাতে ইসালামী বাংলাদেশের রুকুন পর্যায়ের নেতা। হুজুর মারা গেছেন কয়েক বছর হলো। তাঁর কথা মনে হলে এখনও মনটা হুহু করে ওঠে। আহা আমাকে কি যে স্নেহ করতো।
আমার রাজনৈতিক জীবনের কথা বলতে গিয়ে মৌলানা আব্দুছ ছালাম হুজুরের কথা আসছে বেশ কয়েকটি কারণে। আমার মধ্যে তীব্র ইসলাম প্রীতি এবং শিবির প্রেমের বীজ তিনিই প্রথম বপন করেছিলেন। ধর্ম ক্লাসে তিনি পড়া ধরতেন না বরং ইসলঅমের বিভিন্ন ইতিহাস বলতেন। তিনি হয়রত ওমরের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথা, ওহুদের যুদ্ধ, বদরের যুদ্ধ, উত্তর আফ্রিকা, স্পেনে ইসলাম বিজয়ের ইতিহাস বলতেন। বকতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের কথা বলতে বলতে তার চোখ দিয়ে পানি চলে আসতো। এসব কাহিনী যখন শুনতাম আমারা আবেগে আপ্লুত হয়ে যেতাম। তিনি আমাদের বলতেন তোমাদের হতে হবে মুসা বিন নুসাইর, তারেক বিন জিয়াদ। আমরা এদের ঠিক মতো না চিনলেও মুসা কিংবা তারেক হবার স্বপ্নে বিভোর থাকতাম।
শিবিরের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ার খবর বাবা জানতে পেরে যেদিন খুশীতে বাড়ীতে মিলাদ দিলেন ছালাম হুজুর সেদিন বাড়ীতে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে সেকি লাফালাফি। আনন্দে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। তিনি বাবাকে বললেন দেখবেন এই ছেলে একদিন এদেশে ইসলামের সবচেয়ে বড় সেবক হবে।
তাঁর কথাটি শেষ পর্যন্ত সত্য হয়েছিল।
সেসব কথা আস্তে আস্তে সব বলবো।
(চলবে....)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




