কৌতুক যদিও কৌতুকই, সত্যির লেশমাত্র নেই তবুও একথা অনস্বীকার্য যে এদেশে দূর্নীতির প্রকোপ এত মারাত্মকভাবে বিস্তৃত লাভ করেছে যে এখন এদেশে কোথায় দূর্নীতি হয় একথা জিজ্ঞেস না করে কোথায় দূনীর্তি হয় না একথা জিজ্ঞেস করাই যুক্তিযুক্ত। আমাদের পাশ্ববর্তীদেশ ভারতও দূর্নীতির উর্দ্ধে নয়।
কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক ভারতীয় অধ্যাপক নিজের দেশে বেড়াতে এসে সমাজের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির বল্গাহীন বিচরণে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি ভারতে এসে দেখলেন, সেখানে কোনো কাজই ঘুষ ছাড়া হচ্ছে না। সরকারি দপ্তরগুলোয় একজন নাগরিকের একটি সাধারণ সেবাও ঘুষ ছাড়া হচ্ছে না। এসব দেখে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তখন থেকেই তাঁর চিন্তা কিভাবে এই ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ সৃষ্টি করা যায়। নিজের ভাবনা থেকেই সৃষ্টি করলেন ফিফথ পিলার ইন্ডিয়া নামের একটি সংগঠন। এই সংগঠন শূন্য টাকার নোট ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ শুরু করেন।
২০০৭ সাল থেকে ফিফথ পিলার ইন্ডিয়া এই শূন্য টাকার নোট সাধারণ মানুষকে বিলিয়ে আসছে। এই নোট সম্পর্কে বিজয় আনন্দ বলেন, এটি ঘুষকে ‘না’ বলার একটি চমত্কার ব্যবস্থা। কোনো সাধারণ নাগরিক কোনো দপ্তরে গিয়ে ঘুষের দাবির মুখে পড়লে এই নোট ঘুষ চাওয়া ব্যক্তির দিকে বাড়িয়ে দেবেন। এতে দুটো জিনিস হবে, ঘুষ যিনি চাচ্ছেন তাঁকে না বলা হবে, আবার তাঁকে কিছুটা অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে বুঝিয়ে দেওয়া যাবে—তিনি যে দাবি করছেন, তা অযৌক্তিক ও অন্যায়।
এই শূন্য টাকার নোট একবার তামিলনাড়ুর এক সরকারি কর্মকর্তার মধ্যে দারুণ অপরাধ বোধের জন্ম দিয়েছিল বলে জানা যায়। তামিলনাড়ুর একটি গ্রামে বিদ্যুত্ সঞ্চালনের বিনিময়ে কারও কাছে বেশ ভালো অঙ্কের অর্থই দাবি করেছিলেন সেই কর্মকর্তা। যাঁর কাছে ঘুষের দাবি জানানো হয়, তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গেই ফিফথ পিলার ইন্ডিয়ার মুদ্রিত শূন্য টাকার নোট সেই কর্মকর্তার দিকে বাড়িয়ে তাঁর দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। এতে সেই সরকারি কর্মকর্তা বিব্রত হন এবং অপরাধ বোধে আক্রান্ত হয়ে তাঁর সংগৃহীত সব ঘুষের টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছিলেন।
বিজয় আনন্দের মতে, এই শূন্য টাকার নোট দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের একটি চমত্কার অস্ত্র। তিনি মনে করেন, দুর্নীতি যারা করে, ঘুষ যারা নেয়, তাদের এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দেখা যায় না। তাই ওইসব দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোরের দুঃসাহসও বেড়ে যায়। এই শূন্য টাকার নোটের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজেরাও বুঝবে, তাদের কর্মকাণ্ডে জনগণও সোচ্চার।
শূন্য টাকার নোটের কোনো গাণিতিক মূল্য হয়তো নেই, কিন্তু এর নৈতিক মূল্য অনেক। এই নোট ইতিমধ্যেই ভারতে অসাধারণ সাড়া ফেলেছে। মানুষ মনে করছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই শূন্য টাকার নোট এক অনন্য শাণিত হাতিয়ার হিসেবেই দেখছে ভারতীয়রা।
আজ আমাদের বড় বেশী প্রয়োজন হয়ে পড়েছে শূন্য টাকার নোটের। যদিও জানি না এতে আমাদের দূনীর্তির কোন হেরফের হবে কিনা?
তথ্যসূত্র :

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




