somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিনিয়ার অপহরণ ও অপহৃত রাজনীতি

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অনেক পথশিশুরই আনাগোনা। অনেকের আবার স্থায়ী ঠিকানা এই টিএসসি এলাকা। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত না হতে পারলেও ওদের বেড়ে উঠা কিংবা বসবাসের জায়গা টিএসসি। জিনিয়া তাদেরই একজন। ফুটফুটে জিনিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ফুল বিক্রি করে সংসারে আয়ের জোগান দেয়। জিনিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রিয়মুখ। গত ১ সেপ্টেম্বর টিএসসি থেকে নিখোঁজ হয় সবার প্রিয় জিনিয়া। সারাদিন রাত জিনিয়ার খোঁজ না পেয়ে পরের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের সহযোগিতায় শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন জিনিয়ার মা সেনুরা বেগম। পরে ৭ সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানায় অপহরণের মামলা করেন জিনিয়ার মা। এ মামলার পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার আমতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিনিয়াকে উদ্ধার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেফতার হয় নূর নাজমা আক্তার লুপা তালুকদার নামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এক মহিলা। কারও কারও ধারণা, লুপা জিনিয়াকে অপহরণ করেছেন পতিতালয়ে বিক্রি বা বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে। তবে ওটা শুধুই ধারণা। যেহেতু ঘটনাটা তদন্তনাধীন তাই হয়ত তদন্তের পরে সঠিক ঘটনা জানা সম্ভব হবে।



জেনে নেওয়া দরকার কে এই লুপা তালুকদার? তার ফেসবুক প্রোফাইলে লেখা রয়েছে অগ্নি টিভির ম্যানেজিং ডিরেক্টর, আওয়ামী পেশাজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র রিপোর্টার নবচেতনা, সিনিয়র রিপোর্টার, সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার মোহনা টিভি, ডিরেক্টর শীর্ষ টিভি, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সাপ্তাহিক শীর্ষ সমাচার, বাংলাদেশ কবি পরিষদের কবি ইত্যাদি। বর্তমান সময়ের দেশের অনেক বড় বড় রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রী এমপির সঙ্গে লুপার ছবি এমনকি প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের ছবি ঝুলছে ফেসবুক দেয়ালে। লুপা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাইক্লোন প্রস্তুতি প্রোগ্রাম (সিপিপি) পুরস্কার ২০১৯ গ্রহণ করছেন। লুপা একবার ট্রিপল মার্ডার কেসে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। ২০০৩ সালে পটুয়াখালীর গলাচিপা থানায় লুপা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়। পরে ২০১৩ সালে ওই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি লুপা ও তার স্বজনরা ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ রেহাই পান। তবে লুপার বাবা হাবিবুর রহমান ওরফে নান্না মিয়া তালুকদারসহ তার পরিবারের আরও দুই সদস্য ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিরূপ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা হলে নানান অপশক্তি ও সুবিধাবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। তারই জ¦লন্ত প্রমাণ বর্তমান পরিস্থিতি।

কয়েক দিন আগে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাতের আঁধারে বাসার গ্রিল কেটে হামলা করে দুষ্কৃতকারীরা। পরে দেখা গেল এই হামলার সঙ্গেও সম্পৃক্ত স্থানীয় যুবলীগের নেতা ও সঙ্গীরা। যদিও বলা হচ্ছে নিছক চুরির উদ্দেশ্যেই ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর এমন নৃশংস হামলা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, ঘরে এমন কী ছিল, যা চুরি করার জন্য স্থানীয় উপজেলা যুবলীগের নেতাকে সঙ্গী সাথী নিয়ে চুরি করতে যেতে হল! নাকি আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন চোর-ছ্যাঁচড় বিবেচনা না করেই পদ দিচ্ছে? জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া রাজনৈতিক দলে সাহেদ বা লুপাদের মতো ভয়ঙ্কর মানুষের আশ্রয় হয় কীভাবে? সম্রাট, জিকে শামীম, এনু, রূপমরা অঢেল সম্পত্তির মালিক হয় কী করে! বরকত, রুবেল, নিশান ও সাইফুলদের মতো পাতি নেতারা কীভাবে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে?

বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সেই মুজিব কোট আজ অনেকেই ‘বুলেটপ্রুফ’ জ্যাকেটের মতো ব্যবহার করে আসছে আত্মরক্ষার ঢাল হিসেবে। অনেকেরই ধারণা, জাতির জনকের প্রিয় মুজিব কোটকে গায়ে জড়ালেই সকল অপকর্ম থেকে দায় মুক্তি পাওয়া যায় সহজেই। স্বার্থ হাসিল করে রাতারাতি ধনী হয়ে ক্ষমতাবান হওয়া যায়। স্ত্রীকে নিয়েই সংসদ সদস্যের পদ নেওয়া যায়। বর্তমানে বাস্তবতাও তেমনটিই বলে দেয়। আজ থেকে এক যুগ আগেও যারা নানান মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, জাতির জনককে নিয়ে নানানভাবে কটূক্তি করে গেছেন তারাই নাকি এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নিবেদিত প্রাণ সৈনিক! আর বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও তাদের সাদরে গ্রহণ করছে!
আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কারও কোনো অপকর্ম প্রকাশ পেলেই দল থেকে তাকে বা তাদের বহিষ্কার করে একটি বিবৃতি দেওয়া হয় কোনো ব্যক্তির অপকর্মের দায় দল নেবে না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, কোনো রাজনৈতিক দল যদি তার আশ্রয়ে থাকা নেতাকর্মীর অপকর্মের দায় নেবে না বললেই কি জনগণের কাছে দায়মুক্ত হতে পারে? কারণ এত দিন তারা কিন্তু ওই দলের প্রভাব খাটিয়েই সকল অপকর্ম ও দুর্নীতি করেছে। তবে কেন তা প্রকাশ পাওয়ার পর দলের এমন মন্তব্য? কারণ ব্যক্তি দিয়েই দল পরিচালিত হয়। অবশ্যই ব্যক্তির অপকর্মের দায় দল এড়িয়ে যেতে পারে না।

স্যার বার্নার্ড ক্রিক-এর মতে, ‘রাজনীতি হলো নীতিমালার একটি স্বতন্ত্র রূপ, যার দ্বারা মানুষ নিজেদের পার্থক্য মিটিয়ে ফেলার জন্য, বৈচিত্র্যময় আগ্রহ ও মূল্যবোধ উপভোগ করার জন্য এবং সাধারণ প্রয়োজনের বিষয় পরিচালনায় সরকারি নীতি তৈরির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিলেমিশে কাজ করা।’ কিন্তু আমাদের দেশের গত কয়েক দশকের পরিস্থিতিতে স্যার ববার্নার্ড ক্রিক-এর উক্ত সম্পূর্ণভাবে ভুল বা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের রাজনীতি এখন শুধুই প্রতিহিংসা ও স্বার্থ আদায়ের নীতিতে পরিণত হয়েছে। আজ আমাদের দেশের রাজনীতিতে গণমানুষের স্বার্থ পুরোপুরিই নষ্ট করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোতে কিছু নীতিহীন তথাকথিত মানুষেরই সমাগম। তাদের অত্যাচারে নীতিবান মানুষ রাজনীতির মাঠ থেকে আস্তে আস্তে নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে আত্মসম্মান নিয়ে ঘরের সীমানায় নিজেদের আবদ্ধ করে রেখেছেন। অথচ একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্যই একাত্তরে আমাদের অগ্রজরা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সেই বাংলাদেশের রাজনীতি আজ জিনিয়ার মতোই অপহৃত হয়েছে লুপা, সাহেদ, পাপুল, পাপিয়া, শামীম, সম্রাটদের মতো তথাকথিত নেতাকর্মী সমর্থকের হাতে।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×