somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন নিখোঁজ কাপুরুষ উপাচার্য।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষক সর্বজন শ্রদ্ধেয় একটি পদবীর নাম। আমাদের সমাজে বহুল ব্যবহৃত প্রবাদ হলো পিতা-মাতা মানুষ হিসেবে জন্ম দিলেও মানুষ করার কারিগরি শিক্ষকেরাই। তাই আমাদের সমাজে শিক্ষকের স্হান অনেক উঁচুতে। কারন একজন শিক্ষকের ছাত্র ই রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকেন। একজন শিক্ষক যেখানেই যান সেখানেই তিনি সম্মানের আসনে অলংকৃত হয়ে থাকেন। তাই কবি কাজী কাদের নেওয়াজের “শিক্ষাগুরুর মর্যাদা” কবিতাটিতে শিক্ষকের মর্যাদার উপর আলোকপাত করতে গিয়ে কবি দিল্লির বাদশাহ্ এবং তার পুত্রের উদাহরণ এনেছেন। শিক্ষকের পা ধুয়ে না দিয়ে শুধু পানি ঢেলে শাহজাদা যে বেয়াদবি করেছিলেন তার জন্য ক্ষমা চেয়ে শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষকের মর্যাদার এমন হাজারো উদাহরণ আছে। তবে শিক্ষকদের একটি শ্রেনীর নানান কর্ম ও দায়িত্বহীনতার কারনে এখন আর শিক্ষকদের সেই আগের সম্মানের আসন অনেকটাই নীচু হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক এক জরিপেও এমন তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনোমিক্স এন্ড সোস্যাল
রিসার্চ এবং ভারকি ফাউন্ডেশনের ‘গ্লোবাল টিসার্চ স্ট্যাটাস ইনডেক্সে-২০১৮’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয় বিশ্বে গড়ে মাত্র ৩৬ শতাংশ ছাত্রছাত্রী তাদের গুরুজন অর্থাৎ শিক্ষকদের সম্মান করেন তার মানে ৬৪ শতাংশ ছাত্রছাত্রী তাদের গুরুজন অর্থাৎ শিক্ষকদের সম্মান করে না। এছাড়া শিক্ষকতা পেশাও সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা হারাচ্ছে অনেক উন্নত দেশে। যদিও ওই জরিপে বাংলাদেশকে দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। তবে আমি আগেই বলেছি আমাদের দেশে ও শিক্ষকদের সেই সম্মান আগের মত নেই। সাম্প্রতিক সময়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহকে নিয়ে সমালোচনার শেষ নাই। বিশ্ববিদ্যালয় হলো শিক্ষার্জনের সর্বশেষ স্হান এখান থেকেই শিক্ষায় জীবন শেষ করে একজন মানুষ তার কর্ম জীবনে নেমে পরেন। জীবনের এই অধ্যায় এসে একজন শিক্ষার্থী তাদের গুরজন অর্থাৎ শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন শিক্ষা পান সে ক্ষেত্রে সে কর্মজীবনে জনগনের জন্য কত টুকু করতে পারবেন সেটাই বড় প্রশ্ন? যাই হউক বলছিলাম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ কথা। সবসময় ক্যাম্পাসে থাকার শর্তে ২০১৭ সালের ১৪ জুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। নিয়োগের শর্ত মেনে শুরুতে উপাচার্য ভবনে পরিবার পরিজন নিয়ে উঠেন তিনি এমন কি তার ছেলেকে স্হানীয় একটি স্কুলে ও ভর্তি করান। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই তিনি আবার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় ফিরেন। এর পর আর কখনোই স্হায়ী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পাওয়া যানি তাকে। অভিযোগ উঠেছে, ১ হাজার ৩০০ কর্মদিবসের মধ্যে মাত্র ২০০ দিন অফিস করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মাসের পর মাস ক্যাম্পাসে যান না ভিসি কলিমউল্লাহ, ঢাকাতেই থাকেন তিনি। এ নিয়ে তাদের । শিক্ষকদের একাংশ বিক্ষোভ করলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।

সর্বশেষ গত ১৫ জানুয়ারী ক্যাম্পাসে থাকা নিজের বাসভবনে যান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে বাসবভনে যান শিক্ষক ও কর্মকর্তার সেখানে তাদের কয়েক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে পরে দেখা না করে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান উপাচার্য। পরে অপেক্ষমাণ শিক্ষক-কর্মকর্তারা সেখানে বিক্ষোভ প্রকাশ করলে সংবাদ হয়। উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই তিনি অবৈধভাবে দুটি অনুষদ—বিজনেস স্টাডিজ, সামাজিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন এবং এর পাশাপাশি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এর বাইরে তিনি কোষাধ্যক্ষ এবং একটি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একাই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অর্ধশতাধিক কোর্স পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। অথচ কোনো কোর্সই না পড়িয়ে তিনি পারিতোষিক বাবদ লাখ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। তিনি ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিসে বসে সিন্ডিকেট সভা, নিয়োগ বোর্ডসহ অনেক সভা করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ টাকা যাতায়াত বাবদ ব্যয় হচ্ছে। তিনি নিজের মা নিলুফার বেগমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করেছেন, যদিও নিলুফার বেগম কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো শিক্ষকতা করেননি। গত বছর তার বিরুদ্ধে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ড. সেলিম মাহমুদের একটি কলামকে হুবহু একই রেখে অধ্যাপক ড. কলিমুল্লাহ নিজের নামে প্রকাশের অভিযোগ আনেন ড. সেলিম। অবশ্য এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অন্যের পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের (থিসিস) চুরি করে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের কথা ও আমরা সংবাদমাধ্যমে শুনেছি।

প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর শিক্ষকতা ছাড়া ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়ীত্ব পালন করছেন। যা একটি রাষ্ট্রের জনগনের বাক স্বাধীনতা গনতন্ত্র সর্বপরি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্ব পুর্ন সংগঠন হিসেবেই মনে করি। বেরোবির অধিকার সুরক্ষা পরিষদের নেতাদের অভিযোগ তিনি মাহামান্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের শর্ত অমান্য করে অদৃশ্য ক্ষমতারবলে ভিসির পদ আকরে রাখতে স্বার্থক হচ্ছেন? স্বাভাবিক ভাবে আমার ও প্রশ্ন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যে প্রতি কোন গুরুত্ব না দিয়ে কোন ক্ষমতার বলে তিনি এখন ও স্বপদে বহাল আছেন? আজ রাজনীতি নোড়াং থাবায় কুলষিত আমাদের প্রতিটি অঙ্গন আমাদের শিক্ষাক্ষেত্র ও এর বাহিরে নয়। আজ আমাদের প্রতিটি শিক্ষাংগনে ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতি একই তালে চলছে। রাজনৈতিক ক্ষমতারবল ও চাটুকারিতা আজ যোগ্যতার মুল মাপকাঠি । তাই প্রতিটি শিক্ষাংগের গুরুত্ব পুর্ন পদ দখল করে আছেন অযোগ্য দায়িত্বহীন চাটুকাররা। আমার মনে হয় রাজনৈতিক ক্ষমতা ও চাটুকারিতাকে পুজি করেই ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ আকরে রাখতে সমর্থ হয়েছেন। তা না হলে এমন অনৈতিক কাজ করে ও কিভাবে এমন গুরুত্বপুর্ন পদে থাকা সম্ভব। শুধু তাই না তার সংগঠন
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ( জানিপপ) আমাদের নির্বাচন নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণের যে মতামত তুলে ধরেছেন তার মধ্যে ও অনেক ফাঁক ফোকর লুকিয়ে আছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত তার পর আবার উপস্থিত হয়ে ও শিক্ষক ছাত্রদের রেখে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া কোন শিক্ষকের পরিচয় বহন করে না। একজন শিক্ষক কখনোই দুর্নীতিবাজ কাপুরুষ হতে পারে না।

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×