ভারত- বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্কের আসল রুপ কি তা বলা মুশকিল । ভৌগোলিক কারনে ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হবে। যদি ও ভারত সম্পর্কে তেমন গুরুত্ব না ও দেয় তার পর ও বিভিন্ন কারনে সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে আমরা বাধ্য। তবে দুই দেশের সরকারই বলে আসছে ভারত- বাংলাদেশের বন্ধুত্বের অবস্হান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পর্যায়ে। এমনকি এই সম্পর্ককে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরা পারিবারিক সম্পর্কের সাথে ও তুলনা করতে কুন্ঠাবোধ করেন নাই। তবে ভারতের পক্ষথেকে ও আমাদের ভিতরে থাকা একটি শ্রেনী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে অনেক সময় এমন ভাবে উপস্হান করা হয় যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রায় সব কৃতিত্ব ই যেন ভারতে। তবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ও সহযোগিতা কোন ভাবেই অস্বীকার করার নয় এই জন্য অবশ্যই ভারতের প্রতি আমাদের ভালবাসার ও কৃতজ্ঞতার এজটা বিশেষ জায়গা আছে। আমারা সাধারন মানুষ এটা স্বীকার করলেও আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের অনেক কার্যকলাপ শুধুই আমাদের ব্যথিত ও আতংকিত করে। তবে রাষ্ট্রীয় ভাবে বন্ধুত্বের সম্পর্ক এটা দীর্ঘস্থায়ী হলে অতি কৃতজ্ঞতা বোধ যে অনেক দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্হায়ী হবে এমনটি নয় আর রাষ্ট্রীয় সম্পর্কটা নির্ভর করে দেশ ও জাতির স্বার্থের উপর। অবশ্য অতি সম্প্রতি স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত আলোচনা সভায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব আকবর আলি খান এমনটি ই মন্তব্য করছেন। জনাব আকবর আলি খান তার মন্তব্যে বলেছেন " মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভে অবদানের জন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশের চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত নয়। " আকবর আলি খান বলেন, ‘অবশ্যই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভে ভারতের অবদান রয়েছে। সে জন্য আমাদের ভারতের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত নয়। এ কথা কিন্তু ১৯৭১ সালে শোনা যেত না, সম্প্রতি উঠেছে। আমি এর সোজা জবাব দিতে চাই। ভারতও জানে, বাংলাদেশও জানে যে চিরন্তন কৃতজ্ঞতাবোধ পৃথিবীর কোথাও নেই, এটা ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব নয়। এটা জাতির সঙ্গে জাতির, রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব তখনই হবে যখন আমাদের স্বার্থ অভিন্ন হবে। আর যদি আমাদের স্বার্থের ক্ষেত্রে সংঘাত থাকে, তাহলে চিরন্তন কৃতজ্ঞতাবোধ কোনো দিনই হবে না"।
বাংলাদেশের সাধারন মানুষের মনে ভারত সম্পর্ক ভয়ংকর ধারনার অন্যতম কারন ই হলো সীমান্ত হত্যা। সীমান্ত হত্যা নিয়ে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের কাছ থেকে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রত্যাশা ও মুখরোচক কথা শুনলে ও বাস্তবে তার পুরোটাই আষাঢ়ের গল্প। স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হয় এই সীমান্ত হত্যা এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে স্বাধীনতার পর অর্থাৎ ১৯৭২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ভাররতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর হাতে জীবন দিতে হয়েছে ১৯৩২ জন বাংলাদেশী নাগরিক কে। আর মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এই নয় মাসে সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে মোট ১১ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ১০ জনকে। একজনকে নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে। এই সময় গুলিতে আহত হয়েছেন ছয়জন। আর অপহরণ করা হয়েছে তিনজনকে। আর গত নভেম্বর মাসেই বিএসএফ-এর হাতে চারজন বাংলাদেশি নিহত হন। ২ নভেম্বর সিলেট সীমান্তে দুইজন এবং ১১ নভেম্বর লালমনিরহাট সীমানে দুইজন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হন বিএসএফ-এর হাতে। আর গত ২১ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হয় একজন।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কুড়িগ্রামের অনন্তপুর-দিনহাটা সীমান্তের খিতাবেরকুঠি এলাকায় সীমান্ত কাটাতার পার হওয়ার সময় কিশোরী ফেলানী কে গুলি করে হত্যা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ফেলানী কে গুলি করার পর ও দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা তার লাশ ঝুলে ছিলো ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের উপর। বিশ্ব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয় কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানীর মৃতদেহের ঐ ছবি মানবিক বিবেককে নাড়া দেয় প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ফেলানি হত্যার আড়াই বছর পর নানান সমালোচনার মুখে এক ধরনের বাধ্য হয়েই ২০১৩ সালের অগস্টে ভারতের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ শুরু হয়। পরের মাসেই বিএসএফ জওয়ান আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ এর ওই বিশেষ আদালত। এরপর রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে পুনর্বিচারের দাবি জানান ফেলানির বাবা। দীর্ঘদিন এগারো বছর পার হলে ও আজো ফেলানী হত্যার বিচার পায় নি তার পরিবার। আর আমাদের সরকার ও কুটনৈতিক ভাবে ফেলানী হত্যার বিচারের ব্যাপারে কতটা তৎপর তা নিয়ে ও যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েই গেছে। শুধু ফোলানী নয় সীমান্তে প্রতিনিয়ত ই ঘটছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কতৃক বিচার বহির্ভূত।
শুধুমাত্র ভারত- বাংলাদেশ এই দুই দেশের সীমান্তেই কড়াকড়ি? বিশ্বের আরো অনেক দেশের সীমান্তে কড়াকড়ি আছে, থাকবে৷ কিন্তু হতাশার জায়গাটা হচ্ছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনা এই মুহুর্তে যদি একজন সুস্হ্য সাধারন মানুষকে প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীর রাষ্ট্রীয় সীমান্তের মধ্যে কোন টি মানবিক বিবেচনায় ভয়ংকর। বিনা দ্বিধায় এক বক্যেই সবাই মুখ থেকে একই উত্তর আসবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। ভারত-বাংলাশে ভিন্ন রাষ্ট্র হলেও সম্পর্কটা একটু অভিন্ন কারন ভারত বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণ হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে সেই ১৯৪৭ সালে। রাষ্ট্র ভাগ হলেও সম্পর্কটা তেমন ভাগ হয়নি আমাদের অনেকেরই নিকট আত্মীয় ভারতে আছেন বিশেষ করে করে পশ্চিমবঙ্গে। আর সেই আত্মার টান কখনো ই সীমানা কাঁটাতার মানে না। আত্মীয়তার টানে ও অনেক সময় অনেকই অবৈধ ভাবে ঝুকি নিয়ে সীমান্ত পরাপর হয় সেই সাথে আছে কর্মসংস্থান পাশাপাশি সীমান্তে অবৈধভাবে পন্যের চোরাচালান। দুঃখের বিষয় হলো ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র হওয়া স্বত্তেও আমাদের সীমান্তের আশেপাশে ই নাকি ভারতীয়দের অনেক অবৈধ মাদকের কারখান আছে যা নাকি ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তাদের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা বিএসএফ নাকি জানেক ই না!
বলছিলাম সীমান্ত হত্যার কথা। সোস্যাল মিডিয়া সুত্রে আমার বন্ধু এ্যাক্টিভিষ্ট কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাওগাতা চক্রবতীর সাথে কথা হচ্ছিল সীমান্ত হত্যা নিয়ে। তিনি ও এ ব্যাপারে অনেকটা ক্ষোভ নিন্দা প্রকাশ করলেন । বললেন দাদা এটা একটা জঘন্যতম নিন্দনীয় অপরাধ আইন কি বলে এটা বড় বিষয় না মুখ্য বিষয় মানবতা। একজন মানুষ যাদি অবৈধ ভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে তার জন্য চাইলে যে কোন দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পারে। তার জন্য একটি মানুষকে গুলি করে হত্যা এটা কোন রাষ্ট্রীয় সভ্যতায় পরে। আর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আমাদের দেশের যে সকল সাধারন মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে এই সকল হত্যার সবমগুলো ই বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড । আর এই বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ভারত শুধু আমাদের ক্ষেত্রে ই কার্যকর করছে। কারন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নীতির দিক থেকে আমারা অনেক দুর্বল আর সেই সুযোগ কে কাজে লাগাচ্ছে ভারত। যেমন ১৯৯৬ সালে চীন-ভারত চুক্তি করেছে যে সীমান্তের দুই কিলোমিটারের মধ্যে তারা কোনো অস্ত্র বহন করবে না, দুই দেশ এটা মেনে ও নিয়েছেন। গালওয়ান ভ্যালিতে যে সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানে কিন্তু কোনো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। চীনের সঙ্গে ভারত এ চুক্তিটি করেছে, কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তকে ভারত হয়ত এখনো পাকিস্তানের সীমান্ত হিসেবে দেখে। এর মানে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। চীনের মতো বাংলাদেশের সীমান্তেও ভারত চুক্তিটি করতে পারে৷ দুই কিলোমিটারের মধ্যে যদি কেউ ধরা পড়ে, তাহলে তাকে ধরে নিয়ে জেল-জরিমানা করুক, কিন্তু জিরো লাইনে কাউকে পেলে গুলি করে হত্যা করবে কেন? ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ ( মাসুম) মনে করে বিএএসফ সদস্যরা যখন ঠিকমত ভাগ না পায় তখন গুলি করে। সংগঠনটির প্রধান কিরিটী রায় দাবী করেন,"একদানা চিনিও বিএসএফ-এর নজর এড়িয়ে যেতে পারে না বাংলাদেশে। এরা দুর্নীতিগ্রস্ত। এদের কর্মকর্তারা দুর্নীতিগ্রস্ত। এর প্রমাণ বার বার পাওয়া গেছে। চোরাচালান ঠেকানোর নামে তখনই তারা গুলি করে যখন তাদের ভাগ বাটোয়ারায় কম পড়ে।”
ভারত-বাংলাদেশের মানুষের অবৈধ সীমান্ত অতিক্রমের যথেষ্ট যুক্তি সংগত কারন রয়েছে এবং যুগ যুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে । কারন সীমান্তবর্তী অনেক মানুষের ই সীমানার এপার ও পারে নিকটবর্তী আত্মীয় আছেন। আত্মীয়ের আত্মার টানের কোন সীমানা নাই। সীমান্তবর্তী এলাকার কৃষকদের অনেকের ই জমিজিরাত সীমান্তের মাঝামাঝি তাই অনেক সময় কৃষকেরা চাষাবাদের সময় অসাবধানতা বশত ই সীমানা অতিক্রম করে ফেলেন এমন কি কৃষকের গরু ছাগল চরানোর সময় ও প্রানীগুলি সীমানা অতিক্রম করে সীমান্তবর্তী নদীগুলিতে জেলেরা মাছ ধরতে নদী গেলে সঠিক সীমানা ঠিক থাকে না। এই বিশেষ করন গুলিতেই আমাদের দেশের সাধারন মানুষ ভুলে সীমান্ত অতিক্রম করেন। ভারত যেহেতু আমাদের পাশ্ববর্তী অন্যতম বড় দেশ তাদের সাথে আমাদের বানিজ্যিক সম্পর্ক সেই আদি যুগ থেকেই। অবৈধ বানিজ্যের কারনে ও প্রচুর মানুষ অবৈধভাবে এপার ওপার আসা যাওয়া করে। আর এই কারনেই ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে আমাদের দেশের মানুষ।
আমাদের সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর হত্যা যেই হিসাব তা আমি প্রথমে একটি সাধারন পরিসংখ্যান দিয়েছি তবে একজন সভ্য মানুষ তথা সভ্য জাতি হিসেবে এই প্রানহানী গ্রহন করা কষ্টকর। ২০১৯ সালের ১১ জুলাই জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ভারত- বাংলাদেশ সীমান্তে হতহাতের একটি চিত্র তুলে ধরেন। তরা তথ্য অনুসারে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ২০০৯ সালে কমপক্ষে ৬৬ বাংলাদেশি বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হন। ২০১০ সালে ৫৫, ২০১১ ও ২০১২ সালে ২৪ জন করে, ২০১৩ সালে ১৮ জন, ২০১৪ সালে ২৪ জন, ২০১৫ সালে ৩৮ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ১৭ জন এবং ২০১৮ সালে তিনজন নিহত হন।তার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ ৬৬ জন এবং ২০১৮ সালে সর্বনিম্ন তিনজন বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের(আসক) হিসেবে ২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলিতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ছয় জন। আহত হয়েছেন ৪৮ জন। অপহৃত হয়েছেন ৩৪ জন।
বিএসএফ-এর গুলিতে ফেলানী হত্যার পর বাংলাদেশের দাবির মুখে ২০১৪ সালে দিল্লিতে বিএসএফ ও বিজিবির মহাপরিচালকদের বৈঠকের পর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে একটি সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু সেই সমঝোতার শুধু দিল্লী আর ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে এর বস্তব প্রভাব ভারত- বাংলাদেশের ৪,০৯৬ কিলোমিটার সীমান্তের কোথাও পরে নি। আমরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয়দের জন্য যথেষ্ট উদার আমাদের সমুদ্রে অবৈধ ভাবে মাছ ধরতে এসে ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে ভারতীয় জেলেদের উদ্ধার করে যত্ন সহকারে তাদের নিজ দেশে প্রেরন করে অবশ্যই মানবিকতার প্রমান দিয়েছি। আমাদের দেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। কোন এক হিসেবে দেখেছিলাম বাংলাদেশে প্রায় ১১ লাখ ভারতীয় নাগরিক কাজ করছে যাদের অধিকাংশ ই অবৈধ। ভারতের রেমিট্যান্সের একটা বিরাট অংশই যায় আমাদের বাংলাদেশ থেকে। ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের কাছ থেকে যা পেয়েছে ও পাচ্ছে তা ভারতের জন্য যথেষ্ট নয় কি? ২০১৮ সালের ৩০ মে ভারত সফর শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে ও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলেছিলেন " আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে যা দিয়েছে, দেশটিকে তা সারা জীবন মনে রাখতে হবে "।
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী হাতে বাংলাদেশের নগরিক হত্যা নিয়ে যেহেতু আমার লেখা তাই কিভাবে এই সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা যায় এটাই ভাবতে হবে। সীমান্ত হত্যা বন্ধের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা সেই সাথে কথিত বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্কের বাস্তবায়ন। সীমান্ত থাকবে এটা যেমন সত্য সীমান্তে অবৈধ যাতায়াত ও থাকবে এটা ও বাস্তব তবে আমি কোন ভাবে সীমান্তে অবৈধভাবে পারাপার সমর্থন করি না বা করতে পারি ও না। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ইউরোপের দেশগুলোর মতো খুলে দেয়া হবে সেটা অলৌকিক কল্পনা৷ বরং কেউ অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিতে চাইলে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা ই হবে একটি মানবিক সভ্যরাষ্ট্র কর্তব্য ৷ তবে অবৈধ সীমান্ত পারাপারের নামে ভারত বাংলাদেশ সীামান্তে যে রক্তের হুলি খেলা চলছে এটা নিসন্দেহে অমানবিক অমানুষিক নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিছুই না যা কোন ভাবেই শুধু বাংলাদেশী বলেই নয় ুকজন মানুষ হিসেবে ও মেনে নিতে পারি না বা মেনে নেয়া যায় না। এই হত্যার বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিবাদ গড়ে তোলা আরো আগেই উচিত ছিল। তবে রাজনৈতিক কারনে বিভিন্ন সময় আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরা সেই জোড়ালো প্রতিবাদ করতে কার্যকরী ব্যবস্হা নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই আজ ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত পৃথিবীর অন্যতম মৃত্যুপুরী বিচারবহির্ভূত মানুষ হত্যার একটি নিরাপদ অপ্রতিরোধ্য স্হান। তাই এই হত্যার বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিক রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে জোরালো প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। না হয় আমাদের স্বাধীনতা কোন ভাবেই অর্থবহ হবে না। ভারতের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে সাধারন মানুষের মনে তিক্ত প্রশ্ন থেকেই যাবে।