কখন কোথায় কোন ভাষায় লেখকের মর্মপীড়া ও ক্ষোভ প্রকাশ পায় তা বোঝার সাধ্য সব পাঠকের নেই, হবেও না কখনও, আশাও করেন না সম্মানিত লেখক। লেখকের শেষ আশ্রয় শেষ পর্যন্ত তাঁর নিজের কাছেই। এই তথ্য লেখক অনুধাবন করেন প্রথম কলম চালানোর পরেই। লেখকরা আত্মনির্ভরশীল।
পাঠকদের প্রশংসা তাদের ব্যক্তিগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তপস্বী জ্ঞান অর্জন করেন প্রকৃতি থেকে, পাঠক নির্ভরশীল লেখকের ওপর। লেখকরা তপস্বী। প্রথমে তাঁরা নিজের ক্ষুদ্র অস্তিত্বের স্বরূপ সন্ধান করেন, এরপর নিজেকে আবিষ্কার করেন বৃহৎ অস্তিত্বের সাথে। বৃহৎকে নিজের অস্তিত্বে ধারণ করে প্রতিনিধিত্ব করেন পাঠকদের কাছে। পাঠকদের সাহায্য করেন আপন স্বরূপ সন্ধানে। পাঠক কতদূর যেতে পারবেন, নিজেই তপস্বী হয়ে উঠতে পারবে কিনা- তা লেখকের পাঠ দান ও পাঠকের পাঠ গ্রহণ দুইয়ের ওপরই সমনির্ভরশীল।
লেখকরা সবচেয়ে বড় আবিষ্কারক, সবচেয়ে বড় উদ্ভাবক। তাঁরা নিত্য নতুন জ্ঞান আবিষ্কার করেন, উদ্ভাবন করেন; আর বিনা লাভের আশায় ছড়িয়ে দেন সবার মাঝে। আপনি যদি জীবনে কারও কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে চান তবে একজন ভালো লেখকের কাছে কৃতজ্ঞ থাকুন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কার্পণ্য করবেন না।
কিন্তু এমন হয়েছে এবং হতেই থাকবে- সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা প্রতিভাবানরা লাঞ্ছিত হয়েছেন, বঞ্চিত হয়েছেন, অবাঞ্ছিত হয়েছেন আপন আপন কালে। এতে ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেই।
যারা নতুন কিছু প্রথম বলেছিলেন, তাঁদের অনেককেই পাগল বলেছিল সমসাময়িকরা। অবজ্ঞা করেছিল। বিতাড়িত করেছিল রাষ্ট্র, ধর্ম, সমাজ থেকে। বন্দি করেছিল, বিষ প্রয়োগে খুন করেছিল। অথচ দেখুন, আজ তাঁরাই পাঠ্যপুস্তকে আরাধ্য। আর যারা সংবর্ধিত হয়েছিলেন মিথ্যামিথ্যি, তারা এখন উইপোকার উদরে।
তাই যদি বড় কিছু হতে চান, যদি আত্মবিশ্বাস থাকে বড় কেউ হওয়ার, তবে সমসাময়িক- যাদের ভেতরে আছেন অল্পজ্ঞানী ও হিংসুক- তাদের ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকুন; নিজেকে সর্বদা উজ্জীবিত রাখুন আত্মপ্রেরণায়। আজ হোক, কাল হোক, সাফল্য আসবেই।
মহান লেখক হওয়ার পূর্বশর্ত হলো পাঠক-বিরোধী হওয়া। পাঠককে ভালবেসে লেখা মানেই আপন পায়ে কুড়াল চালানো। লেখক পাঠকের ওপর গোস্বা করবেন, পাঠক লেখককে ভালবাসবেন এটাই নিয়ম। পাঠকের মনোরঞ্জন নয়, পাঠকের হৃদয়ে-মগজে খঞ্জর চালানোই হওয়া উচিত লেখকের সাধনা।
পাঠকরা লেখককে লেখক বানান না, লেখকদের অস্তিত্ব আছে বলেই 'পাঠক' তকমা পেয়েছেন পাঠকরা। সৃষ্টিকর্তা স্রষ্টাই থাকেন, গুণগ্রাহী না থাকলেও।