somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজাকার মনস্তত্ত্ব

২০ শে জুলাই, ২০০৮ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জামাতি ইসলামী সৎলোকের দল এই ফতোয়া অনবরত বিলি করে যাওয়া এক মগবাজারীয় পেইড ব্লগার একবার বলেছিলেন, তারাও বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। তারা সবসময়ই দেশপ্রেমিক। একাত্তরে পাকিস্তানের অখন্ডতা চেয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পাকিস্তান তো গায়েব। তারা যেহেতু সবসময়ই দেশপ্রেমিক, সেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশকেও মেনে নিয়েছেন। যদিও তাদের নেতা গোলাম আজম পাকিস্তানের পাসপোর্ট বুকে চেপে ধরে পবিত্রভূমি আরবের রাজা-বাদশাহদের সাথে বৈঠক করে গেছেন, যাতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়া হয়, তবুও আমরা সৎ লোকদের কথায় বেশি অবাক হই না, কারণ, এটা তাদের কর্মপদ্ধতি।

তাদের কর্মপদ্ধতির কয়েটি গৎবাঁধা নমুনা তুলে ধরার জন্যই এই পোস্ট:

১। নিতান্ত টাল অবস্থা ছাড়া তারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কিছু বলেন না। তারা সত্য-সন্ধানী। তাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ইতিহাসের শুদ্ধিতায় তাদের ঘুম কামাই হয়ে যায়। তারা আশাবাদী মানুষ। ৩০ লক্ষ লোক না মরে ২৬ হাজারের হিসাবটা সত্য হওয়া নিয়ে ব্যাপক আশায় একের পর এক 'যুক্তি'সমৃদ্ধ পোস্ট দিয়ে যান। তারা মানবতাবাদী। সরাসরি পাকিস্তানী সৈন্যদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আক্ষেপটা মূলতবি থাকলেও যে হাজার হাজার নিরীহ রাজাকার এবং বিহারীরা মারা গিয়েছেন, সেটাও আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন। ঠিকই তো,হেড টেল বলার আগে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দু'পিঠই দেখতে হবে।

২। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা আওয়ামী লীগ খুব খারাপ। তারা চেতনার ব্যবসায়ী। তাদের নেতৃত্বে একাত্তরে যুদ্ধটা হয়েছিলো, তারা সেটা বললে তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করলো। সুতরাং সহজ হিসাব, আপনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা মানে আপনি আওয়ামী লীগ করেন। আওয়ামী লীগ করাটা যেন পাপ, আর আপনি আওয়ামী লীগকে পছন্দ না করলেও ক্ষতি নেই, আপনি চেতনার ব্যবসায়ী হবেনই হবেন।

৩। আগেই বলেছি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তারা খুবই সচেতন। বাংলার সাধারণ মানুষেরা দায়িত্বে অবহেলা করলেও জামাত ঠিকই 'জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ' গঠন করেছে।

৪। ভারত আমাদের চিরশত্রু। তারা সীমান্ত নিয়ে ক্যাচাল করে। তাদের বিএসএফের গুলিতে আমাদের বিডিআর-নিরীহকৃষক নিহত হয়। আমাদের সচেতনতার মাত্রা যে কম, তা বুঝাতে রাজাকারেরাই আগে ফাল দিয়ে পড়ে। তারা চেচামেচি করে, আমরা কেন এই করি না, সেই করি না, আমরা নিশ্চয়ই ভারতের দালাল। তাদের চেচামেচিতে বিরক্ত হলে লাভের ভাগটাও তাদের। দেখা যাবে, এই চেচামেচিতে আপনি ভারতের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছেন। আপনি ভারতের অন্যায়ের বিরোধিতা করেন; কিন্তু রাজাকারের সাথে কাঁধ মিলাতে ব্যর্থ। আপনি তখন ভারতের দালাল।

ফতোয়াটি একাত্তরে কাজ করে নি; কিন্তু ধর্মের সাথে সাথে ভারত-বিদ্বেষের তাবিজে ফলাফল হবেই হবে - রাজাকারদের এ বিশ্বাস টলাতে পারে, এমন মানুষ তো দূরের কথা, আল্লাহ-ঈশ্বরও ত্রিভুবনে পয়দা হয় নাই।

৫। ব্লগের বাইরে রাজাকারদের এনজিওগুলো যে সেবা দিয়ে আমার-আপনার হৃদয়ে 'ভালোমানুষ'-এর আসন পাকাপোক্ত করতে চান, ব্লগেও নানারূপে দেশপ্রেমিক রাজাকারেরা হাজির হন। প্রথম প্রথম দেখা যাবে রাহেলা হত্যার মত মানবীয় বিষয়ে জানপ্রাণ ফতোয়া দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এহেন দেশপ্রেমিকদেরকে ৫ জন রাজাকারের নাম জিজ্ঞেস করার মত সাহসও আপনার হবে না। তবে জামাত সম্পর্কে তাদের অভিমত কি, এ বিষয়ে কোনো ক্লিয়ারকাট জবাব পাবেন না।

অনেকে আবার আসেন শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধ করলেও গোলাম আযমকে প্রতিষ্ঠা দেয়ায় তিনি রাজাকারদের প্রিয়পাত্র। তবে সেটা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। জামাতকে গালি দিলে শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক হিসেবে ফলাও করা লোকটির হৃদয়ের ব্যথা প্রকাশিট হয়ে পড়ে।

কেউ কেউ আবার আরেককাঠি সরেস। তারা ভার্চুয়াল জিবনকে রিয়েল লাইফের সাথে মিলাতে অনাগ্রহী। তারা গোলাম আযমকে গালি দিবেন, কিন্তু যারা গোলাম আযমকে মহান নেতা বলে তারা তাদেরকে নিরন্তর ভাবতে শেখাবে, তাদের সাথে গিয়ে ফুচকা খাবেন। রিয়েল লাইফকে ভার্চুয়াল লাইফের সাথে মিলাবেন না।

মাঝে মাঝে খুব অবাক হয়ে ভাবি, এইরকম ধান্দাবাজ মীরজাফরের গোষ্ঠীর সাথে আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত একটা সেনাবাহিনীর যৌথ অপশক্তিকে কতোটা সাহসে ঠেকিয়েছিলেন আমার পূর্বপুরুষেরা, কতোটা দৃঢ়সংকল্প হতে হয়েছিলো তাদের!

রাজাকারের ভালো মানুষী সুযোগ বুঝে সাপের মত ছোবল দেয়া মনস্তত্ত্ব দেখে আমার সেই অকুতোভয় পূর্বপুরুষদেরকে স্যালুট দেই। সেই রক্ত আমার মধ্যেও আছে, নিশ্চয়ই আছে। সৎলোকের মুখোশপরা কীটদের প্রতিরোধ বাঙালি করবেই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০০৮ রাত ৮:৪১
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×