পরিচয়ঃ- নাম তুরগত বে, তুর্কি ইতিহাসের কয়েকটি বিবরণে তারগুত আল্প নামে পরিচিত। তিনি কুড়াল চালনায় সবচেয়ে পারদর্শী ছিলেন, সুঠাম দেহী, শক্তিশালী বাহু, সাহসী ও বিশ্বস্ত যুদ্ধাদের মধ্যে একজন ছিলেন। আর্তুগ্রুল গাজীর বিশ্বস্ত বন্ধু ( সহোদর ) হিসেবে সবসময়ই পাশে থাকতেন। এবং তার প্রতিটি কথা গুলো তিনি মেনে চলতেন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতে হাত রেখে তিনি আর্তুগ্রুল গাজীর সঙ্গে যুদ্ধ করতেন। তাছাড়া, তিনি তার ছেলে এবং উসমান গাজীর সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ করে কাফেরদের কয়েকটি দূর্গ জয় করেছিলেন। উসমান গাজীর ছেলে উরহান গাজীকেও তিনি যথেষ্ট সহযোগিতা করেছিলেন। এই বীর যুদ্ধা, যিনি উসমানীয়া সাম্রাজ্যের প্রাথমিক গাজী বা যুদ্ধা হিসেবে পরিচিত।
জীবনীঃ - তুর্কি ইতিহাসের বিবরণ অনুযায়ী তুরগুত আল্প প্রায় ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
তিনি ছিলেন তুর্কি ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং খ্যাতিমান যোদ্ধাদের একজন। আর্তুগ্রুল গাজীর ঘনিষ্ঠ বিশ্বাসী, আজীবন পাশে থাকা ব্যাক্তি, এবং রক্তের ভাই।
সেইসাথে তার সেরা অনুসারী এবং সমর্থক, খুব স্মার্ট এবং সক্ষম মানুষ ছিলেন। যদিও তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব কম তথ্য জানা যায়, তবে এটি খুব সুপরিচিত যে, "তিনি কেবল একটি ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বই নন, বরং একজন কিংবদন্তী সাহসী ব্যক্তি যিনি লোক বর্ণনায় উপস্থিত হন"।
এইসবের পাশাপাশি, তার যোদ্ধের উদ্যোগ এবং মহৎ কর্মকান্ড গুলো প্রথম উসমানীয় ইতিহাসে এবং কিছু বাইজেন্টাইন ইতিহাসে ( সুত্রে) স্বযত্নে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তিনি ৩৫ বছর বয়সে আর্তুগ্রুল'বে-কে মোঙ্গল বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন, নিজের জীবনকে তুচ্ছ ভাবতেন যখন যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ করতে যেতেন।
বৈবাহিক জীবনঃ- তুরগুত আল্পের বৈবাহিক জীবন নিয়ে তুর্কির ইতিহাসে মতভেদ রয়েছে। গবেষক ও ইতিহাসবিদ গণের মতে তিনি দুইটি বিয়ে করেছিলেন।
উস্তার দেলিদেমিরের সুন্দরী কন্যা আইকিস হাতুনকে বিয়ে করেন। আইকিস শহীদ হওয়ার পর তিনি আলিয়ার'বের বোন আসলিহান হাতুনকে বিয়ে করেন এবং সেখানেই আর্তুগ্রুল গাজীর কথা রক্ষার্থে বেইমের ( প্রধানের) দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
উসমান গাজির শাসনামলে তুরগুত আল্পের বীরত্বঃ
আর্তুগ্রুল গাজীর মৃত্যুর পর, তুরগুত আল্প প্রধান সমর্থক হয়ে ওসমানের ঘনিষ্ঠ আত্মবিশ্বাসী হন,
যতক্ষণ না বার্সা অবরোধের সময় ওসমানের মৃত্যু হয়। মাত্র ৬৭ বছর বয়সে উসমান গাজীর মৃত্যু হয় এবং তিনি তার শাসনমালে উসমান গাজীকে যথেষ্ট সমর্থন ও সহযোগীতা করে গেছেন।
উসমানীয় ইতিহাসের বিবরণ অনুসারে, ১২৯১ খ্রিষ্টাব্দে কারাকাহিসার দুর্গের দ্বিতীয় বিজয়ের সময় , তুরগুত আল্প উসমান বে'র পাশে ছিলেন, নাইটদের সঙ্গে যুদ্ধ করে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন।
এবং পরবর্তী সময় গুলোতে তিনি উসমানের সমস্ত বিজয়ে অংশ নিয়েছিলেন।
১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে উসমান গাজী এই বীর সাহসীকে ইনেগুলের গভর্নরশিপ হিসেবে নিযুক্ত করেন। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটি ওসমান তাকে দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং প্রজাদের মন জয় করেছিলেন। তিনি সেখানে ৩৬ বছর শাসন করেছেন, এবং সেই সময় মানুষ শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বসবাস করেছে। উক্ত অঞ্চলটিকে তুরগুত-ইলি (তুরগুতের ভূমি) নাম দেওয়া হয়। বুরসার অবরোধের সময়, মিগাল গাজীর সাথে তুরগুট আল্প ১৩২৫ সালে আট্রানোস ক্যাসেল (ওরহানেলি) বিজয়ে অংশ নিয়েছিল যা বুরসা বিজয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
উরহান গাজীর শাসনামলে তুরগুত আল্পের ভূমিকাঃ
উসমানের মৃত্যুর পর, যদিও তিনি স্বয়ং বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়েছিলেন, তার পুত্র দ্বিতীয় সুলতান উরহান গাজীকে একইভাবে সমর্থন প্রদান অব্যাহত রেখেছিলেন, এবং প্রতিটি বিজয়ে তিনি উরহান গাজীকেও অনুসরণ করতেন। তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত উপদেষ্টা হিসাবেও কাজ করেছিলেন, যতক্ষণ না তিনি একটি যুদ্ধে নিহত হন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:২৪