somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আহমেদুর রহমান আজমীঃ যিনি মাদ্রাসার ছাত্র হয়ে উর্দুকে অবজ্ঞা করে মায়ের ভাষার জন্য ঝাপিয়ে পড়েছিলো।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো
একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি?
না পারিনা। আর পারিনা বলেই বারবার শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে সেইসব ভাষাসৈনিকদের কথা মনে করে। তেমনি একজন ভাষাসৈনিক মাওলানা আহমেদুর রহমান আজমী। যিনি ভাষা আন্দোলনে মহা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। যার নেতৃত্বে চট্রগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকাতেও ভাষা আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরে এবং চট্রগ্রামে ভাষা আন্দোলনকে আরো তীব্রতর করে তুলে।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাস। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে সারা ভুখন্ড তখন উত্তাল। এমনি এক উত্তাল সময়ে ২১ ফেব্রুয়ারীতে পাকিস্থানি শাসক গোষ্টী মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকার এক মিছিলে গুলি চালায়। ২২শে ফেব্রুয়ারী পত্রিকা মারফত সেই খবর পৌছে যায় মাদ্রাসার ফাজিল শ্রেণীর ছাত্র আহমেদুর রহমান আজমীর কাছে। কন্ঠরোধের হায়েনাদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে সেদিনই তিনি ঝাপিয়ে পরেন। সেদিন বিকালেই তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করেন। ২৩ শে ফেব্রুয়ারী সকালে হাটহাজারী সদরে প্রতিবাদ সভা ও মিছিল করেন। সেদিনই মাওলানা আজমীকে আহবায়ক করে "হাটহাজারী উপজেলা রাষ্টভাষা সংগ্রাম পরিষদ" গঠিত হয়। একইদিন "চট্রগ্রাম জেলা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ" এর সদস্য নির্বাচিত হোন তিনি।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং তা সংগঠিত হতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন কর্মপন্থা, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাওলানা আজমীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন "চট্রগ্রাম জেলা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ" এর আহবায়ক এবং একুশের প্রথম কবিতার রচয়িতা মাহবুব উল আলম।

একজন মাদ্রাসার ছাত্র হয়েও ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে তিনি এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি জোড়ালো কন্ঠে বলে গিয়েছিলেন, "যে দেশে প্রাণ দিয়ে ভাষার অধিকার প্রতিষ্টা হয়েছে, সে দেশে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পড়ানো হয়না। বর্তমানে ইংরেজি শিক্ষার নামে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ চলছে। এটি জাতি হিসাবে আমাদের জন্য অত্যান্ত কষ্টের।"

এই প্রগতিশীল ভাষাসৈনিক বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের বৃহত্তর চট্রগ্রামের প্রতিষ্টাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কর্মকান্ড এবং দেশের সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম এই সহযোদ্ধা ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১১ তে চট্রগ্রামের মিরসাইয়ের আবুরহাট গ্রামের দেওখালীতে নিজের বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।

মাদ্রাসা ছাত্র হয়েও ভাষা আন্দোলনের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে তিনি বলতেন, "সবসময় বাস্তববাদী ছিলাম। ৪৭ এ দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ কোনভাবেই মানতে পারেনি। এর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙা, ধর্মের নামে জুয়াচুরি আমাকে মানবতাবাদী হতে শিখিয়েছে।"

তথাকথিত লুন্ঠন, তৈলাক্ত রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয় নাই বলে ভাষাসৈনিক মাওলানা আহমেদুর রহমান আজমীকে বাংলাদেশের কোন সরকারই উপযুক্ত সম্মান বা সম্মাননা দেয় নাই। কিন্তু আমাদের প্রাণের মাঝে চরম শ্রদ্ধা নিয়ে ভাষাসৈনিক মাওলানা আহমেদুর রহমান আজমী বেঁচে থাকবেন। এ ভাষাসৈনিকের প্রতি রইলো শত সহস্র সালাম।
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×