রাজধানীতে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষের শিকড় গ্রামে। ঈদের সময় নগরবাসী নাড়ির টানে শেকড়ের সন্ধানে গ্রামে ছুটি গেছেন। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে ঈদ হচ্ছে উৎসবের দিন। এ দিনে প্রায় সবাই ছুটি কাটান, উৎসবে মেতে ওঠেন। কিন্তু পেশার চাহিদার কারণে অনেক পেশার লোকদের সেদিনও কাজ করতে হয়। রেডিও-টিভি, সংবাদ মাধ্যম কখনও বন্ধ থাকে না। এসব প্রতিষ্ঠান ঈদের দিনও খোলা রাখতে হয়। কোন কোন েেত্র সাধারণ মানুষ যখন ছুটি কাটায় তখন এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হয়। ছুটি ভোগকারীদের ছুটি যাতে নির্বিঘœ এবং আনন্দদায়ক হয় সে জন্যও অনেককে কাজ করতে হয়।
তবে এসব প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীই ঈদের দিন কাজ করেন না। যতজন উপস্থিত না থাকলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে ততজন কর্মীই শুধু কাজ করেন। বাকিরা ছুটি কাটাতে পারেন। তবে সব ঈদেই একই কর্মী কাজ করেন না। এক ঈদে যিনি কাজ করলেন পরের ঈদে তিনি ছুটি কাটাতে পারেন। এভাবেই ঈদে খোলা থাকা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাজের তালিকা তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশে ঈদে সরকারি ছুটি তিন দিন থাকার কারণে সংবাদপত্রগুলোতেও তিনদিন ছুটি থাকে। ঈদের দিন, ঈদের আগের দিন এবং ঈদের পরের দিন। ফলে ঈদের দিন এবং পরের দু’দিন মোট তিনদিন পত্রিকা প্রকাশিত হয় না। কিন্তু একসময় এমন ছিল না, ছুটি থাকত শুধু একদিন। কীভাবে ঈদে তিনদিন পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ থাকার নিয়ম প্রচলিত হলো তা নিয়ে বিশেষ কোন তথ্য অনেকেরই জানা নেই। তবে সাধারণ একটি ভাষ্য পাওয়া যায় বিভিন্ন লোকের মুখে মুখে তা হলো- বাংলাদেশেও আগে সংবাদপত্র ঈদ উপলে মাত্র একদিন বন্ধ থাকত। কিন্তু এক পর্যায়ে সংবাদপত্র বিক্রেতাদের কারণে কারণে ঈদে পত্রিকা বন্ধ থাকার সময় প্রলম্বিত হয়েছে। শোনা যায়, ঢাকার অধিকাংশ পত্রিকা হকার বিভিন্ন জেলার বসিন্দা। তারা ঈদের ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ি চলে গেলে সংবাদপত্র বিক্রি করার কোন লোক থাকে না। তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত সংবাদপত্র বিক্রি করার বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে পত্রিকা অফিস খোলা রেখে পত্রিকা প্রকাশ করা হলেও তা পাঠকদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এ প্রোপটেই ঈদে সংবাদপত্র প্রকাশনা তিনদিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন সংবাদপত্র মালিকরা। পরবর্তী সময় এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। শোনা যায় অনেক পত্রিকা মালিক এই নিয়ম ভাঙ্গার চেষ্টা করে ঈদে একদিন ছুটি দেয়ার চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়াও সাংবাদিকদেরও দাবি ছিল; সবাই তিনদিন ছুটি কাটাতে পারলে সাংবাদিকরা কেন তা পারবে না। ফলে এ েেত্র আর কোন পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে দৈনিক আমার দেশের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার আহমেদ করিম ফোকাস বাংলা নিউজকে জানান, ঈদের দিন এবং আগে পরের দু’দিন সংবাদপত্র প্রকাশিত না হলেও সে কয়েক দিনের বিভিন্ন ঘটনার খবর সংগ্রহ করে রাখতে হয়। ছুটি শেষ হলে সেসব খবর প্রকাশ করা হয়। এজন্য কিছু সাংবাদিককে ঈদের দিনও কাজ করতে হয়। ঈদের জামাতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহের জন্য কয়েকজন রিপোর্টারকে সেদিনও এসাইনমেন্ট করতে হয়।
তবে সংবাদ সংস্থা, অনলাইন পত্রিকা, রেডিও-টিভির বিষয়টি তেমন নয়। বছরে অন্য সব দিনের মতোই ঈদের দিনটিও তাদের জন্য সমান ব্যবস্থার দিন। সেদিন রিপোর্টারদেরও সমান ব্যস্ততায় কাজ করতে হয়। তাদের কাছে ঈদের আমেজটা খুব একটা অনুভূত হয় না। কাজের চাপে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার রিপোর্টার বা অন্য বিভাগের কর্মীদের অনেকেই টের পান না কখন ঈদের আনন্দের সময়টুকু চলে গেছে।
এনটিভির স্টাফ রিপোর্টর মঞ্জুরুল করিম বলেন, ঈদের দিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকার ভেতর এক ধরনের আলাদা অনুভূতিও মনের মধ্যে জাগে। নিজের পেশা সম্পর্কে এক ধরনের সিরিয়াসনেসও মনের মধ্যে কাজ করে। সবাই যখন আনন্দ উৎসবে ডুবে আছে আমি তখন তাদের আনন্দকে আরও আনন্দময় করে তোলার চেষ্টায় কাজ করছি। এই অনুভূতির মধ্যে এক ধরনের ভালো লাগার ব্যাপারও আছে।
চ্যানেল আই এর এ্যাসাইনমেন্ট এডিটর আরিফিন ফয়সল ফোকাস বাংলা নিউজকে বলেন,‘আমি আমার কাজকে চাকুরী মনে করি না। মিডিয়ায় কাজ করা একটা নেশা। ঈদে অফিসে কাজ করে ঈদের আনন্দ মিস করি না। বরং ঈদে কাজ করতে ভালোই লাগে। কারণ ছুটিতে থাকা মানুষকে আনন্দ দিতে পারছি। মানুষকে তৃপ্তি দেয়ার মাঝেই নিজেকে খুঁজে পায়।’
ঈদে কাজ করার অনুভূতি জানাতে গিয়ে ইসলামিক টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার হাসান মাহমুদ ফোকাস বাংলা নিউজকে জানান, ‘ঈদে মা-বাবা ও প্রিয়জনদের খুব মিস করি। নাড়ির টান, গ্রামের গন্ধ খুঁজে বেড়ায়। তারপরও পেশার তাগিদে কাজ করতে হয়। কাজ করতে যেয়েও আনন্দ খুঁজে পায়। আমার অফিস কিংবা সহকর্মীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করার চেষ্টা করি। ঈদের আনন্দটা ভালোভাবে উপভোগ করতে না পরলেও মনে মনে তৃপ্তি পায়। কারণ তথ্য দিয়ে আমরা মানুষের ঈদের আনন্দ আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
ঈদে বিডি নিউজ, ফোকাস বাংলা নিউজ, শীর্ষ নিউজ, বাংলা নিউজ, বাসস, ইউএনবি, বিবিসি বাংলা প্রতিমহূর্তের সংবাদ ওয়েব সাইডে আপডেট করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে চলছে বছরের অন্যদিন গুলোর মতোই সমান ব্যস্ততা। বার্তা সংস্থা ফোকাস বাংলা নিউজ সংবাদ ছাড়াও আলোকচিত্র মিডিয়া গুলোতে সার্ভিস দিচ্ছে। এছাড়া কয়েকটি পত্রিকা তাদের অনলাইনে নিউজ আপডেট করছে। এর মধ্যে প্রথম আলো ও আমাদের সময় অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করছে। টেলিভিশন মিডিয়াগুলো খবরে বৈচিত্র্য এনেছে। দর্শককের খোরাক জোগাতে টেলিভিশন মিডিয়ার বার্তা করে কর্মীরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
দেশবাসী যখন ঈদের আনন্দে ডুবে আছে তখন সংবাদের পিছে ছুটছে মিডিয়াকর্মীরা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।