গত ১৭ জুলাই ছিলো দেশের জনপ্রিয় পত্রিকা সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজ এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান অনলাইন দৈনিক ও বার্তা সংস্থা শীর্ষ নিউজ ডটকমের জন্য একটি কালো দিন। সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও আমলাদের দুর্নীতি নিয়ে লেখার কারণে পাঠন নন্দিত এ মিডিয়া দু’টির সম্পাদকসহ ১০ জন সাংবাদিকের নামে ইস্যু করা সকল অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে সরকার। বলা বাহুল্য, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে যে সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকারের কথা সাধারণত বলা হয়ে থাকে এবং দাবি করা হয় বাংলাদেশের সংবিধান নাকি সেই অধিকার স্বীকার করে, সেই অধিকার আমরা প্রকাশ্যেই দলিত-মথিত হতে দেখলাম। নাগরিক ও মানবিক অধিকারের ফানুস সশব্দে ফুটো হয়ে গেল আমাদের চোখের সামনেই। স্রেফ গায়ের জোরে বাতিল করা হয়েছে শীর্ষ কাগজ ও শীর্ষ নিউজের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড। তবুও যারা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীনদের প্রতিশ্রুতিকে এখনও মূল্য দেন, তারা এর নিন্দা করবেন, নিন্দা করছেনও অনেকে।
কিন্তু কী দোষ শীর্ষ কাগজ ও শীর্ষ নিউজের? আমাদের অপরাধ হলো, আমরা অকুণ্ঠিতভাবে কিছু কিছু সত্য প্রকাশ করেছি। শীর্ষ কাগজ ও শীর্ষ নিউজ বর্তমান সরকারের আমলে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার দুর্নীতি, যোগাযোগ মন্ত্রীর দুর্নীতি, পূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস’র বিভিন্ন অপকর্ম এবং পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রীর দুর্নীতিসহ সরকারের বিভিন্ন স্তরের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে দেয়। এরই জের হিসাবে গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজ এবং শীর্ষ নিউজ ডটকম সরকারের প্রভাবশালী মহলের ক্রমাগত হুমকি ও হামলার কারণে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি অতিক্রম করছিলো। প্রধানমন্ত্রীর এপিএস এবং এরপর পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নানা দুর্নীতি অপকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হওয়ায় এরা দু’জন চরমভাবে ক্ষেপে উঠেন। প্রকাশ্যে হুমকি দিতে থাকে এবং এক পর্যায়ে সচিবালয়ের মধ্যেই শীর্ষ নিউজ ও শীর্ষ কাগজ সম্পাদক মো. একরামুল হকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা চালানো হয়। তারপর ১৭ জুলাই ঘটে সচিবালয়ে ব্যানার টানানোর ঘটনা। ওই একই দিনেই অফিস আওয়ারের শেষে শীর্ষ নিউজ ডটকম এবং শীর্ষ কাগজ সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়। যাতে সাংবাদিকরা সচিবালয়ে ঢুকতে না পারেন এবং সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের দুর্নীতি নিয়ে লেখালেখি করতে না পারেন। শীর্ষ নিউজ এবং শীর্ষ কাগজের গলা টিপে ধরার এই প্রক্রিয়ায় যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন এদের মধ্যে পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর এপিএস ছাড়াও সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এবং পূর্তসচিবও রয়েছেন। পূর্তসচিব ড. শওকত হোসেন এসব প্রক্রিয়ার মূল দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনেরও এতে সমর্থন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজের জন্ম ২০০৩ সালে। শুরু থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে শীর্ষ কাগজ বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে এসেছে। ২০০৯ সালের আগস্টে শীর্ষ কাগজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জন্ম হয় শীর্ষ নিউজ ডটকমের। সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে শীর্ষ কাগজ এবং অনলাইন পত্রিকা হিসেবে শীর্ষ নিউজ ডটকম জনপ্রিয়তার দিক থেকে এখন এক নম্বরে পৌঁছেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দু’টি প্রতিষ্ঠানের বলিষ্ঠ ভূমিকায় দেশের জনগণের সম্পদের অনেক দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। এতে জাতীয় সম্পদ সাশ্রয় হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার। এতে দুর্নীতিবাজদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আর এ কারণেই দুর্নীতিবাজরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে শীর্ষ নিউজ ও শীর্ষ কাগজ বন্ধের ষড়যন্ত্রে নেমেছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন। শীর্ষ কাগজ ও শীর্ষ নিউজ কখনো কখনো শাসকগোষ্ঠীর কালিমালিপ্ত মুখ উন্মোচিত করে দিয়েছে এবং সেটুকু সহ্য করার ক্ষমতা ও মানসিকতা শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে বড় অভাব। আমরা সত্য প্রকাশ করেছি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য। ন্যায়বিচার সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং সর্বোপরি শাসকগোষ্ঠীকে সংশোধিত হওয়ার জন্য। এখানে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই। যদি ব্যক্তিগত বিদ্বেষ প্রকাশিত হয়, তাহলে জনগণই সেই সংবাদপত্রকে প্রত্যাখ্যান করে। যখন সংবাদপত্র সত্য প্রকাশে বিদ্বেষহীন থাকে, তার পাঠকপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। আবার এই সত্যের পথ থেক্ষে বিচ্যুত হলে সেই সংবাদপত্র পাঠকপ্রিয়তা হারায়। শীর্ষ কাগজ ও শীর্ষ নিউজ পাঠকপ্রিয়তার দিক থেকে সত্য প্রকাশের কারণে ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। এর আগে চারদলীয় জোট সরকারসহ বিগত সরকারগুলোর সময়েও শীর্ষ কাগজ ও শীর্ষ নিউজ সত্য প্রকাশ থেকে বিচ্যুত হয়নি। অতীতে চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও শীর্ষ কাগজের সব অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগ তীব্রভাবে তার প্রতিবাদ করেছে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে শীর্ষ কাগজ ও শীর্ষ নিউজকে দমনের পদক্ষেপ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার এই অঙ্গীকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ইতিমধ্যেই ধূলিসাৎ করেছে। অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করে সংবাদপত্র দমনে এক আতঙ্কজনক নজির স্থাপন করেছে। কীভাবে সরকার রাতারাতি মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করতে পারে, তার খুবই খারাপ একটি নজির স্থাপিত হলো ১৭ জুলাই। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে এখন ভয়, হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতা চলছে।
বর্তমান মহাজোট সরকার সম্পর্কে তাদের প্রতিপক্ষরা বলছেন, তারা বাকশালের পথেই যাচ্ছেন। আমরা তা বিশ্বাস করতে চাই না। গণতন্ত্রের প্রতি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার অটুট আছে এবং থাকবে, সে বিশ্বাস নষ্ট করতে চাই না। কিন্তু কষ্ট হচ্ছে যখন দেখেছি, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই মিডিয়ার প্রতি এ নগ্ন হস্তক্ষেপ চলছে।
শীর্ষ কাগজ ও শীর্ষ নিউজের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলে শুধু এ দু’টি প্রতিষ্ঠানে মালিকই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, কয়েকশ’ পরিবার বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে পাঠক ও জনগণ। জনগণের ক্ষতি করার অধিকার কোনো সরকারের নেই। সংবাদমাধ্যমের ওপর আঘাত গণতন্ত্রের ওপরই আঘাত। সে আঘাত জনগণের নাগরিক অধিকারের ওপর আঘাত। সে আঘাত মানবাধিকারের ওপর আঘাত।
আমরা আশা করি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজ ও শীর্ষ নিউজ ডটকমের সত্য প্রকাশের পথে স্বেচ্ছাচারী বাধা অপসারণ করা হবে।
সরকারকে সত্য হননের নষ্ট পথ পরিহার করতে হবে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।