#
বৃষ্টিতে কাঁক ভেজা হয়ে ঘরে প্রবেশ করলো শোভন সুপ্তি শোভন কে তোয়ালে দিল শরীর মুছতে। শোভন কল পাড়ে চলে গেল পায়ে লেগে থাকা কাঁদা পরিষ্কার করতে। সুপ্তি বিড়বিড় করে গান গাইতে গাইতে শোভনের সামনে এসে দাঁড়ালো। এরপর হাসিমুখে শোভন কে বলল, ভাইয়া কিছু খেয়েছেন? নাকি মা’কে বলব ভাত দিতে আপনাকে?
শোভন পা পরিষ্কার করতে করতেই বলল, ভাত দিতে বলো। আসলে বৃষ্টিতে আটকে গেছি। গাড়িটাও মাঝরাতে খারাপ হলো, স্টার্ট নিচ্ছিলোনা। তাই সেটাকে গ্যারেজে পাঠিয়েছি। তোমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো আমি অসময়ে আসায়?
সুপ্তি গান বন্ধ করে উৎসাহের সহিত বলল, মোটেও না। এখনত আপনি আর আগেরমত আসেন না। বাবা মা প্রায়ই আপনার কথা বলেন।
“কি বলে তারা? ”
“কত কথাই তো বলে। বড় আপু নেই বলে আপনিও নাকি আর তাদের নেই। আপনি নাকি শুধু আপুর জন্যেই আসতেন। এখন আর আসেন না। “অনুযোগের সুরে বলল সুপ্তি।
শোভন চুপ করে রইল। আজকাল তার বেশি কথা বলতে ইচ্ছে করেনা। সে শান্তি পায় না কোনো কাজেই। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের বাহিরে চলে যাবে এবার। কিন্তু কাউকে কিছু বলেনি এ নিয়ে।
সুপ্তির বাবার নাম কামাল উদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধের এক দশক পরে কামাল উদ্দিন তার গ্রামের বিষয় সম্পত্তি বিক্রি করে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটা ছোট বাড়ি কিনে ফেলেন। যুদ্ধে নিজের এক পা হারানোর পর আর কোনো কাজ করতে পারেননি। যা ছিল তা দিয়ে কোনোমতে বড় মেয়ে তামান্নাকে লেখাপড়া শেখান আর সংসার চালান। বাসায় দুইটা রুম ভাড়া দেয়া। ছয় রুমের একতলা বাসা। তামান্না চাকুরী পাবার পর ভেবেছিলো বাড়িটা দো’তলা করবে। কিন্তু হঠাৎ করে কি থেকে কি যে হয়ে গেল! কামাল উদ্দিন চোখে কম দেখেন, কিন্তু কানে বেশ দূরের জিনিষও স্পষ্ট শুনতে পান।
কামাল উদ্দিন শোভন কে তার নিজের সন্তানের মতই দেখেন। তার স্ত্রী রোখসানা বেগমও একইরকম স্নেহ করে।
শোভন হাসিমুখ নিয়ে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ভালো আছেন আপনারা?
“এইত আছি বাবা। তা তুমি কেমন আছো? আজকাল যে আর আসোনা? ”কামাল উদ্দিন বললেন।
“আমি খুব কাজের চাপে আছি ইদানিং। গত কয়েকমাসের লোকসান পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছি। তাই কোথাও যেতেও পারছিনা। আপনারা কিছু মনে করবেন না, প্লিজ!” বিনয় নিয়ে বলল শোভন ।
“কি গো, তোমারে কইছিলাম না যে আমাগো পোলা আমাগো ভুলেনাই। মেয়ে ছিলো একটা উছিলা বুঝলা? মেয়ের কারণেই আল্লাহ আমাগো একটা পোলা দিছে শোভনের মত। ”বেশ উত্তেজিত হয়েই কামাল উদ্দিন রোখসানা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
রোখসানা বেগম চুপ করে সায় দিলেন। আজকাল শোভন নামটা শুনলেই তার কাছে কেমন জানি লাগে! কিন্তু সেই কেমনের কথা সে কাউকে জানাতে পারেনা। একথা কখনো কাউকে জানানোও যাবেনা।
“আপনাদের কি কখনো ভুলা সম্ভব? ”
“আমরা গরীব মানুষ। মনে রাখার মত বিশেষ কেও নাতো বাবা!”
শোভন চুপ করে রইল। অন্যদিকে কামাল উদ্দিন তার দুর্বল চোখ দিয়ে শোভনের মুখের দিকে উত্তরের জন্যে উৎসুক হয়ে সামনে এগিয়ে চেয়ে রইল। শোভন কি বলবে বুঝতে পারে না। তবে শোভনের ধারণা সে কিছু ইঙ্গিত করতে চাচ্ছে।
শোভন বলল, আপনারা আমার পরিবারের মত। পরিবারকে ভুললে কেও সামনে এগোতে পারেনা। এমনটা ভাববেন না।
কামাল উদ্দিন এবার চেয়ারে গা এলিয়ে দিলেন। এরপর বললেন, তোমাকে কিছু বলার ছিলো বাবা। বিষয়টা বলতে আমার কিছুটা অস্বস্থি হচ্ছে। তুমি কিছু মনে নিবে কিনা!.........
শোভন তাকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়েই বলল, আপনি বলুন! আমি কিছু মনে করবোনা।
কামাল উদ্দিন সুপ্তির মা’কে লক্ষ্য করে হাঁক দিলেন, ছেলেটা এতক্ষণধরে বসে আছে তুমি এখনো ভাত বাড়তেছো না কেন! তাড়াতাড়ি ভাত দাও। শোভনের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলল, বাবা তুমি বসো, আগে খাও; পরে কথা বলা যাবে।
শোভন তাকে উত্তেজিত হতে মানা করল। কিন্তু সে উত্তেজিত হয়েই শোভনের খাওয়া দাওয়ার বন্ধোবস্ত করতে উঠে পড়ে লাগল।
খাওয়া দাওয়ার সময় শোভন কে বেশ খাতির করেন তারা। খাওয়ার মাঝে কারেন্ট চলে যায়, সুপ্তিকে হাতপাখা নিয়ে শোভনের পাশে দাঁড় করিয়ে দেয়।
“বাবা শোনো! মানুষের জীবনে সবসময় সাপোর্ট দেয়ার জন্য একজন সঙ্গী লাগে। আল্লাহ তামান্নাকে কিছু মূহুর্তের জন্যে তোমার সঙ্গী হিসেবে পাঠাইছিলো। আজ তামান্না নাই, তোমার সঙ্গীও নাই। বিয়ে শাদীর কথা ভাবছো কিছু? ”
শোভন খেতে খেতেই বলল, জ্বী! না।
“একটা কিছু ভাবা লাগব, তামান্না নাই বইলা তুমি আর বিয়া শাদী করবানা? এই সুপ্তির মা হুনছো? এই ছেলে কি কয়! ” বলেই কেঁদে দিলেন কামাল উদ্দিন।
শোভন বিভ্রান্তকর একটা পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। সে একবার ভাবে খাওয়া রেখে উঠে যাবে কিনা! সুপ্তির বাবাকে সে বলল, কাঁদবেন না, আল্লাহ যার জন্য আমাকে বানিয়েছে তাকে পেলেই বিয়ে করে ফেলব।
কামাল উদ্দিন নিজেকে কিছুটা শান্ত করলেন। শোভনের খাবার শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলেন। খাওয়া শেষ হওয়ার পর বললেন, সুপ্তির একটা বন্ধোবস্ত করতে চাই আমি বাবা! আমার বয়স হইছে, কখন কি হয় তা আল্লাহ ছাড়া কেও জানেনা। তাই আমি কইছিলাম তুমি যদি চাও তোমার আর সুপ্তির ............
সুপ্তি হাতপাখা ঘুড়ানো বন্ধ করে দিলো। সে এরকম অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিলোনা। তার বাবা শোভন ভাইকে পছন্দ করেন। তামান্না আপু থাকতে প্রায়ই তামান্না আপুকে শোভন ভাইয়ের জন্য প্রশংসা করতেন। তার কাছে এখন দুনিয়াতে একটা ভালো ছেলে হইলে সেটা শোভন ভাই। কিন্তু তার বাবা তাকে তার সাথে বিয়ে দেয়ার কথা চিন্তা করবে এটা সে ভাবেনি। সে বাতাস করা বন্ধ করে নিজের ঘরে চলে যায়।
শোভন বিষয়টা বুঝতে পারে। শোভনের দৃষ্টি এড়াতে কামাল উদ্দিন বলেন, মেয়ে মানুষ বাজান! নিজের বিয়ের কথা হুইন্না লজ্জা পাইছে। তুমি কিছু মনে নিওনা। সেও তোমারে ভালো পায়। তাইনা সুপ্তির মা?
সুপ্তির মা তার মাথা নাড়ায়। মুখে কিছু বলে না।
“তুমি কথা কওনা ক্যান? এতদিন পর ছেলেটা আসছে। এইরকম ধ্যান মাইরা বইসা আছো কেন? ”
“আমি আর কি বলব? আপনারা যা ভালো বুঝেন তাই করেন। তয় আমার মতে সুপ্তির মতামত নেয়াটা উচিৎ। সে যদি মত দেয় আর শোভনের আপত্তি না থাকলে কার কি বলার আছে?
শোভন তাদের কথা শুনে প্রচন্ড অস্বস্থিতিতে ভুগছে। এতদিন পর এখানে আসার পর তাকে নিয়ে যে সবাই এভাবে ভাববে সেটা সে কল্পনাও করেনি। অন্যদিকে এ ফ্যামিলির প্রতি তামান্নার জন্যেও সে কিছুটা দায়বদ্ধ। তামান্না মারা যাবার পিছনে শুধুই কি তার হাত ছিলোনা? সে কি চাইলেই তামান্নাকে বাঁচাতে পারতোনা? হয়তো আরো একজনকে বাঁচাতে পারতো তামান্নার সাথে!
শোভন তাদের উদ্দেশ্য করে বলল, আমি সুপ্তির সাথে কথা বলে আপনাদের জানাবো। ওর সামনে পরীক্ষা। এসব নিয়ে ওকে আর কিছু বলার দরকার নাই।
কামাল উদ্দিন বললেন, ঠিক আছে। তুমি তাইলে এখন তামান্নার রুমে চলে যাও। অইরুমে সব গোছানোই আছে। শুধু যাইনা আর কাইত হইবা। ব্যাস, এক ঘুমে রাত কাভার।
...
শোভন ঘুমাতে চলে গেল। বাহিরে এখনো তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। ইলেক্ট্রিসিটি নেই। তবুও সে টর্চের আলোয় দেখল তামান্নার ঘরটার সবকিছুই আগেরমত আছে। শুধু যার ঘর আজ সে নেই। শুধু তার জন্য নেই। শোভনের পিপাসা লাগল ঘরটাতে ঢুকেই। এ’ঘরে সে আগেও বহুবার এসেছিল। তামান্নার লাশ যেদিন এ’ঘরে পাওয়া যায় সেদিনও এসেছিল। এরপর আজই প্রথম। শোভন টেবিলের উপর থেকে জগ থেকে পানি ঢেলে খেলো। বিছানায় গা দেয়ার আগে সে ভাবতে লাগল তার সাথে তামান্নার পরিচয় থেকে শুরু করে, বিশেষ মূহুর্তগুলিকে... তার অফিসের একজন কর্মচারী, যার চোখে শুধু কাজল আর কপালে একটা টিপ থাকতো। মেয়েটাকে দেখলেই তার কেমন জানি লাগতো। লজ্জায় তাকাতেও পারতোনা আবার চোখ ফেরাতেও ইচ্ছে করতোনা। একসময় মেয়েটার সাথে তার মন দেয়া নেয়া হয়। অফিসের সবাই বিষয়টা জানে। কেও কিছু বলেনি, কারণ তামান্না মেয়ে হিসেবে যথেষ্ট ভালো ছিল। শোভন তার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পরে তামান্না রাজি হয়। কিন্তু তখনই বিয়েতে রাজি ছিলোনা তামান্না। সে কখনো নিজেকে শুধু একটা মেয়ে ভাবেনি। সে পরিবারের একমাত্র আর্নিং মেম্বার ছিলো। তাই সে চেয়েছিলো পরিবারটাকে একটু ভালো অবস্থানে নিয়েই বিয়ে করতে। শোভন তাকে যথেষ্ট সাপোর্ট দিচ্ছিলো। অফিসের কাজে তাদের বাহিরে যাওয়া হয় অনেকবার। তার মধ্যে একবার শোভন মাঝরাতে তামান্নাকে ডাক দিয়ে বলেছিলো, চলো জ্যোৎস্না দেখি। তারা বের হয়ে অনেকক্ষণ পথ ধরে হাটে। জোৎস্নার আলোয় দুইজন যুবক যুবতী পথ চলতে থাকে। ফেরার পর শোভন আর নিজের রুমে যায়নি...
...
সুপ্তি দরজা বন্ধ করে টেবিলে পাশে বসে আছে। তার সামনে একটা ডায়েরি। সে কখনো ডায়েরি লিখেনা। ডায়েরিটার ভিতরে একটা পৃষ্ঠা আছে। এই পৃষ্ঠাটা তার বড়বোন তামান্নার লেখা। তামান্না যেদিন মারা যায় সেদিন তার পাশে এই পৃষ্ঠাটা পাওয়া যায়। পৃষ্ঠাতে তামান্নার হাতে লেখা সুন্দর সুন্দর লেখা...
শোভনের কোনো দোষ নেই। ও দায়িত্ববান কিন্তু ততোটা না। ইদানিং পরিবারের সাথে ওর বোঝাপড়া ভালো যাচ্ছেনা। ব্যবসায়ের অবস্থাও খারাপ যাচ্ছে। গতমাসে মাত্র ৫লাখ টাকা লাভ হয় কোম্পানির। অনেক বড় ক্ষতি হবে সামনে। তাই ওর মাথায় চাপ যাচ্ছে। আমি ওকে বুঝিয়ে উঠতে পারিনি। ও বলে দিয়েছে এখন বিয়ে করতে পারবেনা। ওর সময় দরকার। এদিকে আমারো এখন আর সম্ভব না এভাবে বাঁচা। ও একদিন বুঝবে। তোমরা কেও ওকে কিছু বোলোনা আমি চলে যাওয়ার পর। শোভন ভালো ছেলে, অনেক ভালো............
এইটুকু পড়ার পর আর পড়তে ইচ্ছে করেনা সুপ্তির। তার কান্না আসে। সে প্রতিবার কাঁদে এই পৃষ্ঠাটা পড়ার পর। কিন্তু আজকে কাঁদছেনা। ডায়েরি খোলা রেখেই টেবিলে ঘুমিয়ে গেল সে।
সেসময়ে কামাল উদ্দিন খুশি মনে রোখসানা বেগমের সাথে শোভন আর সুপ্তির বিবাহ আয়োজন নিয়ে আলোচনা করছিল।
...
সুপ্তির দরজার শোভন কড়া নাড়ছে। সুপ্তি! সুপ্তি!
সুপ্তির ঘুম ভাঙ্গে। সে তার চুল ঠিক করে। ডায়েরিটা বন্ধ করে জায়গামত রেখে দেয়। দরজা খুলে দেয়। শোভন তার রুমে প্রবেশ করে।
“সুপ্তি! আসলে আমি কিছু বলতে চাই।”
“বলেন, আমি আশা করব আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন না। যদি এটা বলতে আসেন তাহলে আমি আপনার কাছে চিরকাল ঋণী থাকবো।”
“আমি এমনটা কখন বললাম? ” শোভনের ভ্রু কুঁচকে গেল।
“আমি মাত্র ঘুম থেকে উঠেছি। আপনি বসুন আমি ফ্রেশ হয়ে আপনার জন্য চা নিয়ে আসি। ”
সুপ্তির রাতারাতি পরিবর্তন শোভন কে বেশ অবাক করল। সুপ্তিকে সে বহুদিন ধরে চিনে। সুপ্তিকে সে সবসময়ই বাচ্চা একটা মেয়ে মনে করেছে। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে সে একজন বাচ্চা মেয়ে না, প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর মত কথা বলল!
কিছুক্ষণ পর সুপ্তি চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। শোভন তার টেবিলের পাশে চেয়ারে বসেছিল।
শোভনের সামনে সে চা রেখে বলল, শোভন ভাই! বাবা যা চায় আপনি যদি তাই চান তাহলে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু আমার বোনের খুনিকে বিয়ে করার দায় নিয়ে আমাকে সারাজীবন বেঁচে থাকতে হবে। আমি আপুর মত সাহসী না, তাই সুইসাইড করতে পারবোনা। আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন?
শোভন বুঝতে পেরেছে তার জিহ্বা পুড়েছে গরম চায়ে। সুপ্তির প্রতিটা কথা ঘোরের মত লাগছে তার। তার মুখ দিয়ে শুধু বের হল, কে খুনি?
সুপ্তি ডায়েরিটা খুলে পৃষ্ঠাটা শোভনের হাতে ধরিয়ে দিল। শোভন পৃষ্ঠা পড়ার মাঝে এসে নিজের চোখের পানি মুছল। তার কিছু ভালো লাগছেনা। মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
“আপনি জানেন আপু অন্তঃসত্ত্বা ছিল? আপনার ক্যারিয়ার এমন সময়ে প্রিয় হয়ে গেছে যখন তার আপনাকে বেশি দরকার ছিল! সে চিঠিতে একবারো আপনাকে দোষ দেয়নি। মা আর আমি দুজনই জানতাম আপুর এই গোপন বিষয়টা। আমরা এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম আপনি আপুকে শীঘ্রই বিয়ে করবেন। কিন্তু আপনি করেন নি। এই চিঠিটা আমি এখনো কাউকে দেখাই নি। আপনি যদি আমাকে বিয়ে করতে চান তাহলে আমি এইটা বাবার হাতে দিব। আমি এটাও বলব যে আপু ঘুমের ঔষুধ খেয়ে মারা গিয়েছে, স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলোনা আপুরটা। ”
শোভনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তার মাথার ভিতর এখন সুপ্তি নেই। সুপ্তিকে বিয়ের কথা সে কখনো ভাবেনি। তার মাথায় এখন ঘুরছে একটা শব্দই শুধু, “অনুশোচনা”। সে তামান্নার মৃত্যু চায় নি। সে এটা ভাবেওনি। ছোট থেকে চাপ কি জিনিষ তা সে কখনো বুঝেনি। কিন্তু গত ক’মাসে সে যেন জীবনের সাথে প্রাণপণ যুদ্ধ করে চলেছে।
শোভন আর সুপ্তির কথাগুলো দেয়ালের পাশেও একজন শুনছিলেন। যিনি শুনেছেন তিনি শোভন কে নিজের ছেলে মনে করেন।
শোভন টলতে টলতে রুম থেকে বের হল। কামাল উদ্দিন সাহেব তার একটু দূরেই বসে আছেন চেয়ারে। শোভন তার সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। তিনি দৃঢ় কন্ঠে বললেন, শোভন তুমি আর কখনো এই বাসায় আইসো না আমাদের ভালো চাইলে।
শোভন তার রাগের কারণ ধরতে পারেনি। শুধু বুঝতে পারল তার গলা ভারি শোনাচ্ছিল। বাহিরে গাড়ির হর্ণের শব্দ পাওয়া গেল। তার সেক্রেটারি বাহিরে দরজায় কড়া নেড়ে জোরে ডাকছে, স্যার গাড়ি আসছে।
পুরো বাড়িটা হঠাত করে শান্ত হয়ে গেল। মনে হলো পুরনো বিষণ্নতা সবাইকে নতুন করে আঁকড়ে ধরেছে।
#বিষণ্নতা
০২/০২/২০১৯ইং
ঢাকা, মিরপুর ১২।
লেখাঃ যাকী মুজাহিদ
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:১৩