সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। রোদে পুড়ছে ফসলের মাঠ। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে দিনাজপুরের বিরলে ব্যাপক ধুমধাম করে দেওয়া হয়েছে ব্যাঙের বিয়ে।
সবার বিশ্বাস ব্যাঙের বিয়ে দিলেই অনাবৃষ্টি কেটে যাবে। বিয়েতে বিভিন্ন ধর্মের লোকজন উপস্থিত থাকলেও বিয়ের আয়োজন ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের নিয়মে। বিয়েতে গ্রামবাসীসহ প্রায় ৫শ’ আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। রং মেখে নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়।
শনিবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে বিয়ের অনুষ্ঠান। বিয়ের আয়োজন করে বিরল উপজেলার ভারাডাঙ্গী বেতুড়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা।
আয়োজকেরা জানান, শনিবার ভাদ্র মাসের ৫ দিন। কিন্তু বৃষ্টি নেই। জমিতে পানি নেই। যে জমি গুলোতে চারা রোপণ করা হয়েছে, সে জমিগুলো পানির অভাবে চৌচির হয়ে গেছে।অনেকে শ্যালোমেশিন দিয়ে খেতে পানি দিচ্ছেন। এ কারণে যাতে বৃষ্টি আসে, সে জন্য ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়। বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন চলছিল ৭ দিন আগে থেকে। গ্রামের যুবারা ৭ দিন আগে থেকে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেচে-গেয়ে অর্থ, চাল, মরিচ, পিয়াজ, রসুন, আদা তেল ইত্যাদি সংগ্রহ করে। এ সময় প্রতিটি বাড়িতে ব্যাঙের বিয়ে খেতে আসার দাওয়াত দেওয়া হয়। কলাগাছ ও ফুল দিয়ে সাজানো মাড়োয়ায় সকাল থেকে গ্রামবাসী আসতে শুরু করে। বাজানো হয় মাইক। রং মেখে, কাদা মেখে শুরু হয় নাচ-গান। দুপুর সাড়ে ১২টার সময় বর হৃদয়ের মা ডাবু বালা ও কনে স্বপ্নার মা শেফালী রানী রায় বর-কনেকে নিয়ে হাজির হন মাড়োয়ায়। এ সময় পাশেই চলছিল রান্নার গ্রামের মানুষ বর-কনেকে দেখে টাকাসহ বিভিন্ন উপহার দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে যান।
মাড়োয়ার আশপাশে চলে লাঙল দিয়ে জমিচাষ। শুকনো জায়গায় মধ্যে লাগানো হয় ধানের চারা । এ যেন এক অন্যরকম উৎসব। অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা সতীশ চন্দ্র রায় জানান, অতীতেও এভাবে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়ার পর জলের দেখা মিলে ছিল। এবারও সে আশা থেকেই এই আয়োজন করা হয়েছে। গতবার ব্যাঙের বিয়ের দিন দুপুর থেকেই বৃষ্টি হয়েছিল।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি সামছুল হক জানান, অনেক বছর ধরে দেখে আসছি অনাবৃষ্টি হলেই এই গ্রামের সবাই মিলে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে। অনেক সময় বৃষ্টিও হয়েছে। তাই মানুষের কাছে এক প্রকার বিশ্বাস হয়ে গেছে, ব্যাঙের বিয়ে দিলেই বৃষ্টি হবে।
বিয়ের আয়োজক কমিটির সদস্য বিরল ভান্ডারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহেশ চন্দ্র রায় জানান, ৭ দিন ধরে এ আয়োজন চলছে । এলাকার যুবকরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিকেলে গরুর গাড়িতে করে কনের বাসায় যাওয়া হবে কনেকে শ্বশুরবাড়িতে আনার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:১৪