somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দশ টাকা কেজির চাল নিয়ে চালবাজি চলছে

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রিপোর্ট আসছে। দশ টাকা কেজির চাল নিয়ে চালবাজি চলছে। কি টেলিভিশন, কি পত্রিকা, কি অনলাইন, এখন অনেক খবরের মাঝে বড় শিরোনাম এই চাল দুর্নীতি। হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের উদ্যোগে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সৎ উদ্দেশ্যে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির তালিকা প্রণয়ন ও কার্ড বিতরণে চলছে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও স্বজনপ্রীতি।

তালিকায় হতদরিদ্রদের পরিবর্তে নাম উঠেছে দলীয় নেতাকর্মী, মহাজন, আবাসিক হোটেলের মালিকসহ সচ্ছল ও বিত্তবানদের। কার্ড বিতরণের নামে নেয়া হচ্ছে ৩০ থেকে ১২০ টাকা করে। আবার যারা চাল পাচ্ছেন তাদের দেয়া হচ্ছে ২-৩ কেজি করে কম। খাদ্য অফিস কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের পরস্পর যোগসাজশে হচ্ছে এসব অনিয়ম আর দুর্নীতি। যেন সবাই আদাজল খেয়ে নেমেছে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দরিদ্র্যবান্ধব এ উদ্যোগকে ব্যর্থ করে দিতে।

দুর্নীতি নিয়ে আমাদের চার দিকের যে সমাজ, তার যেন কোন মাথাব্যথা নেই। ধরেই নিয়েছে দুর্নীতি হবেই, এটাই নিয়তি। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আজ বিশ্বপরিসরে আলোচিত। কিন্তু তার ছোঁয়া যদি সাধারণ মানুষকে না পায় তখনই প্রশ্ন উঠে, উন্নয়ন আর দুর্নীতি কি হাতে হাত ধরে চলতেই থাকবে?

মানুষের প্রত্যাশার জায়গাটা ক্রমেই যেন সংকুচিত হয়ে আসছে। যখন শোনা যায় পাকা বহুতল বাড়ির মালিক, কলেজের অধ্যাপক নিজে এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে দশ টাকা কেজির কার্ড করিয়েছেন, তখন বুঝতে কষ্ট হয় না যে, দুর্নীতি সম্পর্কে সমাজের নৈতিক অবস্থানকে ভঙ্গুর করে দেয়ার চক্রান্তে প্রায় সবাই তৎপর। সমাজের যেসব পেশার মানুষকে জনগণ নির্ভরতার চোখে দেখে তাঁদের এমন আচরণ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মূল্যবোধ তৈরির ব্যাপারে আমাদের সামাজিক অনীহা কতটা তীব্র।

যে মানুষগুলোর জন্য এই কর্মসূচি তাদের না দিয়ে দলীয় নেতা কর্মীকে শুধু দিচ্ছেনই না সংশ্লিষ্টরা, বরং জোর গলায় টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলছেন, এটাই তার কাজ। কতটা ভয়ংকর মানসিকতা এদের! দলবাজির সঙ্গে দুর্নীতির এই সম্পর্কটা নিয়ে আমরা সচরাচর কথা বলি না, কেউ বললেও থামিয়ে দেয়া হয়।

আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, হত দরিদ্রের সংখ্যা কমছে বলে বলছে বিশ্বব্যাংক। কিন্তু বৈষম্যও চোখে পড়ার মতো। বৈষম্য শুধু আয়ের ক্ষেত্রে নয়, আচরণেও। তারই প্রকাশ দরিদ্র মানুষের চাল এভাবে প্রকাশ্যে হজম করে দেয়ার মাঝে। অনেকেই বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে বৈষম্যের একটা স্বাভাবিক’ সম্পর্ক থাকে। ধনি দরিদ্রের ব্যবধান আলোচনাটা যদি রেখেও দিই, তখন প্রশ্ন করতেই হয় তবে কি উন্নয়ন মানেই দুর্নীতি? না অতটা নিষ্ঠুর বা নেতিবাচক নই আমরা।

গরিব মানুষ সৎ নেতা, সৎ কর্মকর্তাকে কাছে পেতে চায়। কিন্তু সে কেবলই পরিবেষ্টিত থাকে কতগুলো নষ্ট মানুষ দ্বারা। দরিদ্র মানুষ রাস্তা চায়, স্কুল চায়, হাসপাতাল চায়, খুব সাধারণভাবে বাঁচতে চায়। আমাদের রাজনীতি আর প্রশাসনিক সংস্কৃতি তার এই সামান্য চাওয়াটুকুও কেড়ে নেয়। যখন রাষ্ট্র স্ব-উদ্যোগে গরিবকে কিছুটা দিতে এগিয়ে এলো, ধনিক শ্রেণির লুলুপ দৃষ্টি পড়লো তার দিকেও। উন্নয়ন এবং নীতির দৌড়ে অনিয়মের পাল্লাই ভারী হয়ে উঠলো।

দুর্নীতি যখন সরাসরি দরিদ্র্যের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে, দারিদ্র্য নিয়েই যখন দুর্নীতি হয়, যখন রাজনৈতিক গোষ্ঠি সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে গরিবদের প্রাপ্য হস্তগত করেন, গরিবের ভাগ যখন বিত্তশালীদের একটা বড় গোষ্ঠী মেরে দেন, তখন শেষ বিচারে উন্নয়ন আর উন্নয়ন থাকে না। দলবাজি আর অনিয়মকে যাচ্ছেতাইভাবে প্রশ্রয় দেয়ায় উন্নয়ন ভাল হলেও দুর্নীতি কমে না, বরং বাড়তে থাকে।

রাস্তাঘাট, অবকাঠামো হচ্ছে। কিন্তু একই সাথে হলমার্ক ও বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি, শেয়ারবাজার কেলেংকারীসহ বেশি কিছু রূপকথাসম দুর্নীতিও মানুষ দেখলো সমানভাবে। ব্যাংকের টাকা, পুঁজিবাজারের টাকার পর দারিদ্র্য নিয়ে দুর্নীতির এই চিত্রটা বেদনাদায়ক।

ভাল কাজ ভাল প্রশাসনিক কায়দায় শেষ করতে না পারলে তার ফলাফল আরো উল্টো হয়। নাগরিক সমাজে উদ্বেগ আছে, সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু একটা হুঁশিয়ারি এলোনা রাজনৈতিক সমাজ থেকে। ফলে যারা কাজটা করেছে বা করছে, তারা নির্বিকার। কয়েকজনের ডিলারশিপ বাতিলের কথা শুনা যায়, কিন্তু তাতে অনিয়ম থামে না।

নাগরিক সমাজের উদ্বেগ আর সমালোচনাকে রাজনৈতিক সমাজ গ্রহণ না করলে দুর্নীতি রোধের কোন প্রচেষ্টাই অর্থবহ হয় না। খুব একটা সাহায্য করে না আমাদের। দশ টাকা কেজি চাল নিয়ে চালবাজির প্রশ্ন কোনভাবেই রাজনৈতিক প্রশ্ন নয়, নৈতিকতার প্রশ্ন। তাই এটি রাজনৈতিক প্রশ্ন না নাগরিক প্রশ্ন, তা নিয়ে তর্ক শুরু করা অর্থহীন। রাজনীতির কাছে, রাজনীতিকদের কাছে মানুষের চাওয়া পাওয়ার জায়গায় ব্যবধান দেখলেই নাগরিকের মাথাব্যথা হয়।

বাংলাদেশের দুর্নীতির প্রকোপ অনস্বীকার্য। বলা হয় এখানে রাজনীতি দুর্নীতিগ্রস্ত শুধু নয়, বরং দুর্নীতির নামান্তর। কেবল আর্থিক দুর্নীতির প্রচলিত ধারা নয়, নানা ধরনের অনাচার এই রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে। দলীয় রাজনীতির রেষারেষি সেই অনাচারে অবিরত ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছে। এই ক্লেদ দূর করবার কোন বাস্তবোচিত পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। রাজনীতি তার নিরন্তর টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই নূতন সম্ভাবনা নির্মাণ করে চলে। দেখতে হবে, এই ঘটনা নতুন করে ভাবতে শেখায় কিনা আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে।
লেখকঃ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৩৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×