আমাদের মন্ত্রীরা খুবই সামান্য বেতন পান; সচিবরাও। যা বেতন পান, তাতে সংসারে টানাটানি। কিন্তু এত বড় পদে থাকলে একটা দামি স্মার্ট ফোন তো লাগে। কিন্তু এত টাকা কোথায় পাবেন? সরকারের দয়া হয়েছে। এখন থেকে সরকারি অর্থেই তারা সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোন কিনতে পারবেন। এতদিন তারা মোবাইল ফোন কেনার জন্য ১৫ হাজার টাকা পেতেন। কিন্তু এই টাকায় কি ভালো মানের সেট পাওয়া যায়? তাই এক লাফে ৫ গুণ বাড়ানো হয়েছে।
শুধু তাই নয়, তারা ফোনে আনলিমিটেড কথা বলতে পারবেন। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। খরচ যাই হোক, সরকারের তরফেই তা পরিশোধ করা হবে। এসব সুবিধা রেখে সরকারি টেলিফোন, সেলুলার, সেট ও ইন্টারনেট নীতিমালা-২০১৮-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। বৈঠক শেষে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
আমাদের মন্ত্রীরা আসলে কত বেতন পান? অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর বেতন মাসে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা। মাসিক বাড়ি ভাড়া এক লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক ভাতা তিন হাজার টাকা। আর মন্ত্রীদের বেতন ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, চিফ হুইপেরও একই বেতন। প্রতিমন্ত্রীরা পান ৯২ হাজার এবং উপমন্ত্রী ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা। আর সংসদ সদস্যদের মাসিক বেতন ৫৫ হাজার টাকা।
পক্ষান্তরে সরকারি কর্মচারীদের সর্বোচ্চ মূল বা ‘বেসিক’ বেতন ৭৮ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন ৮২৫০ টাকা। মন্ত্রীপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের মূল বেতন ৮৬ হাজার টাকা এবং জ্যেষ্ঠ সচিবদের মূল বেতন ৮২ হাজার টাকা। এর বাইরে তাদের আরও নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা আছে। কোটি কোটি টাকা ঘুষ, পার্সেন্টিজ, বিদেশ ট্যুরসহ বিবিধ হিসাব অবশ্য এর বাইরে। কিন্তু তারপরও আমাদের মন্ত্রী ও সচিবদের মোবাইল ফোন কেনার জন্য রাষ্ট্রকে আলাদা বরাদ্দ দিতে হয়!
প্রশ্ন হলো, আমাদের মন্ত্রী বা সচিবরা কেউ কি এই আবেদন করেছিলেন যে, তারা টাকার অভাবে একটা দামি মোবাইল ফোন কিনতে পারছেন না? নাকি মন্ত্রীসভা স্বপ্রণোদিত হয়েই তাদের জন্য এই ব্যবস্থাটা চালু করলো? টাকাটা কার? এই টাকা তো জনগণের কর থেকেই আসবে। সুতরাং জনগণের পয়সা দিয়ে একজন মন্ত্রী বা সচিবকে ৭৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোন কিনে দিতে হবে কেন? যিনি মনে করেন যে, তার দামি ফোন দরকার, তিনি নিজেই কিনে নিতে পারেন। রাষ্ট্র তাকে সেই আর্থিক সুবিধা দিচ্ছেই। এখন এই ফোন কেনার নামে নতুন করে যে কোটি টাকার শ্রাদ্ধ হবে, তার জবাবদিহিতা কে নিশ্চিত করবে?
যে দেশে জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষকরা এমপিওভুক্তি এবং বেতন-বোনাসের দাবিতে রাজধানীতে এসে পুলিশের টিয়ালশেল ও পিপার স্প্রে খান; বেসরকারি শিক্ষকরা অবসর ভাতার জন্য বছরের পর বছর রাজধানীর নীলক্ষেতের নীল ভবনে (ব্যানবেইস) ছোটাছুটি করে জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলেন; পোশাকশ্রমিকরা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নামেন––সে দেশে জনগণের পয়সা দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা আর মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী উপমন্ত্রীদের মোবাইল ফোন কিনে দিতে হবে, এটি বোধ হয় একটু বিলাসিতাই হয়ে গেল!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩