somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতে আবারো মাওবাদ : স্মরণ করিয়ে দেয় উত্তাল ৬০-এর দশক-২য় পর্ব

২৬ শে এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব পড়তে চাইলে ক্লিক করুন (Click This Link)
মাওবাদীদের সম্বন্ধে অরুন্ধতী রায়
অরুন্ধতী রায় ইতিমধ্যে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় ভারতীয় শাসকদের ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছু মন্তব্য ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তার একটি প্রবন্ধ অপারেশন গ্রীনহান্ট ও মাওবাদ শিরোনামে গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি ওই প্রবন্ধে বলছেন, ২৬/১১-এ মুম্বাই হামলার পর সরকার পাকিস্তানের সাথে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু, মাওবাদীদের সাথে সরকার তা পারে না। ভারত সরকার এমনকি চীনের সাথেও আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু, দেশের গরীব লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর ব্যাপারে তারা কঠিন মনোভাব প্রদর্শন করে। সরকারের মাওবাদী নির্মূল অভিযান হিসেবে জঙ্গলে হত্যার অবাধ লাইসেন্স দিয়ে পুলিশের গ্রেহাউন্ড/কোবরা/স্করপিওন্স-এর মত জংলী নামের বিশেষ বাহিনী তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু, তাতেও সরকার যথেষ্ট মনে করছে না। রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী, বিএসএফ, জংলী নাগা বাহিনী বা পিপলস মিলিশিয়াও অপর্যাপ্ত মনে হয়েছে সরকারের কাছে। যদিও এদের অভিযানের তোড়ে ছত্রিশগড়সহ অন্যান্য মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা থেকে বাড়িঘর ছেড়ে তিনলাখ মানুষ পালিয়ে গেছে। তারপরও সরকারের আকাক্সা পূর্ণ হয়নি। এজন্য তারা দুর্ধর্ষ তিব্বত সীমান্তরক্ষী বাহিনী মোতায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার বিলাসপুরে বিগ্রেড হেডকোয়ার্টার স্থাপনে অগ্রসর হচ্ছে। এতে সেখানকার নয়টি গ্রাম বাস্তুচ্যুত হবে। রাজনন্দগাঁওয়ে বিমান ঘাঁটি স্থাপনে উচ্ছেদ হবে সাতটি গ্রাম। এসব সিদ্ধান্ত আগে থেকে নেয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে আদিবাসী ও মাওবাদীদের উপর আরো তীব্র আন্দোলন পরিচালনা করা হবে। বর্তমানে ভারতীয় হেলিকপ্টার ও বিমানবাহিনীকে আত্মরক্ষার নামে হামলা চালানোর অধিকার দেয়া হয়েছে। অরুন্ধতী প্রশ্ন রাখেন, কার প্রতি গুলি ছোঁড়া হবে? নিরাপত্তা বাহিনী কীভাবে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ ও মাওবাদীদের আলাদা করে চি‎ি‎‎হ্নত করবে? যেসব আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে পালাতে থাকবে তারা কী এ হামলার লক্ষবস্তুতে পরিণত হবে না? ইতিমধ্যে পশ্চিম লালগড় বেস্টন করা হয়ে গেছে। যারাই যাওয়ার চেষ্টা করেছে তাদের পেটানো ও গ্রেফতার করা হয়েছে। এবং তাদের অবশ্যই মাওবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। দান্তেউয়ারায় হিমাংশু কুমার পরিচালিত গান্ধীবাদী বানভাসি চেতনা আশ্রম কয়েক ঘন্টার মধ্যে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাঞ্চল শুরুর আগে এটাই একমাত্র নিরপেক্ষ জায়গা ছিল। যেখানে সাংবাদিক, অধিকার কর্মী, গবেষক ও সত্যানুসন্ধানী টিম ওই এলাকায় কাজ শুরুর আগে থাকতে পারত। অরুন্ধতীর এ প্রবন্ধ যখন প্রকাশিত হয়, তখনো গ্রীন হান্টের পৈশাচিকতা শুরু হয়নি।
অরুন্ধতী গত ফেব্রুয়ারিতে মাওবাদী বনাম ভারতীয় শাসকদের যুদ্ধক্ষেত্র মধ্যভারতের দণ্ডকারাণ্য বনাঞ্চলে ঘুরে আসেন। তার এ ভ্রমণ ছিল অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ওখানকার অভিজ্ঞতা নিয়ে দিল্লীর ‘আউটলুক’ সাময়িকীতে তিনি একটি প্রবন্ধ লিখেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের প্রতিথযশা সাংবাদিক নুরুল কবিরের সম্পাদনায় প্রকাশিত বুধবারে তা প্রকাশিত হয়েছে। মাওবাদীদের নিয়ে অরুন্ধতী রায়ের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এখানে কিয়দংশ উপস্থাপন করা হল। তার অভিজ্ঞতায় দান্তেউয়ারার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ভারতের অভ্যন্তরে সীমান্তবর্তী একটি শহরের মত এর অবস্থা। যেন একটি যুদ্ধের কেন্দ্রস্থল। কেননা, দান্তেউয়ারায় পুলিশের গায়ে সাধারণ পোশাক বা সিভিল ড্রেস। অন্যদিকে বিদ্রোহী মাওবাদীদের গায়ে ইউনিফর্ম। এখানকার ইন্দ্রাবতী নদীর অপর পাড়টি মাওবাদীদের নিয়ন্ত্রণে। পুলিশের ভাষায় এটি হচ্ছে পাকিস্তান। গ্রামগুলো জনশূন্য। বিপরীতে, জঙ্গলগুলো মানুষের আবাসে পরিণত হয়েছে। স্কুলে যাওয়া বয়সী শিশুরা ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়াচ্ছে। গ্রামগুলো একভাবে বিধ্বস্থ অবস্থায় পতিত হয়েছে। ভারতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়। যেসব স্কুল অক্ষত রয়েছে, তাতে পুলিশে ভরপুর।
সরকারি গ্রীন হান্ট ঘোষণার পরপরই মাওবাদীদের সরকার বিরোধী হামলা আরো তীব্র আকার নেয়। যা হোক, সরকার অপারেশন গ্রীন হান্টের ব্যাপারে এখন অস্বীকার করছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, অপারেশন গ্রীন হান্ট বলে আদৌ কিছু নয়। তা মিডিয়ার সৃষ্টি। কিন্তু, অরুন্ধতী লিখায় বলছেন, সরকার মুখে অস্বীকার করলেও কার্যত এর বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। কেননা, এর জন্য লাখ লাখ সৈন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ব্যাপক পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এখানে দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। একদিকে বিপুল সংখ্যক আধাসামরিক বাহিনী। তাদের হাতে রয়েছে ভারতীয় অত্যাধুনিক সমর রশদ। অন্যদিকে বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে সাধারণ গ্রামবাসী। ভারতের মাওবাদী ও আধাসামরিক বাহিনীর লড়াইয়ের ক্ষেত্রে অরুন্ধতী বলছেন, এরা পরস্পর অনেকদিনের প্রতিপক্ষ। পঞ্চাশ দশকে তেলেঙ্গানায়, ষাটের দশকের শেষ ও সত্তর দশকে পশ্চিম বঙ্গ, বিহার ও অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীকাকুলামে এ দু’ গ্রুপ মুখোমুখি লড়েছে। পরবর্তীতে অন্ধ্র, বিহার ও মহারাষ্ট্রে অদ্যাবধি পরস্পরের বিরুদ্ধে দু’বাহিনী লড়ছে। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছে একাধিক নৃশংস সমর অভিযান। প্রতিবারই আক্ষরিক অর্থে মাওবাদীরা নিশ্চি‎হ্ন হয়ে যায়। কিন্তু, কিছুকাল পরেই ফিনিক্স পাখির মত মাওবাদীরা ভারতীয় শাসক বাহিনীর সামনে হাজির হয়েছে। নতুন শক্তি ও উদ্যামে।

মাওবাদীদের সাম্প্রতিক ইতিহাস

কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী)। সা¤প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত নাম। এ মুহুর্তে ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে মাওবাদীরা ভয়ঙ্কর আতংক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত সামরিক অপারেশন পরিচালনার মাধ্যমে ভারতীয় শাসকদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। মাওবাদীদের দল ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি ২০০৪-এর ২১ সেপ্টেম্বর গঠন হয়। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)-জনযুদ্ধ ও মাওইস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার অব ইন্ডিয়া- এ দু’দলের একত্রীকরণ দিয়ে বর্তমান ভারতীয় মাওবাদী ধারার উত্থান। একই বছর ১৪ অক্টোবর প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে এ দল সর্বপ্রথম জনসমক্ষে উন্মোচিত হয়। দলের প্রধান নেতা হিসেবে সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকায় পূর্বের জনযুদ্ধ নেতা মপ্পালা লক্ষণ রাও ওরফে গণপতির নাম ঘোষণা হয়। ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালেয়েন্স বা ইউপিএ’র নেতৃত্বে ভারত সরকার ২০০৯-এর ২২ জুন মাওবাদী এ দলকে নিষিদ্ধ করে। এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। বর্তমানে, ভারতে ২৯ রাজ্যের ২০টিতে তাদের কার্যক্রম রয়েছে বলে জানা যায়। দল গঠনের পরপর তারা দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করে। তাদের দলিলে গ্লোবালাইজেশনকে অন্যতম প্রধান শত্রু হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। পাশাপাশি তারা সামাজিক শোষণ বন্ধ করতে জাতপ্রথাভিত্তিক শোষণ বন্ধের আন্দোলন ঘোষণ করে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার্থে তারা নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের লাইনকে রণনীতি হিসেবে ঘোষণা দেয়। ভারতীয় মাওবাদীদের কিছু বক্তব্যে ইসলামী মৌলবাদীদের পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হচ্ছে, ইসলামী জঙ্গীরা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দলের ডেপুটি লিডার কটেশ্বর রাও ওরফে কৃষেনজী’র বক্তব্য লক্ষণীয়। ইন্টারনেটের উইকিপিডিয়ায় এ ব্যাপারে কৃষেনজী’র মন্তব্য দেখা যায়। তার মতে, ইসলামী জঙ্গীবাদী আন্দোলন বিরোধিতা করা উচিৎ নয়। যেহেতু, এদের প্রধান শত্রু হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাম্রাজ্যবাদ। সুতরাং, আমরা চাই তারা বৃদ্ধি পাক।
ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্র প্রদেশ ও বিহারে মাওবাদীদের শক্ত সংগঠন রয়েছে। এছাড়া আদিবাসী অধ্যুষিত সীমান্তবর্তী এলাকা ছত্রিশগড়, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িশ্যায় মাওবাদীদের বিচরণ লক্ষণীয়। মাওবাদী এ দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে দেখা যায়, দলের পলিটব্যুরো হচ্ছে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। এ ফোরামের সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। তন্মধ্যে ২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ছয় জন নিহত কিম্বা গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা যায়। দলের অন্যতম সিনিয়র সদস্য কোবাদ গান্ধী ২০০৯-এর ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন। দলের অন্য দুই জন সিনিয়র সদস্য কটেশ্বর রাও ওরফে কৃষেণজী ও কাথাকম সুদর্শন । এ দু’জন পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল ব্যুরোর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ৩২ জন। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা পলিটবুরে‌্যার সিদ্ধান্ত দলের নিম্ন পর্যায়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করে থাকে। দল পরিচালনায় আর্থিক তহবিল সংগ্রহে দেখা যায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলে তারা ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যয় নির্বাহ করে। মূলত, মাওবাদী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ট্যাক্সের মাধ্যমে তাদের তহবিলের বড় একটা অংশের যোগান আসে। এছাড়া তাদের শ্রেণী শত্রু হিসেবে অভিযুক্ত বড় ব্যবসায়ীদের অপহরণ কিম্বা জোরপূর্বক অর্থ আদায়ের উদাহরণও রয়েছে। ২০০৫ সালে ভারত সরকার মাওবাদী দমনে সালওয়াজুডুম বাহিনী গঠন করে। এ বাহিনী মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। হাজার হাজার আদিবাসী হত্যা ও নারীকে ধর্ষণ করে। বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বাহিনী সালওয়াজুডুমকে পৃষ্ঠপোষকতা করে।

সাম্প্রতিক অপারেশন
চলতি মাসের ৬ তারিখ মাওবাদীরা দান্তেউয়ারা জেলায় ৭৩ জন প্যারামিলিটারিকে হত্যা করে। যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রচণ্ড আলোচিত হয়েছে। চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাওবাদীরা পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার সিলদা ক্যাম্প আক্রমণ করে। হামলায় ২৪ জন প্যারামিলিটারি সদস্য নিহত হয়। ধারণা করা হয়, ওই সময় মাওবাদীরা আরো কয়েকজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ২০০৯-এর ৮ অক্টোবর মহারাষ্ট্রে ১৭ জন পুলিশ সদস্যকে তারা হত্যা করে। এর দু’দিন আগে ৬ অক্টোবর ঝাড়খণ্ডে পুলিশ ইন্সপেক্টর ফ্রান্সিস ইন্দোয়ারকে মাওবাদীরা হত্যা করে। ২০০৯-এর ১৩ এপ্রিল পূর্ব উড়িশ্যায় ১০ জন প্যারামিলিটারি সদস্যকে হত্যা করা হয়। ২০০৮-এর ২১ জুলাই মালকানগিরি জেলায় ২১ জন পুলিশ সদস্যকে মাওবাদী গেরিলারা হত্যা করে। বিগত কয়েক বছরে এমন অপারেশনের উদাহরণ আরো একাধিক রয়েছে। অপারেশন গ্রীন হান্টও মাওবাদীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বরং মাওবাদী হামলার গতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শেষ কথা
ভারতে মাওবাদের ইতিহাস নতুন কিছু নয়। ৬০-এর দশক থেকে এখানে মাওবাদ কখনো সক্রিয় কখনো নি®প্রভ অবস্থায় বিদ্যমান ছিল। এ কথা সত্যি যে, প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থার বৈষম্যমূলক নীতির কারণে ভারতে গেরিলা যুদ্ধের সৃষ্টি। কিন্তু, আপাতঃ অর্থে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলতে পারলেও খুব বেশিদিন তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যা নক্সালবাড়ি আন্দোলনে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের সিরাজ সিকদারের ক্ষেত্রে একই উদাহরণ প্রযোজ্য। গ্রাউন্ডে আন্দোলন পরিচালনার সুযোগ থাকার পরও আন্ডারাগ্রাউন্ডে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার কোর অর্থ বহণ করে না। ভারতে তথাকথিত শিল্পায়নের বিরুদ্ধে ওইখানকার গরিব মানুষের গণ আন্দোলনে বিজয়ের উদাহরণ স¤প্রতি তৈরি হয়েছে। সিঙ্গুর ও নন্দী গ্রামে শেষ পর্যন্ত কর্পোরেট স্বার্থ পরাস্ত হয়েছে। সাধারণ ভারতীয় বুদ্ধিজীবীরাও সিঙ্গুর-নন্দী গ্রাম ইস্যুতে জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। একইভাবে দান্তেউয়ারাসহ বিভিন্ন এলাকায় আদিবাসী উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্ডারগ্রাউন্ডে না গিয়ে সরাসরি গণ আন্দোলন পরিচালনার সুযোগ ছিল। কিন্তু, মাওবাদীদের নীতির কারণে তা বিপর্যস্থ হয়ে গেছে। ভারত সরকার যদি ওই এলাকায় একসঙ্গে সেনা বা বিমান হামলা পরিচালনা করে সেখান থেকে মাওবাদীরা উচ্ছেদ হতে বাধ্য। সাথে সাথে উচ্ছেদ হয়ে যাবে গরীব আদিবাসীরাও। কর্পোরেট স্বার্থে খনি খননে নির্বিচারে জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হবে। স¤প্রতি নেপালে প্রচণ্ড নেতৃত্বাধীন মাওবাদীরা আন্ডারগ্রাউন্ড পথ পরিহার করে মূলধারায় ফিরে এসেছে। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী তাদের সমর্থন উন্মোচিত হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মাওবাদীদের বর্তমান নীতি ও ভারত সরকারের আগ্রাসী অবস্থানের কারণে ওই এলাকার আদিবাসীদের অধিকার আন্দোলন আবার পিছিয়ে যাবে। কেননা, মাওবাদী নিয়ন্ত্রিত কর্পোরেট স্বার্থ বিরোধী আন্দোলনে সাধারণ জনগণের সমর্থন থাকলেও একজন কর্মী হিসেবে ভূমিকা রাখার পরিস্থিতি নেই। চীনের তৎকালীন রাষ্ট্র চরিত্র ও ভারত রাষ্ট্রের বর্তমান চরিত্র এক রকম নয়, হতে পারেও না। ফলে, নির্বিচারে সমস্ত জায়গায় মাওবাদ প্রয়োগ বিজ্ঞানসম্মতও নয়।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×