somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষমতায়ন ও মুক্তি

৩১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিও টলস্টয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত রাশিয়ান লেখক। তাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখকদের একজনও বলা হয়ে থাকে। যে লিস্টে তার সাথে রয়েছেন শেক্সপিয়ার ও রবীন্দনাথের মত অমর লেখকেরা।
এই লিও টলস্টয় একবার বলেছিলেন,
"নারী হল সমাজ জীবনের এক অনিবার্য নিরানন্দের উৎস।"
প্রাচীনকাল থেকেই সমাজে নারীর অবস্থান সম্পর্কে নানা নেতিবাচক ধারনা প্রচলিত। যেমন, মেয়েরা বুদ্ধিহীন, তাদের স্থান শুধুই ঘরে, তারা শুধু পরনিন্দা করে ইত্যাদি। সময়ের সাথে সাথে সমাজে নারীর অবস্থান অনেক শক্ত হয়েছে। এ ধরনের নেতিবাচক ধ্যান-ধারনা কমেছে। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীদের সফলতা চোখে পড়বার মত।
যদি শুধু বাংলাদেশের কথাই চিন্তা করি, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী ,দেশের ৫ কোটি ৪১ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী৷ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৯৭ জন৷ বিদেশে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ৭৬ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৮২ হাজার ৫৫৮ জন নারী৷ এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ৮০ ভাগ কর্মীই নারী৷ দেশের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ ব্যবহারকারীও নারী৷ বর্তমানে সংসদে ৬৯ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন৷ মন্ত্রিসভায় নারী আছেন৷ প্রধানমন্ত্রী নারী৷ সাবেক প্রধানমন্ত্রীও নারী৷ নারী জাতীয় সংসদের স্পিকারও৷
সব মিলিয়ে দৃশ্যটা বেশ সুখকর বলেই আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়৷
যাই হোক, প্রসঙ্গ থেকে কিছুটা সরে আসি। চলে যাই পলাশীর যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের সময়কালে। যুদ্ধে জয়লাভ করে ব্রিটিশ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। তবে কি জানেন তো, তারা এক অভিনব পদ্ধতিতে শাসন ও শোষণ করতে শুরু করে। তারা তৎকালীন সম্রাটকেই শাসনকার্য পরিচালনা করার ভার দেয়, কিন্তু তার সকল প্রকার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়। অর্থাৎ সম্রাটের নামেই খাজনাদি আদায় হত, কিন্তু আদতে তা যেত ব্রিটিশদের পকেটে।
নারীদের ব্যাপারটাও অনেকটা সেরকম। যেসব উদাহরণ বা স্ট্যাটিস্টিকস দিলাম সেগুলো হল নারীর ক্ষমতায়ন। কিন্তু নারীমুক্তি আজও অধরা। আজ মেয়েদের শিক্ষার হার বেড়েছে। তারা স্কুলে যাচ্ছে, উচ্চশিক্ষায় যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কাউকে কাউকে আবার তনু বা রিসার মত করুণ পরিণতির শিকার হতে হচ্ছে। আজ নারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হচ্ছেন আবার স্বামীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে চোখও হারাচ্ছেন।
আবার কিছু স্ট্যাটিস্টিকস দেই।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত তার ‘‘নারীর ভূমি অধিকার ও বঞ্চনা'' শীর্ষক গবেষণায় বলেছেন, ‘‘মাত্র শতকরা চার ভাগ নারীর ভূমির উপর প্রকৃত মালিকানা রয়েছে৷ মুসলিম নারীরা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির মালিকানা লাভ করলেও শতকরা মাত্র দুই থেকে পাঁচ ভাগ মুসলিম নারীর ভূমিতে প্রকৃত মালিকানা রয়েছে৷''
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান জানতে চাচ্ছেন? শুনুন ঢাকার কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মুখে৷ তাঁদের কয়েকজন জানান, ‘‘নির্বাচিত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে কোনো কাজই শুরু করতে পারিনি৷ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের গুরুত্বই দেয়া হয় না৷'' এক গবেষণায় নারীর ক্ষমতায়নে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ৬ ধরনের বাধার কথা বলা হয়েছে-
১. নারীর অংশগ্রহণ প্রক্রিয়ায় পরিবারের সমর্থনের অভাব এবং নিষেধ।
২. নারী নের্তৃত্ব মেনে নেয়ার জন্য সামাজিক অনীহা।
৩. পরিবারের পুরুষ সদস্যের ওপর নির্ভরতা বা নারীদের চলাচলের ওপর বাধা নিষেধ আরোপ।
৪. অর্থনৈতিক সম্পদের অভাব।
৫. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব।
৬. রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চার অভাব।
এবার কর্মপরিবেশ এবং মজুরির কথা ধরা যাক৷ জাতীয় শ্রম শক্তি জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে নারী শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে ৮ লাখ৷ তাঁরা সকলেই মজুরি বৈষম্যের শিকার৷ পুরুষের সমান কাজ করলেও তাঁরা মজুরি পান কম৷ উদাহরণস্বরূপ, গ্রামাঞ্চলে একই কাজ করে পুরুষ শ্রমিকরা গড়ে ১৮৪ টাকা পেলেও নারী শ্রমিকরা পান ১৭০ টাকা৷ ন্যায় বিচারের বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য এই একটি তথ্যই যথেষ্ঠ৷
যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাঁধার শিকার হচ্ছেন, শহরের (ঢাকা) প্রায় ৮১% নারী কোন না কোনভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, কর্মক্ষেত্রে নানামুখী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তখন স্পষ্টভাবেই বলা যায় যে, নারীমুক্তি আজও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।
অনেকেই এখন বলবেন এসব কথা তো বস্তাপচা কথা। এগুলো তো আমরা জানি। এর মধ্যে নতুন কি আছে? এভাবেই তো চলছে।
ঠিক তাই। নতুন কিচ্ছু নাই। এভাবেই চলছে। চলবে। এভাবেই তনুর মত মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হবে, আমরা কিছুদিন ফেসবুক গরম করব, দুএকটা সভা সেমিনার করব। আর ওদিকে অপরাধীরা দাপিয়ে বেড়াবে। রিসার মত মেয়েরা বখাটেদের হাতে বলি হবে আর আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব।
আর খুব বেশি হলে এই যে, এধরনের দু-তিনটে স্ট্যাটাস শেয়ার করব।
by the way, এই স্ট্যাটাসটা দেয়ার মাধ্যমে আমি কিন্তু আমার দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত। এখন রিসা বা তনুর হত্যাকারী ধরা পরল কি পরল না তা আমার দেখার বিষয় না। নারীমুক্তি মিলল কি অধরা রইল তা নিয়ে ভাবার কোন দরকার নেই।
কাল থেকে আমিও পথেঘাটে নারীদেরকে অবমূল্যায়ন করব।
আবার কোন ঘটনা ঘটলে? আবার একটা স্ট্যাটাস দেব। সব দায়বদ্ধতা খতম।
সিম্পল।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×