somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: নারী শব্দের যৌক্তিকতা এবং আজমেরী দাওয়খানার মালিশ

২৪ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাচ টাকার জ্যোতিষী একদিন বলল জীবনের অনেক উন্নতির কথা, আর সেটা ভেবে বসে ছিল সায়মা অনেকদিন। ততদিনে তার চোখে চশমা উঠেছে, চশমার ক্ষমতা বেড়েছে সামন্তর প্রগমনে, কামিজ ছোট হতে হতে শার্ট হয়ে গেছে, ঈশ্বরের পরিত্যক্ত পৃথিবীর অবশিষ্ট সুঘ্রাণের নির্যাস জমেছে তার শরীরে, কিন্তু উন্নতির সোপান খুজে দেখে কিছুই পায় নি সে। যদিও আমরা যারা রাস্তায় বাসে টাই ঠিক করি, ঘেমে প্রধানমন্ত্রীকে গালি দেই আর জুম্মা বারে নামাজ পরার সময় আমাদের সেলফোনে দিপীকা পাড়ুকোন অভিনীত সিনেমার সুর বেজে উঠলে বেহেশতে কল্পনা করি স্বল্পবসনা দিপীকাদের, তারা উন্নতির সোপানের অনস্তিত্বের মুলসুত্র জেনে যাই আর পাচবছর পর পর কিছু চোরদের হাতে পর্যায়ক্রমিকভাবে ভাবে সিদকাঠি তুলে দেই। আমরা মানবতাবাদী এবং গণতান্ত্রিক তাই সকল চোরকে সমান সুযোগ করে দিয়ে কোন গোত্রগত বৈষম্যের হাত থেকে বেচে যাই, এই আনন্দে আজমিরী দাওয়াখানার শিশ্ন মোটাতাজাকরন ওষুদ পাচ দাগের যায়গায় দশদাগ খেয়েও শুকিয়ে অনাহারী শিশ্নের পেছনেও আবিষ্কার করি ষড়যন্ত্রের গন্ধ তাই সায়মা যখন মাথা উচু করে আমাদের সামনে দিয়ে হেটে যায় আমরা ক্ষেপে উঠি এবং তার নিতম্বের আন্দোলনটা মাথায় জমা করে রাখি , অলস সময়গুলোর জন্যে কারন আমাদের হিন্দী সিরিয়াল দেখা শোপীসের মত স্ত্রীদের জিভে রোচে না, বা তাদের স্থুল দেহের সাথে ফাউ আসা অসীম ধারার চাহিদা গুলো আমাদের শুকিয়ে ফেলে। আমরা আবার আজমিরী দাওয়াখানায় ছুটে যাই কিন্তু মোটাতাজাকরন হয় না আর সায়মা দিনে দিনে সুন্দর হতে থাকে একক বৃক্ষের মত চারপাশকে অস্বীকার করে দাড়াতে থাকে , সেই উত্তাপ আর
সাহসের নীচে আমরা অনুভব করি আমাদের শিশ্ন শুকিয়ে গেছে।

সায়মাকে প্রথম আমরা কবে দেখেছিলাম আমাদের মনে নেই। কিন্তু তারপরও এই তথ্যের অভাবে আমরা কষ্ট পাই। সায়মা একটি ছেলেকে ভালোবাসত যেই ছেলেটি সবাই ভালো বলত। এই ভালো ছেলেটি সায়মাকে নানাভাবে ধোকা দিয়ে যখন উধাও হয়ে গেল সেদিন সবাই ভেবেছিল সায়মা হয়ত তার কুমারীত্ব হারানোর শোকে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলে পরবে আর পাড়ার সব শুভানুধ্যায়ীরা সুযোগ পাবে মানবিক আহা উহু করার, স্কুলের ছেলেমেয়েরা সুযোগ পাবে মানববন্ধনের মাধ্যমে পত্রিকার শেষপাতায় দৃশ্যমান হয়ে যাবার, হয়ত সেই ছবিতেই একটি সুন্দর মেয়ে অথবা মেয়েলি ছেলে চোখে পরে যাবে কোন তরুন বিজ্ঞাপন নির্মাতার আর কিছুদিন পরে যখন সায়মার লাশ ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হবে তখন দেখা যাবে টাইগার এনার্জি ড্রিংকের পাশে আটোসাঁটো কাপড়ে স্তন প্রদর্শনী। এলাকার নারীবাদীরা তাদের কাজের মেয়েদের খুন্তির ছ্যাকা দেবার অবশরে একদিন আসবে টকশো তে এবং সে উপলক্ষে তাদের যেতে হবে পারসোনা বা ফারজানা শাকিলের কাছে। এই সকল আশা প্রত্যাশার মাঝে জল ঢেলে দিয়ে যখন সায়মা আরো সাহসী সূর্যকন্যার মত সবার সামনে ঘুরে বেড়াতে লাগল, ঢোলা শার্টে আর মলিন জিন্সে নিজেকে ঢেকে সবার মাঝখান দিয়ে হেটে বেড়িয়ে আমাদের মনে করিয়ে দিতে লাগল আমাদের শিশ্ন মোটাতাজাকরন প্রকল্প সরকারী অসংখ্য উন্নয়ন বাজেটের মত মুখ থুবড়ে পরেছে তখন আমরা খেপে গেলাম। নারীবাদীরা আবার খুন্তি নিয়ে কাজের মেয়েদের অবশিষ্ট ছ্যাকাবিহীন ত্বক শ্বাপদের মত খুজে বেড়াতে লাগল, পারসোনা বা ফারজানা শাকিলরা ক্ষেপে গিয়ে মিডিয়ায় বয়ান করতে লাগল কিভাবে আরও পণ্যায়িত হওয়া যায়। এমনকি ভবিষ্যতে টাইগার ড্রিংকের মডেলরাও সায়মার প্রতি যারপরনাই ক্ষেপে গেল। পাড়ার মোল্লারা তাদের অবদমিত চেহারা নিয়ে হঠাৎ পাড়ায় এইরকম বেলেল্লাপনার বিরুদ্ধে ওয়াজ করতে লাগলেন এবং রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে হাই স্কুলের শিক্ষকরা সেই ওয়াজে দেখা দিতে লাগল, সেইসাথে আদিরসাত্নক ধর্মীয় কথাগুলোর ঘষায় প্রতিদিন ফিরে আসতে লাগল তাদের হিন্দী সিরিয়াল দেখা স্থুল স্ত্রীদের কাছে যাদের শরীরের আগুন ঘটা করেই সমাজ অনেক আগে নিভিয়ে দিয়েছে। কাজের মেয়েদের শরীরে তখন খুন্তির সাথে সাথে মোটাতাজাকরন প্রকল্পে ব্যর্থ শিশ্নের অত্যাচার শুরু হল এবং সামাজিক বিজ্ঞানের সিনিয়র শিক্ষক লতিফুল কাদেরের বাসার মেয়েটি একদিন হারিয়ে গেল, যদিও ভোররাতে কিছু মুসল্লী দেখেছিল এম্বুল্যান্সের বাতি এবং শুনেছিল নরম কন্ঠের চিৎকার কিন্তু যেহেতু আল্লাহ দেবেন পরকালে সুতরাং তারা মাথা ঘামায়নি সে ব্যাপারে।

এর মাঝে একদিন যখন সায়মা আবার একটি ছেলের সাথে ফুচকা খাওয়া শুরু করল তখন আমরা আবার আশাবাদী হলাম আমাদের প্রকল্পের ব্যাপারে। তবে সেই প্রকল্প বেশীদুর এগোনোর আগেই আমরা আমাদের আজমিরী ওষুদের শিশিগুলো একদিন নর্দমায় ফেলে দিলাম।

সায়মা যদিও উন্নতির সিড়ি দেখতে পায়নি অথবা দেখতে চায়নি , কিন্তু তার মন বিভিন্নভাবে ধাক্কা খেত এবং প্রতিটা ধাক্কায় সে শিখে নিত কিছু। মানুষ পরিচয় অর্জন করা কঠিন বলেই হয়ত সে একদিন মেয়ে হয়ে যেতে চেয়েছিল আর একটি ছেলেকে ভালোবেসে দিয়েছিল তার শরীরের ফুল। তারপরও যখন তার ছোটবেলার কথা মনে পরত, বুড়োবয়সে তার বাবার দ্বিতীয় বিয়ের পর তার মায়ের কান্না এবং সকলের কাছে কেন এই বিয়ে করাটা জায়েজ এই বর্ণনা শুনত তখন তার খটকা লাগত বিভিন্ন বই এ পড়া মানুষের সংজ্ঞা সম্পর্কে। কিন্তু সায়মা তারপরও কামিজে তার নরম শরীর ঢেকে প্রথায় জড়াতে চাইত। কিন্তু তার বিশ্বাস সমূহ ভেঙে পড়ায় সে সুখ পেয়েছিল, অবাক হয়েছিল এই সুখে এবং মানুষ হতে চেয়েছিল তারপর থেকে।

আমরা যেদিন আমাদের শিশিগুলো নর্দমায় ফেলে দিতে চেয়েছিলাম সেদিন মকবুল পাটোয়ারীকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ ইত্যাদি ঝামেলায় পুরো পাড়ায় গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করেছিল। দুপুরবেলা সায়মা মুদীর দোকানে হেটে যেতে দেখে আমরা স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। সে শান্ত ভঙ্গীতে কেনাকাটা করে জালের ব্যাগ দোলাতে দোলাতে হেটে গেল এবং আমাদের মনে থাকল না তার নিতম্বের স্পন্দন রেকর্ড করতে। আমরা সেদিন অনুধাবন করলাম আজমেরী দাওয়াখানার শিশিগুলো কত অকার্যকর এবং আমাদের শিশ্ন কতটা অসুস্থ। আমরা হঠাৎ মকবুল পাটোয়ারীর প্রতি হিংসা বোধ করলাম কারন তার আর শিশ্ন নিয়ে কষ্ট পেতে হবে না।


মহল্লার যে নির্জন কোনে সায়মা একটা ছোট বাসা নিয়ে থাকে তার পাশের আমগাছের নিচে একটি সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল রোগাটে অসুস্থ শিশ্ন পরে থাকল সারাদিন ধরে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৩:৪৬
১২টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×