নামঃ হাবিবুর রহমান
বয়সঃ ২২
পিতার নামঃ সাইদুর রহমান
গ্রামঃ সতের রশিয়া
ইউনিয়নঃ দুর্লভপুর
উপজেলাঃ শিবগঞ্জ
জেলাঃচাঁপাইনবাবগঞ্জ
বিভাগঃ রাজশাহী
দেশঃ ............
একটা দেশের অন্যতম দায়িত্ব যদি হয় তার নাগরিকের জান-মাল-ইজ্জত এর নিরাপত্তা বিধান,তবে আপ্নারাই বলুন আমার দেশ কোনটি?
আমার নাম হাবিবুর রহমান। পেশায় রাখাল।গরু ছাগল নিয়েই যত কারবার।গরু ছাগল চরাইতে চরাইতে কখন যে নিজেই গরু ছাগল হয়ে গেছি বুঝিনি। সত্যি বুঝিনি । তাতে কী, দাদারা তো বুঝেছেন। আমাদের বুঝানোর জন্য তো তারা রয়েছেন ।তাইতো, বিএসএফ এর দাদারা আমাকে বুঝিয়ে দিলেন- তারা মানুষ আর আমরা গরু ছাগল।
কী দোষ ছিল আমার? গরু পাচার ? দাদাদের দেশের গরু নিয়ে যাচ্ছিলাম পাচার করে,এই আমার অপরাধ। আর দাদারা যে আমাদের টাকা-পয়সা,পানি ,এমনকি হাজারো স্বার্থ-প্রশ্ন-হানাহানি আর ক্লীবতায় জর্জরিত সবেধন নীলমণি স্বাধীনতা টাও পারলে বাগিয়ে নেন ,তখন ? ?
আপনারা কী দেখেছেন ভিডিওটি?খেয়াল করলে দেখবেন- এক দাদা আমার হাতটা বাধার সময় ক্যামেরার দিকে মুখ করে হেসে ফ্যালেন, সে হাসি গর্বের,সে হাসি দূর্বলের উপর নির্যাতনের পাশবিক তৃপ্তির।সেই হাসিতে আমি খুজে পাই তাচ্ছিল্যের উপহাস। সেই হাসি আমায় মনে করিয়ে দেয়-কতটা নপুংশক জন্ম আমার,কিছু করার ক্ষমতা হীন আমি। নিরুপায় আমি, পা ধরে ক্ষমা চাইলাম। রক্ষে নেই তাতেও।
“ শালে মুসাল্মান কী আওলাদ-আজ তুঝে দিখাতাহু”-আরও কী কী জানি বলে আমার হাত পা বাধা শুরু করলেন দাদারা। দুর্ভাগ্য আমার- নুন আনতে পান্তা ফুরায়,ঘরে হিন্দি চ্যানেল চালানোর সামর্থ্য নেই,তাই হিন্দীতে বলতে পারিনা – “আমারে ছাইড়া দ্যান,আপ্নাদের পায়ে পড়ি।” কিন্তু মানুষ তো তারা, মানবতা তো বুঝে, এই ভেবে অনুনয় বিনয় করতে থাকি।কিসের কী? আচমকা ঠেলা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় আমাকে। আমি মুখ থুবড়ে পরে যাই। বাধতে থাকে আমার হাত পা। আমার মনে হয় ১,৪৮,৩৯৩ বুর্গ মাইলের আমার শরীর আস্টে-পৃষ্ঠে বেধে ফেলা হচ্ছে। পাড়িয়ে ধরে আমার বুকে। নয়া দিল্লী থেকে কলকাতার ভর আমার উপর এসে পড়ে।বুটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয় আমার বুক, যেই বুকে আজ শুধু দুবেলা দুমুঠো ভাতের নিশ্চয়তার আশা বাদে আর কিছুই নেই। কে যেন আমার লুঙ্গিটি ও খুএলে নেয়। লজ্জা-ঘৃনায় কুকড়ে যাই আমি। বাঁশের সাথে বেধে মধ্যযুগীয় কায়দায় যেভাবে আমাকে পেটানো হয়,তাতে আমি ভুলে যাই, আমি কী গরে ছাগলের রাখাল ,নাকী গরু ছাগল, নাকী তার থেকেও অধম?
মার খেতে থাকি আমি, দাতেদাত চেপে আর পারিনা।কেউ কী আমায় বাচাবে নাহ, বাচাতে পারবে নাহ? অশহায়ের মত চিৎকার করি-“জয় বাংলা” ।কেউ আসেনা, আমি আবার বলি –“বাংলাদেশ জিন্দাবাদ”। কেউ আসেনা। আমার জয় বাংলা আর বাংলাদেশ জিন্দাবাদের প্রতিধ্বনি হাহাকারের মত শোনায়। দাদাদের উল্লাসে ঢাকা পড়ে যায় তা। এবার একজন চড়ে বসে আমার উলংগ দেহে । পায়ের পাতা উচু করে ধরে।এরপর কিছু বুঝে উঠার আগেই অসহ্য তীক্ষ্ণ একটা ব্যাথা ছড়িয়ে পড়ে আমার সারা দেহে,শিরায়,উপশিরায়...।দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। দেশপ্রেম,হিন্দী চ্যানেলের নাচগান,তিস্তা-তিতাসের পানি,বিপিএল এর নিলাম, পাশের বাড়ির সুফিয়ার মায়াবতী মুখ সবই অর্থহীন মনে হয়............জ্ঞান হারাই আমি।
লোকে বলে বটগাছের আশেপাশে নাকি ছোট গাছপালা জন্মে নাহ । তেমনি ভারত মাতা তো বটবৃক্ষের মতন ই আমাদের মাথার উপর মহীরুহ হয়ে আছেন, কখনো বেড়ে উঠতে দেননি।সেই ১৯৭১ এর ঋণ আজো হাজারো ফেলানীর রক্ত দিয়ে শোধ করে যাচ্ছি। কিন্তু আর কত? বাংলাদেশ এর দেশমাতা, আপনি যখন প্রধানমন্ত্রী হবার শপথ নিয়েছেলেন,আমি জানিনা তাতে কী লেখা থাকে। তবে এই দেশ এর একজন নাগরিক হিসাবে (হোক না যতই ক্ষুদ্র আমার পরিচয়) আপদে বিপদে মাতার মতোই আপনি আমাদের আগলে রাখবেন এটাই আমাদের কাম্য।আজ আপনার সন্তানের উপ্র যারা এভাবে ঝাপিয়ে পড়ে,তারা কাল যে আপনার উপর উঠবে না তার নিশ্চয়তা কী? যে হাত আপনার সন্তানের লুঙ্গী ধরে টান দেয়,সেই হাত যে কাল বাংলা মায়ের আচল ধরে টান দেবেনা,সেই আশ্বাস কী বিশ্বাসযোগ্য ? আর যদি এমন কিছু হয়েই যায়, তবে মহাকাল আপনাকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না। আপনি নিজেও কী পারবেন, সেদিন নিজেকে ক্ষমা করতে?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




