বুয়েট- একটি আজন্ম লালিত স্বপ্ন,একগাদা দুঃসহ যন্ত্রনা-নির্ঘুম রাত,জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় অতপর কিছু রূঢ় সত্যের মুখোমুখি হওয়া। এইতো- বুয়েট জীবন,বুয়েটিয়ান জীবন। যাই হোক, আমি যখন এখানে আরামসে কী-বোর্ডে ঠুক-ঠাক করে বুয়েট জীবনের সালতামামি করছি,তখন সারা দেশের হাজারো মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা রাতের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে এই বুয়েট এ ঢোকার জন্য।
নিজের পরিচিত বন্ধু-বান্ধব,কোচিংগুলোয় ক্লাস নেয়া আর নিজে স্টুডেন্ট পড়ানোর থেকে বলছি- শুধুমাত্র Proper Guideline আর Strategy এর অভাবে বহু প্রতিভাবান ও যোগ্য পরীক্ষার্থী তাদের আশানুরূপ ফল পায় নাহ। তো, তাদের জন্য আমার অভিজ্ঞতার কিছু টা তুলে ধরবো এই সিরিজ টা তে।
সর্বাগ্রে যে কথাটি না বললেই নয় সেটা হলো- এই সিরিজের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু কারো জ্ঞানের ভিত্তি গড়ে দেওয়া না, বরং যেটুকু সময় হাতে আছে,সেইটুকু কাজে লাগিয়ে তুমি এইচ.এস.সি তে যা শিখেছো,সেটাকেই একটু দরকার মতো ঘষামাজা করে নেয়া।এটা করতে গিয়ে যে সব জিনিস না জানলেই নয় সেগুলো বলার চেষ্টা করবো, আবার মাঝে মাঝে ফাকিবাজ স্যারের মতো বলে দিব-“ এগুলো পরীক্ষায় আসবে নাহ । ” ওহ,আরেকটা কথা- আমি নিজে যে বুয়েট অ্যাডমিশন এক্সপার্ট,তা নয় আবার আমি যা বলবো তাও যে অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাবে তাও নাহ, তবে সাধারণভাবে ফরম্যাট টা ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করবো।
এই সিরিজটায় আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু টপিক কভার করবো, যেগুলো থেকে প্রতি বছর ই বুয়েট পরীক্ষায় প্রশ্ন হয়।বাকীগুলো তোমরা নিজ দায়িত্বে পড়ে নেবে আশা করি। একটা কথা মনে রেখ-“ সম্পূর্ণ পাঠ্যবই যার আয়ত্তে তার জন্য বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা তেমন কঠিন কিছু নাহ।আগে চাই পাঠ্য বই এর অনুধাবন ও অনুশীলন । তারপর হায়ার লেভেল এর প্রশ্ন সল্ভ করা।”
কে জানি বলে গিয়েছিলেন যে- “নিজেকে জানো” –কথাটা কিন্তু অনেক ভারী একটা কথা। নিজেকে জানা বলতে শুধু নিজের দূর্বলতাটাই জানা না, বরং নিজের শক্তিমত্তা সম্পর্কে জানা এবং সেটার সর্বোত্তম ব্যবহার করাকে বোঝায়। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা যতটা তোমারা জ্ঞানের পরীক্ষা নিবে ঠিক ততোটাই পরীক্ষা নিবে তোমার ধৈর্য্য আর উপস্থিত বুদ্ধির। আমি নিজে অনেক মাঝারী মেধার ছাত্র ছাত্রী কে পড়িয়েছি যারা শুধু মাত্র অধ্যবসায় আর স্ট্র্যা টেজীর জোরে বুয়েট এ জায়গা করে নিয়েছে। শুধু book smart হলেই চলবে নাহ street smart ও হতে হবে।
তো, প্রস্তুতির প্রথম ধাপেই নিজেকে যাচাই করে নেওয়া যাক। সাধারণ ভাবে পরীক্ষার্থীদেরকে নিচের কয়েকটি ক্যাটাগরী তে ভাগ করে ফেললে মন্দ হয় না-
প্রথম ক্যাটাগরীঃ
তোমার যদি মনে হয় তুমি বোর্ডের পাঠ্যবই গুলো সব বুঝে বুঝে পড়েছ ও অনুশীলন করেছ,তবে তুমি এই ক্যাটাগরীতে পড়। সেক্ষেত্রে তোমার করণীয় টা হল-এতদিন যেটা পড়েছ,সেগুলো আরেকটু ঝালাই করে ফেলা। এর পাশাপাশি- যেখানেই কোচিং কর না কেন, কোচিং এর লেকচার সিট এর সমস্যাগুলি সমাধান করার চেষ্টা করবে ।সব যে পারবে তাও নাহ, আবার কিছুই যে পারবে নাহ তাও নাহ। তবে নতুন রকমের কিছু কন্সেপ্ট পাবে,যেগুলো আসলে তোমার এতদিন জেনে আশা সূত্র বা নিয়মগুলোর ই একটু মডিফাইড ভার্শন। এগুলোর প্রয়োগ ধরে ফেলতে পারলে দেখবে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছ। সর্বোপরি মনে রেখ যে- তুমি যেই অবস্থান এ আছে,সেখান থেকে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় একটি ভালো রেজাল্ট করাটা অনেকাংশেই সোজা।কিন্তু , যদি ঠিক মত গুরুত্ব সহকারে এই সময়টা কাজে না লাগাও তাহলে কিন্তু আশানুরূপ ফলাফল থেকে বিচ্যুত হওয়াটাও খুবই সম্ভব। সুতরাং, যেই কষ্টটুকু করেছ এইচএসসি তে সেটা আর ৩ টা মাস ধরে রাখ। ইনশাআল্লাহ, সাফল্য আসবেই ।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরীঃ
এই ক্যাটাগরী তেই সবচাইতে বেশী ছাত্র ছাত্রী থাকে। যদি পাঠ্যবই গুলো সম্পর্কে মোটামোটি ধারনা থাকে এবং বোর্ড এ আসা ম্যাথ গুলোর পাশাপাশি আরো কিছু অল্প বিস্তর পড়াশোনা করে থাক, তবে তুমি এই ক্যাটাগরীতে পড়বে। প্রথম ক্যাটাগরীতে নাই বলে যেন আবার মন খারাপ করে বসো নাহ। বুয়েট এ প্রত্যেক বছর প্রায় ১০০০ ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হয় এবং তার সিংহভাগ ই আসে এই ক্যাটাগরী থেকে। তোমাদের যা দরকার সেইটা হল পাঠ্য বই এর যেই অধ্যায়গুলো এখনো পড়ো নি, সেগুলো আগে পড়ে ফেল।এই ব্যাপারে বিগত বছরের বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন গুলো দেখলেই বুঝতে পারবে- কোন কোন অধ্যায় এ কীরকম জোর দিবে।মনে রাখবে, কোচিং ে যাও আর নাই যাও, পাঠ্যবই গুলাই তোমার মূল হাতিয়ার। কোচিং এ গাইড,লেকচার সীট এর ভীড়ে কিন্তু প্রায়ই পাঠ্য বই গুলো হারিয়ে যায়,সুতরাং কিয়াল কৈরা
একটা খুব বিখ্যাত উদাহরণ দিই, বুয়েট পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যার একটা প্রশ্ন ছিল অনেকটা এমন- “ছয় পা ওয়ালা একটি পিপড়ার ভর ১কেজি (শুধুই উদাহরণ দিলাম,এক কেজি ভরের পিপড়া কেমন হবে কল্পনা কর একবার,ভয় পাবে । )। তার পায়েরপাতার ব্যাসার্ধ ১সেমি। পিপড়াটি যদি পানির উপর দিয়ে হেটে যেতে পারে,তাহলে পানির পৃষ্টটান কত? ”
প্রথম দেখায় যদি ভয় পেয়ে থাক,তাহ্লে আবার খেয়াল করতো। পৃষ্টটানের সুত্র টা কি ছিল? T=Force/Length. এখানে, force টা হল পিপড়ার ওজন আর length =পানির পৃষ্ঠের সাথে সংস্পর্শে থাকা অংশের দৈর্ঘ= 6x প্রতি পায়ের পরিধি। এবার এই ডেটাগুলো সুত্রে বসিয়ে দিলেই দেখবে হয়ে যাবে।
ব্যাপারটা আসলে এরকম ই ।প্রশ্ন করার সময় স্যার রা তোমাদের অজানা কিছুই দিবেন না পারতপক্ষে, শুধু তোমাদের কমফোর্ট জোন এর বাইরে নিয়ে গিয়ে তোমাদের জ্ঞানের একটু পরীক্ষা নেবেন। জ্ঞানটা তোমাদের ভালোমতই আছে,যেটার দরকার সেটা হল কিছু গাইড-লাইন আর একটু বুদ্ধি খাটানো। তাহলে দেখবে,তুমিও জায়গা করে নিতে পারবে বুয়েট এর সেরাদের কাতারে।
তৃতীয় ক্যাটাগরীঃ
এই ক্যাটাগরীতে তারাই পড়বে যারা শুধুমাত্র স্যারদের দাগানো আর বোর্ড এ আসা সমস্যাগুলো না বুঝেই বা কাজ চালানোর মত বুঝেই এইচএসসি তে এ+ বাগিয়ে বসেছ। এভাবে বলার জন্য রাগ করো নাহ, তোমাদের মেধার কোন কমতি আছে বলে আমি মনে করি নাহ,বরং এই ক্যাটাগরীতে অনেক উরাধুরা রকমের ব্রিলিয়ান্ট ছেলে-মেয়ে ও আমি দেখেছি। সুতরাং, মন খারাপ করার কিছুই নেই,ভয় পাওয়ার ও কিছুই নেই।অন্য দুই ক্যাটাগরী এর সাথে তোমার মেধাগত বা গুনগত কোন পার্থক্যই নেই,পার্থক্য টা হল ওদের থেকে তোমাকে বেশী খাটতে হবে। বুয়েট একটা আসামান্য জায়গা, শুধু মাত্র এই একটা ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট তোমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বললে কম বলা হবে,মোড় ঘুরিয়ে দেবে বলাটাই যৌক্তিক। তাই,এই কথাটা মাথায় রেখে, নিজেকে আরেকটু পুশ করো,হয়ে যাবে।
এই তিন ক্যাটাগরীর বাইরে যারা আছ তারা সম্ভবত বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবা নাহ।তবে তাই বলে হাল ছেড়ে দেবার কিছুই নেই,কারণ বুয়েট ই জীবনের শেষ নাহ। তবে অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির জন্য ও উপ্রোক্ত কথাগুলি সত্য,আর মেইন ফোকাস কিন্তু সেই পাঠ্যবই,পাঠ্যবই এবং পাঠ্যবই ।
এই তো গেলো,নিজেকে জানার প্রক্রিয়া। কোচিং এর কথা বলি কিছু। উদ্ভাস,সানরাইজ,ওমেকা-মেইনলি এই তিন্টাই কোচিং সেন্টার। মানের বিচারে না যেয়েই বলা যায় যে কম বেশী সবগুলোই এক ই।এখানকার যেই ভাইয়ারা ক্লাস নেন,তারাও সবাই সমান কোয়ালিফাইড। তবে,উদ্ভাস এর লেকচার শীট গুলোর মেক-আপ,গেট-আপ আর লেখার ধরণ টা আমার কাছে বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে,অনেক্টা গল্পের ভঙ্গিমায় লেখা। তবে মেইন কন্টেন্ট সবগুলার ই একই। আরেকটা কথা-কোচিং এ ক্লাস নিয়মিত করো আর না করো, সপ্তাহ শেষে যে পরীক্ষা টা হয় সেটা সবাই ভালোমত দিও।কারণ, ভর্তি পরীক্ষা তে ভালো করতে অনুশীলনের পাশাপাশি, মডেল টেস্ট গুলো দেওয়া দরকার বলেই মনে করি।
এবার, কিছু আলোচনা করি,যেই কথা গুলো তোমাকে অনেকেই বলবে নাহ বা বল্লেও তুমি গুরুত্ব দেবে নাহ। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় মূলত ৩ টি বিষয় থাকে- পদার্থ,রসায়ন ,গনিত (৩X১৮০=৫৪০)
আর ইংরেজী(৬০)।মোট ৬০০। কোচিং ে ,বড় ভাইয়াদের কাছে কী শুনবা জানি নাহ, তবে হাড়ির খবর বলে দেই,সেটা হল মোটামোটি ৩২০-৩২৫ মার্ক এর উপ্রে পেলে তুমি টিকে যাবার কথা।আমি নিজে,৪৫০ এর আশে পাশে পেয়ে প্রথম ১৫০ জনের মধ্যে ছিলাম। এটা ঠিক যে, এই সংখ্যাগুলো ব্যাচ থেকে ব্যাচ এ ভিন্ন হয় ,তবে গড়ে এরকম ই হবে। কিন্তু,তাই বলে এই ভেবে পড়তে বসো না যে,৬০০ মার্ক,৩০০ হলেই তো চান্স পেয়ে যাব, কারণ সিস্টেম লস আছে। তুমি ৩০০ এর টার্গেট নিয়ে যদি প্রস্তুতি নাও, দেখা যাবে পরীক্ষায় পেয়ে বস্লা ২৫০,তখন। আর ,৬০০ মার্কের মধ্যে ৩২৫ মানে ৫৪%, এর থকেও কম পেয়ে বুয়েট এর মত জায়গায় চান্স পাওয়ার আশা করাটা বাতুলতা বলেই মনে করি।
তো এই ৬০০ মার্কের মধ্যে অর্ধেক থাকে এমসিকিউ, বাকীটা লিখিত । ২০০৯ সাল থেকে এমসিকিউ ১২০ করে দেওয়া হয়েছে যা কিনা ২০০৮ সালে আমাদের সময় ৬০ টা ছিল। প্রতি ভুল উত্তরের জন্য ২৫% করে মার্ক কাটা হয়। তো, আমার অভিজ্ঞতা বলে যে, যে এমসিকিউ তে যত ভালো করবা তার চান্স পাবার সম্ভাবনা ততটাই বাড়বে।তাই, এমসিকিউ তে জোর দাও।এখানে মার্ক তোলাটা সহজ এই অর্থে যে,তুমি একটু সময় দিলেই মার্ক টা শিওর করতে পারো।তবে,মনে রেখ যে-১২০ টা করা সম্ভব নাহ, কেউ করতে পারবেও নাহ। তুমি নিজের টার্গেট নিজে ঠিক করো।সেই অনুযায়ী আগাও।এমসিকিউ গুলো যতো পারো অনুশীলন করো,পারলে মেডিক্যাল,ঢাকা ভার্সিটির ভর্তি গাইড থেকেও সল্ভ করো,যতো করবে ততো ভালো। লেকচার শীটের এমসিকিউ গুলোও ব্যাখ্যা সহ দেখ,কেননা এই ধরনের প্রশ্ন ই হবে। এমসিকিউ তে একটা trick বলে দেই, সেটা হল- “ বই এর বিশেষ করে গণিত আর পদার্থবিদ্যার এমন কিছু ম্যাথ আছে যা বোর্ড এ প্রতি বছর ই আসে, এইগুলোর উত্তর একটু খেয়াল করে করো,কারণ সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে উদাহরণ আর বোর্ড এ বারবার আসা এই ম্যাথ গুলাই এমসিকিউ তে আসছে।সুত্রাং,যদি অপশন গুলো দেখেই তুমি মনে করতে পারো উত্তর কোনটা তো তোমার অনেক সময় বাঁচবে। আমি বলছি না মুখস্ত করতে,বলছি অনুশীলনের সময় খেয়াল করতে। আমার জন্য এটা কাজে দিয়েছিল,হয়ত তোমাদের ও দিবে।
এবার আসি, বিষয় ভিত্তিক কিছু আলোচনায়। যে ৪টি বিষয়ে পরীক্ষা হবে,তার মধ্যে ইংরেজী নিয়ে কিছুই বলার নেই। এটাতে ভালো করাটা সোজা,কারণ গ্রামার এর টেকনিকাল টার্মগুলো সরাসরি ব্যবহার করতে হয় নাহ,তবে যেটা দরকার সেটা হল ইংরেজীর বুঝ টা থাকা,যেটা আজকাল কার ইংরেজী সিরিয়াল-মুভী দেখা,সারা রাত গেম খেলা প্রজন্মের আছে বলেই আমার বিশ্বাস।আর যদি নাও থাকে, একটু সময় দিলেই এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।অনেকেই ভেবে বসে-ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বো,ইংরেজী পড়ে কী হবে, এর থেকে পদার্থ,রসায়ন পড়ি।কিন্তু,এখানে অনেক সহজেই মার্ক তুলে অনেক খানি এগিয়ে যাওয়া যায়।
আমাকে প্রায়ই একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়-“ ভাইয়া, পদার্থ,রসায়ন,গণিত,কোনটা বেশী পড়বো?কোন টা বেশী দরকারী? ” । তো,আমার ব্যাক্তিগত মতামত হচ্ছে, রসায়ন। এই জিনিসটা ভালো মত,ইনফ্যাক্ট বেশী ভালোমত যদি পারো,তাহলে তুমি বাকীদের থেকে একটু হলেও এগিয়ে থাকবে। গণিত আর পদার্থ যারা ভালো পারো তারা তেড়ে আসার আগেই একটু ভেঙ্গে বলি। এমসিকিউ তে,গণিত আর পদার্থ তে কিন্তু সব গানিতিক সমস্যাবলী ই দেয়া হয়।ফলে,পুরা ম্যাথ টা করে তোমাকে উত্তর টা দাগাতে হয়। রসায়ন প্রথম পত্রের থেকে ম্যাথ আসলেও, দ্বিতীয় পত্র এমন কী প্রথম পত্র থেকে বাকী সব এমসিকিউ হলো সরাসরি উত্তর দেবার মতো,যেমন – “অমুক যৌগের সংকেত কী? তমুক যৌগের সাথে পানির বিক্রিয়ায় উৎপাদ কী? ” । বুঝতেই পারছো, এগুলো যদি পারো তবে সাথে সাথেই উত্তর করতে পারবে, কোনো ক্যাল্কুলেসন এর দরকার নেই। তার উপর, রসায়ন লিখিত যেই পার্ট টা আছে,সেখানেও খুব ঘুরিয়ে-পেচিয়ে প্রশ্ন হয় না,সম্পূর্ন বই যদি ধারণা থাকে, ঠিক ই পারবে। দ্বিতীয় পত্র থেকে,সেই নাম-ওয়ালা বিক্রিয়া গুলো,সেই প্রোটিন,বেঞ্জিন এর জাতক এর বিত্রিয়া গুলোই ঘুরে ফিরে নানা রূপে আসে। অতেব,আমি বলবো রসায়ন এ গুরুত্ব বেশী দাও।
“ভাইয়া, আমার রসায়ন কঠিন লাগে / ভাইয়া আমি গণিত ভালো পারি, আমার কী হবে?” লেখার শুরুতেই বলেছিলাম তোমার শক্তিমত্তাকে কাজে লাগানোটাই সবচাইতে বড় স্ট্র্যাটেজী। পদার্থ তে আসা সমস্যাগুলো গড়ে সবাই ৯ টার মধ্যে ৬-৭টা পারে।অর্থাৎ ,খুব একটা ডিফারেন্স হয়না। সুতরাং,তুমি যদি মনে কর রসায়ন এ তুমি দূর্বল,তাহলে গণিত টা খুব ভালো করে করো,তাই বলে রসায়ন আর পদার্থ কে ভুলে যেও না, অগুলো ও মোটামোটি ভাবে প্রিপারেশন নাও যাতে ৯ টার মধ্যে কম্পক্ষে৪-৫ টা উত্তর করতে পারো।
মোট কথা, রসায়ন/গণিতের যেকোন একটি আর ইংরেজী তে জোর টা অনেক বেশী দাও, আর বাকী দুইটা স্বাভাবিক ভাবে পড়তে থাক।দেখবে,টোটাল মার্ক বাড়বে।আর,লিখিত পরীক্ষায় কী পরিমান পার্শিয়াল মার্কিং হয় চিন্তাও করতে পারবে নাহ। বুঝতেই পারছো,যতটুকু পারো,সুত্র,ব্যাখ্যা লিখে দিয়ে আসবে,কারণ মাইনাস মার্কিং তো নেই। তাই বলে গনিতের সমস্যায় পার্শিয়ালের জন্য রসায়নের বিক্রিয়া লিখে দিয়ে এস নাহ (হ্যা, এমন ঘটনাও ঘটতে দেখেছি
কাজ কথা আর না বলি,অনেক হল। যদি এই সিরিজটা কারো একটু ও কাজে আসে তবে মনে করবো বুয়েট থেকে আমার যে অর্জন তা কিছুটা হলেও সার্থক।আর যারা পড়ছেন- আপ্নারা যদি মনে করেন এই লেখা গুলো কারো বিন্দু মাত্র কাজে আসবে,তো প্লিজ শেয়ার করুন,সবাই কে জানিয়ে দিন।শুধু যারা পরীক্ষা দিবে তাদের ই নাহ, যারা এরকম আরো অনেক টিপ্স,টিউটোরিয়াল লিখতে চান তাদেরো উৎসাহিত করুন।সবাই ভালো থাকবেন।
ডিস্ক্লেইমারঃ
আমার আগের পোস্টগুলা ঘাটলেই দেখবেন,কুসুম কুসুম বিরহের প্রেম ছাড়া আমি কিছুই পারি নাহ, এই প্রথম স্বাভাবিক একটা জিনিস নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি,তাই ভাষাগত ত্রুটি আর মাঝে মাঝেই বেখাপ্পা ইংরেজীর ব্যবহার মার্জনীয়। কন্টেন্ট এর যেকোন ভুল ধরিয়ে দিলে খুশি হব। আর, বুয়েট এর ভর্তি রিলেটেড
প্রশ্ন থাকলে মন্তব্য করবেন, যতখানি পারি চেষ্টা করবো।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




