“ধুস শালা, আইজকা খাওয়া ই হইব না, ফকিন্নি আগে কইবি না ঘরে চাউল নাই??”
-একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘর থেকে বের হয় আজহার মিঞা। হয়ত সে বাইরে খেয়ে নিতে পারবে কোথাও, তবু সামান্য রিকশাওয়ালার মা মরা মেয়ে এর উপর এরকম রাগ করা নিত্ত দিনের ঘটনা। রাগের অতিসজ্জে ই কিনা, প্রায় চাকার নিচে পরতে যাওয়া কুকুর টির দিকেও নজর পরে না। যেন কুকুরটিকে তার নিজের জীবনই মনে হয়, চাকাটি যেন দারিদ্রের যাতাকল, তাকে ও তো পিষেই মারতে চায়।
কুকুরটি যখন নিজের জীবনটি বাঁচিয়ে ফিরছিল, তখন গুলশান এর কোন একটি বাড়ির ছতলায় চায়ের কাপে পরম আরামে চুমুক দিচ্ছিলেন শফিক মাহমুদ। দেবেন না ই বা কেন, আজ ই হয়ত তার কম্পানির সাথে মিলিওন ডলার এর ডিল সাইন করবে ক্লায়েন্ট। আনন্দে গাড়ির ড্রাইভার এর অসুস্থ অজুহাতে না আসাটিকেও ক্ষমা করে দিলেন। অফিস কাছে ই, রিকশা নিয়ে নিতে পারবেন। যাবার সময় ছেলেটি গলা জরিয়ে ধরে আদুরে স্বরে বলে, “বাবা, আজ কিন্তু খেলনা এনে দেবে ই, নাহলে আর কোন দিনও কথা বলব না তোমার সাথে।”
“অবশ্যই বাবা, আজকে এনে দেবই, আমার বাবাইটার সাথে কথা না বলে থাকব কি করে??”
কিছুদুর রিকশা নিয়ে এগুতেই আজহার মিঞা দেখতে পায় এক বড়লোক এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। দ্রুত প্যাডেল এ পা চালায় সে, দুটি টাকা বেশি যদি পাওয়া যায়, বিড়িতে ও টান দিয়ে নেয়া যাবে। কিন্তু, শফিক সাহেবের গন্তব্য যেনে কিছুটা আশাহত ই হয়। তবু, প্রথম যাত্রী কে না করে না কখোন সে।
লোকটিকে তার বেশ সুখি মনে হয়। এত সুখ বড়লোক দের ই কেন হয়, ভাবে সে। নেমে তাকে দুটি টাকা বেশিই দেয় সে।
হঠাৎ করেই তার মেয়েটার জন্য খারাপ লাগা শুরু হয়। এবং একরকম হঠাৎ করেই সে পাদানি তে লোকটার ফেলে যাওয়া মানি ব্যাগ টা দেখতে পয়। সে দ্রুত রিকশা ঘুরিয়ে ফেলে। কিছুদুর গিয়ে যত দ্রুত রিকশা ঘুরিয়েছিল, তারচেও দ্রুত থামিয়ে দেয় সে।মানি ব্যাগ খুলে দেখে। কত দিন মেয়েটা চুড়ি এনে দিতে বলে, শাকিব খানের সিনেমা দেখাতে নিয়ে যেতে বলে, কিছু ই তো করা হয় না।সে আর রিকশা না চালিয়ে বস্তির দিকে রাওনা হয়।মেয়েটা আজ বড় খুশি হবে।
ঘরে ফেরেন শফিক মাহমুদ ও, সারাদিন কাজের শেষে। কাজ তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে। তবু তিনি সুখি নন, হাজার টাকা সমেত তার মানিব্যাগ টি যে হারান গেল। ছেলেকে দেয়া প্রতিজ্ঞার কথাও তাই মনে থাকে না। প্রতিজ্ঞার প্রতি আর কোন আগ্রহও বোধ করেন না আর।
কিন্তু, মেয়েটার খুশি দেখে আজহার মিঞা ও আগ্রহ অনুভব করে সিনেমাটিতে। মেয়েটার হাতে নতুন চুড়ির শব্দ, এমনকি সিনেমার শব্দও ছাপিয়ে যেতে পারে না তার হাসির শব্দ। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে সে মেয়েটার দিকে।
ওই বড়লোকটির চেয়ে নিজেকে আর কোন অংশেই আসুখি মনে হ্য় না নিজেকে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




