আজ গোবর গনেশ এর ২০ তম জন্মদিন। তাহার পরিবার অত্র বিষয়ে কাহাকেও কিছু না জানাইলেও, কতিপয় ব্যাক্তি উহার সম্মন্ধে অবগত ছিলেন। তাহারা সূর্যিমামা উঠিবার কিছুমাত্র পরেই গনেশের সহিত সাক্ষাত করিতে আসিলেন এবং “শুভ জন্মদিন”, “শুভ জন্মদিন” কহিয়া নিমেষেই গনেশের গৃহটিকে মৎস আড়ত বানাইয়া ছারিলেন। তাহারা দিনভর মস্তি করিয়া অবশেষে নৈশকালে গনেশের প্রতি দয়াপরবশ হইয়া গৃহ ত্যাগ করিলেন। উল্লেখ্য যে, তাহারা গনেশের নিমিত্তে উপহার খরিদ করিয়া লইয়া আসিয়াছিলেন। যাহার মধ্যে কতিপয় কমিকস বই, খেলনা গাড়ি সহ গোয়েন্দা বা রহস্য জাতী্য় পুস্তক ও ছিল। পুতুল, কমিকস বই, খেলনা আকছারই পাইয়া আসিতেছে, কিন্তু সে ছোট হইতে বড় হইয়া গিয়াছে, এই ছিন্তা করিয়া কেহ তাহাকে রহস্য পুস্তক উপহার দিবে, উহা সে কস্মিনকালেও মনে ঠাঁই দেয় নাই। উহার জন্য সে ঐ অতিশয় দয়ালু বাক্তির প্রতি আকর্ষন বোধ করিল। কেননা, এই ধরনের পুস্তক সে পুনঃ পুনঃ চাহিয়াও লাভ করিতে পারে নাই।
পুস্তকসমূহ একবার, দুইবার নয়, শতবার পড়িয়াও তাহার মনে হইল, তাহারা যেন কোনক্রমেই পুরোন হইতেছে না।তদুপরি, তাহার এও মনে হইতে লাগিল যে সে যেন রহস্য পুস্তকের গোয়েন্দা চরিত্র।ইহা তাহার নিকট না হইলেও অন্য সকলের নিকট অতিশয় সন্দেহজনক হইয়া দেখা দিল। কেননা, সে যাহাই দেখে তাহার মধ্যেই রহস্য খোঁজায় মত্ত থাকে। এবং প্রায়শই তাহাকে অতি খুদ্র বিষয় লইয়া তদন্ত করিতে দেখা যায়। এই যেমন, কাজের বুয়া কাপড় ধুইবার নিমিত্তে ময়লা কাপড় ধরিয়া মৃদু টান দিলে সে চোখ রাঙ্গাইয়া বলে, “কেন মিছেই গ্রহন করিতে চাও মোর তনু ঢাকিবার দ্রব্যাদি? জবাব দাও, হে রমনী, জবাব দাও।”
নরসুন্দরের নিকট চুল ছাটিতে গেলে নাপিত মহাশয় চুল ধরিয়া অল্প বিস্তর টানাটানি করিয়া মাথা বানাইবার চেষ্টা করিলে গনেশ বলিয়া ওঠে,”কেন মোর কুন্তল ধরিয়া অহেতুক টানাহেঁচড়া? তোমার মতলব খুবই সুবিধার মনে হইতেছে না, আমিতো ইহার মধ্যে নিগূঢ় রহস্য দেখিতে পাইতেছি। আজই এর একটা মিমাংসা করিয়া ছারিব।” এরূপ আর অনেক দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়া সে যখন পূর্বের চাইতেও আর অনেক অকাল কুস্মান্ড প্রমানিত হইতে লাগিল এবং সকলেই যখন নিশ্চিত যে তাহাকে ঊনপঞ্চাশ বায়ুতে পাইয়াছে, তখন এমন ই এক ঘটনা ঘটিল যে, আচমকাই তাহার সামনে সে যে এক উদীয়মান গোয়েন্দা উহা প্রমানের এক মওকা নিজ হইতে হাজির হইল। কিন্তু, ইহাই যে গনেশের জন্য অহেতুক ঝামেলার কারন হইবে উহা তাহার মত বুদ্ধিমানের মগজে স্থান পায় নাই।
ঘটনাটা তাহলে খুলিয়া বলা যাক। শনিবার। গনেশ অন্য দিনের মতই স্থীদের সাথে খেলাধুলা করিয়া গৃহে প্রত্যাবর্তন করিল। গৃহে ঢুকিয়াই সে মস্ত ধরনের বিষম খাইল। তাহার অতিশয় প্রিয় জননী মেঝেতে অজ্ঞাত আসনে বসিয়া অজানা কাহার উদ্দেশ্য করুন সুরলহরিতে বিলাপ করিতেছে। আর দুইজন মোটাসোটা মহিলা, প্রতিবেশী হইলেও হইতে পারে, তাহাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করিতেছে। গনেশ বার দশেক চেষ্টা করিয়া আসল কারন জানিতে সক্ষম হইল। কিছুমাত্র আগে কতিপয় ষন্ডা ডাকাত তাহাদের নিবাস আক্রমন করিয়া মহামূল্যবান জিনিস ছিনাইয়া লইয়া গিয়াছে। গনেশ ডাকাতের গল্প পুস্তকে বিস্তর পড়িয়াছে।তাই, সে তাহাদের এক নজর দেখার এবং অবশ্যই রহস্যভেদ করিয়া তারকা হইয়া উঠিবার লোভ সামলাইতে পারিল না।
তৎখনাৎ সে গৃহ হইতে বাহির হইয়া গেল এবং রাজপথে জনৈক পথচারীকে দৌড়রত অবস্থায় দেখিয়া তাহাকেই ডাকাত বলিয়া ঠাওরাইল। অতঃপর সে বীরবিক্রমে পথচারীর সম্মুখে বুক চিতাইয়া দাঁড়াইয়া কহিল, “কি লইয়া যাইতেছেন্, আমার দ্রব্য আমাকে লইবার সুযোগ দিন”। গনেশের আর কিছু বলিবার ছিল, কিন্তু পথচারীটির চিৎকার “বাঁচাও, বাঁচাও, ছিনতাই করিয়া লইতেছে মোর সবকিছু” এবং শ’খানেক জনতার জোড়কদমে আগমন দেখিয়া সে আর কিছু বলিবার সাহস করিল না। বরং উল্টো দিকে ফিরিয়া দৌড় দেওয়া শুরু করিল। ফলে জনতার আর বিন্দুমাত্র সন্দেহ রইল না যে সে একজন বিশিষ্ট ছিনতাইকারি। তাহারা ছুটিয়া আসিয়া গনেশকে ধরনীর বুকে শোয়াইয়া দিল এবং কুস্তি খেলিলে অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল পাইতে পারিত, তাহা গনেশকে পাঁচ মিনিটেই জাগ্রত জনতা জানাইয়া দিল।
দুই দিন লাগিল গনেশের পুরনো সাস্থ ফিরিয়া পাইতে। এর মধ্যে কিছুই ঘটিল না, শুধু কারও মুখনিঃসৃত বানীতে রহস্য শব্দটি থাকিলে ভূত দেখিবার মাত চমকাইইয়া উঠিত এবং মাতার কোলে চরিয়া কহিত, “মাতা মোর, রক্ষা কর মোরে এই রহস্যের জাল হইতে। এরচেয়ে মোর খেলার পুতুল ঢের ভাল। কর্ন ধরিয়া কহিতেছি, যদি কনদিনও আর গোয়েন্দা হইবার দুরভিসন্ধি অবচেতন মনেও আনিয়া থাকি, আমি মোর পিতৃপ্রদত্ত নাম উল্টাইয়া রাখিব। ঈশ্বরের নামে প্রতিজ্ঞা করিলাম, হু...” এরপর গনেশ পুনরায় তাহার পাড়াত সাথীদের নিকট ফিরিয়া গেল এবং ওই জনৈক সদাশয় ব্যাক্তিকে, যিনি রহস্য পুস্তক উপহার দিয়াছিলেন, তাহাকে সে মনে মনে কত প্রকারে ভর্ৎসনা করিয়াছে তাহা পাঠককুলের নিকট প্রকাশ না করাই শ্রেয় মনে হইতেছে। এবং কিছুদিনের মধ্যেই ঐ পুস্তকসমূহ পাড়ার ডাষ্টবিনে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়িয়া থাকিতে দেখা গেল।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




