somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন সাধারন দর্শকের চোখ থেকে-১ গহীনে শব্দ

১০ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনে করুন, কোন এক fast food এর দোকানে গিয়ে বার্গার অর্ডার করলেন, কিছুক্ষন পরে মনে হল, চিকেন উইংস নেয়া যাক, ওটা গলধকরন করতে না করতে ই স্যান্ডউইচ এর ভূত মাথায় চাপল। এত কিছু একসাথে খাবার পরে, ক্ষমতা থাকলে সব ই ভাল লাগতে বাধ্য, কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই বদহজম হয়ে যায়। “গহীনে শব্দ” নামক এই পাঁচমিশালিটির ক্ষেত্রে কোনটা প্রযোজ্য, সেটা যারা দেখবেন তারাই ঠিক করে নেবেন।

স্বপ্ন (কুসুম শিকদার) এবং নিলয় (ঈমন) বিশ্ববিদ্যালয় এ একসাথে পড়ে। নিলয় ধনী, স্বপ্ন ভিখিরির মেয়ে, কিন্তু নিলয় সেটা যানে না। স্বপ্ন এর বাবা (মাসুম আজিজ) সারাদিন ভিক্ষা করেন দল নিয়ে, দিন শেষে টাকা তুলে দেন মহাজনের হাতে। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধের পরে রাজাকার তার পা কেটে দিএ যায়। নিলয় এর বাবা (আবুল হায়াত)। তার স্ত্রী (খালেদা আক্তার কল্পনা) নিলয় এর দাদু কে, যিনি কিনা এক সময় এর নামকরা ফটো জার্নালিষ্ট, চিলেকোঠার ঘরে থাকতে দেন। তার বেশির ভাগ সময়ই কাটে ছোট নাতনি কে ছবি তোলার গল্প বলে। নিলয় স্বপ্ন কে নিএ বিভিন্ন অভিজাত রেষ্টুরেন্ট এ খেতে যায়, সাতার এ পুল এ যায়। এক সময় সে স্বপ্ন কে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। স্বপ্ন বলে, “আমার জীবন এর আরো গহিনে প্রবেশ করে দেখ, এক বার আমাদের বাড়িতে এসে ঘুরে যাও, তারপর নিজে ই বুঝবে”। নিলয় স্বপ্নের বারি যায়। তারপর...

কিছুক্ষন অনুমান করুন এরপর কি হয়।

এই ছবিটি পুরপুরি মাসুম আজিজ এর, বললে খুব বারিয়ে বলা হবে না। অসাধারন অভিনয়। অবশ্য, আপনি কিছু কিছু সময় বুঝতেই পারবেন না তিনি অভিনয় করছেন। বিশেষ করে, মুক্তি্যুদ্ধের গল্প বলার সময় তার চোখ ও যেভাবে অভিনয় করল, অবশ্যই আপনার হৃদয় ছোঁবে। কুসুম শিকদার ও খারাপ করেন নি। যারা তার অভিনয় এর ভক্ত নন, এই ছবিটি দেখার পরে কিছুটা হলেও ধারনা পাল্টাতে পারে। ঈমন কে দেখে মনে হল উনি অভিনয় এর প্রানপন চেষ্টা করছেন। কিন্তু, খুব একটা সুবিধা করতে পারেন নি। কিন্তু, তার ছোট বোনের চরিত্র যে, করেছে, দারুন করেছে মেয়েটা। খুব একটা সহজ চরিত্র ছিল না, মেয়েটার দারুন অভিনয় এ সেটা মনে ই হল না। বাকিদের মধ্যে আবুল হায়াত (চমৎকার), খালেদা আক্তার কল্পনা (ভাল) মনে হল। শামস সুমন ও দারুন অভিনয় করলেন, তবে তার চরিত্রটির কোন প্রয়োজন ই ছিলনা।

খালিদ মাহমুদ মিঠু এক সাথে অনেক কিছু দেখাতে গিয়েছেন। ধনি গরিবের বৈষম্য, বৃদ্ধ বাবার প্রতি ছেলে বউ এর মনযোগ এর অভাব, ভিক্ষা ব্যবসা, ছিনতাই, গরিবের মহানুভবতা এবং আরো অনেক কিছু। সব সামলাতে গিয়ে মাঝে মাঝে এ খেই হারিয়ে ফেলেছেন। বেশ কিছু দৃশ্য অহেতুক ছিল, আবার কিছু দৃশ্য তারাতারি শেষ করে দিয়েছেন। তবে, সবছে বেশি যে জিনিসটি খারাপ লাগবে, সেটা হল predictable story. আপনি প্রতি পাঁচ মিনিটে বলতে পারবেন পরে কি ঘটবে। এবং খুবি পুরান এবং অনেক ছবিতে ই এই গল্প এর আগেও দেখা গিয়েছে। গল্পকার পুরান মদ নতুন বোতল এ ভরলেন। চিত্রনাট্য ও সাধারন মানের।

হঠাৎ করে কুসুম ও ঈমন এর গান না থাকলে ও ক্ষতি ছিল না। তবে হায়দার হোসেন এর “আমায় ভিক্ষা দাও আদর্শ” গানটি খুবি ভাল লাগল।

দুই একটা সংলাপ দারুন লাগল। যেমন, মাসুম আজিজ এর একটা সংলাপ, “ভিক্ষা করলে ও বাংলায় করি, উর্দুতে না।”

পরিচালক কিছু দৃশ্যে দারুন মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। বেধে রাখা ছাগল ছুটে গেলে তার পেছন পেছন মাসুম আজিজ এর হাতে ভর দিএ চলা। কিন্তু একিই দৃশ্যেই দুর্বলতা ছিল। মাসুম আজিজ এর স্ত্রী, কুসুম তো দৌড়াতে পারত। তার ও আগে, ভিক্ষুকের ১২,৫০০ টাকা দিয়ে বিনা দর কষাকষিতেই ছাগল কেনা ও আপনার মনে প্রশ্ন জাগাবে।

এরকম আরো কিছু দৃশ্য ছিল, পরিচালকের নজর দেয়া দরকার ছিল। বিয়েতে আংটি পড়ানোর সময় কাউকে ঘোষনা দিয়ে পড়াতে দেখিনি। নামাজ চলার মদ্ধ্যে কিছু ভিক্ষুকের নামাজ না পড়ে নামাজের মদ্ধেই বসে থাকাটাও বেমানান। যেমন বেমানান চা এর দোকানে দামি সিরামিক এর চা এর কাপ। কাপ্তাই লেক এ প্রয়োজন এর চেও বেশি দৃশ্য ধারন করা হয়েছে। কারো মন খারাপ হলে কাপ্তাই লেক, বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার জন্য কাপ্তাই লেক, গানের দৃশ্য কাপ্তাই লেক... এক লেবু বেশিক্ষন কচলালে সেটা তিতা হয়ে যায়।

কুসুম এবং তার বান্ধবির পুকুরে নেমে গোসল করার সময় কথা বলার দৃশ্য অহেতুক টেনে লম্বা করা হয়েছে, আর যে সংলাপ ছিল, সেগুলি বলার জন্য গোসল এর সময় লাগে না। পরিচালক কি সুরসুরি দিতে চাইলেন এই দৃশ্যে?

খুবি নিম্ন মানের cinematography. অনেক দৃশ্যে ই অভিনেতা অভিনেত্রির মুখ কাটা গিয়েছে, নয়ত ঠিক মত বুঝাই যায় নি। কিছু কিছু জায়গায় আরো আলোর দরকার ছিল। মাসুম আজিজ এর একটা দৃশ্যে তো কোন আলো ই দেয়া হয় নি। ফলাফল, কাল স্ক্রিন এ কিছুক্ষন শুধু কথাই শোনা গেল।

যারা অনুমান করছিলেন, শেষে কি হয়, তাদের জন্য বলি, এই climax ও হয়ত বহুবার দেখেছেন। নিলয় যখন জানতে পারে যে স্বপ্ন এর বাবা ভিখারি, তখন সে বিদেশ চলে যায়, এই ভেবে যে, এই বিয়ে কেউ মেনে নেবে না, তাই সে স্বপ্ন কে কষ্ট দেবে না! আর স্বপ্ন স্কুল এ পড়ান শুরু করে। এভাবে ই জীবন নদী বয়ে যায়।

সব শেষে বলতে পারি, দেশি সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের বিকাশে অবদান রাখুন, অবশ্যই হল এ গিয়ে ছবিটি দেখুন । তবে বেশি কিছু আশা না করাই ভাল হবে।


সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×