সরল অংক কিন্তু সরল নয়। সরলা নামের অশিক্ষিত মেয়েগুলোও না। গ্রামের যে ব্যক্তি অশিক্ষিত, মাঠে কাজ করে, যাকে আপনারা তাচ্ছিল্যর্থে চাষা বলেন সেও কিন্তু নিজের পাওনা বুঝে নিতে সক্ষম। সুতরাং সেও সরল নয়।

'পারী'র মৃত্যুপুরের খবর যারপরনাই আপনাকে শোকে মুহ্যমান করবে, তা নয় আপনি সুচিন্তিতভাবে শোক নিয়ে সরল অংক কষতে শুরু করেছেন। কি অংকওয়ালা হয়েছেন!

মানুষভেদে আপনার শোকের মাত্রা নির্ধারিত হয়। এটা পানির মত স্বচ্ছ। বলুনতো, আপনি আপনার পাশের বাড়ির মানুষটি কি অবস্থায় আছে আগবাড়িয়ে খোজ নেন কিনা?

ব্যস্ত নগরীতে পাঁয়ে হেঁটে চলার সময় ভিখারীর থালা কিংবা রাস্তায় পড়ে থাকা শিশুটি কতবার আপনাকে থামায়? বুকে হাত দিয়ে উত্তরে বলবেন, 'কদাচিৎ', নইলে বলবেন, 'না'।

পত্রিকায় সেলেব্রিটির মৃত্যু সংবাদ আপনাকে বেশি নাড়া দেয়, না সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া অচেনা কোন ব্যক্তি। ভাবলে বুঝবেন, সড়ল অংক এত সোজা নয়।

প্রতিবেশী দেশগুলো, অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান, মালদ্বীপে কিছু হলে আপনি যতটা মর্মাহত হন, মঙ্গোলিয়ায় কিছু হলে ওতটুকু হবেন না।

কার দুর্দিনে আপনি কতটুকু শোকার্ত হবেন, তা নির্ভর করে আপনি তার সঙ্গে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সংস্কৃতিগতভাবে কতটুকু সম্পৃক্ত বা নির্ভরশীল।

'পারী' কিন্তু শিল্প ও সাহিত্যে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপিত ও সমৃদ্ধশালী নগরী। অন্নদা শংকরের কথা মনে নেই, ফরাসি শিল্প ও সাহিত্যে মুগ্ধ হয়ে বলেই ফেলেছেন, "অর্ধেক নগরী, তুমি অর্ধেক কল্পনা।"

ভুলে যাবেন না, আপনি আরোপিত শিক্ষায় শিক্ষিত। কার দুঃখে আপনি কাঁদবেন বা হাসবেন সবই শিক্ষা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

সঠিক অংক কষতে আরোপিত শিক্ষা উগড়ে দিতে হবে, মানুষের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। শুধুই মানুষ পরিচয় ধারণ ও লালন করতে হবে। ঠিক ওই সরলা, কিংবা চাষার মত। তা কী পারবেন?