somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জিয়াউল শিমুল
.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

আসুন, চুড়ি পড়ে হুংকার ছাড়ি

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদেরকে বীরের জাতি বলা হয়। আমরা বিরত্বের সাথে নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ সাধিন করেছি। আসলেই কি তাই! আমার কিন্তু মাঝে মধ্যেই যথেষ্ট সন্দেহ হয়। একটা চুড়ি পড়া জাতি কি করে বীর হতে পারে! কি করে বিরত্বের সাথে নয় মাস যুদ্ধ করতে পারে!

এ দেশে একের পর এক আন্দোলন হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটা পক্ষ হয়তো হঠাত করে দপ্ করে জ্বলে ওঠে কিন্তু সেটা আবার দপ্ করে নিভেও যায়। সামান্য ফুৎকারেই আন্দোলন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। কারন আমরা চুরি পড়া জাতি। আমরা চুড়ি পড়ে ঘরে বসে হুংকার ছাড়ি। ঘর থেকে বেড়িয়ে আন্দোলনকারিদের সমর্থনে রাজপথে নামার সাহস বা যোগ্যতা আমাদের নেই। আমরা নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে আন্দোলনের চুলচেরা বিশ্লেষন করি, গলদঘর্ম মেধা খাটিয়ে আন্দোলনকারিদের ভুল বেড় করে বুদ্ধিজিবি হয়ে ওঠার চেষ্টা করি। এ রকম একটা আত্মকেন্দ্রিক জাতি কি করে বীরের সম্মান পেতে পারে!

আমরা মেরুদন্ডহিন প্রানি হওয়ায় প্রত্যেকটা সরকার আমাদের সাথে প্রহসনে মেতে ওঠে। আমাদের কষ্ট যন্ত্রনা তাদের কাছে মনোরঞ্জনের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। আমরা সাধারন জনতা নিজেদেরকে এতোটাই বিভক্ত করে ফেলেছি যে, নিজেদের মেরুদন্ডকে ভেঙ্গে চুরে অনেক আগেই ধুলিস্মাত করে দিয়েছি। আজ কারো প্রতি অসহ্য অন্যায়, অত্যাচার হলে শুধু তারাই প্রতিবাদ করে। আমরা বাকিরা, বিশাল জনগোষ্টি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি! দেখি কি হয়, কি হয়! আর অন্য দিকে প্রতিবাদকারিরা কারো সমর্থন না পেয়ে একটুতেই চুপষে যায়, হায়েনার একটু চোখ রাঙ্গানিতেই তারা দুরুদুরু করে কাপতে শুরু করে দেয়। এর ফলে হায়েনার সাহস বেড়ে যায়। আবার আরেক জনের উপরে অত্যাচার শুরু হয়। আবারও আমারা, মেরুদন্ডহিন প্রানিরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। দেখি কি হয়, কি হয়! হায়েনার সাহস এবার আরো বেড়ে যায়। তার অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বাড়তেই থাকে। বাড়তে বাড়তে তাদের বাড়ার মাত্রা এতোটাই প্রসারিত হয়ে যায় যে, তারা উন্মাদ হয়ে পড়ে। কোথায় হাসতে হবে, আর কোথায় কাদতে হবে কিংবা কোথায় কি বলতে হবে সে কান্ডজ্ঞান তাদের থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এক সময় তাদের মানুষত্য পশুত্বে পর্যবসিত হয়। তাই তারা নিষ্পাপ ছোট ছোট বাচ্চার মৃত্যুতেও হেসে উঠতে পারে, ছাত্রছাত্রিদের মৃত্যু তাদের কাছে আনন্দের খোরাক হয়ে ওঠে।

এবার ছোট ছোট কোমলমতি ছাত্রছাত্রিরা জেগে উঠেছে। তারা তাদের সহপাঠি হত্যার বিচার চায়। এবারও আমরা হায়েনাদের চিরাচরিত রুপ দেখছি। ছোট ছোট বাচ্চাদেরকেও কেউ কেউ রাজাকার বলার চেষ্টা করছে। পুলিশ নামের ভিনগ্রহের প্রানিরা তাদের উপরে অকথ্য নির্যাতন শুরু করেছে। তাদের শরির রক্তে ঢেকে দিচ্ছে। আমরা বড় বড়রা আগের মতোই ঘরে চুরি পড়ে বসে আছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছি। দেখছি কি হয়, কি হয়! মাঝে মাঝে চুরি পড়ে মিনমিনে হুংকার ছাড়ছি।

আমরা যে মেরুদন্ডহিন প্রানি সেটা বুঝতে কারো বাকি নেই। আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে থামানোর জন্য সরকারের একটু কৌশলই যথেষ্ট। হচ্ছেও তাই। সরকার আগের মতোই কৌশলের আশ্রয় নেয়া শুরু করেছে। তারা বলতে চাইছে, আন্দোলনের ভিতরে স্বার্থান্বেষি মহল ঢুকে পড়েছে। এ স্বার্থান্বেষি মহল সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও ঢুকে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অতএব সামাজিক মাধ্যমগুলোতে পুলিশের সাড়াশি অভিযান শুরু হয়ে গেছে। হয়তো কয়েক জন বিএনপি জামাতপন্থিদেরকে ধরে মেরুদন্ডহিন প্রানিদেরকে বোঝানো হবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর জন্য আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। আমরা এ মতবাদ আগের মতোই সাথে সাথে লুফে নিবো, কারন নিজেদেরকে দায়িত্ব থেকে বাচানোর জন্য আমরা সব সময় একটা উছিলা খুজি, আমরা চুরি পড়া জাতি!

ছাত্রছাত্রিরা যে আন্দোলনের জন্য আজ রাজপথে নেমেছে সেটা যৌক্তিক। যে তাজা প্রান অকালে ঝরে গেছে সেটা আর কখনো ফিরে আসবে না। তাদের পরিবারের দুঃখ কষ্টও কোনো দিন লাঘব হবে না। কিন্তু তাদেরকে একটু সান্তনা দেয়ার জন্য ন্যায় বিচারটা তো করতে হবে! এবং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ভবিষ্যতে আর যেনো না হয়, সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করাও তো জরুরি। সরকারের দায়িত্বশিল ব্যক্তিরা যখন এটা নিয়ে হাসাহাসি করে, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তখন আন্দোলন অবশ্যম্ভাবি হয়ে পড়ে। সরকারকে তখন বোঝানোর দরকার হয়ে পড়ে তাদের আসলে কি করা উচিত। এটা ছোট ছোট ছাত্রছাত্রিরা আজ বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। তাদেরকে অবশ্যই আমাদের সেলুট করা উচিত।

ঢাকার মতো একটা জনবহুল রাস্তায় কিভাবে বেপরোয়া গাড়ি চালানো হয় সেটা কারোরই অজানা নয়। ফিটনেস বিহিন গাড়ি, লাইসেন্স বিহিন ড্রাইভার, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ড্রাইভার ঢাকার রাস্তায় একটা সাভাবিক ব্যাপার। অথচ এ সব ট্রাফিক পুলিশের সামনে এবং তাদের মদদেই হচ্ছে। এটা কি অন্যায় নয়? আমার কাছে এটা ক্ষমার অযোগ্য অন্যায়। কারন এ জন্য আমাদের মতো সাধারন জনতাকে অহরহ জিবন বিলিয়ে দিতে হচ্ছে। ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ে আগেও বহু ছাত্রছাত্রি অকালে প্রান হারিয়েছে। সাধারন লোকের প্রান হারানোর সংখ্যাটা অগুনিত। কিন্তু সরকারের টনক নড়ে নি। কি করে নড়বে, তাদের শরিরের চামড়া এখন গন্ডারের চামড়ায় রুপান্তরিত হয়েছে! আর এটার জন্য আমরাই দায়ি। আমাদের দলাদলি, তোষামোদ, মেরুদন্ডহিনতাই দায়ি।

প্রত্যেকটা আন্দোলনের কিছু ভুল ত্রুটি থাকে। এখানে একটু বেশিই আছে। ছাত্রছাত্রিরা অশ্লিল ভাষার প্লাকার্ড বহন করছে। অশ্লিল শব্দে রাস্তা রাঙ্গিয়ে তুলছে। এমনটা এত ব্যাপক ভাবে এর আগে কখনোই হয় নি। এটাও স্বাভাবিক। এদের বয়সটাই এমন যে ক্ষোভে ফেটে পড়লে শালিন এবং অশালিনের মধ্যে পার্থক্য করা তাদের জন্য কঠিন। এ কারনে অভিভাবকদের এগিয়ে আসা উচিত। সন্তানদেরকে বোঝানো উচিত, আন্দোলনের ভাষাও শালিন হওয়া বাঞ্ছনিয়। সেই সাথে বোঝানো উচিত গাড়ি ভাঙ্গচুর করে দেশের সম্পদ বিনষ্ট করা উচিত নয়।

সরকার আসে, সরকার যায় কিন্তু আমাদের ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন হয় না। আমরা আমাদের ভাগ্যকে নিজেরা পরিবর্তন করতে বিশ্বাসি নই। আমরা চুড়ি পড়ে ঘরে বসে থাকি, আর প্রত্যেকটা আন্দোলনের চুলচেরা বিশ্লেষন করে পরচর্চায় সময় কাটাই। ভবিষ্যত প্রজন্ম রসাতলে যাক, সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। আমরা চরম আত্মকেন্দ্রিক, আমরা শুধু নিজেরটা ভাবি, সামগ্রিকটা নিয়ে মাথা ঘামাই না। কিন্তু অন্যদের উপর দিয়ে আজ যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, সে ঝড়টা যে আমার এবং আমার প্রিয় পরিবারকেও এক দিন লন্ডভন্ড করতে পারে সেটা সময় থাকতে আমরা অনুধাবন করতে রাজি নই।

আমি ধিক্কার জানাই এমন মেরুদন্ডহিন প্রানিদেরকে। ধিক্কার জানাই নিজেকেও। কারন আমিও মেরুদন্ডহিন প্রানিদের এক জন। আমাদের বিবেক বুদ্ধি সত্যিই আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের সুবুদ্ধিকে আমরা চিরতরে বিসর্জন দিয়ে ফেলেছি। তাই আসুন, আমরা আমাদের আগের অবস্থানেই থাকি। আসুন, ঘরে বসে আগের মতোই চুড়ি পড়ে হুংকার ছাড়ি। যাক্ না দেশ রসাতলে! আমার উপরে তো আর আক্রমন হয় নি! যেদিন আমার উপরে আক্রমন হবে সেদিনই না হয় দেখা যাবে! তবে সেদিন আমিও অপশক্তির হাতে পরাজিত হবো, কাউকেই আমার পাশে পাবো না। কারন আমার মতো বাকিরাও তো মেরুদন্ডহিন প্রানি, চুড়ি পড়া জনগোষ্ঠি!

০২.০৮.২০১৮
কুমিল্লা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×