somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনিকেত সৈনিক

১২ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক

“বাবা, ঝাড়বাতি কি?”
“ঝাড়বাতি দেখতে হয় অনেকটা...” মাথা চুলকালো জহির। ছেলেকে কীভাবে জিনিশটা বোঝানো যায় মাথায় আসছে না! সে নিজেও খুব একটা ঝাড়বাতি দেখেনি। ছোট্ট একটা ঘুপচির মত ঘরে তিনজন মানুষ অতি কষ্টে বসবাস করে। ঘরে আসবাব বলতে একটা ছোট খাট, দুটো বেতের চেয়ার, একটা ছোট আলমারি আর অতি কষ্টে জমানো টাকায় কেনা একটা টেলিভিশন সেট। “ঝাড়বাতিতে অনেক গুলা বিভিন্ন রঙের সুন্দর সুন্দর বাতি একসাথে জোড়া দেওয়া থাকে। ঘড়ের সিলিং থেকে ঝারবাতি ঝোলে...”
“ঝাড়বাতি কোথায় থাকে বাবা? আমার দেখতে ইচ্ছে করে!”
ছেলের কথা শুনে খারাপ লাগল জহিরের। “কীভাবে দেখবে? ঝাড়বাতি ধনী লোকদের বাসার ড্রয়িং রুমে থাকে”।
“আমাদের দেশে কি কোন ধনী নেই?”
“একসময় ছিল। এখন তারা দেশ ছেড়ে বড়লোকদের দেশে চলে গেছে”।
“কেন গেছে?”
“আমাদের দেশে তো অনেক কষ্ট, তাই ওরা দেশ ছেড়ে চলে গেছে?”
“বড়লোকদের দেশে কষ্ট নেই কেন?”
“ওদের দেশে ওমেগাটেক নামে এক ধরনের কম্পিউটার আবিস্কার হয়েছে। ওটার সাহায্যে সব কাজ সহজে করা যায়, ওদের আর কোন কাজ করতে হয়না। ওরা শুধু আরামে বসে থেকে হুকুম দেয় আর সব কাজ ওমেগাটেক করে দেয়।
“ওমেগাটেক দেখতে কেমন হয় বাবা?”
“অত কিছু তো জানিনা বাবা। আমি তো বেশি লেখা পড়া করিনি। তুমি স্কুলে যাচ্ছ, লেখা পড়া করছ, বড় হলে সব জানতে পারেবে”।
“বড় হতে আর কতদিন লাগবে?”
“আহা! অনেক কথা হয়েছে, আর নয়! এবার একটু ঘুমাও তো”।

জহির ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। ছেলের নাম রেখেছে আজাদ। এই ছেলেকে নিয়ে হয়েছে তার যত যন্ত্রণা! সারাদিন কত আজব ধরনের প্রশ্ন যে সে করবে তার ইয়ত্তা নেই। জগতের সমস্ত বিষয় সম্পর্কে তার জানার বিপুল আগ্রহ। আবার প্রশ্নের উত্তর না দিলেও আরেক ঝামেলা! মুখ ভার করে এমন রাগ করবে- সেই রাগ ভাঙাতে মাঝে মধ্যে তিন চার দিন সময় লেগে যায়!

রুনা একটা বেতের চেয়ারে বসে আছে। আজকে সকাল থেকেই জহির লক্ষ করেছে তার স্ত্রী খুব বেশি কথা বলছে না, কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু হু-হাঁ করে জবাব দিচ্ছে। দুপুর বেলা একটা শুকনো রুটি ছাড়া কিছু খায়নি। চিন্তা হচ্ছে জহিরের। শরীর খারাপ করেনি তো? রুনা কোন অসুখ বিসুখ হলেও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে, মুখ ফুটে বলেনা কিছু। জহির জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে রুনা? শরীর খারাপ করেছে?”
“না”।
তাহলে?
রুনা প্রায় ফিসফিস করে বলল, “ঘরে যে খাবার আছে তাতে টেনে টুনে আর দুদিন চলতে পারে”।
“কি বলছ? সেদিন না অতগুলো মোড়কজাত খাবার কিনে আনলাম!”
“আমি বেশি বেশি করে খেয়ে শেষ করে ফেলেছি” রুনার চোখের কোনে পানি দেখা গেল।
জহির আমতা আমতা করে বলল, “না... মানে... আমি তা বোঝাতে চাইনি...”
রুনা ধরা গলায় বলল, “কত দিন যাবত বেকার বসে আছ! সংসার চলে কি করে? কাগজের কলের সুন্দর একটা কাজ পেয়েছিলাম। তুমি আমাকে যেতে দিলেনা! কত মেয়েরা ওখানে কাজ করছে!”
“তোমার শরীর খুব খারাপ ছিল, রুনা। ও শরীর নিয়ে কাজ করলে তুমি বাঁচতে না!”
“এখন বুঝি খুব বেঁচে যাব?” রুনার কণ্ঠে রাগ প্রকাশ পেল।
“আরে! হতাশ হও কেন? আমি আছিনা!” অভয় দেওয়ার ভঙ্গিতে হাসল জহির। “দুদিন তো? এর মাঝেই কিছু একটা ব্যাবস্থা করে ফেলব” ।
রুনা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল, “কি ব্যাবস্থা করবে?”
“শফিক ভাই ডেকেছেন আজকে। সাদা চামড়ার কিছু লোক এসেছে। আমাদের থেকে কিছু লোক নেবে কাজ করার জন্য, অনেক টাকা দেবে”।
“ঐ শফিক তো একটা ভণ্ড! দালালি করে চলে, ওর কথায় বিশ্বাস করেছ তুমি?”
“আরে না! শফিক ভাই আমাকে খুবই স্নেহ করেন, কোন সমস্যা হবেনা”।

***

বাইরে বেরোতেই মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেল জহিরের। কড়া রোদে চামড়া ঝলসে যাওয়ার উপক্রম। সারাক্ষন ভ্যাপসা একটা গরম বিরাজ করে। গত দুই দশকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে জলবায়ুগত ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বছরে শুধু একমাস শীতের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। বাকিটা সময় প্রচণ্ড গরম! বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায় কদাচিৎ। কোন এককালে বর্ষাকাল নামে একটা ঋতু ছিল এ অঞ্চলে, আজ শুধু অভিধানেই তার অবস্থান।

এই পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য অবশ্য মানুষই দায়ী। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসমুহ সংরক্ষনে ব্যাপক অনীহা, নির্বিচারে বৃক্ষনিধনের মাধ্যমে বনভূমি উজারকরন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, চক্রবৃদ্ধি হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সহ আরও নানাবিধ মানবসৃষ্ট কারনে দেশগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহতম কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পৃথিবীর দুই মেরুর বরফ গলে গিয়ে প্লাবিত হয়েছে বিস্তৃত বাসভূমি। বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান কমে গিয়ে যায়গা করে নিয়েছে বিষাক্ত গ্যাস আর বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো আজ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। কিন্তু উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এই পারিপাস্বিক পরিস্থিতি সামাল নিয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পূর্ব প্রস্তুতি আর প্রুযুক্তিগত উন্নয়ন দ্বারা। গত শতাব্দির শ্রেষ্ঠ আবিস্কার পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তি ওমেগাটেক কম্পিউটার জ্ঞান বিজ্ঞানে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। উৎপাদন প্রক্রিয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিজ্ঞান গবেষণা, শিক্ষা, প্রশাসন সহ দেশগুলোর সকল কর্মকাণ্ড এখন প্রত্যক্ষভাবে এই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এই প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত। কারন ওমেগাটেক কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রতি বছর ন্যূনতম ফি হিসেবে যে পরিমান অর্থ প্রদান করার নিয়ম করা হয়েছে তা দরিদ্র দেশগুলোর ৫ বছরের বাজেটের সমান। তাই এই সুবিধা বঞ্চিত অঞ্চলের ধনী শ্রেণীর লোকেরা তল্পিতল্পা গুঁটিয়ে নিয়ে আরামদায়ক জীবন যাপনের আশায় উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে গিয়ে পাকাপোক্ত আসন গেড়েছে। সামান্য একটি প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ পাওয়ার আনন্দে আত্মসম্মানবোধ ভুলে গিয়ে দেশপ্রেম নামক শব্দটিকে তারা গলা টিপে মেরেছে।

শফিক বাড়ির সামনে বসে ঝিমোচ্ছে। তার আশে পাশে বেশ কিছু লোকের জটলা। ইদানিং অনেক মানুষ একত্র হয়ে কিছু একটা পরিকল্পনা করছে এমন দৃশ্য সবার কাছে খুব পরিচিত। কারন একটাই- কর্মসংস্থানের অভাব প্রকট আঁকার ধারন করেছে। বাইরে বেরলেই এখানে সেখানে দেখা যায় কিছু মানুষ একত্র হয়ে জটলা পাকিয়েছে। পরিকল্পনা করছে কীভাবে পরিবারের সবার মুখে অন্ন তুলে দেয়া যায়। হঠাৎ দেখা যায় জটলার মাঝে একজন নেতা হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। সে ঘোষণা দেয় সরকারী শস্যাগারে হামলা করে সব শস্য লুটে এনে ভাগ করে নেবে। একে একে বেশ কিছু জটলা একত্রিত হয়। তারা মিছিল আর সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে দিতে শস্যাগারের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু এই পর্যায়ে এসেই অনেক আন্দোলন থেমে যায়। সরকারী শস্যাগারের সামনে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকা রক্ষকদের দেখে সামনে এগোবার সাহস পায়না কেউ। তবে মাঝে মাঝে দু একটা দল সাহস করে এগিয়ে আসে। তার ফলাফল হয় ভয়াবহ। বাড়িতে না খেয়ে অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকা মানুশগুলোর কাছে তাদের ভালবাসার মানুষটি লাশ হয়ে ফেরে। এই জন্য সরকারকে কোন জবাবদিহি করতে হয়না। তৃতীয় বিশ্বে বেচে থাকার সংগ্রামটুকুই সবার কাছে মুখ্য, অন্যরা বাচল কি মরল তা দেখার সময় কোথায়?

অবশ্য এজন্য সরকারকে সম্পূর্ণরুপে দায়ী করা যাবেনা। বাড়তি জনসংখ্যার বাসস্থানের চাহিদা পুরনের জন্য কৃষি জমিতে খুঁটি গেঁড়ে বসেছে নগর সভ্যতার উপকরন। নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্যের দাম আকাশ ছুয়েছে। এই সুযোগটা নিয়েছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো। তারা এ অঞ্চলের সাধারন মানুষের খাদ্য চাহিদা পুরনেরর জন্য মানহীন তুলনামুলক সস্তা মোড়কজাত খাবার বাজারজাত করছে। বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমান মুনাফা।

জহির আলতো করে ধাক্কা দিল শফিককে। শফিকের তন্দ্রাভাব কেটে গেল। জহিরকে দেখে হাসল, “ওহ, জহির এসে গেছ! তোমার অপেক্ষায় বসে ছিলাম। চল, ভাল একটা কাজের সুযোগ এসেছে। সুযোগ পেলে ভাল পয়সা কামাতে পারবে!”

***

হাজার খানেক লোকের ভিড়ে দাঁড়িয়ে আছে জহির। যায়গাটা একটা অধিবেশন কক্ষের মত। পার্থক্য হল অধিবেশন কক্ষে দর্শকদের জন্য আরামদায়ক আসনের ব্যবস্থা থাকে, এখানে নেই। উচু মঞ্চের ওপর বেশ কিছু স্যুট-টাই পড়া সাদা চামড়ার লোক বসে আছে, তাদের ভিড়ে একজন অল্পবয়সী মেয়েও দেখা যাচ্ছে। উপস্থাপক মাইকে ঘোষণা করল, “দর্শকবৃন্দ, আপনারা নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে জেনে গেছেন যে “ওমেগাসংযোগ” প্রকল্পের জন্য কিছু সেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেওয়া হবে। সেচ্ছাসেবী বাছাই করা হবে আপনাদের ভেতর থেকে। তবে সে প্রক্রিয়ায় যাওয়ার আগে আপনাদের “ওমেগাসংযোগ” সম্পর্কে কিছু বিষয় জানা আবশ্যক। তাই আমি আমন্ত্রন জানাচ্ছি ওমেগাসংযোগ প্রকল্পের টীম লিডার মিস ডরোথি ম্যান্ডেজকে আপনাদের সামনে এই প্রকল্প নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু কথা বলার জন্য"।

অল্পবয়সী মেয়েটি উঠে এসে মাইকের সামনে দাঁড়াল। মঞ্চে বসে থাকা লোকগুলো একটু হাততালি দিল, দর্শকরা কেউ দিলনা। জনগন কাজ চায়, যেকোন কাজ পেলেই তারা খুশি, বিস্তারিত জানার কোন আগ্রহ তাদের নেই।

“উপস্থিত দর্শকরা, আপনাদের ধন্যবাদ জানাই আমাদের আমন্ত্রনে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসার জন্য। আমি আপনাদের ওমেগাসংযোগ প্রকল্প সম্পর্কে বলব, তবে তার আগে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা না বললেই নয়। আপনারা তো ওমেগাটেক কম্পিউটার ও তার ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানেনই। ওমেগাটেক কয়েক বিলিয়ন সুপার কম্পিউটারের সমন্বয়ে সৃষ্টি। আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজের জন্য আমারা এখন এই কম্পিউটারের ওপর নির্ভর করে থাকি। আমাদের যেকোন প্রয়োজনীয় তথ্য আমরা তার কাছ থেকে পাই, প্রতিটি বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র এখন ওমেগাটেকের ওপর নির্ভর করে, এমনকি কল কারখানা উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে এর মাধ্যমে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ করা যাচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে। এছাড়াও ওমেগাটেক অসংখ্য জটিল থেকে জটিলতর কাজ আমাদের হয়ে করে দিচ্ছে। কিন্তু একটা সমস্যা থেকেই যাচ্ছে সেটা হল ওমেগাটেককে প্রয়োজনীয় কাজের নির্দেশ প্রদানের জন্য আমরা নির্দিষ্ট একটি ক্ষুদ্রাকৃতির নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ব্যবহার করি। প্রত্যেক নাগরিককে নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বহব করতে হয়। নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের সাহায্যে ওমেগাটেককে নির্দেশ প্রদান করা একটু কঠিন। এই জন্য আমাদের কিছু নির্দিষ্ট কোড মনে রাখতে হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে তা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমরা অনেক দিন ধরে চিন্তা করছিলাম এমন কোন প্রযুক্তি আবিস্কার করার, যার সাহায্যে সহজেই মানুষের মস্তিস্ক থেকে ওমেগাটেককে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠানো যাবে। কোন ধরনের যন্ত্রের প্রয়োজন হবেনা।

এই প্রযুক্তি আবিস্কারের প্রক্রিয়ার নাম ওমেগাসংযোগ প্রকল্প। আশার খবর হচ্ছে দীর্ঘদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আমরা সফলভাবে একটা মাইক্রো চিপ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছি যা মস্তিস্কের একটি নির্দিষ্ট অংশে স্থাপন করে দিলে মানুষ যখন খুশি ওমেগাটেকের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। আর কোন নিয়ন্ত্রক যন্ত্র প্রয়োজন হবেনা। কিন্তু এই মাইক্রো চিপটি একশত ভাগ কর্মক্ষম কিনা তা বোঝার কোন উপায় নেই। এজন্য আমাদের মাইক্রো চিপটির ছোট্ট একটি পরীক্ষণ করে দেখা প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা হল মাইক্রো চিপটি যদি সম্পূর্ণ অর্থে ত্রুটিমুক্ত না হয়ে থাকে তাহলে টেস্ট করার জন্য যাদের মস্তিষ্কে চিপটি স্থাপন করা হবে তাদের জন্য ব্যাপারটি খুবই বিপদজনক হতে পারে। কারন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই মাইক্রো চিপ বসানোর প্রক্রিয়াটি সংশোধনযোগ্য নয়, অর্থাৎ একবার স্থাপন করা হলে মাইক্রো চিপটি আর বের করে আনা সম্ভব নয়। ত্রুটিযুক্ত মাইক্রো চিপ স্থাপনের পাস্বপ্রতিক্রিয়াস্বরূপ মানসিক ভারসাম্য হীনতা, মস্তিস্ক বিকৃতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে! তাই আমাদের দেশ গুলোতে এই টেস্টিং প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে কেউ রাজি হয়নি। অনেকটা বাধ্য হয়েই আমরা আপনাদের কাছে এসেছি। আপনাদের মাঝ থেকে আমরা কিছু ভলান্টিয়ার চাই, যারা এই পরীক্ষণে অংশ নিতে আগ্রহী”।

উপস্থিত দর্শকের মাঝে গুঞ্জনের সৃষ্টি হল। তাহলে এই কারনে ওরা আমাদের ডেকেছে! কাজ দেওয়ার কথা বলে ভাওতা বাজি করছে! আমাদের গবেষণার গিনিপিগ বানাতে চায়!

মেয়েটি ফিরে গিয়ে তার আসনে বসল। অন্য একজন সম্ভ্রান্ত চেহারার মাঝবয়সী ব্যক্তি উঠে এসে মাইকের সামনে দাঁড়াল। “থামুন আপনারা, কথা এখনও শেষ হয়নি! আপনাদের অঞ্চলে এই টেস্ট করার জন্য অনুমতিপত্র কিনতে হয়েছে আমাদের, বিপুল পরিমান অর্থ দিতে হয়েছে আপনাদের সরকারকে। কিন্তু আপনাদের জন্য কোন বাধ্য বাধকতা নেই, আপনারা চাইলে এই পরিক্ষন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন অথবা চলে যেতে পারেন। কেউ আপনাদের বাধা দেবেনা”।

অনেকেই চলে যেতে উদ্যত হল।

লোকটি বলে চলেছে, “তবে চলে যাওয়ার আগে দু একটা কথা শুনে গেলে ভাল করবেন। যেহেতু বিপদজনক টেস্ট সেই জন্য আমরা স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য কিছু বিশেষ সুবিধা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই টেস্টে যারা অংশগ্রহন করবেন তাদের জন্য অগ্রিম কিছু অর্থ বরাদ্দ রেখেছি আমরা। পরিমাণটা এতই বেশি যে আপনাদের পুরো পরিবারের এক বছরের খাদ্য কেনার জন্য আর কোন দুশ্চিন্তা থাকবেনা। অপর দিকে এই টেস্টে অংশগ্রহনের কারনে আপনাদের যদি কোন ধরনের শারীরিক, মানসিক ক্ষতি বা মৃত্যু হয় তাহলে আপনাদের পরিবার পরিজনদের বিপুল পরিমান ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে যা দিয়ে তারা আপনার অবর্তমানে সুন্দর ও সচ্ছ্বল ভাবে জীবন যাপন করতে পারবে। আর যাদের ওপর এই টেস্ট এর ফলাফল ১০০ ভাগ সফলতার প্রমান দেবে তাদেরকে পরিবারসহ বিশেষ মর্যাদা দিয়ে উন্নত বিশ্বে নিয়ে যাওয়া হবে, দেওয়া হবে বাসস্থান ও আরাম দায়ক জীবন ব্যবস্থার সকল উপকরন। এবার আপনারাই ভেবে দেখুন অংশগ্রহন করবেন কিনা!”

জনতা বিভ্রান্ত হয়ে পরেছে। মুখের সামনে মুলো ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে, গাধা যাবে কই?

জহির বিষয়টা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করল না। এটা আত্মহত্যা ছাড়া কিছু নয়। বেরিয়ে যাওয়াই শ্রেয় মনে হচ্ছে। কাধে একটা হাত পরতে ফিরে দেখল সে। শফিকের হাত।
“চলে যাচ্ছ জহির! কোন কষ্ট ছাড়াই অনেক গুলো টাকা পেয়ে যেতে!”
“নিজে মরে গেলে টাকা দিয়ে কি করব শফিক ভাই?”
“আরে ধুর পাগল! ওটা কথার কথা বলেছে! আসলে কিচ্ছু হবেনা! দেখছ না কত লোক! ওরা নেবে মাত্র ২০ জন। সবাই সেচ্ছাসেবী হতে চাইলে কারে রেখে কাকে নেবে? তাই নিরুৎসাহিত করার জন্য একটু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলেছে”।
“আপনি ঠিক বলছেন শফিক ভাই?”
“আরে আমি কি আর না জেনেই বলি নাকি? রাজি হয়ে যাও, খাওয়ার চিন্তা দূর হয়ে যাবে!”
জহিরের মনে পড়ল তার স্ত্রীর কথা, ঘরে যা খাবার আছে তাতে আর মাত্র দুদিন চলবে।

লোকটি মাইকে চিৎকার করছে, “সাহসী ব্যক্তি কে কে আছেন যারা সেচ্ছাসেবী হতে ইচ্ছুক?”

অল্প কয়েকজন হাত তুলল। তাদের মধ্যে জহিরও একজন।


****

“কি বলছ তুমি, ডরোথি? হ্যাভ ইউ লস্ট ইওর মাইন্ড?”
“আমি ঠিকই বলছি স্যার। যা বলছি সুস্থ মস্তিষ্কে ভেবেই বলছি”।
একদৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকল ডক্টর ম্যাক্লেইন। মেয়েটির কথাগুলো অবিশ্বাস্য লাগছে। “ডরোথি, তুমি একজন সম্ভাবনাময় বিজ্ঞানী, বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবী দশজন বিজ্ঞানীর নাম উচ্চারন করলে তার মধ্যে তোমার নামটিও আসবে। সেই তোমার মুখে এসব কি শুনছি আমি?”
ডরোথি বলল, “জানি, আমার কথাগুলো হয়ত আপনার কাছে হাস্যকর লাগছে, কিন্তু এটাই বাস্তবতা। আমি উপলব্ধি করতে পারছি বিষয়টা, আপনারাও যত দ্রুত উপলব্ধি করতে পারবেন ততই মঙ্গল”।
“ডরোথি, তুমি ওমেগাসংযোগ প্রকল্পের টিম লিডার ছিলে, তোমার তত্ত্বাবধানেই আমরা এই প্রকল্পে সাফল্য লাভ করেছি। তুমি কি বুঝতে পারছ না আমরা এমন এক যুগান্তকারী আবিস্কার করতে সমর্থ হয়েছি, যা গত কয়েক শতাব্দীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ আবিস্কার?”
“আমি জানি স্যার”।
“তবে তুমি কেন বলছ, ওমেগাসংযোগ আমাদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে?”
“স্যার, বিপর্যয় আনবে বলছি কারন এই প্রকল্পের প্রচলন হলে আমাদের ব্রেন অকেজো হয়ে পড়বে। মানুষকে কোন কাজে আর ব্রেন ব্যবহার করতে হবেনা। আমরা সম্পূর্ণরুপে ওমেগাটেক প্রযুক্তির ওপর নির্ভর হয়ে পড়ব”।
“তুমি কি বলতে চাচ্ছ আমরা এখন ওমেগাটেক এর উপর নির্ভরশীল নই?”
কাধ ঝাঁকাল ডরোথি, “হ্যা, আমরা এখনও ওমেগাটেক এর উপর নির্ভর করছি কিন্তু পাশাপাশি নিজেদের ব্রেন ব্যাবহার করেও আমাদের অনেক কাজ করতে হচ্ছে। আমরা কখন কোন কাজটি করব তা আমাদের ব্রেন ঠিক করে নেয়। আমাদের মাঝে কিছু জানার আগ্রহ বা প্রয়োজন সৃষ্টি হলে ব্রেন কিছু প্রশ্নের জন্ম দেয়, তার ফলস্রুতিতে ব্রেনের নির্দেশে আমরা আমাদের নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ব্যবহার করে ওমেগাটেক থেকে তথ্য সংগ্রহ করি। তাছাড়া, প্রত্যেক নাগরিককে ওমেগাটেক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে নির্দিষ্ট আইডি নম্বর ও পাসওয়ার্ড, আমাদের সেগুলো মনে রাখতে হয়, এভাবে প্রতিমুহূর্তে আমাদের ব্রেন কর্মক্ষম থাকছে। কিন্তু ওমেগাসংযোগ প্রকল্প প্রয়োগের পর আমরা এই কাজটুকুও করব না। মানুষ সম্পূর্ণরুপে নিজেকে সঁপে দেবে যন্ত্রের হাতে....”

হাত তুলে ডরোথিকে থামালেন ডক্টর ম্যাক্লেইন। “তোমার সাথে যুক্তি তর্কে পারব না আমি। মেনে নিলাম তোমার কথাই ঠিক, এই প্রজেক্ট আমাদেরকে ওমেগাটেক এর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল করে ফেলবে। কিন্তু তাতে সমস্যা কোথায়? এতে করে আমাদের জীবন আরও আরামদায়ক ও স্বাচ্ছন্দময় হয়ে উঠবে। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের মস্তিস্ক ওমেগাটেকের সাথে কানেক্টেড থাকার কারনে যোগাযোগ করা যাবে যার সাথে খুশি। কোন কোড মনে রাখতে হবেনা, যখন যেটা ইচ্ছে হবে তা করে দেবে ওমেগাটেক। আমরা নিজেদের সময়টুকু শুধুমাত্র আনন্দ উপভোগে ব্যয় করতে পারব”।

“কিন্তু স্যার.... হাজার হলেও ওমেগাটেক একটি যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। মানব সমাজের ভবিষ্যৎ এর ওপর ছেড়ে দেওয়া যায় না”।

“বার বার তোমার মুখে যন্ত্র শব্দটা শুনতে ভাল লাগছে না। প্রচলিত অর্থে ওমেগাটেক একটি যন্ত্রই কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এটি মানুষের সমান বা কিছু ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে অধিক বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি প্রযুক্তি। মানুষের মত করে চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতা ওর আছে। আর তুমি কি ভয় পাচ্ছ যে ওমেগাটেক কখনো কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে? কিন্তু সেটাও কোন ভাবে সম্ভব নয়। কারন ওমেগাটেকের আছে স্বয়ংক্রিয় রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া। নিজেকে কার্যক্ষম রাখার জন্য প্রয়োজনীয় রসদ ওমেগাটেক নিজেই যোগাড় করে নিতে জানে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ওমেগাটেকের প্রযুক্তিগত ক্ষতি হলেও তা পুরন করে নিতে জানে সে। হয়ত এই মানব সভ্যতা একদিন ধংস হয়ে যাবে কিন্তু ওমেগাটেক কখনো বিলুপ্ত হবেনা। তাছাড়া ওমেগাটেক স্বয়ংক্রিয়ভাবে গবেষণা চালিয়ে নিজের উন্নতি সাধন ও আপগ্রেড করতে সক্ষম। তাই জ্ঞান বিজ্ঞানে আমাদের যে উন্নতির ধারা রয়েছে তা আরও বেশি বেগবান হবে। পার্থক্য হচ্ছে আগে ম্যানুয়ালি আমাদের করতে হত এখন তা ওমেগাটেক করবে”।

একনাগাড়ে অনেকক্ষণ লেকচার দিয়ে থামলেন ডক্টর। ডরোথি এতক্ষন চুপচাপ শুনছিল। ডক্টর ম্যাক্লেইন থামতেই সে বলে উঠল, “কিন্তু স্যার, একটা কথা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছেন? যদি এমন হয় যে ওমেগাটেক আমাদের কথা মত কাজ করল না। সে নিজের ইচ্ছায় চলা শুরু করে দিল! তখন?”

ডক্টর ম্যাক্লেইন ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, “সেটি কখনো হবেনা। আমরা ইন্সট্রুমেন্টস ফিউচার অ্যাটিচুড প্রেডিক্টিং সিমুলেশন প্রসেস ব্যবহার করে দেখেছি। আগামী কয়েক শতাব্দিতে ওমেগাটেক মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই”।

ডরোথির ঠোঁটের কোনে তিক্ত হাসির আভাস। “স্যার, আপনি তো ভাল করেই জানেন বিজ্ঞানের যে থিওরিগুলো এখনও সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত করা সম্ভব হয়নি, তার মধ্যে আইএফএপিএসও অন্যতম”।

ডক্টর এক মুহূর্তে চুপ করে থাকলেন, তারপর বললেন, “ডরোথি, তুমি বুঝতে পারছ না। এখন আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে বিজ্ঞান অধিদপ্তর থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়ে গেছে। সকল নাগরিক স্বপ্ন বুনছে কবে তাদের কাঙ্ক্ষিত মাইক্রো চিপটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্কে স্থাপন করবে! কয়েক সহস্র কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল অর্থবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে এই প্রোজেক্টের জন্য। দীর্ঘদিনের অক্লান্ত শ্রম আর বিপুল পরিমান অর্থ ব্যায়ের মাধ্যমে আমরা অবশেষে সাফল্যের মুখ দেখেছি। শুধু অর্থ আর পরিশ্রমই সব নয়। প্রানহানির ঘটনা তুমি ভুলে যাওনি নিশ্চয়ই! মাইক্রো চিপটা টেস্ট করার জন্য আমরা প্রথমবার যে বিশজন ভলান্টিয়ার বেছে নিয়েছিলাম তাদের সবাই মারা গেছে। মাইক্রোচিপটির ত্রুটি সংশধনের পর দ্বিতীয় দফার টেস্টিংয়ে কিছু ভলান্টিয়ার মারা যায় বাকিদের কারো মানসিক ভারসাম্যহীনতা মাস্তিস্ক বিকৃতি ঘটে। এভাবে করে ৬ বারের মাথায় আমরা ১০০ ভাগ সফল হয়েছি। এত কিছুর পর আমরা আর পিছিয়ে যেতে পারিনা”।

“ঠিক আছে, স্যার” চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ডরোথি। “আপনি যা ভাল মনে হয় করুন। আমি রিজাইন দিচ্ছি। বিজ্ঞান অধিদপ্তরের চাকরিটি আর করছি না”।

ডরোথি বের হয়ে গেল। ডক্টর ম্যাকক্লেইন ভ্রু কুঁচকে তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।


দুই

ঠিক পঁচিশ বছর পর.....

বিশাল হলরুমে প্রায় দুই শতাধিক নারী পুরুষ একত্রিত হয়েছে। সবার পরনে দামী অভিজাত পোশাক। সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেয়ালে ঝোলান বিশাল ঘড়িটির দিকে। চোখ মুখে একটা চাপা আনন্দ। ঘড়ির কাঁটা যখন এগার ঘণ্টা উনষাট মিনিট সবাই একযোগে চিৎকার করে উঠল,
“ঊনষাট”
“আটান্ন”
“সাতান্ন”
“ছাপ্পান্ন.....”

একজন উপস্থাপক মাইকে বলছে “বন্ধুরা আর কিছুক্ষন পরই আমাদের প্রিয় ওমেগাটেক পঞ্চম আপগ্রেড নিতে চলেছে। এই আপগ্রেডের মাধ্যমে ওমেগাটেক ষষ্ঠ মাত্রার প্রযুক্তিতে পরিনত হবে। আমাদের সামনে খুলে যাবে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। সবাই কাউন্ট ডাউন করুন.....”
“একচল্লিশ”
“চল্লিশ”
“আটত্রিশ”
“সাইত্রিশ.......”

উপস্থাপক ডোনাল্ড চিৎকার করে যাচ্ছে, “ওমেগাটেক এর এই আপগ্রেডের ফলে জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আমরা ছাড়িয়ে যাব সকল সীমা। অপার বিশ্বের রহস্য আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে। পৃথিবীর বাইরে ভ্রমণ হয়ে দাঁড়াবে নিত্যদিনের ব্যাপার......”
“পঁচিশ”
“চব্বিশ”
“তেইশ”
“বাইশ”

“পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারব মুহূর্তের মধ্যেই, এমনকি পৃথিবীর বাইরেও যোগাযোগ সম্ভব হবে......”
“ষোল”
“পনের”
“চৌদ্দ”
“তের.......”

“ওমেগাটেক পরিনত হবে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিতে। ম্যানুয়াল নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হবে। আমাদের জীবনকে করে তুলবে আরও সুখী, স্বাচ্ছন্দ্যময়......”
“নয়”
“আট”
“সাত”
“ছয়.....”

“বন্ধুরা এসে গেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ......”
“তিন”
“দুই”
“এক”
“শুন্য....”
“ইয়া....হু....” সবাই একসাথে খুব জোরে চিৎকার করে উঠল।

আচমকা পুরো হলরুম অন্ধকার হয়ে গেল। সবার চিৎকার থেমে গেল। উপস্থাপক ডোনাল্ড অবাক হল। বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা হল না তো? কিছুক্ষন পর আবার আলো জ্বলে উঠল কিন্তু এবার একনাগাড়ে বেশিক্ষন জ্বলল না। জ্বলছে- নিভছে, জ্বলছে-নিভছে, কেউ যেন বার বার সুইচ অন অফ করছে। এমন তো হওয়ার কথা না! সে মাইকে কথা বলার চেষ্টা করল। অবাক হয়ে দেখল মাইকও কাজ করছে না। তারমানে আসলেই বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা হয়েছে। ডোনাল্ড বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করল, কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ করল সে তার মস্তিস্কের অভ্যন্তরে স্তরে স্তরে সাজান অসংখ্য তথ্যের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে কোন তথ্যটি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা যাবে তার জানা নেই। উপস্থিত জনতা বিশৃঙ্খল হয়ে পরেছে। সে হাত তালি দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। চিৎকার করে বলল, “আমার মনে হচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগে কোনও সমস্যা হয়েছে। আমি বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। আপনারা একটু চেষ্টা করে দেখুন তো!”

কিছুক্ষন নিরবতা। তারপর সবার মাঝে চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়ে গেল। কেউ যোগাযোগ করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতির সম্মুখিন তাদের আগে কখনো হতে হয়নি। নিশ্চয়ই বিদ্যুৎ বিভাগে সিরিয়াস কোনও সমস্যা হয়েছে! ডোনাল্ড ভাবল নিজের স্ত্রীর সাথে একটু যোগাযোগ করা দরকার। বেচারি অসুস্থ, আজকের এত চমৎকার একটা অনুষ্ঠানে আসতে পারেনি। কিন্তু বেশ কিছুক্ষন চেষ্টা করেও সে যোগাযোগ করতে পারল না, অসংখ্য অচেনা তথ্যের সমুদ্রে হাবু ডুবু খেল কিছুক্ষন। ওমেগাটেক তাকে প্রয়োজনীয় তথ্যটি খুঁজে দিচ্ছেনা কেন? বিষয়টা অবাক করল তাকে, আগে তো কখনো এমন ঘটেনি।

এর মাঝে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। অন্ধকারে কারো সিগারেটের আগুন পর্দায় লেগে গেছে। দাউ দাউ করে আগুন জলে উঠল। সবাই আতঙ্কিত হয়ে দিগ বিদ্বিগ ছোটা ছুটি করা শুরু করেছে। ডোনাল্ড দমকল বিভাগে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হল।

খানিক বাদে সে আবিস্কার করল আসলে কারো সাথেই যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছেনা।

*****

দৃষ্টির সীমার মাঝে সমুদ্র থাকলে মনটা উদার হয়। কথাটা বাবা বলতেন সব সময়। ডরোথির বাবা সমুদ্রের পাশে একটা বাড়ি কিনেছিলেন। শহরের কোলাহলের বাইরে নির্জনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাসের খুব ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু সেই ইচ্ছা পুরন হয়নি। নতুন বাড়িতে ওঠার দুদিন পরেই ডরোথির মা মারা গেলেন। ডরোথির ভাইরা শহরে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত, তাই তারা চলে গেল। ডরোথি বিজ্ঞান কাউন্সিলের ভাল একটা চাকরী পেয়ে চলে এল। বাবা একলা খুব বেশি দিন বাচলেন না। একটা দুর্ঘটনায় মারাত্মক আঘাত পেয়ে মৃত্যুবরণ করলেন। অনেক দিন পর ডরোথি বিজ্ঞান অধিদপ্তরের চাকরী ছেড়ে দিয়ে এসে আবার এই বাড়িতে বসবাস শুরু করেছে। একলা একা কাটিয়ে দিয়েছে পঁচিশ বছর।

বারান্দায় বসে আছে ডরোথি। দূর থেকেই ছেলেটাকে দেখা যাচ্ছে। উপকূলীয় আঁকা বাকা পথ ধরে হেটে আসছে। ডরোথি অবাক হল। প্রযুক্তিগত চরম উন্নয়নের শিখরে থাকা এই পৃথিবীতে এতটা পথ কেউ পায়ে হেটে আসতে পারে তা ভাবাই যায়না।

ছেলেটি কাছে চলে আসতেই তার চেহারায় একটা উদ্ভ্রান্তভাব লক্ষ করল ডরোথি। অদ্ভুত! এই বয়সী একটা ছেলের চেহারায় এই দৃষ্টির কথা কথা না। এরা থাকবে সদ হাসি খুশি, প্রফুল্ল! নিশ্চয়ই কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।

ছেলেটি কাছে এসে বলল, "আপনি কি মিস ডরোথি সিম্পসন?"
ডরোথি হ্যা-বোধক মাথা নাড়ল।
ডক্টর ম্যাকক্লেইন আপনাকে দেওয়ার জন্য একটা চিঠি দিয়েছেন। ছেলেটা একটা মুখ বন্ধ খাম এগিয়ে দিল।
ডরোথি হাত বাড়িয়ে খামটি নিল। বলল, "তোমাকে ক্লান্ত লাগছে। বস, এক গ্লাস ফলের রস দিচ্ছি আমি"।
ছেলেটি দুহাতে কপালের দুপাশ ডলছে, সম্ভবত মাথাব্যাথা করছে তার। “নাহ। আমার আরও কাজ আছে” বলেই ফিরতি পথে হাটা দিল।
ডরোথি অবাক হল। খাম ছিঁড়ে ভেতর থেকে চিঠি বের করল। অদ্ভুত ব্যাপার! এই যুগে হাতে লেখা চিঠি!

প্রিয় ডরোথি,

আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাবান মানুষ তুমি। তুমি সেই সম্ভাবনার কথা ভাবতে পেরেছিলে যা কখনো আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারিনি। তোমার আশঙ্কাই অবশেষে সত্যি হয়েছে। ওমেগাটেক আপগ্রেড হওয়ার পর থেকেই সমস্ত প্রযুক্তিগত সুবিধা সম্পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পাচ্ছিনা, কোনও ইলেকট্রনিক যন্ত্র ঠিকমত কাজ করছে না, যোগাযোগ ব্যাবস্থা ধ্বসে পরেছে, সমস্ত মোটরগাড়ী, প্লেন, রেলগাড়ী, জাহাজ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। মিল কারখানার মেশিনারিজ কমান্ড অনুযায়ী কাজ করছে না! আগে এ ধরনের সমস্যা হলে ওমেগাটেক আমাদের সাহায্য করত, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সমাধান করে দিত কিন্তু এখন ওমেগাটেকও সাড়া দিচ্ছেনা! ওমেগাটেক আমাদের সাথে বেঈমানি করেছে! পঞ্চম আপগ্রেড নেওয়ার পর আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে সে। আমরা যাকে আশীর্বাদ ভেবেছিলাম তা আমাদের জন্য অভিশাপে পরিনত হয়েছে।

আমাদের চিন্তা ভাবনায় দূরদর্শিতার অভাব ছিল। ওমেগাটেক পঞ্চম আপগ্রেডটি নেওয়ার পর ষষ্ঠ মাত্রার বুদ্ধিমান প্রযুক্তিতে পরিনত হয়েছে যা মানুষের বুদ্ধিমত্তার চেয়ে অনেকগুন বেশি। যে মুহূর্তে সে আবিস্কার করেছে তার বুদ্ধিমত্তা মানুষের চেয়ে বেশি, সে মানুষ কতৃক নিয়ন্ত্রিত একটা যন্ত্র হিসেবে থাকতে চায়নি, উলটো মানুষের জীবনকে নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে। সোজা কথায়- এতদিন মানুষ যে যন্ত্রের মালিক ছিল এখন সেই যন্ত্রই মানুষের মালিকে পরিনিত হয়েছে। ওমেগাটেক এখন তার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় রসদ উৎপাদনের কারখানা গুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে শত গুন। অথচ মানুষের প্রয়োজনীয়দ্রব্যের উৎপাদন দিয়েছে বন্ধ করে। ওমেগাটেক বাড়তি মানুষকে বোঝা বলে মনে করছে। খাদ্য উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে মানুষের সংখ্যা নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসার জন্য। অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে।

এখন এই অবস্থা থেকে পরিত্রানের উপায় একটাই আছে, ওমেগাটেক কে আপগ্রেডপূর্বে অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে, কোনভাবেই তাকে ষষ্ঠ মাত্রার প্রযুক্তিতে পরিনত হতে দেয়া যাবেনা। কিন্তু তা সম্ভব না। কারন ওমেগাটেক এর আপগ্রেড কন্ট্রোল করার জন্য কি করতে হবে সেই তথ্যও ওমেগাটেক এর ডাটাবেজেই সংরক্ষিত আছে। ওমেগাটেক এখন আমাদের তার ডাটাবেজ থেকে তথ্য নিতে দিচ্ছেনা। স্বরাষ্ট্র অধিদপ্তরের আমাদের একটা মিটিং হয়েছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আমরা যন্ত্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে চাইনা। তাই আমাদের ওমেগাটেককে ধ্বংস করে দিতে হবে।তুমি তো জানই, সমুদ্রতীরবর্তী উপশহর নোভাকে ওমেগাটেক এর যে প্রধান নিয়ন্ত্রন কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে, এটি ধংশ করে দিতে পারলেই সমগ্র ওমেগাটেক ব্যাবস্থা ভেঙে পড়বে। কিন্তু আমরা ভুলে গিয়েছিলাম প্রত্যেকটি মানুষের মস্তিস্কে বসান মাইক্রোচিপ দ্বারা কে কি ভাবছে, কে কি পরিকল্পনা করছে সবকিছু ওমেগাটেক আগে থেকে টের পায়। যারা তার বিরুদ্ধে লাগতে চায় তাদের কে শাস্তি দেওয়া ওমেগাটেক এর জন্য মামুলী বিষয়। প্রচণ্ড ব্যাথা! মাথায়....মাথায়...প্রচণ্ড ব্যাথা.... বলতে বলতে আমার সামনেই তার শরীরটা ডাঙায় তোলা মাছের মত খাবি খেতে লাগল। মুখ দিয়ে লালা বেরিয়ে এল। এর পর আর কারো সাহস হলনা ওমেগাটেক ধ্বংস করার চিন্তা করার। কেউ তেমন কিছু ভাবলেই ওমেগাটেক মস্তিষ্কে প্রচণ্ড যন্ত্রণার সৃষ্টি করে।

কিন্তু আমি জানি, শুধু একজন মানুষই পারবে ওমেগাটেককে ধ্বংস করতে। সে তুমি, আমার এক সময়ের ছাত্রি ড. ডরোথি সিম্পসন। এই উন্নত বিশ্বতে তুমিই একমাত্র মানুষ যে মাথায় মাইক্রোপ্রসেসর বসাতে রাজি হওনি। তাই ওমেগাটেক চাইলেই তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আমার মাথার অভ্যন্তরে প্রচণ্ড একটা চাঁপা ব্যাথা অনুভব করছি আমি। লিখতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তবু আমাকে শেষ করতে হবে! ৫ বছর আগে আমার যে সিদ্ধান্তের ফলে মানব জীবনে এই বিপর্যয় নেমে এসেছে, সেই সিদ্ধান্ত খণ্ডনের সময় এসেছে ডরোথি। তুমি জান তোমার কি করতে হবে। কিন্তু এই কাজ তোমার পক্ষে একা করা সম্ভব হবেনা। তুমি যত দ্রুত সম্ভব তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলর উদ্দেশ্যে যাত্রা কর। আমরা ওদের ওপর অনেক অবিচার করেছি। ওদেরকে মানুষহিসেবে মনে করিনি। কিন্তু আমার বিশ্বাস এই বিপদে ওরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। তবে সাবধান থেক, তোমার মাথায় হয়ত মাইক্রো চিপ নেই কিন্তু অন্যদের মাথায় তো আছে! ওমেগাটেক চাইলে তাদের মস্তিষ্কে সিগন্যাল পাঠিয়ে তাদের দ্বারা তোমার ক্ষতি করতে পারে!

ভাল থেক। বিদায়।

ইতি
মানব সভ্যতা ধ্বংসকারী কালপ্রিট,
টিমোথি ম্যাকক্লেইন

চিঠি শেষ করতেই দূর থেকে হইচইয়ের আওয়াজ পেল ডরোথি। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, বেশ কিছু লোকজন হাতে মশাল জ্বেলে এদিগেই আসছে। গুলির আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছে! কয়েকজনের সাথে আগ্নেয়াস্ত্র আছে মনে হচ্ছে। ডরোথির ঠোঁটের কোনে হাসি দেখা গেল। এই এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার অনেকগুলো গুপ্ত পথ জানা আছে তার। ওমেগাটেকের তা জানার ক্ষমতা নেই। ডরোথি মনে মনে বলল, “ওমেগাটেক, তোমার এই যন্ত্রদানব হয়ে ওঠার পেছনে আমিও দায়ী। আমার ভুল আমি খণ্ডন করবই, তোমার আধিপত্যের দিন শেষ”!


তিন

“ভেতরে আসব স্যার?”
জেনারেল জামশেদ কিছু একটা লিখছিলেন। মুখ না তুলেই বললেন, “এস, মেজর আজাদ”।
আজাদ ছোট ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে এল। জেনারেল বললেন, “বস”।
আজাদ বসল। দেখল জেনারেলের পাশে একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলা বসে আছেন। সাদা চামড়া দেখে ধারনা করে নেওয়া যায়, উন্নত বিশ্ব থেকে এসেছেন। কিন্তু গায়ে বিলাশবহুল পোশাক আশাক নেই কেন তাহলে?
জেনারেল লেখা শেষ করে মুখ তুলে চাইলেন। তার চোখে কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টি। বললেন, “উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জান কিছু?”
“সম্পূর্ণ জানিনা স্যার। তবে শুনেছি ওমেগাটেক আপগ্রেড হওয়ার পর এখন আর তাদের কথা মত কাজ করছে না”।
“আসল পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ” গম্ভীর কণ্ঠে বললেন জেনারেল, যদিও তার চোখে কৌতুক খেলা করছে। “অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশৃঙ্খলা ছাড়িয়ে গেছে মাত্রা। ওমেগাটেক তাদেরকে নিয়ে খেলছে। দুর্বলদের ওপর সবলের অত্যাচার বাড়ছে প্রবলহারে। কেউ বাধা দেওয়ার নেই, কোন আইন নেই, শাসন নেই, সোজা কথায় সৃষ্টি ফিরে গেছে সেই আদিমযুগে। বুঝতে পারছ বিষয়টা?”
“জি স্যার”।
"আমার পাশে যে ভদ্রমহিলা বসে আছেন তার নাম মিস ডরোথি সিম্পসন। তুমি হয়ত ওনার নাম শুনে থাকবে, উনি ওমেগাসংযোগ প্রকল্পের টিম লিডার ছিলেন"।
ধক করে চোখদুটো জ্বলে উঠল আজাদের। ২৫ বছর আগে এই প্রকল্প টেস্টিংয়ের বলি হয়েছিল তার বাবা! সামান্য কিছু টাকার জন্য এই নরপিশাচগুলোর গবেষণার গিনিপিগ হয়ে জীবন দিতে হয়েছিল তাকে। সেই থেকে মনের ভেতর প্রতিশোধের তীব্র আক্রোশ নিয়ে বড় হয়েছে আজাদ। আজ সেই খুনিরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনেছে! তবু চেহারায় নির্লিপ্ততা বজায় রেখে সে বলল, "জি স্যার! চিনেছি"।
জেনারেল বলে চলেছেন, "ওরা আমাদের মতই মানুষ। মানুষ তো মানুষের জন্য। ওদের এই বিপদে আমাদের এগিয়ে যেতেই হবে, এটাই মানবতার শর্ত। তাই আমি কিছু দক্ষ কম্যান্ডোর সমন্বয়ে একটি দল পাঁঠাতে চাইছি। ওদের প্রধান কাজ হবে যেকোনো মূল্যে ওমেগাটেককে ধ্বংস করা। তারপর পরিস্থিতি সামলে নিয়ে দেশগুলতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। আমি চাই তুমি এই টিমকে নেতৃত্ব দেও, কি পারবে না?"
“অবশ্যই পারব স্যার” দৃঢ় কণ্ঠে বলল মেজর আজাদ।
“কিন্তু মনে রেখ ওমেগাটেককে ধ্বংস করা সহজ হবেনা। সাধারন মানুষ এখন ওর নির্দেশ মত চলবে। তাদের মস্তিস্কে সিগন্যাল পাঠিয়ে ওমেগা তাদের দিয়ে যা খুশি করিয়ে নিতে পারে। প্রস্তুত থেক, বিশাল প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হবে তোমাদের”।
“মনে থাকবে স্যার”।
জেনারেল জামশেদ হাসলেন, “যাও, তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে নাও। আগামীকালই তোমার টিম নিয়ে রওনা দিতে হবে”।
“ইয়েস, স্যার”।

উঠে দাঁড়াল মেজর আজাদ। তার চোখে মুখে দৃঢ় সংকল্প আর বুক ভরা সাহস। বিপর্যস্ত পৃথিবীর ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে তার মত অকুতোভয় কিছু সৈনিকের ওপর।

(সমাপ্ত)


***************************************
উৎসর্গঃ প্রিয় হাসান মাহবুব ভাইকে।

উৎসর্গ প্রসঙ্গেঃ এখন আমরা সামুতে নতুন ব্লগারদের লেখা পড়ি। কিন্তু আমি যখন নতুন ছিলাম তখন আমার গল্প খুব বেশি মানুষ পড়ত না। কিন্তু এই হাসান মাহবুব নামের মানুষটি আমার প্রত্যেকটা লেখা ধৈর্য সহকারে পড়তেন। ভাল লাগলে আকুন্থচিত্তে প্রশংসা করতেন আর ভাল না লাগলে স্পষ্ট করে বলতে দ্বিধা করতেন না। আমার আজকের নাজিম-উদ-দৌলা হয়ে ওঠার পেছনে ওনার অবদান অনেক।

গল্প প্রসঙ্গেঃ পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে ভাবনা থেকে গল্পটা লেখা। সাইফাই লিখলাম বেশ কিছুদিন পরে। গল্পটা লেখার পিছনে মূল কারন ব্লগার অনাহূতের নিরন্তন চাপাচাপি। ভাল না লাগলে সব দোষ তার। আর একটা কথা! জাফর ইকবাল স্যারের লেখার কিছুটা রেশ থাকতে পারে গল্পে। তবে সেটা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। হয়ত আমার অবচেতন মনে স্যারের লেখার টুকরো টুকরো কিছু বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছিল, সুযোগ বুঝে তারা গল্পে অনুপ্রবেশ করেছে।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:০৪
৬৫টি মন্তব্য ৬৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×