দেশ আজ নানা জাতের বিরোধিতে ভরে গেছে। কেউ ভারত,কেউ পাকিস্তান, কেউ রাজাকার, কেউ ধর্ম...। আমি না হয় হলাম ব্রিটিশ বিরোধী।
২৩ জুন,১৭৫৭ এই উপমহাদেশের ইতিহাসের এর কাল দিন। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশীর যুদ্ধে হেরে যান ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে। শুরু হয় এক কাল অধ্যায়। অনেক আন্দোলন হয়েছে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে, কখনো সশস্ত্র, কখনো নয়। কিন্তু তারা জায় নি বরং একের পর এক অত্যাচার করেছে এ দেশবাসীর উপর। কিন্তু তারা চলে গেল হটাৎ করেই।
একটা কথা প্রচলিত আছে- ব্রিটিশদের মত কূটবুদ্ধি আর কার নাই। মনে হয় সত্যি কথাটা। নবাবী আমলে এই উপমহাদেশে সব ধর্ম, সব জাতির মানুষ বাস করত কোন ঝামেলা ছাড়াই। সনাতন ধর্মের এই উপমহাদেশে মুসলিমরা ধর্ম প্রচারে এসে প্রথমে বিরোধিতার সম্মুখীন হলেও পরে তা আর থাকে না। মুসলিম, সনাতন, বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ শান্তিতেই থাকতো।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম দিকে যে আন্দোলনগুলো হয়েছিল তার প্রতিটিতেই অসাম্প্রদায়িকতার ছাপ আছে। ফকির-সন্নাসিরা বিদ্রোহ করেছিল একসাথে কারণ তাদের অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ সময় তারা এক জোট হয়ে লড়েছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। প্রথম দিকে তারা অনেক সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু অস্ত্র ও অভিজ্ঞতার অভাবে তারা শেষ পর্যন্ত হেরে যান।
ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন ১৮৫৭ সালে যাকে ব্রিটিশরা নাম দেয় ‘সিপাহী বিদ্রোহ’ যেমনটা ১৯৭১ এর বাংলাদেশ এর স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেউ কেউ গৃহ যুদ্ধ বলে। এ আন্দোলন ও হয়েছিল সব ধর্মের মানুষের মিলিত ফসল। দিল্লী থেকে বিহার, বাংলা সবাই এক হয়েছিল। কিন্তু পাঞ্জাব, এলাহাবাদ এর মত রাজাকারদের জন্য ব্রিটিশরা রক্ষা পেয়ে যায় সেবার। ক্ষমতা হারায় কোম্পানি, ক্ষমতা নিয়ে নেয় সরকার। আর তার পর থেকেই শুরু কূটবুদ্ধির চাল।
ধর্মীয় বিভেদকে পুঁজি করে বিভক্ত করে দেয় সবাইকে। মুসলিমদের নামে আগে মুহাম্মদ বা মোছাম্মত আর সনাতদের শ্রী বা শ্রীমতী লাগিএ ভাগ করে দেয়। মুসলিমদের শেষ নবী মুহাম্মদ(সাঃ) এর নামের পর দরুদ পড়ার কথা বলা আছে(কুরান-৩৩:৫৬)। কিন্তু ব্রিটিশরা খুব সুন্দরভাবে নামের আগে মুহাম্মদ লাগিয়ে দিল, যা আজও চলছে। কিন্তু মুহাম্মদ বলার পর কেউ আর দরুদ পড়ে না। ব্রিটিশরা এখানকার ধর্মীয় সম্প্রীতি কে ধ্বংস করার মিশন এ নামলো জাতে তারা ১০০% এর বেশি সফল হয়েছে।
হিন্দুস্তান-শব্দটিকে তারা ধর্মীয় বানিয়ে দিল। এই শব্দটি উৎপন্ন হয়েছে সিন্ধু নদের নাম থেকে যা আর্যদের দেয়া। এমনকি হিন্দু শব্দটিও একটি ভৌগলিক শব্দ যা দ্বারা সিন্ধু নদের পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষকে বোঝায়, সে যে ধর্মের হক না কেন। কুরান এ অনেকবার ‘হে আরববাসী’ শব্দ যুগল আছে। এর মানে নিশ্চয় মুসলিম না, বরং সমগ্র আরব এর লোক। মুঘল শাসকরাও নিজেদের হিন্দুস্তানি বলত মুসলিম হবার পর কারণ তারা জানত এর আসল মানে। সনাতন ধর্মের নাম তারা দিয়ে দিল হিন্দু ধর্ম, আর ভারতকে হিন্দুস্তান।
আর তখনি শুরু হল ধর্মীয় কোন্দল। এর মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গুলো এক্তু ঝিমিয়ে পড়ল। ব্রিটিশরা চালু করলো রাজনৈতিক দল, যাতে মুসলিম-সনাতনি আলাদা দল গরে উঠল। এর মাঝে বঙ্গ ভঙ্গ আরও দাঙ্গা বাড়িয়ে দিল। ভারতের কংগ্রেস এর প্রতিষ্ঠাতা একজন ব্রিটিশ। ফলে খুব সুক্ষ ভাবে ধর্মীয় বৈষম্য শুরু করে যার ফলে মুসলিমরা আলাদা একটি দল গঠন করে। এর পর থেকে ধর্মীয় দাঙ্গা বাড়তেই থাকে। এই অবস্থা এক পর্যায়ে এমন হল যে ঠিক হল ধর্মের ভিত্তিতে দু’টি দেশ হবে!!!!
ব্রিটিশরা নিয়ে এল স্যার সাইরিল রেডক্লিফকে(১৯৪৪ সালে নাইটহুড উপাধি পান)। যিনি কিনা মাত্র ৫ মাসে এত বড় একটি এলাকার মানচিত্র বানিয়ে ফেললেন। মানে ভারত-পাকিস্তান এর মানচিত্র কেমন হবে তা!! উনি খুব ভাল ভাবেই কাজটা করেছিলেন তাতো বোঝাই যায়। এই যে বাংলাদেশ-ভারত এর ছিটমহল এগুলো তারই সৃষ্টি। কাশ্মির আলাদা একটি দেশ হতে চেয়েছিল কিন্তু তা অনুমদিত হয়নি। আর তার ফল আজ কাশ্মির এর মানুষরা ভোগ করছে। ব্রিটিশদের লক্ষ্য ছিল এই উপমহাদেশের মানুষের সম্প্রীতি নষ্ট করা, যা তারা পেরেছে ভালভাবেই।
আলেকজান্ডার দি গ্রেট গোটা ইউরোপ, আফ্রিকার উত্তরাংশ, এশিয়ার পশ্চিমাংশ জয় করে থেমেছিলেন এই ভারত বর্ষে এসে। আগে পশ্চিমের মানুষ পূর্বের এই বাংলায় আসার জন্য পাগল ছিল। কিন্তু এখন??? ব্রিটিশরা ধ্বংস করে দিয়েছে সব কিছু। হয়ত অনেকেই বলবে তারা অনেক কিছুই করেছে। তাহলে আমিও বলব ৭১ এ ভারত আমাদের সাহায্য করেছে তাই এখন অরা যা খুশী তাই করবে। কিন্তু না, ভারত সাহায্য করে আমাদের কিনে নেয় নি, তেমন ভাবে ব্রিটিশদের ওই সব ছিল আন্দোলন বন্ধ করার এক চাল।
রেডক্লিফকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল বাংলাদেশ স্বাধীন এর পরে যে পাকিস্তান ভাগ হবে এটা তিনি আন্দাজ করেছিলেন কিনা। তিনি এর উত্তর দেন নি। আর দিবেন বা কেন, দিলে তো প্রকাশ হয়ে যাবে।
ম্যাথু রেইলির ‘Ancient seven wonders’ বই এ বাংলাদেশ এর নাম উল্লেখ আছে, যাতে বলা আছে একদিন পশ্চিমা শক্তির পরাজয় হবেই, মানুষকে লুট করা আর কত? কিন্তু এখানকার মানুষ কখনো লুট করি নি কারণ এদের আছে অনেক কিছু।
আজ যখন বাংলাদেশের সীমান্তে নিরীহ মানুষ মারা যায়, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ লাগে, কাশ্মির এ লোক মরে তখন হয়ত ব্রিটিশরা হাসে আর ভাবে ‘আমরা গেলেও আমাদের ভুত আছে। তোরা কখনই আর শান্তিতে থাকতে পারবি না। নিজেরা নিজেরা লড়াই কর আর আমরা তোদের লুট করা মাল নিয়ে মজা করি আর তোদের শাসন (শোষণ) করি।’
যখন ভারত বলে ২০২০ পর্যন্ত বাংলাদেশকে খেলতে দিবে না তাদের দেশে তখন প্রতিবাদের ঝড় উথে। কিন্তু একই সাথে ইংল্যান্ড ও একই ঘোষণা দিয়েছিল তা আমরা যেন শুনতেই পাই না।
বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান আজ একে অপরের শত্রু-প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য। এটাই চেয়েছিল ব্রিটিশরা। আজ তারা সফল। অভিনন্দন ব্রিটিশ সম্রাজ্য..................।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



