আমাদের দেশে কোন ঘটনা ঘটলেই তাতে ভারত,পাকিস্তান, ইসরাইল, আমেরিকার যোগসুত্র খুঁজে বের করতে আমরা উঠে পড়ে লাগি, যদিও এর ভিত্তি হিসেবে মূলত ধর্মীয় কারণকেই ব্যবহার করে বেশিরভাগ লোক। আর কিছু অন্ধ সমর্থক সব সময়, যাই ঘটুক একটা জাতি বা ধর্মের উপর চাপিয়ে দিতে চায়। বিস্তারিত কিছু বলার আগে নিচের ঘটনাটা পড়া দরকার।
ফ্রেডারিক ফরসাইথ ১৯৭৪ সালে Dogs of War নামে একটা বহুল বিতর্কিত বই প্রকাশ করেন যেখানে দেখানো হয়েছে একটা দেশে ক্যু ঘটানো হয়েছে ভাড়াটে বা পেশাদার যোদ্ধার মাধ্যমে। এই ভাড়াটে যোদ্ধাদের কোন দেশ নেই, ধর্ম নেই। আমরা যেমন খেয়ে পড়ে বাচার জন্য চাকরি বা ব্যাবসা করি তারা করে যুদ্ধ, অর্থের বিনিময়ে। আজ যার পক্ষে লড়াই করলো হয়ত কাল তার বিরুদ্ধেই লড়বে। এই উপন্যাসে লেখক আফ্রিকার এক দেশে ক্যু এর ঘটনা দেখিয়েছেন। আর এই ক্যু এর ঘটনা কোন ধর্ম বা দেশের জন্য নয়, একজন খনিজ সম্পদের ব্যাবসায়ী। দেশটি কাল্পনিক, নাম জাঙ্গোরা। এই দেশের প্রেসিডেন্ট সাদা চামড়াদের দেখতে পারেননা আর এই দেশেই পাওয়া গেছে বিশাল খনিজের ভাণ্ডার। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় থাকলে এগুলো পাওয়া সম্ভব না, তাই ভাড়াটে যোদ্ধার মাধ্যমে ক্যু ঘটানো হল। আর এই কাজ করতে কত ঘটনা ঘটেছে তা ভাল মত বুঝতে বইটা পড়ার বিকল্প নেই। ক্যু করলো এক ব্যাবসায়ী কিন্তু দুনিয়া জানল ওই দেশের এক বিতাড়িত জেনারেল কিছু অনুগত সেনার সাহায্যে এই ক্যু সফল করল।আর এই জেনারেলকে ক্ষমতায় বসানোটা ওই ব্যাবসায়ীর চাল, এতে সে সেই দেশের খনিজ সম্পদগুলো কুক্ষিগত করতে পারে। এর এখানে নেই কোন ধর্মের বা জাতিগত বিদ্বেষ। শুধু ব্যাবসায়িক কারণে এই ক্যু।
এটা উপন্যাস, এটা বাস্তবে সম্ভব না-এটুকু পড়ে তাই বলা যায়। কিন্তু তার আগে জেনে রাখা উচিত এই উপন্যাসের প্লট পেতে লেখক নিজেই ১৯৭৩ সালে ইকুয়াটোরিয়াল গিনিতে ইগবো সম্প্রদায়ের পক্ষে একটি ক্যু এর সমস্ত ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছিলেন আসলেই এরকম কিছু ঘটানো সম্ভব কিনা জানার জন্য। পড়ে ১৯৭৮ সালে লন্ডন টাইমস কে এর কাহিনী বিবৃত করেন। তিনি বলেন এই অপারেশনের জন্য একটি কমিশন পর্যন্ত গঠন করেছিলেন। লন্ডন টাইমস বলেছে-“ ডগস অব ওয়ার উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে ফরসাইথ সত্যি সত্যি একটি ক্যু’র সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কোন উপন্যাসের প্লট নির্মাণে এতোটা ঝুঁকি নেয়া রীতিমত অভিনব ঘটনা।” ২০০৫ সালে এউ.কে. ন্যাশনাল আর্কাইভ কিছু দলিলপত্র প্রকাশ করে যাতে দেখা যায় ১৯৭৩ সালে জিব্রালটারে কয়েকজন ব্যাক্তি ইকুয়াটোরিয়াল গিনিতে ক্যু এর পরিকল্পনা করেছিল ঠিক যেমনটা বইয়ে বলা আছে। ১৯৭৩ এর ২৩ জানুয়ারীতে স্পেনীয় কর্তৃপক্ষ কয়েকজন পেশাদার সৈন্যকে গ্রেফতার করলে পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যায়।
আমরা যে কথায় কথায় RAW,CIA,MOSAD,ISI এর সম্পৃক্ততা খোজা শুরু করি, নানা রকম কাহিনীও শোনা যায় সেগুলর কি হবে??? পৃথিবীতে এমনও ধনী ব্যাক্তি আছে যে চাইলে তার পছন্দের ব্যাক্তিদের সরকারে দেখতে পারে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৭ দেশেই। আর আমরা যখন জাতিগত বিবাদে জড়িয়ে আছি প্রায় ৫০-৬০ বছর ধরে তখন তাদের পক্ষে তাদের কাজ করা আরও সহজ হয়ে যাবে। যেখানে রয়েছে ধর্ম আর রাজনীতির জন্য অন্ধ সমর্থন, একটা কথার সত্যতা যাচাই না করেই লড়াই এ নেমে যাওয়া তখন তাদের কাজ আরও সোজা হয়, ধরা পড়লে সেটাকে ধর্মীয় বা জাতিগত বা রাজনৈতিক বিবাদের রূপ দিয়ে সরে যাওয়াও সহজ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



